Wednesday, November 7, 2018

আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী শাসক আওয়ামীলীগকে কেনো শাসন ক্ষমতা দান করেন? (দ্বিতীয় অংশ)

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী শাসক আওয়ামীলীগকে কেনো শাসন ক্ষমতা দান করেন? এবং অত্যাচারী শাসকের করুণ পরিনতি।
সংকলনে : মাওলানা মো: শিহাব. এম এ-ইসলামিক স্টাডিজ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)
(দ্বিতীয় অংশ)
স্বৈরশাসকদের শেষ পরিনতি : প্রেক্ষিত শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন!
দুনিয়ার ক্ষণকালের ক্ষমতা বা অক্ষমতা দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করে কিছু মানুষকে মানবতার কল্যাণে বাছাই করতে চান। সে বাছাই পরীক্ষায় অনেকে অঙ্কুরে ঝরে যায়। ক্ষমতান্ধ হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অবিবেচকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবারের উপর নিজের নিষ্ঠুরতাকে চাপিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। আর যারা অক্ষম তারা শাসকবর্গের আশ্রয়ে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়, তাদেরকেও আল্লাহ ক্ষমতা না দিয়ে তাদের মনের অবস্থা নিরীক্ষণ করতে চান। যুগে যুগে অনেকে ক্ষমতাসীন হওয়ার সুবাদে দেশ-জাতিকে নিজের মত ভালবেসে জনগনের মনের মানুষ হিসেবে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর স্বৈরাচারী শাসকেরা ধরার বুকে অসাম্য ও অন্যায়ের দাবানলে দ্বগ্ধ করে বণী আদমকে পদপিষ্ট করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে চরম নিষ্ঠুরতম পথ বাছাই করে নেয়। ফেরাউন ছিলেন প্রাচীন দুনিয়ার নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসক। তিনি নিজেকে পুরো দুনিয়ার মালিক বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন-“আনা রাব্বুকুমুল আলা”। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে নমরুদ সহ অনেকে। ক্ষমতার উত্তাপ সবাই সহ্য করতে পারেনা। তাই ক্ষমতার উত্তাপে সবাইকে জ্বালিয়ে ছারখার করে ফেলতে চায়। তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে খুব কম মানুষ।
আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নতুন করে অ্যাডলফ হিটলার স্বৈরতন্ত্রের সুচনা করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নানা দেশ নানা ভাবে স্বৈরতন্ত্রের শিকলে আবদ্ধ করে দুনিয়াকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে নব্য স্বৈরশাসকরা। কেউ ঘোষিত স্বৈরশাসক আবার কেউ বা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে স্বৈরশাসক। স্বৈরশাসকদের শাসনে মানবতার অপমৃত্যু ঘটে। মুক্তিকামী মানুষ ফুঁসে উঠে। শুরু হয় শাসক ও শোষিতের লড়াই। কোথাও সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসক কোথাও বা তথাকথিত নির্বাচিত স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। যার শেষ পরিণতি হয় ভয়াবহ। শুরু হয় জনগণের রাষ্ট্রব্যবস্থা। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে নির্বাচনে জালিয়াতি, নির্যাতন-নিপীড়ণের পথকেই বাছাই করে নেয়। এক সময় প্রতিবাদী মানুষের লাশ, আন্দোলন ও বিদ্রোহে কেঁপে উঠে স্বৈরতন্ত্রের সালতানাত, নেংটি ইঁদুরের মত লেজ গুঁটিয়ে পালানোর পথ খুঁজে। স্বৈরশাসক মহারাজা-নবাব-বাদশাহগন বিদায় নিতে বাধ্য হন। তাদের লাঞ্ছনা, অপমান, অপদস্থতা হয় জীবনের শেষ উপহার। দুনিয়ার স্বৈরশাসক হিসেবে যারা পরিচিত তারা বঞ্চিত-শোষিত মানবতার ঘৃণার পাত্র। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশও এর থেকে মুক্তি পায়নি। সহজ সরল মানুষগুলোকে দাবার গুটি বানিয়ে ক্ষমতার যাতাকলে পিষ্ট করেছে শেখ মুজিব ও জেনারেল এরশাদ। এখন একই পথে হাটছেন শেখ হাসিনা! লোকে বলে শেখ হাসিনা হিটলারকেও হার মানিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী! আসলে কি তাই? তাহলে শেষ গন্তব্য কোথায়?
দার্শনিক এ্যারিস্টটল বলেছেন, রাষ্ট্র মানুষের একটি স্বভাবগত কার্যক্রম। মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই সামাজিক। মানুষের প্রকৃতিই তাকে রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি আরও বলেছেন, যে মানুষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজনবোধ করেনা, সে হয়ত মানবেতর জীব, না হয় মানব প্রজাতির উর্ধ্বে কোন সত্ত্বা। এরই ধারাবাহিকতায় সমাজ, গোষ্ঠী, কওম বা জাতির প্রধান সৃষ্টি। তারাই নিজেদের তৈরী আইনের মাধ্যমে পৃথিবীকে করালগ্রাস করতে চায়। পৃথিবীব্যাপী এমন কিছু স্বৈরশাসকের পরিচয়, শেষ পরিনতি ও বাংলাদেশের প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নীতির সারসংক্ষেপ বর্ণনা মাত্র-
অ্যাডলফ হিটলারঃ
অ্যাডলফ হিটলার ছিলেন জার্মানীর সর্বকালের সেরা স্বৈরশাসক। ফ্যাসিবাদের জনক হিটলারের রাজ্যজয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা করা হয়। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে সবাই জানে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে হিটলার বার্লিনেই ছিলেন। রেড আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সেরকম একটা সময়ে তিনি ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি ফিউরার বাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। তার ক্ষমতা আর দাম্ভিকতা তাকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
বেনিতো মুসোলিনি:
ইতালির মুসোলিনিও হিটলারের মত বক্রপথ অনুসরণ করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিণতি তাকেও বরণ করতে হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সবদিক থেকে বিধ্বস্ত ইতালির ভিক্টর ইমানুয়েলের গণতান্ত্রিক সরকার ও জার্মানির হিন্ডেনবার্গ সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনিও সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতা গ্রহনের পর হিটলারের মত তার চেহারাও পাল্টে যায়। পরবর্তীতে স্বৈরাচারী ও একনায়ক হিসাবে আবির্ভুত হন। মুসোলিনি সুইজারল্যান্ডে পালাবার সময় কম্যুনিস্ট প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, পরে তাকে হত্যা করা হয়। দুজনের বিস্তার ও মৃত্যুর মধ্যে কি অসাধারন মিল! আজ দু’জনের রাজনৈতিক দলই দুদেশে নিষিদ্ধ।
নেপোলিয়ান:
ফ্রান্সের নেপোলিয়ান, তার বিশাল সম্রাজ্যের বিস্তার ছিলো মাদ্রিদ থেকে মস্কো পর্যন্ত, সম্রাট হন তিনি ফ্রান্স এবং অর্ধ পৃথিবীর। পৃথিবীর মানুষ তাকে মনে রাখবে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে। কিন্তু কিছু মানুষ তাকে বেশিদিন রাজত্ব করতে দেয়নি এবং তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। একটু ইতিহাসের পাতা থেকে ঘুরে আসলে দেখা যাবে, ফরাসী জাতি সারা বিশ্বে একটি সম্মানিত জাতি, ইউরোপের কেন্দ্রবিন্দু। আর ফ্রান্সের এই সফলতার একমাত্র নায়ক নেপোলিয়ান। নিজের দেশে সম্রাট ছিলেন মর্যাদাবান। কিন্তু বাইরের দেশে তার রূপ ছিলো ভিন্ন। সম্রাটের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য দেশের জন্য হুমকি বলে মনে করা হত। তাই তারা তাকে ভাল দৃষ্টিতে দেখতে পারেনি । তাই সম্রাটের বিরোধী দলগুলো জোট বাঁধে নেপোলিয়ানের বিরুদ্ধে। নিজ দেশের জনমতকে উপেক্ষা করে তার সম্রাজ্য সম্প্রসারনের প্রধান শত্রু ব্রিটেন, ক্রোয়েশিয়া ও রাশিয়াকে ধ্বংস করে দেশ দখলের নিমিত্তে নেপোলিয়ান ৫ লক্ষ সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আক্রমন করেন। কিছু দেশ তার আয়ত্বে চলে আসে। রাশিয়া, ব্রিটেন ও ক্রোয়েশিয়া নেপোলিয়নের বেপরোয়া সম্রাজ্য সম্প্রসারণ ঠেকাতে চুক্তিবদ্ধ হয়। শক্র বাহিনীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আক্রমনে নেপলিয়ান পরাজিত হয়ে পড়েন এবং এক সময় তিনি রাজত্ব হারান। ক্ষমতাধর নেপলিয়নের একনায়কতন্ত্রের মসনদ তাকে ইতিহাসের আস্তাকুরে অপদস্ত ও অপমানিত করে স্বৈরশাসকদের তালিকায় যুক্ত করেছে। ক্ষমতান্ধতা তার অভূতপূর্ব জনকল্যাণকর কাজসমূহকে ম্লান করে দেয়।
হোসনী মোবারক:
মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলীর পর হোসনী মোবারক সে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক। আরব বিশ্বে লম্বা সময় দেশ শাসন করছেন অনেকে। হোসনী মোবারক তাদের অন্যতম। ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনী এক সদস্য কর্তৃক তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সা’দাত নিহত হওয়ার পর হোসনী মোবারক ক্ষমতায় আসেন। জাতীয় নির্বাচনে পার্লামেন্ট অনুমোদিত মাত্র একজন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন সেই প্রার্থী ছিলেন হোসনী মোবারক। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার দায়ে বিশ্বজুড়ে তিনি নিন্দিত। মিশরে গনজাগরণের মাধ্যমে তাকে লাঞ্চিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। আর বর্তমান মিশরের রাজনৈতিক উত্তপ্ততার জন্য তাকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দায়ী করছেন।

