(বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম)
আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী শাসক আওয়ামীলীগকে কেনো শাসন
ক্ষমতা দান করেন? এবং অত্যাচারী শাসকের করুণ পরিনতি।
সংকলনে : মাওলানা মো: শিহাব.
এম এ-ইসলামিক স্টাডিজ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)
(প্রথম অংশ)
হযরত আবুদ্দর্দা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, মুহাম্মাদ সোয়াল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি সমস্ত
সৃষ্টির উপাস্য, আমাকে ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আমি রাজন্যবর্গের অধিপতি, সম্রাটদের সম্রাট।
রাজাদের অন্তর আমার নিয়ন্ত্রণাধীন। বান্দাগণ যখন আমার অনুগত্য করে, তখন তাদের রাজা
বাদশাদের অন্তরকে রহমত ও করুনার সমন্বয়ে তাদের দিকে ঘুরিয়ে দেই। আর যখন বান্দারা আমার
অবাধ্যতা অবলম্বন করে, তখন রাজা বাদশাদের অন্তরকে রাগ ও কঠোরতার দিকে ঝুঁকিয়ে দেই,
যার ফলে তারা প্রজাদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করায়। সুতরাং হে বান্দাগণ! তোমরা রাজা
বাদশাহদের জন্য বদ দোয়া করো না; বরং আমার স্মরণে আত্মনিয়োগ কর এবং আমার সামনে কান্না
কাটি করতে থাক; আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট হব। (অর্থাৎ, আমি তোমাদের সাহায্য করব। রাজা
বাদশাহ তথা শাসন কর্তাদের অন্তরে করুনা সঞ্চার করে দেব।) [আবু নোয়াইম হিলইয়া গ্রন্থ]
অন্য এক হাদিসে নবি (সাঃ) বলেনঃ তোমরা
যেমন হবে, তোমাদের বাদশাহ তথা শাসনকর্তাও তেমনি চাপিয়ে দেয়া হবে। [মিশকাত]
অর্থাৎ, তোমরা যদি সৎ ও সৎকর্মী হও, তাহলে
আল্লাহ তোমাদের জন্য সৎ ও দয়ালু বাদশাহ নিয়োগ করবেন। আর যদি তোমরা অসৎ ও অবাধ্য হও,
তাহলে তোমাদের উপর বাদশাহও অসৎ, ফাসেক, ফাজের ও জালেম নিয়োগ করে দেয়া হবে।
অতএব হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, জালেম ও অত্যাচারী
শাসনকর্তা চাপানো হয় মানুষের অপকর্মের শাস্তি হিসেবে। শাসন কর্তৃপক্ষ যেসব অন্যায় অত্যাচার
করে, তার প্রতিফল দুনিয়া ও আখিরাতে তারা পাবে। কিন্তু জনসাধারনের জন্য তাদের অত্যাচার,
উৎপীড়ন (জনগণের) অপকর্মের শাস্তিরূপেই আরোপিত হতে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ বিপদাপদের কারণ ও প্রতিকার,
আল্লামা হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আশেকে এলাহী বুলন্দশহরী, এমদাদিয়া লাইব্রেরি, ঢাকা।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ২৬ ও ২৭
নম্বর আয়াতে বলেছেন-
قُلِ
اللَّهُمَّ
مَالِكَ
الْمُلْكِ
تُؤْتِي
الْمُلْكَ
مَنْ
تَشَاءُ
وَتَنْزِعُ
الْمُلْكَ
مِمَّنْ
تَشَاءُ
وَتُعِزُّ
مَنْ
تَشَاءُ
وَتُذِلُّ
مَنْ
تَشَاءُ
بِيَدِكَ
الْخَيْرُ
إِنَّكَ
عَلَى
كُلِّ
شَيْءٍ
قَدِيرٌ
(26) تُولِجُ
اللَّيْلَ
فِي
النَّهَارِ
وَتُولِجُ
النَّهَارَ
فِي
اللَّيْلِ
وَتُخْرِجُ
الْحَيَّ
مِنَ
الْمَيِّتِ
وَتُخْرِجُ
الْمَيِّتَ
مِنَ
الْحَيِّ
وَتَرْزُقُ
مَنْ
تَشَاءُ
بِغَيْرِ
حِسَابٍ
(27)
"বলুন, হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম
শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে
নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয়
কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।" (৩:২৬)
"তুমি রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে
পরিবর্তন কর আর তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ
দান কর।" (৩:২৭)
বর্তমান
যুগে পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রেই অত্যাচারী শাসকের আবির্ভাব ঘটেছে।এখন প্রশ্ন হলো অমুসলিম
রাষ্ট্রের শাসকগণ অমুসলিম হিসেবে তারা ধর্মীয় কোনো বিধি বিধান না মানার কারনে যা ইচ্ছে
তাইভাবে রাষ্ট্রের শাসন কাজ পরিচালনা করে থাকে, যার ফলে অশান্তি. দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ
লেগে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানরা তো মুসলমান
তারা অত্যাচারী হবে কেনো? এর জন্য দায়ী কে?
