Wednesday, November 7, 2018

ইসলামের রাজনীতি করা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরজ (দ্বিতীয় অংশ)

ইসলামের রাজনীতি করা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরজ (দ্বিতীয় অংশ)

(ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন আইন,দল, মত,পথ বা আদর্শ গ্রহণ করা কিংবা মেনে চলা মুসলমানদের জন্য হারাম)
সংকলনে: মাওলানা মোঃ শিহাব এম এ-ইসলামিক স্টাডিজ (বিশিষ্ট  ইসলামি চিন্তাবিদ)

দ্বিতীয় অংশঃ
(৩) ইসলামী রাজনীতি বনাম অন্যান্য রাজনীতি
নীতি শব্দ থেকে যেমন নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান শব্দদয় গঠিত হয়েছে তেমনিভাবে রাজনীতি শব্দটিও গঠিত হয়েছে। নৈতিকতা বা নীতিজ্ঞান অর্থ হচ্ছে ভালমন্দ বিচারবোধ।সাধারনত রাজার নীতিকেই রাজনীতি বলে।ব্যাপক অর্থে রাজনীতি অর্থ হচ্ছে-ঐ সকল সূনিদ্দিষ্ট অনূসরন যুগ্য কিছুমৌলিক নীতি যে নীতিমালা অনুসরনের মাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি বিভাগে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।রাজনীতি স্থানকাল পাত্র ভেদে কালের আবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল।রাজনীতির অর্থছিল এক সময়” রাজা তার প্রজাপালন বা রাজকর্ম পরিচালনায় নেওয়া নীতিসূমহ যাহাকে রাষ্ট্রব্যবস্থাও বলাচলে।উন্নত রাজনীতিই প্রজাদের মন ও হৃদয়ে রাজার প্রতি আস্থা ও ভালবাসার জন্মদেয় অন্যথায় ভূল বা অনৈতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজ্যে অশান্তি অকল্যাণ ও বিদ্রহের জন্মদেয়।এতে রাজাকে হতে হয় ক্ষমতাচ্যুত।রাজনীতিতে নাকি শেষ কথা বলতে কিছু নেই।যু্দ্ধে এবং রাজনীতিতে সব হালাল।এসব ভ্রান্তনীতি অবলম্বনের কারনে সম্রাট আকবর মুসলমানদের রুসানলে পতিত হয়েছিলেন বটে সম্রাট হিসেবে অমুসলিমদের নিকট তিনি দেবতূল্য ছিলেন। অবব্যস্থা অনিয়মের অপরাধে নিজ পিতাকে গৃহবন্দি করে সম্রাট আলমগীর মুসলমানদের জন্যছিলেন মাথার মুকুট পক্ষান্তরে ভারতের মুসলীম বিদ্বেসীদের নিকট ছিলেন ধর্মান্ধ।তার জৈষ্ঠ ভাই দারাসিকু ছিলেন অমুসলিমদের আস্থাভাজন কারন তিনি ছিলেন সম্রাট আগবরেরন্যায় ধর্মনিরপেক্ষ ভ্রান্তআদর্শের অনুসারী।
রাজনীতিকে বর্তমানে বিভিন্ন মতবাদ বা আদর্শ প্রতিষ্টার মাধ্যমও বলাচলে।রাজনৈতিক দল গুলো ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে থাকে।দল গুলো মনে করে নিজ নিজ দলের আদর্শই রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে কেবলমাত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে।
আধুনিক কালের রাজনীতির সঙ্গা হচ্ছে:রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়ার নাম যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদিও রাজনীতি বলতে সাধারণত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়।রাজনীতি কতৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত।রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই রাজনীতিকরে।
বর্তমানে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন গুলো যে সকল মতবাদ বা আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনীতি করে থাকে এসকল মানব রচিত মতবাত মানুষের কল্যাণ সাধনেই সৃষ্ট।যারা এসকল মতবাদের জনক তারা সত উদ্দেশ্য নিয়েই এসব মতবাদ উপস্থাপন করেছেন । এ সকল প্রচলিত রাজনৈতিক মতবাদ সূমহ রাষ্ট্র ও জনগনের কতটুকুন কল্যানসাধন করতে পেরেছে তা বিবেচ্য বিষয়।
এখানে মানবরচিত কয়েকটি মতাদর্শ বা রাজনৈতিক মতবাদ সূমহের নাম নিন্মে দেয়া হলো।
(ক) বস্তুবাদ (materialism)
(খ) ধর্মনিরপেক্ষবাদ (secularism)
(গ) দন্দবাদ (dialectism)
(ঙ) সমাজতন্ত্র