সাদ্দাম হোসেন:
ইরাকের স্বৈরাচারী একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের পতন হয় ২০০৩ সালে। সে সময় ইরাকে বহু অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও রক্তক্ষয় দেখা গেছে। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর তার হত্যাকান্ড নিয়ে মূল্যায়নের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে একনায়তান্ত্রিক শাসন ও অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে পশ্চিমা বিশ্ব। আর তাই তাকে জনমত নিয়ে জনসম্মূখে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বিদেশী প্রভুদের যতই হস্তক্ষেপ থাকুক না কেন জনগণ যদি তার সাথে থাকত তাহলে হয়তবা এই পরিণতি হতনা। সাদ্দামের জনবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া শাসননীতিতে মার্কিনীরা যেমন তাকে ক্ষমতাচ্ছ্যুত করতে সচেষ্ঠ হয় একি ভাবে ইরাকী জনগন ও তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে। তার স্বৈরনীতির শেষ ফল হিসেবে মার্কিন সেনারা তাকে টেনে হিচড়ে গর্ত থেকে বের করে এবং ফাঁসির কাষ্টে ঝুলায়। এ ধরণের শাসকরা তাদের স্বৈরনীতির কারণেই লাঞ্চিত হয় বা মৃত্যুমুখে পতিত হয় শুধু তাই নয় বরং একটি জাতিকেও মেরুদন্ডহীন করে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি:
লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি জনপ্রিয় ‘ব্রাদারলি লিডার হলেও তিনি মূলত একনায়ক, স্বৈরশাসক হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘ ৪২ বছর তিনি এক হাতে শাসন করছেন উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। দেশ-বিদেশে সুনামের পাশাপাশি তাকে নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। গাদ্দাফি ফিলিস্তিনের ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’র একজন ভক্ত হলেও পশ্চিমাবিরোধী নীতির কারণে গাদ্দাফিকে পশ্চিমারা সব সময়ই নেতিবাচক চোখে দেখেছে। কূটনৈতিক অঙ্গনেও তার প্রতি দৃষ্টি তেমনই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান নিজেই গাদ্দাফিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের পাগলা কুকুর’ বলে অভিহিত করেন। তারা একাধিকবার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেষ্টা চালায়। সর্বশেষ বিদ্রোহীরা তার বাব আল আজিজিয়া প্রাসাদ দখল করে নেয়। সেখান থেকে তার আগেই পালিয়ে যান মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্য দিয়েই মূলত গাদ্দাফির পতন ঘটে। তারপরও তার অনুগতরা লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। সর্বশেষ তারা তার জন্মশহর সির্তে অভিযান চালায়। সেই অভিযানেই গুলিবিদ্ধ হন গাদ্দাফি। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকার সুবাদে তার মাঝে স্বৈরতান্ত্রিকতা জেঁকে বসে। এমন সুযোগেই জেনারেল গাদ্দাফির পতনের জন্য তার কাছের লোকরাই শত্রুদের সাথে হাত মিলায়।
রবার্ট মুগাবে:
জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে, ১৯৮০ সালে দেশটি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মুগাবে শাসন ভার নিয়েছেন। ৩৩ বছর ধরে তার শাসনই চলে আসছে। নতুন সংবিধানের অধীনে প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মুগাবে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করে। যদিও বিরোধীরা এ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে দাবি করেছেন। দেশটিতে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
বাশার আল আসাদ:
সিরিয়ার বাশার আল আসাদ গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে বিরোধী সকল মতকে উপেক্ষা করে স্বীয় মতকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে আসাদ বিরোধীরা প্রতিবাদ করে। শুরু হয় তার দমন-পীড়ন। এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বিরোধীদের উস্কাতে থাকে এবং আসাদ সরকারকে পরাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে সিরিয়াতে আসাদ সরকার ও বিরোধী জোট এক ভয়াবহ সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যদি আসাদ ও তার বিরোধী জোট সমস্যা সমাধানে না পৌছে তাহলে দেশটিতে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব যে ভাবে মাথা ঘামাচ্ছে তাতে এর অবস্থা ইরাকের চাইতে ও ভয়াবহ হবে। প্রতিনিয়ত সরকার ও বিরোধীদের সংর্ঘষে বেসামরিক বহু হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এর সমাধানে আসাদের লক্ষ্যণীয় ভুমিকা না থাকায় দেশাভ্যন্তরে আসাদের বিরুদ্ধে জনগন ফুঁসে উঠছে আবার অন্যদিকে বহির্বিশ্বও মাতব্বরি করছে। এতে স্পষ্ট যে আসাদের স্বৈরনীতিই তাকে অপদস্ত করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্ষমতাচ্চ্যুত করবে।
স্বৈর শাসকের ভূমিকায় শেখ মুজিব:
শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে ফিরে এসে ৭২-৭৫ সাল নাগাদ প্রায় ৪৪ মাস সরকার চালিয়েছেন। ৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের একচ্ছত্র নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে মেনে নেয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল তারই। সেটা তার আইনগত অধিকার ছিল। পাকিস্তানের দূর্ভাগ্য তখন সামরিক জান্তা ও জুলফিকার আলী ভূট্টোর প্ররোচনায় পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষের ওপর সামরিক আক্রমণ চালানো হয়। এই জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নেতাই শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে। সরকারী মালিকানা ছাড়া সকল খবরের কাগজ বন্ধ করে দেন। এমনি ভাবেই তিনি একজন সিভিল ডিক্টেটরে পরিণত হয়েছেন। সকল সরকারী কর্মচারীকে একদলের সদস্য ঘোষনা করলেন। দেশের সেনাবাহিনীকেও একদলের সদস্য করা হলো। তিনি আমরণ রাষ্ট্রপতি থাকার ব্যবস্থা করলেন। কেন বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় নেতা এমন কাজটি করলেন তা আজও দেশবাসী জানেনা। হয়ত ক্ষমতা লাভের নেশাই এক্ষেত্রে তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেকেই মনে করেন, তিনি সিপিবির প্ররোচনায় একাজ করেছিলেন। শেখ মুজিব যদি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম না করতেন তাহলেও তিনি হয়ত নির্বাচনের মাধ্যমে বহু বছর ক্ষমতায় থাকতেন। সেটাও একধরনের একনায়কতন্ত্র হয়েই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকত। যার পরিণতিতে ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে তাকে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার মাধ্যমে জীবন দিতে হল। অপরদিকে পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে ক্ষমতা গ্রহণ করে জেনারেল জিয়াউর রহমান বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যান। নিষিদ্ধ পত্রিকাগুলো চালু করার নির্দেশ দেন। দেশে সকল মত ও পথ প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। যা সাধারনত, কোন সামরিক শাসক করেন না। জিয়াউর রহমান ছিলেন ফ্রান্সের দ্য গলের মতো একজন জনপ্রিয় শাসক। দু’জনই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছেন। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছিলেন।
স্বৈরশাসক এরশাদ:
সাবেক সেনা শাসক হিসাবে সামরিক শাসন জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কারণেই এইচ এম এরশাদের পতন হয়েছিল। যার বিচার বাংলাদেশের আদালতে হয়নি। বরং তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে এদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দুই যুগ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেফতার হলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন। বি.এন.