তাই
আসুন, আল্লাহ তায়ালা কেনো জনগণের উপর অত্যাচারী শাসক আরোপিত করেন তার কারণ সমূহ জেনে
নেইঃ-
বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মুসলিম
উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়ের মুল কারণ হল আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ ছেড়ে দিয়ে নিজেদের মনগড়া পন্থার অনুসরণ ও বিজাতীয়
অনুকরণ। আর আনুসাংগিক কারণ হল খিলাফাতের বিলুপ্তি, পরকালের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে
প্রাধান্য দেয়া, দুনিয়ার লোভ-লালসা, আখিরাতের প্রতি উদাসীনতা, সম্পদের মোহ,
মৃত্যুভীতি, পারস্পরিক বিরোধ ইত্যাদি। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর যামানা থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর উপর আপতিত লাঞ্ছনার কারণ
সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীস গন্থসমূহে বহু মূল্যবান বানী লিপিবদ্ধ রয়েছে। এর
মধ্য থেকে বাছাইকৃত কতিপয় আয়াত ও হাদীস সবার বিবেচনা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
অবলম্বনের জন্য পেশ করা হল।
১) ইসলামের বিধানাবলীর প্রতি অবহেলা প্রদর্শনঃ
মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বলেন : “আর যে আমার জিকির (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ করা হবে এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ
করে উঠাব। সে বলবে- হে আমার রব! আমাকে কেন অন্ধ করে উঠালেন, আমিতো (দুনিয়ায়) চুক্ষষ্মান ছিলাম। তিনি (আল্লাহ)
বলবেন : যেমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে, তেমনিভাবে আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হবে।” -(সূরা
ত্ব-হা : আয়াত১২৪-১২৬)
তিনি আরও বলেন : “মুমিনগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পুরোপুরি দাখিল হও এবং
শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তোমাদের
কাছে সুস্পষ্ট আদেশ আসার পরও যদি তোমরা পথভ্রষ্ট হও, তাহলে জেনে রেখ! নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী।”-(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২০৮-২০৯)
তিনি আরও বলেন : “তোমরা কি ধর্মগ্রন্থের অংশবিশেষে বিশ্বাস কর ও অন্য অংশে
অবিশ্বাস পোষণ কর? অতএব তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা
ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে।
আর তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন।” -(সূরা
বাকারাহঃ আয়াত-৮৫)
তিনি আরও বলেন : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় জীবনব্যবস্থা ত্যাগ
করে (তার জেনে রাখা উচিত), অতি সত্তর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদের তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি থাকবে অত্যন্ত সদয় এবং কাফেরদের
প্রতি থাকবে অত্যন্ত কঠোর, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে আর কোন নিন্দুকের নিন্দার
পরোয়া করবে না, এটা আল্লাহর
অনুগ্রহ যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আল্লাহ ব্যাপকতার অধিকারী ও মহাজ্ঞানী।”- (সূরা মায়েদা
: আয়াত-৫৪)
তিনি আরও বলেন : “আমি তোমাদের আগে অনেক মানব জাতিকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা সীমালংঘন করেছিল। তাদের নিকট সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ
নিয়ে তাদের রাসূলগণ এসেছিলেন। কিন্তু তারা ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবেই
আমি সীমালংঘনকরীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি। অতঃপর তোমরা কীভাবে এবং কেমন কাজ কর তা
দেখার জন্য আমি তাদের পরে তোমাদেরকে দুনিয়ায় খলীফা বানিয়েছি।”-(সূরা ইউনুসঃ
আয়াত ১৩-১৪)
২) প্রকৃত দ্বীনী ইলম ও আমলের অভাবঃ
হযরত আবু উবাইদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত মু'আজ বিন জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর
হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাহের শাসন। এরপর হবে
অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাহের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম, ব্যভিচার এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত
পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে"। -(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি : ৫/১৬)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন : ''আমি অচিরেই লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশংকা করছি, যখন কেবলমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই বাকি থাকবে না
এবং কুরআনের লিখিত রূপটি ছাড়া তার বাস্তবায়ন থাকবে না। মসজিদগুলো চাকচিক্যে
ভরপুর হলেও মানুষ হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। ঐ সময়কার আলেমরা হবে আসমানের নিচে
বিচরণকারী সর্বনিকৃষ্ট জীব। তাদের থেকেই বিভিন্ন ফিতনা ছড়াবে এবং তারা নিজেরাও
সেই ফিতনায় আবর্তিত হবে।'' -(সুনানে বায়হাকী)
হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃতোমাদের পর এমন একটি
কাল আসবে যখন মানুষের মাঝে দ্বীনী ইলম থাকবে না। সর্বত্রজুড়ে সয়লাব হবে শুধু
ফিতনা-ফাসাদের। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) আরয করলেনঃ হে রাসূল! ফিতনা-ফাসাদ কি? তিনি ইরশাদ করলেন- হত্যা ও খুন! - (সুনান ইবনে মাজাহঃ ৪০৪৯, জামে তিরমিযিঃ ২১৩১, মুসনাদ আহমাদঃ ১৯১৯৪ ও বায়হাকী)
৩) দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুভীতিঃ
বিশ্বময় মুসলিম নিধনঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃ এমন এক সময় আসবে, যখন তোমাদের নিধনের জন্য বিভিন্ন (কাফের) গোষ্ঠি একে অপরকে
আহবান করবে। ঠিক যেমন অভুক্ত খাদকদের আহবান করা হয়, (মুখরোচক খাবারের) পাত্রের প্রতি। তখন একজন বলে উঠলেন, আমাদের সংখ্যাসল্পতার কারণে কি সেদিন এমন দুরাবস্থা হবে? ইরশাদ হলো-বরং সেদিন সংখ্যায় তোমরা অনেক বেশি, অনেকটা প্রবাহমান পানির ফেনার মতো (পরিমাণে অধিক অথচ