(চ) গনতন্ত্র আরও যত ইত্যাদী।এসকল আদর্শবায়নের মাধ্যমে যারা শান্তির স্বপ্ন দেখায় তারাই মূলত ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করেছে ঐ সকল মানুষ। অশান্তি মানুষেরই সৃষ্টি। অশান্তি মানুষেরই কর্মফল। বর্তমান বিশ্বে বিরাজিত অশান্তির ধরণ ও রূপ বর্ণনা করে শেষ করা কঠিন। কয়েকটি বড় বড় অশান্তি নিম্নরূপ : 
০১. মানুষের মানসিক অশান্তি, মানসিক যন্ত্রণা ও দাহ। 
০২. ক্ষুধা, দারিদ্র, অভাব। 
০৩. মারাত্মক রোগ ও মরণ ব্যাধির বিস্তার। 
০৪. দাম্পত্য কলহ, বিরোধ, বিচ্ছেদ, বৈধব্য। 
০৫. পারিবারিক বিশৃংখলা ও চরম অশান্তি। 
০৬. চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ, জবরদখল। 
০৭. ঘুষ, চাঁদাবাজি। 
০৮. ধোকা, প্রতারণা, জালিয়াতি, ফাঁকিবাজি।
 ০৯. হিংসা বিদ্বেষ, ঝগড়া বিবাদ, হানাহানি, খুনাখুনি। 
১০. যৌতুকের যাঁতাকল। 
১১. নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যভিচার, যৌন হয়রানি এবং নারীর অধিকার হরণ। 
১২. বেকারত্ব। 
১৩. অবাধ্যতা, উশৃংখলা। 
১৪. যুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচার। 
১৫. মিথ্যাবাদিতা, ওয়াদা খেলাফি, চুক্তিভঙ্গ। 
১৬. দমন, নিপীড়ন, বিদ্রোহ। 
১৭. আগ্রাসন, অবরোধ। 
১৮. সন্ত্রাস। 
১৯. যুদ্ধ।
 ২০. নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা। 
২১. মানবাধিকার পদদলন। 
২২. বিপথগামিতা। 
২৩. মাদকাসক্তি/নেশা। 
২৪. সম্মান ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তাহীনতা। 
২৫. জীবনের নিরাপত্তাহীনতা। 
২৬. হত্যা, আত্মহত্যা, অন্তর্ঘাত, নারীর জীবনাহুতি। 
২৭. সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা। 
২৮. খেয়ানত, অবিশ্বস্ততা, আত্মস্যাৎ।
 ২৯. মন্দা, উৎপাদন ঘাটতি, সম্পদের স্বল্পতা, টাকার প্রবাহ, দুস্প্রাপ্যতা। 
৩০. পরিবেশ দূষণ। 
৩১. অপচয় অপব্যবহার। 
শুধু এগুলোই নয়, এর বাইরেও রয়েছে অশান্তির অসংখ্য ইন্ধন। আর আমাদের জানা অজানা, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য, ছোট বড় এসব অশান্তির ইন্ধনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষের মনের শান্তি, ঘরের শান্তি, সামাজিক শান্তি, রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং বিশ্বশান্তি। সব অশান্তির জন্যে দায়ী মানুষের কর্ম :
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ .

অর্থ : স্থলভাগ ও জলভাগে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নিজেরই কৃতকর্মের দরূণ, যেনো তিনি তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করাতে পারেন। এর ফলে হয়তো তারা ফিরে আসবে। -সূরা ৩০ আর রূম : আয়াত ৪১। 
মানুষ শান্তিদাতা নয়, মানুষ শান্তি ও মুক্তির অন্বেষী। সুতরাং শান্তির অন্বেষীদের শান্তি চাইতে হবে শান্তি ও মুক্তি দাতার কাছে। যার কাছে শান্তি আছে এবং শান্তি লাভের ফর্মূলাও আছে। আর সেই ফর্মূলাই হল ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি।
ইসলামের রাজনীতি কোন সাধারন রাজার নীতি নয় তিনি সেই পরাক্রমশালী মহারাজা! যিনি ফেরাউন.নমরুদ.হাম্মান .কারুন .সাদ্দাতের মত রাজাদেরকে মিথ্যে দম্ভওআস্ফালনের জন্য স্বাস্তি দিয়েছিলেন যা ইতিহাসখ্যাত। সুতারাং বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেই সর্বশক্তিমান বাদশাহর রাজনীতি করতে হবে
যার কাছে শান্তি আছে এবং যিনি মুক্তি দিতে পারেন? এর জবাব একটাই, আর তাহলো : যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং শান্তি ও মুক্তির অন্বেষী বানিয়েছেন। শান্তি কেবল তাঁরই কাছে আছে এবং কেবল তিনিই মানুষকে শান্তি ও মুক্তি দিতে পারেন। তাঁরই নাম আল্লাহ। শান্তির চাবিকাঠি তাঁরই মুষ্টিবদ্ধে। তিনিই শান্তির উৎস এবং তিনিই মুক্তিদাতা : 
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ .

অর্থ : তিনিই আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ (ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদাতা) নেই। তিনিই একমাত্র সম্রাট, পুত পবিত্র। তিনিই শান্তি। তিনিই প্রশান্তি ও নিরাপত্তাদাতা। তিনিই রক্ষক। তিনিই প্রবল পরাক্রমশীল মহিমান্বিত। -সূরা ৫৯ হাশর : আয়াত ২৩। 
সুতরাং মানুষকে শান্তি চাইতে হবে শান্তির উৎস মহান আল্লাহর কাছে। আর শান্তি লাভের জন্য তিনি যে ফর্মূলা বা জীবন পদ্ধতি দিয়েছেন সেটার অনুসরণ ও অনুবর্তন করতে হবে। তবেই মানব জীবনে নেমে আসবে শান্তির ফল্গুধারা।ন এবার আসুন ইসলামী রাজনীতি নিয়ে কিছু আলোচনা করি যাতে সাম্যক ধারনা জন্মে।
ইসলামী রাজনীতি:
ইসলামের রাজনীতির বুনিয়াদ তিনটি মূলনীতির উপর স্থাপিত : তাওহীদ, নবুয়াত এবং খিলাফত। এ তিনটি মূলনীতিকে বিস্তৃতভাবে বুঝতে না পারলে ইসলামী রাজনীতির বিস্তারিত বিধান হৃদয়ংগম করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। কাজেই সর্বপ্রথম আমি এ তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করব।
তাওহীদ:

তাওহীদের অর্থ এই যে, আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মানুষ সহ সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং একমাত্র মালিক। প্রভুত্ব, শাসন এবং আইন রচনার নিরংকুশ অধিকার একমাত্র তারই। কোন কিছু করার আদেশ দেয়া এবং কোন কাজের নিষেধ করার ক্ষমতা শুধু তারই কাছে বর্তমান। আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষ কাউকে শরীক করবে না। আমরা যে সত্তার দরুন বেচে আছি, আমাদের যে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বল-শক্তি দ্বারা আমরা কাজ করি, দুনিয়ার সকল জিনিসেরই উপর আমাদের এই যে অধিকার ও ব্যবহার ক্ষমতা প্রয়োগ করি - তার কোনটাই আমাদের উপার্জিত নয়। এর সৃষ্টি ও অবদানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউ শরীক নেই। আমাদের নিজেদের এ অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং আমাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির সীমা নির্ধারণ করা আমাদের করণীয় কাজ নয়, আর না এতে অন্য কারোও একবিন্দু অধিকার আছে। এ সবকিছু শুধু সেই আল্লাহর করণীয় যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের এত শক্তি ও স্বাধীনতা দান করেছেন এবং দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে আমাদের ভোগ-ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। তাদের এ ধারণা মানবীয় প্রভুত্বকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। একজন ব্যক্তি মানুষই হোক কিংবা একটি পরিবার বা একটি শ্রেণী হোক কিংবা মানুষের একটি বড় দল, একটি জাতি কিংবা সামগ্রিকভাবে সারা দুনিয়ার মানুষ হোক, সার্বভৌ্ম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তার আদেশই হচ্ছে মানুষের জন্য একমাত্র আইন।
নবুয়াত:

আল্লাহ তায়ালার এ আইন যে উপায়ে মানুষের নিকট এসে পৌছেছে, তার নাম নবুয়াত। এ নবুয়াতের ভিতর দিয়ে আমরা দু’টি জিনিস লাভ করে থাকি। এক : কিতাব - যাতে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের আইন-কানুনের বিবরণ দিয়েছেন। দুই : সেই কিতাবের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা - যা রাসূল (সা) আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিজের কথা ও কাজের ভিতর দিয়ে সুস্পষ্টরূপে পেশ করেছেন। যে মূলনীতির উপর মানুষের ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালা সবই তার কিতাবে এক এক করে বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল (সা) আল্লাহর কিতাবের সেই উদ্দেশ্য অনুসারে কার্যকরীভাবে জীবন যাপনের একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন। আর তার আবশ্যকীয় ব্যাখ্যা বলে দিয়ে আমাদের জন্য একটি উজ্জল আদর্শ রূপে উপস্থিত করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় এ দু’টি জিনিসের সমষ্টিগত নাম হচ্ছে শরীয়াত। ইসলামী রাষ্ট্র এ বুনিয়াদী নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