পি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। । ছয় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান। দলের প্রবীণ নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধাণমন্ত্রী কাজী জাফরকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে আরো একভাগ হল এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরশাদ বর্তমানে আওয়ামী জনবিচ্ছিন্ন পাতানো নির্বাচনে প্রকাশ্যে সমর্থন না দেয়ায় সরকারী হেফাজতে রুগী সাব্যস্ত করে সিএমএইচএ ভর্তি করিয়ে তার স্ত্রী রওশানকে এ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট বানিয়ে জাপাকে নির্বাচনের আনার হাস্যকর আয়োজন করে। জাতির সামনে তা দিবালোকের মত স্পষ্ট; যা ঘৃনার, লজ্বার ও অপমানের। আওয়ামীলীগ সরকারের ছত্রছায়ায় এরশাদ একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন সত্য; কিন্তু তাই বলে তাঁর গায়ে লেগে থাকা স্বৈরশাসকের কালি একটুও মুছে যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে যতগুলো দুর্নীতির মামলা ছিল, সবগুলোর বিচার হলে তাঁর কারাদন্ডের মেয়াদ সবচেয়ে আলোচিত হত। আইন নিজস্ব গতিতে চলেনি বলেই একদা স্বৈরশাসক এখন গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক দল ও নেতা-নেত্রীদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছেন। নব্বইয়ের পর জাসদের নেতা ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তাঁর বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছিলেন। সেই মামলার খবর কী? গত দুই দশক স্বৈরাচারের হাত ধরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় টিকে ছিল। আর তাই এরশাদ একবার একেকরকম কথা বলছেন। বছর খানেক ধরেই এরশাদ মহাজোটের বিরুদ্ধে বুলন্দ আওয়াজ তুলে আসছিলেন যে এ সরকার দুর্নীতিবাজ ও দেশ শাসনে ব্যর্থ। অতএব এ সরকারের সঙ্গে তার কোনো রকম আপস নেই। তিনি বহুবার মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেভাবে মহাজোট ছেড়েছেন, সেটি নাটক নয়, প্রহসনের অংশ। আওয়ামীলীগ মুলা ঝুলিয়ে তিনটি পূর্ণ, দুটি অর্ধমন্ত্রী এবং একটি উপদেষ্টার পদ তাদেরকে দিয়েছে। বর্তমানে প্রহসনের নির্বাচনে মূল বিরোধী দলকে বাহিরে রেখে ক্ষমতায় যেতে আওয়ামীলীগ ৬ টি মন্ত্রী পদ (!) দিয়েছেন। ১৯৮৩ সালের ২৪ মে শুল্ক কর্তৃপক্ষ প্রতিরক্ষা বিভাগের আমদানি করা এক কোটি টাকা মূল্যের ১৭ হাজার ছয়টি ঘড়ি আটক করে। সেনা গোয়েন্দারা সংশিষ্ট শুল্ক কর্মকর্তা আবদুর রউফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। এরপর রউফ রহস্যজনকভাবে মারা যান। তাঁকে অবশ্যই নির্যাতন করা হয়েছিল। সরকারের মুখপাত্র সব সংবাদপত্রকে সরকারের দেওয়া প্রেস রিলিজ ছাপার নির্দেশ দেন। রউফের স্ত্রীকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। ১৯৮৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে বছর দেওয়া শিল্পঋণের ৫০ ভাগই ২২ জন ব্যক্তির মধ্যে বণ্টন করা হয়, যাঁরা এরশাদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৯৮৫ সালে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির এক কোটি টন গমের এক-তৃতীয়াংশ এরশাদের রাজনৈতিক দলের সদস্যদের মাধ্যমে তছরুপ করা হয়। নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এরশাদ পীরদের ব্যবহার করেছেন। আগের রাতে স্বপ্ন দেখে শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে যেতেন বলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেছেন। এরশাদ নিজের স্বার্থে এ অবৈধ কাজ করায় রাষ্ট্রের ৬৬.০৪ কোটি টাকা লোকসান করেছেন। ১৯৯২ সালের ১৭ জুলাই এ মামলার কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বিচারকাজ শেষ হয়নি। আমাদের সমাজে যে নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ রয়েছে, তার কিছুই এরশাদের নেই। তিনি অনেক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করেছেন। এরশাদ সম্পর্কে তাঁরই একসময়ের প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান লিখেছিলেন: ‘আমার সরল বিশ্বাসের সুযোগে সামরিক প্রশাসক কীভাবে তাহার প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়া স্বৈরতন্ত্র চিরস্থায়ী করিবার সমস্ত কৌশল নিয়োগ করিয়াছে এবং অন্যান্য স্বার্থবাদী মহল ও জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে তাহার অনুকূলে সমর্থন জোগাইয়াছে তাহারই একটি চিত্র এই বইয়ে আঁকিবার চেষ্টা করিয়াছি।’ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে যে স্বৈরশাসকের সঙ্গে সহাস্যবদনে শুভেচ্ছাবিনিময় করেছেন, যাঁকে গণভবনে ডেকে আপ্যায়ন করেছেন, সেই শেখ হাসিনাই ১৯৯১ সালে বিরোধী দলের নেত্রী থাকতে তাঁকে অবিলম্বে জেলখানায় পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার বক্তব্য ছিল এরূপ, ‘মাননীয় স্পিকার, সংসদ নেত্রী (খালেদা জিয়া) নির্বাচনের পূর্বে সাত দিনের মধ্যে এরশাদের বিচার এবং ফাঁসির দাবি করেছিলেন। এখন তিনিই প্রধাণমন্ত্রী, আজকে আমরাও বলতে চাই তিনি এখনো কেন এরশাদকে শাস্তি করতে পারেননি? শেখ হাসিনা এরশাদের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেননি বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বিএনপি আমলে যাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলখানায় পাঠানো এবং বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন, তাঁর দুই মেয়াদের পুরো সময়টাই তাঁকে কারাগারের বাইরে রেখেছেন। যদিও খালেদার প্রথম শাসনামলের পুরো সময়টাই তিনি জেলে ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে এরশাদ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোট করার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সব চোর এক হয়েছে। এখন সেই ‘সব চোরের’ পালের গোদাকে তিনিই সসম্মানে বরণ করে নিলেন। তাঁর দল থেকে ছয়জন মন্ত্রী এবং একজন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দিলেন। নূর হোসেন-তাজুলদের আত্মা আপনাদের ক্ষমা করবে কি?
স্বৈরশাসনের পথে শেখ হাসিনা:
শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় ক্ষমতায় টিকে থাকার বাসনায় পাগলপারা। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নিজের মত করে দলীয় আদর্শের ব্যক্তিবর্গকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করেন, সংবিধানকে উলট-পালট করে আইনের বুলি আওড়িয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মানসে দেশকে চরম অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন শেখ হাসিনার আসে-পাশে যারা আছেন তারা তাকে ঘিরে রেখেছেন, তৈলমর্দন করছেন ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বাধ্য করছেন। কারণ সে ক’য়েকশ দলীয় ও আমলা ব্যক্তি এত বেশী দুর্ণীতি ও অপকর্ম করেছেন যে ক্ষমতা হারালে কারো রক্ষা হবেনা বলে তারা ভয় করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নির্বিচারে গুলিতে এত লোকের হানাহানির ঘটনা কখনো ঘটেনি। হাসিনা সরকারের এহেন আচরণের বিরুদ্ধে কোন ধরণের প্রতিবাদও করার সুযোগ নেই। বিরোধী দলীয় অফিসগুলো বন্ধ করে রেখেছে মাসের পর মাস। সব বক্তব্য শুধু ওনাদের, শুধু ওনারাই বলবেন; বিরোধী দলগুলোর কিছুই বলার বা মতপ্রকাশের সুযোগ নেই। সভা-সমাবেশে গুলি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এখন আইন শৃংখলা বাহিনীর নিয়মিত দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে নির্মম নির্যাতন এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছেছে। গুম-হত্যা এখন বিরোধী শিবিরের সকল নেতাকর্মী তাড়িয়ে বেড়ায়। রিমান্ডের নামে যে নির্যাতনের খড়গহস্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে অনেক নিরপরাধ মানুষকে জীবনের তরে পঙ্গু বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যা সভ্যসমাজে কখনো চিন্তাও করা যায়না। দেশের সকল বিরোধী মতকে দমনের জন্য হাজার হাজার সাজানো মামলায় জড়িয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে ফাঁসি, যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ফ্রেমে পিষ্ট করছে। অতীতের যে কোন স্বৈরশাসককে হার মানিয়েছেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে দেশাভ্যন্তরে আসন্ন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে তাতে দেশ বানিজ্যিক অবরোধের মুখে পড়তে পারে। ভারতনির্ভর শেখ হাসিনা তার অবস্থান কি তাহলে স্বৈরাচারীর তালিকায় এক নাম্বারে নাম লিখাতে চলছেন? হয়ত বা তার এমন পরিণিতির জন্য দেশবাসীকে আর ক’টা দিন অপেক্ষা করতে হবে। ইতিহাস এটিই বলে।
৭২-৭৫ এ দেশের রাজনীতিতে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো এখন হুবহু সেই পরিবেশই বিরাজ করছে। জীবন যাপনের সকল উপকরনের ব্যাপক দাম বেড়েছে। কোথাও কেউ সরকারী নির্দেশ মানছেনা। দেশের দশভাগ লোকের নেতারা ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম নিয়ে তামাশা শুরু করেছেন। একসময় মরহুম শেখ মুজিব বলেছিলেন বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তিনিই ভারতের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও শেখ মুজিব সেটা আমলে নেননি। তিনি নিজেকে একজন মুসলমানই মনে করতেন। মুজিব কন্যা এখন যাদের দলে তুলে নিয়ে ক্ষমতায় এককভাবে টিকে আছেন তারা সবাই তার মেকি শুভাকাঙ্খী । তিনি কি ভুলে গেছেন? তার পিতার খুনের পর তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রেখে বিদেশ পালিয়ে তাকে ফেরাউন বলে গালি দিয়েছে। এছাড়া পৃথিবীব্যাপী যত স্বৈরশাসক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে জেকে বসেছিল, কারো পরিনতিই শুভকর হয়নি, শুধুমাত্র তাদের একঁগুয়েমী ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার জন্য। এদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু রয়েছে বাংলাদেশের। স্বৈরাচারী কোন শাসক যখন একটি জনবসতির উপর কর্তৃত্ব লাভ করে তখন তারা সেই জনপদের মানুষদের ধ্বংস করে ফেলে। তারা সবচেয়ে বেশী অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে জনপদের সম্মানিত ব্যক্তিদের। আমরা আমাদের এই জনপদে অনেক স্বৈরশাসককে দেখেছি। আমাদের আশেপাশের দেশেও বহু অত্যাচারী স্বৈরশাসক ছিল। তারা কেউই আজ আর নেই। ইতিহাসের পাতা থেকেও আমরা বহু অত্যাচারী ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বৈরশাসকের কথা জেনেছি। ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য এখনও বহুদেশের শাসকরা যুদ্ধে নেমেছে। তারা কখনই সফল হবেনা। বাংলাদেশেও কোন শাসকের এই অপচেষ্টা সফল হবেনা। মহান আল্লাহ এই জনপদকে ইসলাম ও মুসলমানের জন্য তৈরী করেছেন। তিনিই মুসলমানদের কল্যাণে বাংলাদেশকে রক্ষা করবেন।