অন্ত:সারশূন্য) থাকবে। আল্লাহ তা'আলা তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি ভয়-ভীতি
তুলে দিবেন (তারা তোমাদের খুবই নগণ্য ভাববে)। আর তোমাদের অন্তরে 'ওয়াহান-বা দুর্বলতা' সৃষ্টি করে দিবেন। জনৈক প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন-'ওয়াহান'কি? ইরশাদ হলো-দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুভীতি। - [আবু দাঊদঃ ৪২৯৭]
হযরত মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
করেছেন : দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে বকরীর পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে তারা পালের
এই পরিমাণ ক্ষতি করে না যে পরিমাণ মানুষের সম্পদের লোভ ও সম্মানের লিপ্সা তার
দ্বীনকে ক্ষতি করে। - (জামে তিরমিযি -২৩৭৬)
হযরত কাব ইবনে ইয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :“প্রত্যেক জাতির জন্য একটা ফিতনা আছে। আমার উম্মাতের
জন্য ফিতনা হলো সম্পদ।” -[তিরমিযী]
৪) মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একে অপরের ক্ষতি
করতে চাওয়াঃ
অন্যের ক্ষতি করতে চাওয়াঃ হযরত আবু সিরমাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘’যে ব্যাক্তি অন্যের ক্ষতি করতে চায়, আল্লাহ্ তায়ালা তার ক্ষতি করেন। তেমনি ভাবে যে ব্যাক্তি
অন্যের উপর কঠিন হয় আল্লাহ্ তায়ালাও তার উপর কঠিন হন’’ -[ইবন মাযাহ ২৩৭১]
হযরত উবাদাহ বিন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবদুল্লাহ ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ ‘’তুমি কারোর কোনো ধরনের ক্ষতি করো না। তেমনিভাবে তোমরা
পরস্পর একে অপরের ক্ষতি করার প্রতিযোগিতা করো না’’ -[ইবন মাযাহঃ ২৩৬৯,২৩৭০]
মুসলাম ভাইয়ের কোন বিপদ দেখে খুশি প্রকাশঃ হযরত ওয়াছিলা
ইবনে আসকয়ীল লাইছী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তুমি
(কোন) মুসলাম ভাইয়ের কোন বিপদ দেখে খুশি প্রকাশ করো না। কেননা, হতে পারে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। আর তোমার
উপর ঐ মুসিবত চাপিয়ে দিবেন। -(তিরমীযী- ২/৭৩, শুয়াবুল ঈমান- ৫/৩১৫, মেশকাত-৪১৪)
৫) ন্যায়ের উপদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ পরিত্যাগঃ
সবাই আযাবপ্রাপ্ত হবে আর দুয়া কবুল হবে নাঃ হযরত
হুজাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:ঐ সত্তার কসম যারা কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তোমরা সৎকর্মের আদেশ করতে
থাক এবং অন্যায় কর্মের বাধা দিতে থাক। অন্যথায় খুব শীঘ্রই হয়তো
আল্লাহ্
তা'আলা তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে আযাব হটিয়ে দেওয়ার জন্য দু'আ করবে। কিন্তু তিনি কবুল করবেন না।” -(তিরমিযীঃ হাদীস নং ২/৩৯)
হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“তোমরা অবশ্যই মা’রূফ এর আদেশ করবে, মুনকার থেকে নিষেধ করবে, কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহ প্রদান করবে,অন্যথায় আল্লাহ যে কোন আযাবে তোমাদের সকলকেই ধ্বংস করবেন
কিংবা তোমাদের মধ্য হতে সর্বাধিক পাপাচারী, অন্যায়কারী ও যালিম লোকদেরকে তোমাদের ওপর শাসনকর্তা
নিযুক্ত করে দিবেন। এ সময় তোমাদের মধ্যকার নেককার লোকেরা মুক্তিলাভের জন্য
আল্লাহর নিকট দোয়া ও কান্নাকাটি করবে; কিন্তু তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।” –(মুসনাদে আহমদ)
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “সেই সত্তার শপথ,যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ করবে এবং
অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা
দোয়া করলেও তিনি সেই দোয়া কবুল করবেন না।” -(তিরমিযীঃ হাদীস নং- ২১১৫ : হাসান)
সবাই শাস্তি প্রাপ্ত হবেঃ হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
“নিশ্চয়ই মানুষ যখন কোন অপছন্দ কথা বা
কর্ম লক্ষ্য করে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে না, অচিরেই আল্লাহ তাদের সকলকে শাস্তি দিবেন। অন্য বর্ণনায়
রয়েছে, যখন কোন
সম্প্রদায়ের মাঝে পাপ হতে থাকে এবং প্রতিরোধ করতে সক্ষম ব্যক্তিরা প্রতিরোধ না
করে, তখন আল্লাহ
সকলকেই শাস্তি দেন।” - [তিরমিযী ও আবু দাউদ]
বনি ইসরাঈলী সম্পদায়ের বিপর্যয়ঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বনী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথমে পাপ ও অনিষ্টকারীতা এভাবে
অনুপ্রবেশ করে- এক ব্যক্তি যখন অপর ব্যক্তির সাথে মিলিত হত তখন তাকে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর, যা করছ তা পরিত্যাগ কর কেননা এ কাজ তোমার জন্য বৈধ নয়।
পরদিনও সে তার সাথে মিলিত হয়ে তাকে পুর্ববস্থায় দেখতে পেত কিন্তু সে আর তাকে নিষেধ
করত না। এভাবে সেও তার পানাহার ও ওঠা-বসায় শরীক হয়ে পড়ে। যখন তারা এমন অবস্থায়
পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহ
তাদের একের অন্তরের (কালিমা) দ্বারা অপরের অন্তরকে অন্ধকার করে দিলেন। অতঃপর তিনি
এ আয়াত পাঠ করলেন: (৭৮) ইসরাঈল জাতির মধ্যে যারা কুফরি করেছিল তারা দাঊদ ও মারইয়াম
পুত্র ঈসার জবানে অভিশপ্ত হয়েছিল, কারণ তারা অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী ছিল। (৭৯) তারা যে সকল
খারাপ কাজ করত, তা করা থেকে
তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। তারা যা করত তা কতই না খারাপ কাজ ছিল! (৮০) তাদের
অনেককে আপনি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন। কত খারাপ তাদের কাজ, যা তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য করেছে, যে কারণে আল্লাহ তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা চিরকাল
শাস্তির মধ্যেই থাকবে। (৮১) তারা যদি আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং যা নবীর প্রতি নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান
আনত তাহলে তারা কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের অনেকেই
পাপাচারী। (সূরা মায়েদা: ৭৮-৮১) অতঃপর তিনি (মহানবী) বলেন : কখনও নয়! আল্লাহর শপথ!
তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করতে থাক এবং অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে (লোকদেরকে)
বিরত রাখ, জালিমের হাত
শক্ত করে ধর এবং তাকে টেনে তুলে সত্য-ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। অন্যথায় আল্লাহ
তোমাদের পরস্পরের অন্তরকে মিলিয়ে দিবেন। অতঃপর বনি ইসরাঈলদের মত তোমাদেরকেও
অভিশপ্ত করবে। -(আবু দাউদ : সহীহ)
পাপী ও নীরব দর্শকের পরিণামঃ হযরত নুমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
আল্লাহর বিধানকে যারা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে আর যারা অবহেলা করে তাদের দৃষ্টান্ত হল
সমুদ্রগামী একটি জাহাজের আরোহীদের মত, যারা লটারীর মাধ্যমে এর দুই তলায় আসন নির্ধারণ করল। একদল
উপরে আর একদল নীচের তলায়। নীচের তলার লোকেরা উপরের তলায় উঠত পানি সংগ্রহ করতে। ফলে
উপরের লোকদের ওখানে পানি পড়ত। উপর তলার লোকেরা বলল, তোমরা আমাদের এখানে পানি ফেলে আমাদের কষ্ট দিচ্ছ। সুতরাং
আমরা তোমাদেরকে উপরে উঠতে দিব না। নীচের তলার লোকেরা বলল, তাহলে আমরা জাহাজের তলা ফুটো করে পানি সংগ্রহ করব। এই
অবস্থায় যদি উপরের তলার লোকেরা নীচের তলার লোকদের হাত ঝাপটে ধরে ছিদ্র করা থেকে
তাদেরকে বিরত রাখতে পারে তবে সকলেই বেঁচে যাবে। কিন্তু তারা যদি এদেরকে এ কাজ করতে
ছেড়ে দেয় তবে সকলেই ডুবে মরবে। (সহীহ বুখারী ও তিরমিযী-২১১৯ : হাসান ও সহীহ্)
৬) দুনিয়ার মোহে আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগঃ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর,তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে
গেলে?অথচআখেরাতের
তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে
তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতিকরতে পারবে না,আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” - (সূরা তওবাঃ
আয়াত ৩৮- ৩৯)
তিনি আরও বলেন : “(হে নবী)! আপনি বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা-মাতা, তোমাদের সন্তান,তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের বংশ, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের এমন ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং
তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর; আল্লাহ তা’য়ালা ও তার রাসুল এবং তার রাস্তায় জিহাদ করা
থেকে অধিক প্রিয় না হয়, তাহলে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক
সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” -(সুরা তওবাঃ আয়াত ২৪)
তিনি আরো বলেন : “হে নবী!আপনি বলে দিন যদি তোমাদের ভাই , তোমাদের স্ত্রীগণ , তোমাদের আত্মীয় –স্বজন তোমাদের সেই ধন –সম্পদ যা তোমরা উপার্জন করেছো ,বানিজ্য যার ক্ষতি হওয়াকে তোমরা ভয় কর আর তোমাদের সেই ঘর যা
তোমরা খুবই পছন্দ কর ,আল্লাহ্,তার রসূল এবং জিহাদের চেয়ে ও অধিকতর প্রিয় হয়,তাহলে অপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ তার চূড়ান্ত ফয়সালা
তোমাদের সম্মুখে পেশ করেন। বস্তুত; আল্লাহ ফাসিক লোকদের কখনো হেদায়েত করেন না।” -(সূরা তাওবাহঃ
আয়াত২৪)
হযরত ইবন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ “তোমরা যদি নিজেদের মধ্যে ব্যবসা করতে থাক,আর ষাঁড়ের লেজের পেছনে চলতে থাক, এবং কৃষকহিসাবে থেকেই সন্তুষ্ট হয়ে যাও আর
জিহাদ ছেড়ে দাও, আল্লাহ তখন তোমাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে
দেবেন যতক্ষন তোমরা তোমাদের দীনে ফিরে না যাও”। -(আবুদাউদ : সহীহ)
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে
না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো।
- [সূরা আলে-ইমরানঃ আয়াত ১৪৫]
৭) মুসলিম উম্মাহর মাঝে পারস্পরিক বিরোধঃ
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ “আর আল্লাহ
তা’আলার নির্দেশ
মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে।
আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে”। -[সূরা আল-আনফাল:৪৬]
হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেহেশ্তের দরজাগুলো খুলে দেয়া
হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে কোন কিছু শরিক করে না আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
কিন্তু যে লোকের সাথে তার মুসলমান ভাইয়ের শত্রুতা রয়েছে তাদের সম্পর্কে বলা হয়, এদের অবকাশ দাও যেন নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক সংশোধন করে
নিতে পারে। আর অন্য বর্ণনায় আছেঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কার্যকলাপ
পেশ করা হয়। -[মুসলিম]
হযরত আবু আইয়ূব আনছারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘তিন দিনের বেশী কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলিম ভাই হ’তে সম্পর্ক ছিন্ন রাখা হালাল নয়। তাদেরউভয়ের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম করে। -(বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী
সম্পর্ক ছিন্ন রাখা হালাল নয়। যে ব্যক্তি তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে এবং
মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে।’
-(আহমাদ, আবুদাঊদ ও মিশকাত-৫০৩৫)
হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ‘মানুষ এমনভাবে আত্মগর্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে যে, অবশেষে তার নাম উদ্ধত-অহংকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়,ফলে তার উপর সেই আযাবই নেমে আসে যা তাদের উপর নেমে থাকে’। -তিরমিযী, হাদীস নং – ২০০০}
সময় দ্রুত চলে যাওয়াঃ হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, সময় নিকটবর্তী হবে (অর্থাৎ যাতায়াত এবং
সংবাদ আদান প্রদানে বেশী সময় লাগবে না)। এবং ধর্ম বিদ্যার মৃত্যু হবে। বিপদাপদ
দেখা দিবে, কৃপণতা দেখা দিবে এবং হারাজ বেড়ে যাবে।
সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন ‘হারাজ’ কি? উত্তরে আল্লাহর হাবীব আমাদের প্রিয় নবী
হযরত (সাঃ) বললেন, হত্যা। - (বুখারী ও মুসলীম)
হযরত ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কোন জাতির উপর মহান আল্লাহ আযাব অবতীর্ণ করেন, তখন তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত লোককে তাগ্রাস করে ফেলে। তারপর বিচারের দিন তাদেরকে কৃতকর্মের ভিত্তিতে
পুনরুত্থিত করা হবে।’’ - (বুখারী ও মুসলীম)
৮) সামাজিক মুল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ঃ
অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাহের শাসনঃ হযরত আবু উবাইদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং
হযরত মু'আজ বিন জাবাল
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : “ইসলামের সূচনা
হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে
অত্যাচার লুটেরা বাদশাহের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাহের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম, ব্যভিচার এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত
পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে"। -(বায়হাকিঃ হাদীস ৫/১৬)
পাঁচটি অপরাধের ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে মুহাজির দল!
পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে।
আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই তোমরা যেন তা প্রত্যক্ষ না কর। (১) যখনই কোন
জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখন সে জাতির মাঝে প্লেগ ও এমন রোগ
ব্যাপক হবে, যা তাদের
পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। (২) যে জাতি মাপে কম দিবে সে জাতি দুর্ভি, খাদ্য সংকট এবং শাসকগোষ্ঠির অত্যাচারের শিকার হবে। (৩) যে
জাতি যাকাত দেয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি অন্যান্য
প্রাণীকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না। (৪) যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের প্রতিশ্রুতি ভংগ করবে সে জাতির উপরে তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করে
দেয়া হবে, যারা তাদের বহু
ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে। (৫) যে জাতির শাসকগোষ্ঠী আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী
দেশ শাসন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে সন্ত্রাস/গৃহযুদ্ধ স্থায়ী
রাখবেন। -(বায়হাকী ও ইবনে মাজাহ)
কয়েকটি অপরাধের পরিণতিঃ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যখন আমার উম্মত দশটি কাজ করবে, তখন তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাজগুলো কি কি? তখন তিনি বললেনঃ ১. যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ
হিসেবে মনে করা হবে। ২. যখন আমানত হিসেবে রক্ষিত সম্পদকে লুটের মাল হিসাবে গ্রহণ
করা হবে। ৩. যখন যাকাতকে জরিমানার মত মনে করা হবে। ৪. স্বামী যখন স্ত্রীর আনুগত্য
করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে। ৫. যখন মানুষ বন্ধুর প্রতি সদাচারী এবং পিতার
সাথে দুর্ব্যবহারকারী হবে। ৬. মসজিদে হৈ চৈ হবে। ৭. জনগণের নেতা হবে সেই ব্যক্তি
যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। ৮. যখন মানুষকে তার
ক্ষতির আশংকায় সম্মান প্রদর্শন করা হবে। ৯. যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের
হিড়িক পড়ে যাবে। ১০. যখন উম্মতের পরবর্তীরা র্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে। তখন
আগুনের বাতাস আসবে, মাটির ধস ও দেহের বিকৃতি ঘটবে।”
(সুনানে তিরমিযী ও সহীহ আত তারগীব
ওয়াত তারহীব, হাদীস- ১৫৪১)
অনুরূপ বর্ননাঃ হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : যখন মানুষ গনীমতের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করতে থাকবে। আমানতের সম্পদকে গনীমতের সম্পদ মনে করতে
থাকবে। যাকাতকে বোঝা মনে করতে থাকবে। দ্বীনী ইলম
অর্জন করবে দুনিয়ার উদ্দেশ্যে। স্ত্রীর আনুগত্য করবে, মাকে কষ্ট দিবে। বন্ধুকে আপন মনে
করবে, পিতাকে পর মনে
করবে। মসজিদে হৈচৈ করবে। ধর্মহীন লোকেরা
গোত্রপতি হবে। নীচ শ্রেণীর লোকেরা জাতির নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হবে। অনিষ্টতার ভয়ে
মানুষের সম্মান করা হবে। গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্রের প্রাবাল্য হবে। মানুষ
ব্যাপকভাবে মদ পান করবে।পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের অভিসম্পাত করবে। তখন রক্তিম ধোঁয়া এবং কঠিক প্রকম্পনের অপেক্ষা করবে।অপেক্ষা করবে
মাটি ধ্বসে যাওয়ার। আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ার। আর আকাশ থেকে
প্রস্তর বর্ষণের। এসব আযাবেরসাথে সাথে কেয়ামতের অন্যান্য আলামতেরও অপেক্ষা করবে। যখন সুতাছেঁড়া তাসবীর গোটার মত একটার পর একটা আপতিত হতে থাকবে। -(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২২১১, কানুযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-৩৮৭১৪, আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৬৯, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৯১)
অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাবঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি। -(ইবনু মাজাহ, হাদিস নং-৪০০৯)
অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’ -(মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)
সুদী অর্থ ব্যবস্থা ও প্রকাশ্য অশ্লীলতাঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন
এলাকায় যিনা ও সুদ ব্যাপক হয় তখন ঐ এলাকার লোকেরা নিজেদের উপর আল্লাহর শাস্তিকে
হালাল করে দেয়। অন্য হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত:
যখন কোন বস্তিতে যিনা ব্যাপক হয় ও তাদের মাঝে প্রকাশ্যে যিনা হতে থাকে তখন তাদের
মাঝে এমন নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি ও বালা-মুসিবত ব্যাপক হতে থাকে যেগুলো পূর্ববর্তী
লোকেরা শুনেও নাই। -(তারগীবঃ - ৩/১১৮)
মারাত্মক গোনাহের কারণে ঈমানের নূর বিলুপ্ত হয়ঃ হযরত আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন
ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় মুমিন থাকেনা। কোন চোর চুরি করা অবস্থায়। কোন
শরাবখোর শরাব পান করা অবস্থায় মুমিন থাকে না। মানুষের চোখের সামনে কোন নিরীহ
লোকের উপর অক্রমনকারী মুমিন থাকে না। -(বুখারী, মুসলিম ও নাসায়ী)
অত্যাচারী পুরুষ ও উলংগ নারীঃ হযরত আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দুই
ধরণের মানুষ জাহান্নামে যাবে যাদেরকে এখনো কেউ দেখেনি। (১) ঐসমস্ত পুরুষ যাদের
কাছে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে ও তা দ্বারা তারা মানুষদেরকে মারবে। (২) ঐসমস্ত
নারী যারা পোশাক পরার পরও উলংঙ্গ থাকবে। তারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার
চেষ্টা করবে এবং পুরুষের দিকে আকৃষ্ট থাকবে। তাদের মাথার চুল উটের কোহানের মত উঁচু
বানিয়ে রাখবে। তারা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খোশবুও পাবে না। অথচ জান্নাতের
খোশবু এমন এমন দূর থেকে পাওয়া যাবে। -(মুসলিম শরীফ ২
খ. ২০৫ পৃ.)