খিলাফত:

এখন খিলাফতের কথা আলোচনা করা যাক। আরবী ভাষায় এ শব্দ প্রয়োগ করা হয় প্রতিনিধিত্বের অর্থ বুঝার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার দেয়া স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করবে। আপনি যখন কারো উপর আপনার জায়গা-জমির ব্যবস্থাপনার ভার অর্পণ করেন, তখন চারটি কথা আপনার মনে অবশ্যই বর্তমান থাকে। প্রথম এই যে, জমির প্রকৃত মালি সে নয়, - আপনি নিজে। দ্বিতীয়, আপনার জমিতে সে কাজ করবে আপনারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে। তৃতীয়, আপনি তাকে কাজকর্ম করার যে সীমা নির্দিষ্ট করে দেবেন, সেই সীমার মধ্যে থেকেই তাকে কাজ করতে হবে - আপনার দেয়া স্বাধীনতাকে সেই সীমার মধ্যেই তার ব্যবহার করতে হবে। আর চতুর্থ এই যে, আপনার জমিতে তাকে - তার নিজের নয়-আপনার উদ্দশ্যকে পূর্ণ করতে হবে। এ চারটি শর্ত প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যে এমনভাবে মিলে-মিশে আছে যে, ‘প্রতিনিধি’ শব্দ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনিই মানুষের মনে এটা জেগে উঠে। আপনার কোন প্রতিনিধি যদি এ চারটি শর্ত পূর্ণ না করে তবে আপনি অবশ্যই বলবেন যে, সে প্রতিনিধিত্বের সীমালংঘন করেছে এবং সে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যা ‘প্রতিনিধির’ শব্দের অর্থেই নিহিত রয়েছে। ইসলাম মানুষকে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার ‘প্রতিনিধি’ বলে নির্দিষ্ট করেছে। এই খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যেই উক্ত চারটি শর্ত অনিবার্য রূপে বিদ্যমান। ইসলামী রাজনীতির এ মহান আদর্শ অনুসারে যে রাষ্ট্র কায়েম হবে, মূলত তা হবে আল্লাহ তায়ালার নিরংকুশ প্রভুত্বের অধীনে মানুষের খিলাফত। আল্লাহর এ রাজ্যে তারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে তার নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে কাজ করে তার উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র কাজ।
খিলাফতের এ ব্যাখ্যা প্রসংগে আর একটি কথা বুঝে নেয়া দরকার। তা এই যে, ইসলামের এ রাজনৈতিক মত কোন ব্যক্তি বিশেষকে কিংবা কোন পরিবার বা কোন শ্রেণী বিশেষকে ‘প্রতিনিধি’ বলে আখ্যা দেয়নি, বরং মানুষের সেই গোটা সমাজকেই এ খিলাফতের পদে অভিষিক্ত করেছে, যারা তাওহীদ ও রেসালাতের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে খিলাফতের উল্লেখিত শর্তাবলী পূর্ণ করতে প্রস্তুত হবে, এমন সমাজই সমষ্টিগতভাবে খিলাফতের অধিকারী - এ খিলাফত এহেন সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের প্রাপ্য।
গণতন্ত্র:

ইসলামের রাজনীতিতে এখান থেকেই শুরু হয় গণতন্ত্রের পদক্ষেপ। ইসলামী সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তিই খিলাফতের অধিকারী ও আযাদীর মালিক। এ অধিকার ও স্বাধীনতার সমগ্র মানুষই সমান অংশের অংশীদার। এ ব্যাপারে কেউ কারো চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কোন মানুষ অন্য কোন ব্যক্তিকে তার এ অধিকার ও স্বাধীনতার স্বত্ব হতে বঞ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্রের শাসন শৃংখলা বিধানের জন্য যে সরকার গঠিত হবে তা এ সমাজেরই ব্যক্তিদের মত অনুযায়ী গঠন করতে হবে। এরাই নিজ নিজ খিলাফতের অধিকার হতে এক অংশ সেই সরকারকে দান করবে। রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে তাদের মতের মূল্য অনিবার্যরূপে স্বীকৃত হবে। তাদেরই পরামর্শক্রমে গভর্ণমেন্ট