প্রকাশিত লিঙ্কঃ
অত্যাচারী শাসকের শেষ পরিণতি:- (কোরআন-হাদিস ভিত্তিক)
লেখক: ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ)
অনুবাদঃ ইউসুফ ইয়াসীন
যালিমদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহর নিদর্শন পর্যায়ক্রমিকভাবে আসছে এবং অত্যাচারীদের উপর তাদের শাস্তি বিরতিহীনভাবে এসে পড়ছে। বেন আলী এবং মোবারকের ঘটনা এখনো বিশ্ব দৃষ্টির অন্তরাল হয়নি। সুতরাং প্রত্যেক শুরুরই শেষ আছে এবং প্রত্যেক শাসনকালের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা বলেন, এবং তোমার রব তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে মোটেই উদাসীন নন।﴿[৬: ১৩২]
মহান আল্লাহ যালিমদের শেষ পরিণতির জন্য কারণ তৈরি করেছেন এবং তাদের যুলুমের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তির বিধানও রেখেছেন, তিনি তাঁর ঐশ্বরিক ক্ষমতা দ্বারা তা নির্ধারণ করেছেন অথবা তাঁর পবিত্র আদেশ দ্বারা আর তাঁর ফয়সালা আসতে খুব বেশি দিন বাকী নেই। সুতরাং যালিমদের তাদের সুসময়ের জন্য ছেড়ে দাও এবং তাদের অপেক্ষা করতে দাও। মহান আল্লাহ বলেন, আমাদের (ব্যাপারে) তোমরা কি (বিজয় ও শাহাদাৎ) এ দুটো কল্যাণের যে কোনো একটির অপেক্ষা করছো? কিন্তু তোমাদের জন্য আমরা যা কিছুর প্রতিক্ষা করছি তা হচ্ছে, আল্লাহ তা‘য়ালা নিজে থেকে তোমাদের আযাব দিবেন কিংবা আমাদের হাত দিয়ে (তোমাদের তিনি তোমাদের শাস্তি পৌঁছাবেন), অতএব তোমরা অপেক্ষা করো, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।﴿ [৯: ৫২]
মুমিনদের পরিণতির ব্যাপারে শত্রুদের চিন্তা-ভাবনা কি? যে কোন পরিণতিই তাদের জন্য উত্তম- হয়তোবা বিজয় যা আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত রাখবে নতুবা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শাহাদাহ্ যা হলো সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।
আর যারা শরী‘য়াহ থেকে বিমুখ হয়ে বহু দূরে সরে গিয়েছে; তাদের ব্যাপারে মুমিনদের দৃষ্টিভঙ্গি কি? হয়তোবা আল্লাহ্ শাস্তি দিবেন- যেভাবে তিনি পূর্ববর্তী অস্বীকৃতিকারীদের ধ্বংস করেছিলেন নতুবা মুমিনরাই স্বীয় হস্তে তাদের উদ্ধত ও হঠকারী আচরণের জন্য শাস্তি দিবে। আল্লাহ্ বলেন,অতএব তোমরা অপেক্ষা করো, আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।﴿ [৯: ৫২] সর্বোত্তম ফলাফল সবারই জানা …. চূড়ান্ত সফলকাম মু‘মিনরাই হবে।
নিশ্চয়ই, আল্লাহ বহু যালিমকে ধ্বংস করেছেন, একক কিংবা গোষ্ঠী নির্বিশেষে এবং তিনি উত্তম মর্যাদাসম্পন্ন, আমাদেরকে তাদের ধ্বংস ও পরিণতি দেখিয়েছেন, যাতে আমরা নিজ চোখে তা দেখতে পারি। তাঁর পবিত্র কিতাবে তিনি তাদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন আর আমাদের চোখে দেখার চেয়েও আমাদের রবের বাণীর উপর রয়েছে অনেক বেশী আস্থা।
স্রষ্টা, সুমহান মর্যাদাসম্পন্ন, তিনি বলেন, আ‘দ ও সামুদকেও (আমি ধ্বংস করে দিয়েছি) এবং তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বসতি থেকেই তা তোমাদের কাছে (আযাবের সত্যতা) প্রমাণিত হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কাজ তাদের কাছে শোভন করে রেখেছিলো এবং (এ কৌশলে) সে তাদেরকে (সঠিক ) পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে অথচ তারা তাদের (অন্য সব ব্যাপারে) ছিলো দারুন বিচক্ষণ। কারুন, ফিরাউন ও হামানকে ও (আমি ধ্বংস করেছি)।
মুসা তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াত নিয়ে এসেছিলো, কিন্তু তারা তাকে (মানার চেয়ে) ও যমীনে বড় বেশি অহংকার করেছিলো এবং তারা কোনো অবস্থাতেই (আমার আযাব থেকে) পালিয়ে আগে যেতে পারতো না। অতঃপর এদের সবাইকে আমি নিজ নিজ গুনাহের কারণে পাকড়াও করেছি, এদের কারো উপর আমি প্রচন্ড ঝড় পাঠিয়েছি, কারো উপর মহা গর্জন এসে আঘাত হেনেছে, কাউকে আমি যমীনের নিচে গেড়ে দিয়েছি, কাউকে (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি, (মুলতঃ) আল্লাহ তাআলা এমন ছিলেন না যে, তিনি তাদের কারো উপর কোনো যুলুম করেছেন,যুলুমতো তারা নিজেরাই নিজেদের উপর করেছে।
﴿ [২৯: ৩৮-৪০]
সেইসব যালিমরা যাদের আল্লাহ সমন্বিতভাবে ধ্বংস করেছেন তাদের মধ্যে ছিলো আ‘দ ও সামুদ জাতির লোকজন, ছিলো কারুন, ফিরাউন ও হামান। নিশ্চয়ই তাদের পরিণতি এবং ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের আগেই অবহিত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, আ‘দ (জাতির ঘটনা ছিলো), তারা (আল্লাহ তা‘য়ালার) যমীনে অন্যায়ভাবে দম্ভভরে ঘুরে বেড়াতো এবং বলতো আমাদের চাইতে শক্তিশালী আর কে আছে? অথচ ওরা কি চিন্তা করে দেখেনি, যে আল্লাহ তাআলা তাদের সৃষ্টি করলেন, তিনি শক্তিতে তাদের চেয়ে অনেক বেশী প্রবল, (আসলে) ওরা আমার আয়াতসমূহকেই অস্বীকার করতো।﴿ [৪১: ১৫]
সুতরাং আল্লাহর উপর অবিশ্বাস, তাঁর আয়াতসমুহ প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর নবীদের অবমাননা সত্বেও তারা পৃথিবীতে উদ্ধত ছিলো, আশেপাশের লোকদের উপর যুলুম করতো, দমন নিপীড়ণ চালাতো এবং ক্ষমতার মোহে অন্ধ ছিলো। এবংতারা বলতো আমাদের চাইতে শক্তিশালী আর কে আছে?﴿সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের গর্বের জবাব দিচ্ছেন বিস্ময়ভাবে, অথচ ওরা কি চিন্তা করে দেখেনি, যে আল্লাহ তাআলা তাদের সৃষ্টি করলেন, তিনি শক্তিতে তাদের চেয়ে অনেক বেশী প্রবল।﴿
তারা তাদের অহমিকতা, আত্নম্ভরিতা ও দুনিয়ার আরাম আয়েশ, যা আল্লাহ তাদের ওপর স্থাপন করে দিয়েছিলেন, তা দ্বারা প্ররোচিত হতো। আর এটাই হচ্ছে যালিম ও অন্যায়কারীদের পথ।
বস্তুত, তাদের নবী হুদ (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) তাদেরকে তাদের পাপাচার, অন্যায়, দাম্ভিকতা ও অসৎকাজের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তোমরা প্রতিটি উচুঁ স্থানে স্মৃতি সৌধ হিসেবে বড় বড় ঘর বানিয়ে নিচ্ছো, যা তোমরা একান্ত অপচয় (হিসেবেই করছো)। এমন (নিপুণ শিল্পকর্ম) দিয়ে প্রাসাদ বানাচ্ছো যা (দেখে) মনে হয় তোমরা বুঝি এ পৃথিবীতে চিরদিন থাকবে। (অপরদিকে) তোমরা যখন কারো উপর আঘাত হানো, সে আঘাত হানো অত্যন্ত নিষ্ঠুর স্বেচ্ছাচারী হিসেবে, অতএব তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। তোমরা ভয় করো তাঁকে যিনি তোমাদের এমন সবকিছু দিয়ে সাহায্য করেছেন যা তোমরা ভালো করেই জানো। তিনি চতুষ্পদ জন্তু জানোয়ার,সন্তান সন্ততি দিয়ে তোমাদের সাহায্য করেছেন, (সাহায্য করেছেন) সুরম্য উদ্যানমালা ও ঝর্ণাধারা দিয়ে। সত্যিই আমি (এসব অকৃতজ্ঞ আচরণের কারণে) তোমাদের জন্য একটি কঠিন দিনের শাস্তির ভয় করছি।﴿ [২৬: ১২৮-১৩৫]
কিন্তু যালিমরা আল্লাহর আদেশ থেকে বিরত থাকলো এবং রসূলদের মিথ্যেবাদী হিসেবে সাব্যস্থ করলো। মহান আল্লাহ বলেন, তারা বললো, (হে নবী) তুমি আমাদের কোনো উপদেশ দাও আর না দাও উভয়টাই আমাদের জন্য সমান। (তোমার) এসব কথা আগের লোকদের নিয়মনীতি ছাড়া আর কিছূই নয়। (আসলে) আমরা কখনো আযাবপ্রাপ্ত হবো না। অতঃপর তারা তাঁকে মিথ্যে সাব্যস্থ করলো আর আমিও তাদেরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিলাম । (মূলতঃ) এ (ঘটনার)মাঝে ও রয়েছে (শিক্ষণীয়) নিদর্শন, (তা সত্বেও) তাদের অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না।﴿[২৬: ১৩৬-১৩৯]
এটাই হচ্ছে আল্লাহর সুন্নাহ্। তিনি বলেন, (হে নবী), অবশ্যই তাদের ব্যাপারে তোমার মালিকের কথা (সত্য) প্রমাণিত হয়ে গেছে, তারা কখনোই ঈমান আনবে না। এমনকি তাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে পৌছঁলেও (তারা ঈমান আনবে এমন) নয়, যতক্ষণ না তারা কঠিন আযাব নিজেদের চোখে দেখতে পাবে।﴿ [১০: ৯৬-৯৭]
মানবজাতির ঘটনাসমূহের মধ্যে আরেকটি ঘটনা, যা ইতিহাসের সমুদ্রে বার বার ঢেউ তোলে, সেই দৃশ্যে দেখা যায় সত্য ও মিথ্যের মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে তার অনিবার্য পরিণতি। মহান আল্লাহ বলেন, আর মাদইয়ানবাসীদের কাছে (আমি পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই শোয়াবকে, সে বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই, তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে তাঁর সুস্পষ্ট নিদর্শন পৌছে গেছে, অতএব তোমরা (সে মোতাবেক) ঠিক ঠিক মতো পরিমাপ ও ওজন করো, মানুষদের দেবার সময় কখনো কম দিয়ে তাদের ক্ষতিগ্রস্থ করো না, আল্লাহ তাআলার এ যমীনে (শান্তি) ও সংস্কার স্থাপিত হওয়ার পর তাতে তোমরা পুনরায় বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, তোমরা যদি আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনো,তাহলে এটাই (হবে) তোমাদের জন্য কল্যানকর। প্রতিটি রাস্তায় তোমরা এজন্য বসে থেকো না যে তোমরা লোকদের ধমক (দেবে ভীত সন্ত্রস্থ করবে) এবং যারা আল্লাহর পথে ঈমান এনেছে তাদের আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখবে, আর সবসময় (অহেতুক) বক্রতা (ও দোষ ত্রুটি) খুঁজতে থাকবে, স্মরণ করে দেখো, যখন তোমরা সংখ্যায় ছিলে নিতান্তই কম, তখন আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেন এবং তোমরা পুনরায় চেয়ে দেখো বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিলো।﴿ [৭: ৮৫-৮৬]