হযরত হোজায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আমাদের কাছে দুইটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তারমধ্যে একটি
আমি দেখেছি এবং অন্যটির জন্য অপেক্ষা করছি। ঈমান এবং আমানত মানুষের কাছ থেকে অনেক
দূরে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন যে মানুষ পবিত্র কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা ভুলে যাবে।
তিনি আরো বললেন যে, কোন লোক নিদ্রায় যাবে তারপর তার অন্তর
থেকে আমানত নিয়ে নেয়া হবে। শুধু একটি বিন্দুর মত দাগ থাকবে। এরপর সে আবার
নিদ্রামগ্ন হবে এবং অবশিষ্ট আমানত তুলে নেয়া হবে। তখন মানুষ ব্যবসা করবার জন্য
সকালে বাসা থেকে বের হবে কিন্তু কেউই আমানত ফেরত দিবে না। বলা হবে অমুক অমুক
ব্যক্তি বিশ্বাসী এবং কোনও কোনও ব্যক্তিকে বলা হবে যে সে অনেক জ্ঞানী! সে কি চতুর!
সে কি মার্জিত! কিন্তু সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও তার মধ্যে থাকবে না। -(বুখারী ও মুসলিম)
নারী জাতির ফিতনাঃ হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার পরে আমি
পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাইনি। -(ইমাম বুখারী ও
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবূ সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর আকর্ষনীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি
নিয়োজিত করে দেখবেন যে,তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর
ফিতনা থেকে বাঁচ। কারণ, বনী ইসরাঈলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীকে
কেন্দ্র করেই হয়েছিল।'' -[মুসলিম: ২৭৪২, তিরমিযী: ২১৯১, ইবনু মাজাহ: ৪০০০, আহমাদ: ১০৭৫৯]
৯) ধর্মীয় বিষয়ে মারাত্মক বাড়াবাড়ি করাঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ''হে মানব সকল! তোমরা ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি
করো না। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী সকল উম্মত কেবল এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।'' -( ইবনে মাজাহঃ ৩০৮৫ ও ইবনে হিব্বানঃ ১০১১)
হযরত যিয়াদ বিন হুদায়ের রাদিয়াল্লাহু‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে একদিন হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু‘আনহু বললেন, তুমি কি জানো কোন্ বস্তু ইসলামকে ধ্বংস করে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন,ইসলামকে ধ্বংস করে তিনটি বস্তু : (১) আলেমের পদস্খলন (২) আল্লাহর কিতাব নিয়ে মুনাফিকদের ঝগড়া এবং (৩) পথভ্রষ্ট নেতাদের শাসন’। -(দারেমীঃ ২১৪ সনদ ছহীহ)
হযরত আবু হুরায়রা আব্দুর রহমান ইবন সাখর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয় নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক। আর যেসব বিষয়ে আদেশ
করেছি, যথাসম্ভব তা পালন কর। বেশী বেশী প্রশ্ন
করা আর নবীদের সথে মতবিরোধ করা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে। -[বুখারীঃ ৭২৮৮ ও মুসলিম: ১৩৩৭]
১০) মুসলিম উম্মাহর উপর বিপদ-আপদ কিভাবে আপতিত হবে
হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সমন্ত পৃথিবীকে ভাঁজ করে আমার সামনে রেখে
দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি।
পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের
রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দু’টি ধনাগার দেয়া হয়েছে। আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার
প্রতিপালকের নিকট এ দুআ করেছি, যেন তিনি তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন
এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের ব্যতীত এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের
দলকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিবে। এ কথা শুনে আমার প্রতিপালক বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো প্রতিহত হয় না।
আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস
করবো না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে দেবো
না যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও তিনি বিভিন্ন
প্রান্ত হতে লোক সমবেত হয়ে চেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলমানগণ পরস্পর একে অপরকে ধ্বংস
করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে। -{সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং ৬৯৯৪}
একের পর এক বিপদ আসাঃ হযরত হোজায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, একটি খাটের যেমন একটি তক্তার পর আরেকটি
তক্তা হয়, সেরকম বিপদাপদও হৃদয়ের উপর পতিত হবে। যে
হৃদয় তা পান করবে তার উপর একটি সাদা চিহ্ন অংকিত হবে। এইভাবে দুটি হৃদয় হবে। একটি শেত পাথরের মত শুভ্র হবে। যে পর্যন্ত
জমীন ও আসমান বিদ্যমান থাকবে সে পর্যন্ত কোনও বিপদাপদ তার বিনষ্ট করতে পারবেনা।
অন্য হৃদয়টি উলটানো পানির পেয়ালার মত কালো ও অপরিষ্কার হবে। এটা কোন প্রকার ন্যায়
ও মঙ্গল জানবে না এবং অমঙ্গলকেও পরিত্যাগ করবে না। কিন্তু সেচ্ছাকৃত ইচ্ছা দিয়ে
পরিচালিত হবে। -(মুসলিম শরীফ)
জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগঃ হযরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, অতি শীঘ্রই বিপদাপদ আপতিত হবে। সাবধান! ক্রমাগত
বিপদাপদ ঘটবে। সাবধান! পুনরায় বিপদাপদ নেমে আসবে। তখন বসে থাকা ব্যক্তি পথ চলা
ব্যক্তি হতে উত্তম হবে এবং পথ চলা ব্যক্তি দৌড়ে লিপ্ত থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে।
সাবধান! যখন এটা ঘটতে থাকবে তখন ছাগল ও মেষের অধিকারী যেন তার নিজের ছাগল এবং
মেষের নিকটেই থাকে। আর যার জমি আছে সে যেন তার জমির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। তখন এক
ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যার উট, মেষ, ছাগল বা জমি নাই তার কি অবস্থা হবে ? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে যেন তার তরবারি পাথরের সাহায্যে শান
দিতে থাকে এবং সম্ভব হলে জয়ী হয়। হে আল্লাহ! আমি কি আমার সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি ? (তিনি তিনবার এই কথা বললেন) অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাকে পছন্দ না করা হয় এবং আমাকে কোন পাহাড়ে নিয়ে কেউ
যদি তরবারি দিয়ে আমাকে আঘাত করে কিংবা তীর এসে যদি আমাকে হত্যা করে তখন আমার
অবস্থা কি হবে? এর উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তোমার এবং তার গোনাহর বোঝা করবে এবং জাহান্নামে নীত হবে। - (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :তখন তোমার
কি অবস্থা হবে যখন তুমি দুষ্টু লোকদের ভিতরে পতিত হবে? তাদের সন্ধিনামা ও আমানত নষ্ট হয়ে যাবে এবং তারা মতবিরোধে লিপ্ত হতে থাকবে।
তারা হবে এরকম (এ বলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামস্বীয় অজ্ঞুলি
সমূহকে আলাদা করে দেখালেন) তখন সে বললো, তখন আপনি আমাকে কি করতে নির্দেশ দেন? এররাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা জান তা সম্পাদন করবে এবং যা জান না তা পরিত্যাগ করবে। তুমি নিজের কাজে
ব্যস্ত থাকবে এবং জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগ করবে এবং তোমার রসনাকে সংযত করবে। তুমি
যা জান তা গ্রহন করবে এবং যা জান না তা গ্রহন করবে না। তুমি তোমার নিজের ব্যাপারে
নিবিষ্ট থাকবে এবং জন সাধারনের কাজ পরিত্যাগ করবে। - (তিরমিজী শরীফ)