চলবে। তাদের আস্থা যে ব্যক্তি লাভ করতে পারবে। আর যে তাদের আস্থা হারাবে, সে অবশ্যই খিলাফতের পদ হতে বিচ্যুত হেত বাধ্য হবে। এ দিক দিয়ে ইসলামী গণতন্ত্র একটি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র। একটি গণতন্ত্র যতদূর পরিপূর্ণ, পূর্ণাঙ্গ ও নিখুত হতে পারে, এটা ঠিক ততখানিই পরিপূর্ণ ও নিখুত। কিন্তু ইসলামের এ গণতন্ত্র পাশ্চাত্য গণতন্ত্র হতে মূলতই সম্পূর্ণ আলাদা। এদের মধ্যে আকার-পাতালের পার্থক্য বিদ্যমান। পার্থক্য এ দিক দিয়ে যে, পাশ্চাত্য রাজনীতি ‘জনগণের প্রভুত্বকে’ বুনিয়াদরূপে স্বীকার করে, কিন্তু ইসলাম স্বীকার করে জনগণের ‘খিলাফত’কে। পাশ্চাত্য রাজনীতিতে জনগণই হচ্ছে বাদশাহ, আর ইসলামের দৃষ্টিতে বাদশাহী একমাত্র আল্লাহর, জনগণ তার প্রতিনিধি মাত্র। পাশ্চাত্য রাজনীতিতে জনগণ নিজেরাই দেশের শাসনতন্ত্র ও আইন রচনা করে, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণকে সেই শরীয়াত বা আইনের অনুসরণ করে চলতে হয়, যা আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। পাশ্চাত্য রাজনীতিতে গভর্ণমেন্টের কর্তব্য হচ্ছে রাজ্যের জনগণের ইচ্ছাকে পূর্ণ করা আর ইসলামী গভর্ণমেন্ট এবং তার প্রতিষ্ঠাতা জনগণ সকলেরই কর্তব্য হচ্ছে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যকে সার্থক করা। মোটকথা, পাশ্চাত্য গণতন্ত্র হচ্ছে আযাদ, নিরংকুশ ও বল্গাহারা প্রভৃত্ত - যার নিজ অধিকার ও স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারিতার সাথে ভোগ করে। এর সম্পূর্ণ বিপরীত - ইসলামী গণতন্ত্র হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আইনের অনুসরণ করা। এখানে মানুষ তার অধিকার ও স্বাধীনতাকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে তারই নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যবহার করা।
অতপর আমি তাওহীদ, রেসালাত ও খিলাফতের ভিত্তিতে স্থাপিত ইসলামী রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট চিত্র অংকন করব।
ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য:
ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কুরআন শরীফে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, তা সেসব মংগল ও কল্যাণময় ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করবে, বিকাশ দান করবে এবং উৎকর্ষ সাধন করবে, যে সবের অমংগল ও পাপ অনুষ্ঠানকে বাতিল করবে, পরাজিত করবে এবং নি:শেষে বিলীন করবে। মানুষের জীবনে যে সবের স্পর্শ মাত্রকেও আল্লাহ তায়ালা পসন্দ করেন না ইসলামের রাজ্যের শৃংখলা সম্মলিত ইচ্ছা-বাসনা চরিতার্থ করাও এর লক্ষ্য নয়। ইসলাম রাষ্ট্রের সম্মুখে এমন এক উচ্চতম ও উন্নততর লক্ষ্য উপস্থিত করে, যা অর্জন করা একান্তভাবে কর্তব্য। তা এই যে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যে কল্যাণ ও মঙ্গলের উৎকর্ষ দেখতে চান তাকে বিকশিত ও ফুলে ফলে সুশোভিত করতে হবে। আর ধ্বংস ও উচ্ছৃংখলতার এবং এমন সমস্ত উপায়ের উৎসমুখ চিরতরে বন্ধ করতে হবে যা আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে তার এ রাজ্যকে ধ্বংস করতে পারে, তার সৃষ্টি মানব জাতির জীবন নষ্ট করতে পারে। এ লক্ষ্য উপস্থিত করার সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম আমাদের সামনে ভাল-মন্দ উভয়ের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পেশ করেছে। তাতে বাঞ্ছিত কল্যাণ ও মংগলকে এবং অকল্যাণগুলোকে একেবারে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। এ চিত্র সামনে রেখে ইসলামী রাষ্ট্র প্রত্যেক যুগে এবং সকল প্রকার পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেই তার নিজ সংশোধনী প্রোগ্রাম রচনা করতে পারে।
শাসনতন্ত্র:

মানব জীবনে প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখাতেই চারিত্রিক রীতিনীতিগুলোকে পরিপূর্ণরূপে পালন করা ইসলামের চিরন্তন দাবী। এ কারণে এটা নিজ রাষ্ট্রের জন্য এ সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, এর রাষ্ট্রনীতি নিরপেক্ষ, সুবিচার, সততা এবং খাটি ঈমানদারীর উপর স্থাপিত হবে। এটা স্বাদেশিক, প্রশাসনিক বা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার খাতিরে মিথ্যা, প্রতারণা এবং অবিচারের প্রশ্রয় দিতে কোন অবস্থাতেই প্রস্তুত নয়। দেশের অভ্যন্তরে শাসক ও শাসিতদের মধ্যস্থিত সম্পর্কই হোক, আর দেশের বাইরে অন্যান্য জাতির সাথে সম্পর্কই হোক উভয় ক্ষেত্রেই ইসলাম সততা, বিশ্বাসপরায়নতা এবং সুবিচারের জন্য সমস্ত প্রকারের স্বার্থ কুরবানী করতে প্রস্তুত। মুসলিম ব্যক্তিদের মত মুসলিম রাষ্ট্রকেও এটা এ জন্য বাধ্য করে যে, প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করতে হবে, লেন-দেন ঠিক রাখতে হবে এবং যা বলবে তা করতে হবে, নিজের প্রাপ্য আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কর্তব্যকে স্মরণ করতে হবে, যা করবে তা বলবে এবং অন্যের দ্বারা তার কর্তব্য আদায় করার প্রাপ্য (হক) ভুলে যেতে পারবে না। শক্তিকে যুলুমের কাজে ব্যবহার করার পরিবর্তে তাকে সুবিচার কায়েম করার উপায় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরের ন্যায্য অধিকারকে সবসময়ই হক বলে মনে করতে এবং তা আদায় করতে হবে। শক্তিকে মনে করতে হবে আল্লাহ তায়ালার আমানত এবং এ দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে তাকে প্রয়োগ করতে হবে যে, এ আমানতের পুরাপুরি হিসেব তাকে আল্লাহ তায়ালার দরবারে অবশ্যই দিতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র পৃথিবীর বিশেষ একটা অঞ্চলে স্থাপিত হয়ে থাকলেও মানবীয় অধিকারগুলোকে সে কোন ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধা করে না - নাগরিকত্বের অধিকারেও নয়। শুধুমাত্র মানবতার দিক দিয়েই ইসলাম মানুষের জন্যে কয়েকটি মৌলিক অধিকার স্বীকার করে এবং সকল সময়ই সেগুলোকে পূর্ণরূপে রক্ষা করার আদেশ দেয়। সেই মানুষ ইসলামী রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে বাস করুক কিংবা এর বাইরে বাস করুক, সে মিত্রই হোক কিংবা শত্রু তার সাথে সন্ধি থাকুক কিংবা যু্দ্ধই চলতে থাকুক। মানুষের রক্ত সকল সময়ই সম্মান পাবার যোগ্য, বিনা কারণে কিছুতেই মানুষের রক্তপাত করা যেতে পারে না। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রুগ্ন এবং আহত লোকদের উপর কোনক্রমেই আক্রমণ করা যেতে পারে না। নারীর সতীত্ব চিরদিনই সম্মানিত ও সুরক্ষণীয়, কোন কারণেই তা নষ্ট করা যেতে পারে না। ক্ষুধার্তের জন্য অন্নের, বস্ত্রহীনদের জন্য বস্ত্রের এবং আহত কিংবা রুগ্ন ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসা ও সেবা শুশ্রুষার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে-সে ব্যক্তি শত্রুপক্ষেরই হোক না কেন। এ কয়টি এবং এধরেনর আরো কয়েকটি অধিকার ইসলাম মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবেই দান করেছে। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল শাসনতন্ত্রে এ সকলকে মৌলিক অধিকার বলে স্বীকার করা হয়েছে। তারপর নাগরিক অধিকারকে ইসলাম কেবল মাত্র সেসব লোকের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়নি, যারা রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে বরং প্রত্যেক মুসলমান-দুনিয়ায় যে কোন অংশেই তার জন্ম হোক না কে-ইসলামী রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই এর নাগরিক হয়ে যায় এবং সেই দেশের জন্মগত নাগরিকদের সমতুল্য অধিকার তাকে দান করা হয়। দুনিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্র যত সংখ্যকই হোক না কেন এদের সব কয়টির মধ্যে নাগরিক অধিকার হবে সর্বসম্মিলিত। কোন ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে মুসলিম ব্যক্তির ‘পাসপোর্ট’-অনুমতি পত্রের আবশ্যক হবে না। কোন বংশীয়, জাতীয় কিংবা শ্রেণীতে বৈষ্যম ছাড়াই প্রত্যেক মুসলমান প্রত্যেকটি ইসলামী রাষ্ট্রের বড় বড় দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হতে পারবে।