মাদইয়ান ছিলো একটি শহর যেখান অধিবাসীরা তাদের অর্থনীতিতে সীমা অতিক্রম করেছিলো, আর্থিক লেনদেনে সীমালঙ্ঘন করেছিলো এবং অবৈধভাবে মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করতো। তারা আল্লাহর রাস্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এবং সত্যানুসন্ধানীদে হুমকি দিত। সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হবার পথ তারা খুঁজতো এবং আল্লাহর নবী শোয়াইব( আঃ) যে পথে তাদের ডাকতো ও সতর্ক করতো যদি তারা অবিশ্বাসও করে তবুও যেন তারা ধৈর্য্য ধারণ করে, যেহেতু দুপক্ষই অপেক্ষা করছে আল্লাহর পবিত্র হুকুমের যা দিয়ে তিনি বিচার করবেন, আমাকে যে বাণী দিয়ে পাঠানো হয়েছে তার উপর কোনো এক গোষ্ঠী যদি ঈমান আনে আর একটি দল যদি তার উপর কোনো ঈমান না আনে, তারপরও ধৈর্য্য ধারণ করো যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘য়ালা নিজেই আমাদের মাঝে ফয়সালা না করে দেন, আর তিনিই হচ্ছেন উত্তম ফয়সালাকারী ।﴿ [৭: ৮৭]
অর্থাৎ কোন ক্ষতি সাধন না করেই অপেক্ষা করা, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মাঝে বিচার করেন আর আল্লাহই উত্তম বিচারক।
ঈমান পৃথিবীতে বিরাজ করুক এবং এমন কিছু লোক প্রতিনিধিত্ব করুক যারা তাগুতদের প্রতি নিবেদিত নয়; এটা তাগুতদের কাছে কখনোই আকাঙ্খিত না। একটা মুসলিম দল যারা আল্লাহ ব্যতীত কারো প্রতি আনুগত্যশীল নয়, যারা আল্লাহর ক্ষমতাকেই স্বীকার করে, তাঁর আইন ব্যতীত অন্য কারো ফয়সালা মানে না, তাঁর নির্দেশিত পথ ছাড়া অন্য কোন পথ অনুসরণ করে না- এই দল অবশ্যই তাগুতদের কর্তৃত্বের জন্য হুমকির কারণ। এমনকি, সেই দল যদি নিজেদের বিচ্ছিন্নও করে রাখে, তাগুতদের থেকে দূরে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না যথোপযুক্ত সময়ে আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে।
সত্যই, মুসলিম দলগুলোর অনাগ্রহ সত্ত্বেও এই তাগুতরা মুসলিমদের মাঝে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিচ্ছে সেই মাত্রায় যেখানে সত্যের অসিত্মত্বই মিথ্যেকে উত্তেজিত করে এবং সত্যের এই অস্তিত্বের কারণে মিথ্যের উপর এই আন্দোলনের আর্বিভাব ঘটে এবং এটাই আল্লাহর সুন্নাহ্ যা যে কোন ভাবেই এসে পড়ে – তার সম্প্রদায়ের কিছু নেতৃত্বস্থানীয় লোক যারা বড়াই অহংকার করেছিলো, তারা বললো, হে শোয়ায়েব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদের আমাদের জনপদ থেকে বের করে দিবো অথবা তোমাদের অবশ্যই আমাদের জাতিতে ফিরে আসতে হবে। সে বললো, যদি আমরা ইচ্ছুক না হই তাহলেও (কি তাই হবে)? সেখান থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের (একবার) মুক্তির দেবার পর যদি আমরা আবার তোমাদের জীবনাদর্শে ফিরে আসি, তাহলে আমরা (এর মাধ্যমে) আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যে আরোপ করবো, আমাদের পক্ষক্ষ এটা কখনোই সম্ভব নয় যে আমরা সেখানে ফিরে যাবো, হাঁ আমাদের মালিক যদি আমাদের ব্যাপারে অন্য কিছু চান, (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা), অবশ্যই আমাদের মালিকের জ্ঞান সবকিছুর উপর ছেয়ে আসে, আমরা একান্তভাবেই আল্লাহর উপর নির্ভর করি এবং বলি, হে আমাদের মালিক, আমাদের এবং আমাদের জাতির মাঝে তুমি একটা সঠিক ফয়সালা করে দাও, কারণ তুমিই হচ্ছো শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।﴿ [৭: ৮৮-৮৯]
আল্লাহর কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার পরও যারা কুফরীর দিকে ফিরে যায়, সত্য পথ দেখানেরার পরও, দাসত্ব থেকে মুক্ত করার পরও তারা এমন একটা মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যে, তারা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে ভালো কোন কিছু খুঁজে পায়নি। সুতরাং তারা আল্লাহর নিন্দা করে এবং তাগুতদের সাথে মিলিত হয়। অথবা ইঙ্গিত দেয় যে, তাগুতের ধর্মে টিকে থাকার কারণ আছে, সেটার আইনপ্রনয়ণ বৈধ এবং সেটা আল্লাহর উপর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে না। পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, তারা তাগুতের কাছে ফিরে যায় এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার পরও তাদেরকে সমর্থন দেয়। এটা একটা ভয়ংকর স্বাক্ষ্য, এমন ভয়ংকর যে, যে পথনির্দেশ পায়নি কিংবা ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করেনি, তার স্বাক্ষক্ষ্যর চেয়ে মারাত্বক, কারণ তাদের স্বাক্ষ্য হচ্ছে তাগুতদের স্বীকৃতি দেয়া।
তাগুতের দাসত্বকে পরিহার করা ও শুধু আল্লাহর দাসত্বকে মেনে নেয়া অনেক বেশী সহজ ও স্বল্পব্যয় যত বেশী ব্যয় তাগুতের দাস হওয়া- যেখানে ব্যয় হয় নীতিবহির্ভূতভাবে, বিবেচনাহীন সুস্পষ্ট নিরাপত্তা, ব্যক্তি, আবাসিক সর্বোপরি অধিকৃত সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা। এই ব্যয় হয় বোঝা ও দীর্ঘসময়ব্যাপী এবং সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে যে, মানুষ হয়ে একজন মানুষের দাসত্ব মেনে নেয়া। যে দাসত্ব সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো মানুষ হয়ে অন্য মানুষের খেয়াল খুশির অনুসরণ করা, একজনের ভাগ্য অন্য মানুষের আকাঙ্খার উপর নির্ভর করা, একজনের জীবনের নিয়ন্ত্রণ অন্যজনের খামখেয়ালীর উপর নির্ভর করা।
তাগুতের শাসনে মানুষের সম্পদ ব্যয় হয় – যা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত না, এতে ব্যয় হয় তাদের সন্তান-সন্ততি, কারণ তাগুতেরা তাদেরকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলে, তাদের কল্পনা, চিন্তাচেতনা, রীতিনীতি, বৈশিষ্ট্য বদলে দেয়। এমনকি, তা এতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় যে, তাগুতদের একটা কর্তৃত্বময় ক্ষমতা তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাদের লক্ষ্যস্থল বুঝে তাগুতেরা তাদের পরিত্যাগ করে, তাদের মাথার খুলি ও অবশিষ্টাংশ দ্বারা নিজের ও সহযোগীদের জন্য গৌরবের পতাকা স্থাপন করে।
ভবিষ্যতে এটা তাদের শ্রদ্ধা হারানোর কারণ হয়, কারণ সত্য এই যে, অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের অবৈধ যৌনাচার থেকে বিরত রাখার কোন ক্ষমতা রাখে না। তাগুতেরা সবসময় খুশি থাকে তা হোক সরাসরি ধর্ষন যা সবসময় হয়েই চলেছে অথবা তাদের সে ধরনের চিন্তাধারায় গড়ে তোলা যাতে তাদের যৌন কামনা অনুমোদনযোগ্য হয়- স্বাধীনতা, মেয়েলিপনা, সমঅধিকার ও আরও নানা স্লোগানের মাধ্যমে এবং সহজ করে দেয়া হয় তাদের জন্য বেশ্যাবৃত্তি ও পাপাচারের জন্য সহজ পথ।
যে কেউ ভাবে যে তার সম্পদ, সম্মান, জীবন এবং তার সন্তান-সন্ততির জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে তাগুতের আইনে থেকে বিপদ থেকে পালাতে পারবে, নিশ্চয়ই সে এক অন্ধ মোহে লিপ্ত অথবা বাস্থবতার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।
তাগুতের আনুগত্যের মূল্য মান, সম্মান ও সম্পদের দিক থেকে অনেক বেশী এবং আল্লাহর এবং আল্লাহর দাসত্ব যে মূল্যই হোক না কেন, এমনকি, তা দুনিয়ার মাপকাঠিতে বেশী যথাযথ ও লাভজনক, যদি আমরা আল্লাহর কাছে সেটার যে ওজন হবে তা উপেক্ষাও করি । তার জাতির নেতৃত্বস্থানীয় লোক যারা (আল্লাহ তাআলার নবীকে) অস্বীকার করেছে, তারা (সে জাতির সাধারণ মানুষদের) বললো, তোমরা যদি শোয়ায়েবের অনুসরণ করো তাহলে তোমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।﴿[৭: ৯০]
এটা সম্পূর্ণ বিস্মরণ প্রবণতা, পরিপূর্ণ অমনোযোগিতা এবং অতি মাত্রায় পুনঃপতন হওয়া যখন সত্যকে ক্ষতি ও পথনির্দেশক হিসেবে দেখা হয়। তাই দেখো, তাদের শেষ পরিণতি কিভাবে হয়েছিলো এবং এটাই আসল ক্ষতি। (নবীর কথা অমান্য করার কারণে) একটা প্রচন্ড ভূকম্পন তাদের (এমনভাবে) আঘাত করলো যে, অতঃপর দেখতে দেখতে তারা সবাই তাদের নিজ নিজ ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলো। যারা শোয়াবকে অমান্য করলো,তারা (এমনভাবে) ধ্বংস হয়ে গেলো, (দেখে মনে হয়েছে), এখানে কেউ কখনো কোনদিন বসবাস করেনি, (বস্ত্তত) তারাই সেদিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যারা শোয়ায়েবকে অস্বীকার করেছে। এরপর সে (শোয়ায়েব) তাদের কাছ থেকে চলে গেলো, (যাবার সময়) সে বললো, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের কাছে আমার মালিকের বাণীসমূহ পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং আমি (আন্তরিকভাবেই) তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছিলাম, আমি কেন এমনসব মানুষের জন্য (আজ) আফসোস করবো যারা আল্লাহকেই অস্বীকার করে!﴿[৭: ৯১-৯২]