ঘরে ঘরে বিপদ আপদঃ হযরত ওমাছাহ বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মদীনা শরীফের উচ্চ স্থানের মধ্যে একটি
সুউচ্চ পর্বতে উঠে বললেন : আমি যা দেখছি তোমরা কি তা দেখছো? সাহাবাগণ উত্তরে বললো, না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন
: আমি বৃষ্টিপাতের ন্যায় তোমাদের ঘরে বিপদ-আপদ নিপতিত হতে দেখছি। - (বুখারী ও মুসলীম)
নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহনঃ হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘‘সত্বর এমন এক সময় আসবে যে, ছাগল-ভেড়াই মুসলিমের সর্বোত্তম মাল হবে; যা নিয়ে সে ফিতনা থেকে তার দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য
পাহাড়-চূড়ায় এবং বৃষ্টিবহুল (অর্থাৎ তৃণবহুল) স্থানে পলায়ন করবে।’’
- [সহীহুল বুখারী ১৯, ৩৩০০, ৩৬০০, ৬৪৯৫, ৭০৮৮, নাসায়ী
৫০৩৬, আবূ দাউদ ৪২৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৮০, আহমাদ
১০৬৪৯, ১০৮৬১, ১০৯৯৮, ১১১৪৮, ১১৪২৮]
১১) ঈমানের পরীক্ষা, গোনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যও বিপদ-আপদ আপতিত হয়ঃ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে চলে যাবে?অথচ তোমরা এখনো সেই লোকদের অবস্থা অতিক্রম
করোনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বহু বিপদ মুসিবত ও দুঃখ
কষ্ট। তাদেরকে অত্যাচারে নির্যাতনে এমনভাবে জর্জরিত করে দেয়া হয়েছিল যে,শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাসূল এবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তারা আর্তনাদ করে
বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তখন তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।” -(সূরা বাকারাহ : ২১৪)
তিনি আরও বলেন : ‘‘অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্য্য ধারণকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা
সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত
প্রাপ্ত।” -[সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৫৫-১৫৭]
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের)
শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি
শাস্তি দেবেন।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে
সন্তুষ্ট (ধৈর্য্য) প্রকাশ করবে,তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর
যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’’ -[মুসলিমঃ ২৩৯৬ ও ইবনু মাজাহঃ ৪০৩১]
হযরত সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস
করেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি
বিপদগ্রস্ত কে? উত্তরে তিনি বলেনঃ‘নবীগণ, অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী। মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়।
দ্বীনী অবস্থান পাকাপোক্ত হ’লে পরীক্ষা কঠিন হয়। দ্বীনী অবস্থান
দুর্বল হ’লে পরীক্ষাও শিথিল হয়। মুছীবত মুমিন ব্যক্তিকে
পাপশূন্য করে দেয়, এক সময়ে দুনিয়াতে সে নিষ্পাপ অবস্থায়
বিচরণ করতে থাকে’। -(তিরমিযীঃ ২৩৯৮; ইবনু মাজাহঃ ৪০২৩ ও সহীহুল জামেঃ ৯৯২)
হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা ও অত্যাচার-নির্যাতন
সম্পর্কে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি তার
চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে কাবা ঘরের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা তাকে বললাম : আপনি কি আমাদের জন্য
আল্লাহর কাছে সাহায্য চান না? আপনি কি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করেন না? তখন তিনি বললেন : তোমাদের ওপর আর কি দুঃখ নির্যাতন এসেছে? তোমাদের পূর্বেকার ঈমানদার লোকদের অবস্থা
ছিল এই যে, তাদের কারো জন্য গর্ত খোড়া হতো এবং সে
গর্তের মধ্যে তার দেহের অর্ধেক পুতে তাকে দাঁড় করিয়ে তার মাথার ওপর করাত দিয়ে তাকে
দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এ অমানুষিক অত্যাচার তাকে তার দ্বীন থেকে বিরত
রাখতে পারতো না। আবার কারো শরীর থেকে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়িয়ে হাড় থেকে গোশত
আলাদা করে ফেলা হতো। কিন্তু এতেও তার দ্বীন থেকে ফিরাতে পারতো না। আল্লাহর কসম, এ দ্বীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। তখন যেকোন উটারোহী লানআ থেকে হাযারামাউত
পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নিরাপদে সফর করবে। আর এ দীর্ঘ সফরে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয়
করবে না। এবং মালিক তার মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া আর কারো ভয় করবে না। কিন্তু
তোমরা খুবই তাড়াহুড়া করছো।” -( সহীহুল বুখারী)
১২) পাপের সীমা
ছাড়িয়ে গেলে
মানুষ
পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ
ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেন : ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’
(সুরা ত্বাহা : ২৪)
নমরুদকে
আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে।
অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে
দেওয়া হয়েছে। বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার, উত্তম জিনিস তথা
মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উৎপন্ন জিনিস চাওয়া, আমালেকা
সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও
অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে চির লাঞ্ছনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে। আগের নবীদের এসব
কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে যদি উম্মতে
মুহাম্মদী (সা.)ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং
একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
১৩) বিধর্মী
কার্যকলাপের ফলে
হজরত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন সরকারি
মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়,
জাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়, ইসলামী আকিদাবর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়, পুরুষ
স্ত্রীর অনুগত হয়, মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, বন্ধুদের আপন মনে করা হয়,
বাবাকে পর ভাবা হয়, মসজিদে শোরগোল করা হয়, পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়, অসৎ ও
নিকৃষ্ট লোক জাতির চালক হয়, ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়, গায়িকা ও
বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়, মদ্য পানের আধিক্য ঘটে, পরবর্তী সময় লোকেরা
পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করে—তখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস),
ভূমিকম্প, ভূমিধস, মানব আকৃতি বিকৃতি, শিলাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন
আজাবের, যা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবে, যেমন হারের সুতা ছিঁড়ে গেলে মুক্তার
দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে। (তিরমিজি)
১৪) ব্যভিচার, মাপে
কম দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মের ফলে
হজরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুহাজিরদের উদ্দেশ
করে বলেছেন, ‘পাঁচটি মন্দ কাজ এমন আছে, যদি তোমরা তাতে জড়িয়ে পড়ো বা তা
তোমাদের মধ্যে বাসা বাঁধে, তবে খুবই খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আমি আল্লাহর কাছে
আশ্রয় চাচ্ছি যেন এ পাঁচটি মন্দ কাজ তোমাদের মধ্যে জন্ম না নেয়।’
ক.