যিম্মিদের অধিকার:
ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে যেসব অমুসলিম বাস করে, তাদের জন্য ইসলাম কতগুলো অধিকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছ। রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে তা অবশ্য বিধিবদ্ধ থাকবে (যিম্মীর শাব্দিক অর্থ যার যিম্মা বা দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়)। ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিমদের জান-মাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেই তারা যিম্মী নামে অভিহিত হয়। ইসলামের পরিভাষায় এরূপ অমুসলিমদেরকে বলা হয় যিম্মী। যিম্মীর জান-মাল ও মান-সম্মান সবই একজন মুসলিম নাগরিকের জান-মাল ও মান-সম্মানের মতই মর্যাদা পাবে। ফৌজদারী এবং দেওয়ানী আইনের বেলায় মুসলিম ও যিম্মীর মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যিম্মীদের ‘পার্সনাল-ল’ অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতায় ইসলামী রাষ্ট্র কখনও হস্তক্ষেপ করবে না। যিম্মীদের মন, ধর্মমত ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং পূজা, উপাসনার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। যিম্মী তার ধর্ম প্রচারই শুধু নয়, আইনের গন্ডির মধ্যে থেকে ইসলামের সমালোচনাও করতে পারবে।
ইসলামী শাসনতন্ত্রে অমুসলিম প্রজাদেরকে এগুলো এবং এ ধরনের আরো অনেকগুলো অধিকার দান করা হয়েছে। এ অধিকারগুলো চিরস্থায়ী। ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে তারা যতদিন থাকবে ততদিন তাদের এ অধিকার কিছুতেই হরণ করা যেতে পারে না। অন্য কোন অমুসলিম রাষ্ট্র এর অধীনে মুসলিম প্রজাদের উপর যতই যুলুম করুক না কেন, তার প্রতিশোধ হিসেবে একটা ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে এর অধীন অমুসলিম প্রজাদের উপর শরীয়াতের খেলাফ বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়। এমনকি আমাদের সীমান্তের বাইরে সমস্ত মুসলমানকে যদি হত্যাও করে ফেলা হয়, তবুও আমরা আমাদের সীমার মধ্যে একজন যিম্মীর অকারণে রক্তপাত করতে পারি না।
রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব:
ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সমস্ত দায়িত্ব একজন আমীর বা রাষ্ট্র প্রধানের উপর অর্পণ করা হয়। এ আমীরকে ‘সদরে জমহুরিয়া’ বা রাষ্ট্র পরিষদের সভাপতির সমান মনে করা যেতে পারে। আমী নির্বাচনের ব্যাপারে এমন সমস্ত বয়:প্রাপ্ত স্ত্রী-পুরুষের ভোট দেবার অধিকার থাকে যারা শাসনতন্ত্রের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে। আমীর (রাষ্ট্র প্রধান) নির্বাচনের মূলনীতি এই যে, ইসলামের মূল ভাবধারার অভিজ্ঞতা, ইসলামী স্বভাব-প্রকৃতি আল্লাহর ভয় এবং রাজনৈতিক প্রতিভার দিক দিয়ে যে ব্যক্তি সমাজের অধিকাংশ লোকের আস্থাভাজন হবে। এমন ব্যক্তিকেই আমীর নির্বাচন করতে হবে তারপর সেই আমীরের সাহায্যের জন্য একটি ‘মজলিশে শুরা’ বা পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। ‘মজলিশে শুরার’ পরামর্শ নিয়ে রাজ্যের সমস্ত শৃংখলা রক্ষা করা আমীরের কর্তব্য হবে। আমীরের প্রতি যতদিন পর্যন্ত জনগণের আস্থা থাকবে ততদিনই সে আমীর থাকতে পারবে। আস্থা হারিয়ে ফেললে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আর যতদিন তার প্রতি লোকদের আস্থা থাকবে, গভর্ণমেন্টের অধিকার ও কর্তৃত্ব তার হাতে থাকবে। আমীর এবং তার সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনা করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