যেভাবে আল্লাহ যালিমগোষ্ঠিদেরকে ধ্বংস করেছিলেন, সেভাবে একক সৈরশ্বাসকদেরও ধ্বংস করেছিলেন। যমীনে যে নিজের উচ্চপ্রশংসা করতো সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত ফেরাউন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, (ঘটনাটা ছিলো এই), ফেরাউন (আল্লাহর) যমীনে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো, সে তার (দেশের) অধিবাসীদের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে রেখেছিলো, সে তাদের একটি দলকে হীনবল করে রেখেছিলো, সে তাদের পুত্রদের হত্যা করতো এবং নারীদের জীবিত রেখে দিতো, অবশ্যই সে ছিলো (যমীনে) বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের একজন। (ফেরাউনের এসব নিপীড়ণের মোকাবেলায়) আমি সে যমীনে যাদের হীনবল করে রাখা হয়েছিলো তাদের উপর (কিছুটা) অনুগ্রহ করতে এবং আমি তাদের (ফেরাউনের সেবাদাস থেকে উঠিয়ে দেশের) নেতা বানিয়ে দিতে এবং তাদের (এ যমীনে) উত্তরাধিকার বানিয়ে দিতে ইরাদা করলাম। আমি (ইচ্ছা করলাম) সে দেশে তাদের ক্ষমতার আসনে বসিয়ে দেবো এবং তাদের মাধ্যমে ফেরাউন, হামান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের সে ব্যাপারটা দেখিয়ে দেবো, যে ব্যাপারে তারা আশংকা করতো।﴿ [২৮: ৪-৬]
এটাই হচ্ছে শাসকের যুলুম, কতৃত্ব এবং হিংস্রতা, তা হচ্ছে দাম্ভিকতা ও ঔদ্ধত্বের যুলুম। এটা হচ্ছে যুলুমের চৈতন্য এবং তার নিয়ম হচ্ছে দূর্নীতি, খুন-খারাপি, মানুষকে দূর্বল হিসেবে দেখা, এমনকি তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা। যালিমরা শ্রেষ্ঠত্ব চায় এবং মু‘মিনদের ইচ্ছেকে দমিয়ে দিতে চায় কিন্তু ফেরাউনরা যা চায় আল্লাহ তা চান না এবং তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই আল্লাহর রায় কার্যকর হয়।
সেইসব সীমালঙ্ঘনকারী যালিম শাসকরা তাদের সশস্ত্র বাহিনী, কর্তৃত্ব ও প্রতারণাময় কুট-কৌশল দ্বারা প্রতারিত হতে থাকে। তারা যা ভালবাসে তা তাদের নিজেদের জন্য পছন্দ করে, আর তাদের অন্তরে যে নিকৃষ্টতা রয়েছে তা তাদের শত্রুদের জন্য বেছে রাখে। এবং মনে করে যে, তাদের সবকিছু করারই ক্ষমতা রয়েছে।
কিন্তু আল্লাহ তাদের চাওয়াকে অপছন্দ করেছেন, তাই তিনি ফেরাউন, হামানদের চ্যালেজ্ঞ করেছেন এবং বলেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে তাদের প্রস্তুতি ও সতর্কতা কোন কাজেই আসবে না। সেই যালিমরা অসহায় মানুষদের উপর অনবরত নির্যাতন চালাতো এবং তাদের নবজাতক ছেলেদের হত্যা করে মেয়েদের জীবিত রাখতো। তারপরেও তারা তাদের অধিকারভূক্ত নির্যাতিত দাসদেরকে ভয় পেত এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকতো। তাই তারা তাদের খোঁজার জন্য গোয়েন্দা লাগিয়ে রাখতো এবং তাদের উপর নজরদারী করতো। এতো কিছুর পরেও আল্লাহ তাদের উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করতে চেয়েছিলেন এবং তাদেরকে দাস না বানিয়ে নেতা বা শাসক বানাতে চেয়েছিলেন এবং আল্লাহ সেই সীমালঙ্ঘনকারী যালিম শাসকদেরও ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন যারা সঠিক পথ পরিত্যাগ করে বিপথে চলে গিয়েছিলো অতঃপর আমি তাকে ও তার গোটা বাহিনীকে ধরে সমুদ্রে নিক্ষক্ষপ করলাম, অতঃএব (হে নবী), তুমি দেখো (বিদ্রোহ) করলে যালিমদের পরিণাম কি ভয়াবহ হয়ে থাকে। আমি ওদের এমন সব লোকদের নেতা বানিয়েছি যারা (জাহান্নামের) আগুনের দিকেই ডাকবে,(এ কারণেই) কিয়ামতের দিন তাদের (কোন রকম) সাহায্য করা হবে না। দুনিয়ায় (যেমন) আমি তাদের পেছনে আমার লা‘নত লাগিয়ে রেখেছি, (তেমনি) কেয়ামতের দিনও তারা নিতান্ত ঘৃনিত লোকদের মধ্যে শামিল হবে।﴿ [২৮ ৪০-৪২]
আল্লাহর কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন, আল্লাহর সাথেই তাদের হিসাব এবং তারা দুনিয়াতে যে সুখ শান্তি ভোগ করেছিলো তা তাদের কোন উপকারেই আসবে না।(যাবার সময়) ওরা নিজেদের পেছনে কত উদ্যান, কত ঝর্ণা ফেলে গেছে, কত ক্ষক্ষতের ফসল, কত সুরম্য প্রাসাদ, কত (বিলাস) সামগ্রী যাতে ওরা নিমগ্ন থাকতো, এভাবেই আমি আরেক জাতিকে এসব কিছুর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম। (এ ঘটনার ফলে) ওদের জন্য না আসমান কোন অশ্রুপাত করলো না (যমীন তাদের এ পরিণতির জন্য) একটু কাঁদলো, (আযাব আসার পর) তাদের আর কোন অবকাশই দেয়া হলো না।﴿ [৪৪: ২৫-২৯]
স্বৈরশাসকের ইতিহাস উল্টে গেছে এবং সে (ফেরাউন) হয়ে গেছে পুরনো স্মৃতি, কিন্তু তার পাপ, অপকর্ম তাকে ঘিরে রেখেছে একটি অসৎ ফলাফল ও লানত হিসেবে।(আজ সত্যি সত্যিই) তোমরা আমার সামনে নিঃসঙ্গ অবস্থায় এলে, যেমনি নিঃসঙ্গয় অবস্থায় আমি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমি তোমাদের যা কিছু দিয়েছি তার সবকিছুই ফেলে এসেছো, তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারী ব্যক্তিদের – যাদের তোমরা মনে করতে তারা তোমাদের (কাজকর্মের) মাঝে অংশীদার, তাদের তো আজ তোমাদের মাঝে দেখতে পাচ্ছি না। বস্তুত তাদের এবং তোমাদের মধ্যেকার সেই (মিথ্যে) সম্পর্ক আজ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের ব্যাপারে তোমরা যে ধারনা করতে তাও আজ নিস্ফল (প্রমাণিত) হয়ে গেছে।﴿ [৬: ৯৪]
আরেকজন অত্যাচারী ছিলো, এক উদ্ধত শাসক যে আল্লাহর রহমতের প্রতি অকৃতজ্ঞ ছিলো। সে ছিলো কারুন যার ছিলো বিশাল ভাগ্য ও অনেক সম্পদ, তবে তা সত্ত্বেও তার সম্পদ তার কোন উপকারে আসেনি কারণ সে আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে এবং শুধু তার নিজের ক্ষমতায় সন্তুষ্ট থেকেছে ও আল্লাহ তাকে বিশ্বাস করে যে সম্পদ দিয়েছিলেন তা তাকে প্ররোচিত করেছিলোঅতঃপর (একদিন) সে তার লোকদের সামনে (নিজের শান শওকত প্রদর্শনীর জন্য) জাঁকজমকের সাথে বের হলো, (মানুষের মাঝে) যারা পার্থিব জীবনের (ভোগবিলাস) কামনা করতো তখন তারা বললো, আহা! (কত ভালো হতো) যদি কারুনকে যা দেয়া হয়েছে আমাদেরকে তা দেয়া হতো, আসলেই সে মহাভাগ্যবান ব্যক্তি। (অপরদিকে) যাদের (আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে) জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা বললো, ধিক তোমাদের (সম্পদের) উপর, বস্ত্তত যারা আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনে ও নেক কাজ করে,তাদের জন্য ও আল্লাহ তাআলার দেয়া পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ , আর ধৈর্যশীলরাই শুধু তা পেতে পারে। পরিশেষে আমি তাকে ও তার (ঐশ্বর্যভরা) প্রাসাদকে যমীনে গেড়ে দিলাম। তখন (যারা এ সম্পদের জন্য একটু আগেই আক্ষক্ষপ করেছিলো তাদের) এমন কোন দলই (সেখানে মজুদ) ছিলো না, যারা আল্লাহ তাআলার (গজবের) মোকাবেলায় তাকে একটু সাহায্য করতে পারলো, না সে নিজেকে নিজে রক্ষা করতে পারলো।﴿ [২৮: ৭৯-৮১]
এবং এই হচ্ছে যালিম ও অত্যাচারীদের শেষ পরিণতি এবং তোমাদের রব তাদের ধ্বংস করতে সক্ষম, তবে সব শাসনকালেরই একটা শেষ আছে। আল্লাহর সুন্নাহ্ অগ্রসর হয়ে চলেছে এবং বর্তমানের তাগুতদের জন্যও একটা নির্দিষ্ট সময় আছে যেখানে তাদের পৌঁছতে হবে। আমাদের (ব্যাপারে) তোমরা কি (বিজয় ও শাহাদাৎ) এ দুটো কল্যাণের যে কোনো একটির অপেক্ষা করছো? কিন্তু তোমাদের জন্য আমরা যা কিছুর প্রতিক্ষা করছি তা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা নিজে থেকে তোমাদের আযাব দিবেন, কিংবা আমাদের হাত দিয়ে (তোমাদের তিনি তোমাদের শাস্তি) পৌঁছাবেন, অতএব তোমরা অপেক্ষা করো, আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।﴿ [৯: ৫২]
আল্লাহর সুন্নাহ্ এই তাগুতদের উপর খুব শিগগিরই আসছে এবং আমাদের হাতের মাধ্যমেই তাদের ধ্বংস ও শাস্তি বৃদ্ধি পাবে । এটা হচ্ছে আল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি তাদের উপর যারা আল্লাহর আদেশ থেকে নিবৃত্ত থাকে এবং তার পথ থেকে সরে আসে। তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ তাআলা তোমাদের হাত দিয়েই তাদের শাস্তি দিবেন, তিনি তাদের অপমানিত করবেন, তাদের উপর বিজয় দিয়ে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং এভাবে তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের মনগুলোকেও নিরাময় করে দিবেন। তিনি এর দ্বারা তাদের মনের ক্ষোভ দূরীভূত করবেন, তিনি যাকে চাইবেন তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন, আল্লাহ তাআলা সবকিছুই জানেন এবং তিনি হচ্ছেন সুবিজ্ঞকুশলী।﴿ [৯: ১৪-১৫]
এটাই আল্লাহর আদেশ ও তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং আল্লাহ তাঁর কাজকর্মে প্রভাবশালী । আমার রব বলেন, যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছে, তোমরা তাদের কাউকে হত্যা করনি বরং আল্লাহ তাআলা তাদের হত্যা করেছেন, আর তুমি যখন তীর নিক্ষেপ করেছিলে, আসলে আল্লাহ তাআলাই নিক্ষেপ করেছিলেন, তিনি নিজের থেকে মুমিনদের উত্তম পুরস্কার দান করে বিজয় দিতে চেয়েছিলেন,নিঃসন্দেহে সবকিছু শোনেন ও জানেন। এটা হচ্ছে তোমাদের ব্যাপারে তাঁর নীতি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কাফিরদের ষড়যন্ত্র দূর্বল করে দেন।﴿ [৮: ১৭-১৮]
মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয় প্রতিরোধে আমাদের দায়িত্বঃ