ব্যভিচার যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ
দেখা দেবে, যা আগে ছিল না।
খ.
‘মাপে কম দেওয়া।’ এ মন্দ কাজ যদি কোনো জাতির মধ্যে জন্ম নেয়, তবে তাদের মধ্যে
দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং তারা অত্যাচারী শাসকের শিকারে পরিণত হয়।
গ.
‘জাকাত’ না দেওয়া। এ মন্দ কাজ যাদের মধ্যে দেখা দেয়, তাদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টি
বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যদি সে অঞ্চলে পশু বা পাখি না থাকত, তবে আদৌ বৃষ্টি হতো না।
ঘ.
আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। এ মন্দ কাজ যখন
সমাজে দেখা দেয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর অমুসলিমদের আধিপত্য চাপিয়ে দেন।
আধিপত্যবাদীরা তখন মুসলমানদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়।
ঙ.
‘কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালানো।’ যদি মুসলমান শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী
শাসনকার্য না চালায়, তবে আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করে দেন। তারা
নিজেদের মধ্যে পরস্পর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে সন্ত্রাস ও খুন-খারাবি শুরু হয়ে
যায়।’ (বায়হাকি, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০১৯)
হজরত
ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বীনের
কার্যকলাপে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢেলে
দেওয়া হয়, কোনো সম্প্রদায়ে জিনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার
বৃদ্ধি পায়, কোনো সম্প্রদায়ের লোক মাপে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করে দেওয়া হয়,
কোনো সম্প্রদায়ে অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করা হলে সে গোত্রে রক্তপাত বৃদ্ধি পায়,
কোনো সম্প্রদায়ের লোক অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তাদের মধ্যে শত্রুতা প্রবল করে দেওয়া হয়।
(মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত : পৃ. ৪৫৯)
১৫) অন্যায়ভাবে
হত্যা করা হলে
অন্যায়ভাবে
হত্যা করা হারাম। কথিত আছে, হজরত আদম (আ.)-এর পুত্র কাবিল যেদিন হাবিলকে হত্যা
করে, সেদিনই পৃথিবীতে প্রথম ভূমিকম্প হয়। কেননা অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ড আল্লাহ
তাআলা পছন্দ করেন না। তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা
করে, তার শাস্তি হলো জাহান্নাম, সে সদা সেখানে অবস্থান করবে।’ (সুরা নিসা : ৯৩)।
রাসুলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা
জিজ্ঞাসা করলেন—ইয়া রাসুলুল্লাহ! বিষয়গুলো কী কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : ১.
আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। ২. জাদুটোনা করা। ৩. যথাযথ কারণ বাদে কাউকে হত্যা
করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। ৪. সুদ খাওয়া। ৫. এতিমের সম্পদ গ্রাস করা। ৬.
রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা। ৭. মুসলিম সরলা নির্দোষ মহিলাদের নামে ব্যভিচারের
দুর্নাম রটনা করা। (মিশকাত, প্রথম খণ্ড, বাবুল কাবাইর ওয়া আলামাতুন নিফাক, সহীহ
বুখারি, কিতাবুল ওয়াসায়া, হাদিস নম্বর : ২৭৬৬)
হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন—তিনি বলেন, ‘যদি কোনো
ব্যক্তি মুসলমানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ কোনো অমুসলিমকে হত্যা করে, তাহলে
সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া
যায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৬৮৬, সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২৫)
১৬) ধনীরা কৃপণ হলে
হজরত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের
মধ্যে উত্তম লোকরা তোমাদের নেতা (রাষ্ট্রপ্রধান) হয়, ধনীরা দানশীল হয় এবং
রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়, তখন তোমাদের জন্য জমিনের
নিম্নভাগ থেকে জমিনের উপরিভাগ উত্তম। আর যখন তোমাদের মধ্যে ধনী লোকরা কৃপণ হয়,
কার্যাবলি মহিলাদের নির্দেশমতো চলে, তখন তোমাদের জন্য জমিনের উপরিভাগ থেকে জমিনের
নিম্নভাগ উত্তম।’ (তিরমিজি, পৃষ্ঠা : ৪৫৯)
উপরোক্ত
আলোচনার প্রেক্ষিতে এটাই প্রমাণিত যে, দেশের মধ্যে যখন মদ, জুয়া, লটারি, সুদ, ঘুষ,
যেনা-ব্যভিচার, গান-বাজনা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, বেপর্দা, অপহরণ, গুম, খুন, মানুষের
তৈরী সংবিধান প্রনয়ণ ও তদানুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করা ও নারী নির্যাতনসহ সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ বৃদ্ধি
পায় তখনই জাতিকে শাস্তি দেয়ার জন্যে মূলত আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী শাসক চাপিয়ে দেন।
বাংলাদেশে মুসলমানদের জন্যে শাস্তি স্বরুপ শেখ হাসিনাকে বার বার আল্লাহ তায়ালা রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা প্রদান করে চাপিযে দিচ্ছেন। এর জন্যে আমরাই দায়ী।
(দ্বিতীয়
অংশ দেখুন)
সংকলনে : মাওলানা মো: শিহাব.
এম এ-ইসলামিক স্টাডিজ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)
No comments:
Post a Comment