উম্মাহর মাঝে বিরামহীন সংশোধনী প্রয়াসঃ  মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : “তোমাদের আগে যে সকল জাতি চলে গিয়েছে তাদের মধ্যে এমন লোক কেন থাকল নাযারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দিতে পারত?তবে কিছু সংখ্যক লোক ছাড়াযাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা করেছিলাম। আর যালিমদেরকে যে ঐশ্বর্য্য দেয়া হয়েছিল সেগুলো নিয়েই তারা মেতে রইলতারা ছিল পাপাচারী। আপনার প্রভু এমন নন যেতিনি অন্যায়ভাবে এমন জনপদ ধ্বংস করে দেবেন যার অধিবাসীরা সংশোধনরত” -(সূরা হূদঃ আয়াত ১১৬-১১৭)

ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ  হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিতকিন্তু তোমরা তা বুঝ না। [সূরা বাক্বারাহঃ আয়াত ১৫৩-১৫৪]

সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করাঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ যে আল্লাহকে ভয় করেআল্লাহ্ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ্ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন” -[সূরা ত্বালাকআয়াত ২-৩] 

সর্বদা কল্যাণকর কাজে আত্ম নিয়োগ করাঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ফিতনা ফাসাদও বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই তোমরা কল্যাণকর কাজে আত্ম নিয়োগ করো। এ বিপর্যয় তোমাদেরকে অন্ধকার রাতের মতো গ্রাস করে নেবে। কোন ব্যক্তির ভোর হবে মুমিন অবস্থায় আর সন্ধ্যা হবে কাফের অবস্থায়। আর তার সন্ধ্যা হবে মুমিন অবস্থায় আর সকাল হবে কাফের অবস্থায়মানুষ দুনিয়ার সামান্যতম স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে বিকিয়ে দেবে -(মুসলিমঃ হাদীস নং ২২১)

লোভ-লালসা থেকে আত্মরক্ষা এবং ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক থাকাঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়াটা একটা শ্যামল সবুজ সুমিষ্ট বস্তু। আল্লাহ এখানে তোমাদের প্রতিনিধি বানিয়ে পাঠিয়েছেন এবং তোমরা কি করছো তা দেখছেন। সুতরাংএই দুনিয়ায় নিজেদের-কে লোভ-লালসা থেকে আত্মরক্ষা করো এবং ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক থাকো -[মুসলিম]

সদা-সর্বদা তওবা ও ইস্তেগফার করাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে সব ধরণের বিপদাপদ হতে মুক্ত করবেনসব রকমের দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং এমন উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। -[আবু দাঊদ ও ইবনে মাজাহ]

সুন্নাহ-কে মজবুতভাবে আঁকড়ে থাকাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে থাকবেপথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ -[ মুয়াত্তা ইমাম মালেকঃ হাদিস নং ৩৩৩৮]

খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যেচক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলোহে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবেতারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টিসমূহ হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআত হল পথভ্রষ্টতা।’ -[আহমাদআবুদাঊদতিরমিযী ও ইবনু মাজাহ]

সাহাবাগণের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলেসকলেই জাহান্নামে যাবেকিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারারসূলুলাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের ছুন্নাতের উপর কায়েম থাকবে - (তিরমিযীঃ ২৫৭৮আবু দাউদ ও তারগীবঃ ৪৮)

উম্মতের মধ্য সর্বদাই হক্বের পক্ষে সংগ্রাম করাঃ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক্বের পক্ষে লড়াই করবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবে। -  [মুসলিমঃ হাদীস নং-৫০৬৩)

একই বিষয়েঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক সর্বদা সত্যের (দীনে হকের) ওপর বিজয়ী হয়ে থাকবে। যারা তাদের সহায়তা করা ছেড়ে দেবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত তারা এভাবেই হকের ওপর অবিচল থাকবে। - (মুসলিমঃ হাদীস নং-৪৭৯৮)

অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি গুমরাহকারী বাদশাহদেরকে ভয় করছি এবং তিনি আরো বলেন কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আমারউম্মতের একটা দল সর্বদা হকের উপর কায়েম থাকবে। তাঁরা সর্বদা দ্বীনের উপর কায়েম থাকবেন  কামিয়াবহবেনতাঁদেরকে কেউ কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। - [তিরমিজী শরীফঃ ২য় খন্ডপৃষ্ঠা৪৭]

বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারকারী হিসেবে জামায়ত-শিবির, তাবলীগ জামাত, হিজবুত তাওহীদ, খেলাফত মজলিস,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট,ইসলামী ঐক্যজোট,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ,বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ সকল প্রকার পির,মাশাখে, অলি-আউলিয়াগণ সকলেই দাবী করছেন যে, তারা জনগণকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন। যুগ যুগ ধরে তারা শুধু ইসলামের দাওয়াতই দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে ইসলাম প্রচারকারী দলের মধ্যে শুধু একটা দলের লোকদেরকেই আওয়ামী প্রশাসন ধরপাকড় করছে, অপহরণ, গুম, খুন করছে, জেল, যুলুম অন্যায়, অত্যাচার করছে, মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। শেষ পর্যন্ত তাদের নিবন্ধনও বাতিল করে দেয়া হলো। আর বাকি সবাই দিব্যি চলাফেরা করছে, তাদেরকে সরকার আরো সহযোগিতা করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাকি সব ইসলাম প্রচারকারী দলের লোকেরা অত্যাচারী শাসকের সাথে আঁতাত করে বা বন্ধুত্ব স্থাপন করে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তারা কী মুসলমান?
অত্যাচারী শাসক ও তাদের সমর্থিত মুসলমানদের শেষ পরিনতি কী হবে, আসুন কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে জেনে্ নেইঃ-
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে  এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।  (নূর-৬৩)
৩। আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন করবে, যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান করতে হবে।( বুখারী ও মুসলিম)
৪। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)
৫।“ হোজায়ফা  (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
৬। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
৮।“ আনাস (রাঃ) হতেবর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট আসবে। এমনকি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে চিনতে পারবো। এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবার পূর্বেই তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত। আল্লাহতায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ ছেড়ে অন্য) কতো রকম তরিকা ও অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো।(বুখারী)
৯। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মুসলমানদেরকে সকল প্রকার অত্যাচার ও যুলুম থেকে হেফাজত করুন-আমিন।
সংকলনে : মাওলানা মো: শিহাব. এম এ-ইসলামিক স্টাডিজ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)






No comments:

Post a Comment

ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা লেখকঃ মাওলানা মোঃ শিহাব,এম এ, ইসলামিক ...