ইসলামী রাষ্ট্রে আইন রচনা করা হবে শরীয়াতের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে। আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূলের সুস্পষ্ট নির্দেশ শুধু অনুসরণ ও প্রতিপালনের জন্যই। কোন আইন পরিষদ তাতে বিন্দুমাত্র রদবদল করতে পারে না কিন্তু আল্লাহ আল্লাহ এবং রাসূলের যেসব হুকুমের একাধিক অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা হবে, তাতে শরীয়াতের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা শুধু সেসব লোকের কাজ, যারা শরীয়াতের পরিপূর্ণ দক্ষতা সম্পন্ন। কাজেই এ ধরনের কাজ ‘মজলিশে শুরা’ হতে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সাব-কমিটির নিকট সোপর্দ করতে হবে। তারপর মানুষের দৈনন্দিন কাজ কারবারের এমন অনেক ক্ষেত্রও থাকে, যে সম্পর্কে শরীয়াত নির্দিষ্ট কোন হুকুম দেয়নি। কাজেই এ ব্যাপারে ‘মজলিশে শুরা’ দ্বীন ইসলামের নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে আইন রচনা করতে পারে।
আদালত:

ইসলামী আদালত শাসন কর্তৃপক্ষের অধীন নয় ; বরং তা সরাসরিভাবে আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধির মর্যদায় অভিষিক্ত এবং একে আল্লাহ তায়ালরই সামনে সে জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আদালতের বিচারকদের যদিও শাসন কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত করে ; কিন্তু এক ব্যক্তি যখন আদালতে বিচারকের পদে বসবে, তখন সে আল্লাহ তায়ালার আইন অনুসারে জনগণের মধ্যে নিরপেক্ষ ইনসাফ করবে। তার ইনসাফের হাত হতে স্বয়ং রাষ্ট্রপতিও বাচতে পারে না। বিচারকের সামনে এমনভাবে দাড়াতে হবে-যেমন করে দাড়াতে হয় রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিককে।
উপসংহার:

অমুসলিমগন যেকোন আর্দশের রাজনীতি করতে পারে তাতে আমার কোন বক্তব্য নেই কারন তাদের নিজস্ব কোন জীবন ব্যবস্থা নেই যাহা অনুসরন করবে। কিন্তু মুসলিমদের তো নিজস্ব আদর্শরয়েছে যাহা তাদেররবের প্রদত্ত্ব।তিঁনি বলেন”ইন্নাদ্বিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম-অর্থাত আমার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।আল্লাহ এই দ্বীন ইসলাম (ইসলামী জীবন ব্যবস্থা)কে অন্যান্য জীবনব্যবস্থার উপর বিজয়ী করার জন্যেই নাবী রাসুলগনকে পৃথিবীত পাঠিয়েছেন।আমি সেই সত্তা যিনি সত্যদ্বীন সহকারে রাসুলপ্রেরণকরেছি যাতে তিনি অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর ইহাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন(সূরা আলফাতাহ-২৮)অতএব বুঝা গেল একজন মুসলমান অন্যান্য জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনীতি করতে পারেনা।যদি করে তাহা হবে কুফুরিএবং প্রত্যক্ষিত। আমাদের সমাজে এক শ্রনেীর লোক রয়েছে তারা ভাবেন বর্তমান আধুনিক যুগে ইসলামী শাসনব্যবস্থা চলতে পারেনা তাছাড়া এদেশে অমুসলিম নাগরিকও তো রয়েছে।এমন বিশ্বাস যাদের অন্তকরনে রয়েছে তাকে তওবাকরে আবার মুসলিম হতে হবে।আল্লাহ বলেন”যারা কুরান দ্বারা জীবনের সকল কাজের ফায়সালা করেনা তারা কাফের!অন্যত্র সুরা মায়েদা- ৪৯ নং আয়াতে বলনে’আল্লাহর বিধান অনুযায়ি মানুষের মধ্য ফায়সালাকর!তাদের মনের খেয়ালখুশির ধারনাবাসনার অনুসরন করোনা।এবার আসুন অমুসলিমদের কথা!এই পৃথিবীতে সকল সৃষ্টজীবকে আল্লাহ প্রতিপালন করেন।মুসলিম অমুসলিম কেউ তার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত নয় কারন সবারই তিনি রব বা পালনতকারী।মহানপ্রভু যিনি মানুষের জন্য জীবন বিধানরচনা করেছেন তিনি তার প্রভূত্ব অস্বিকারকারীদের জন্যও তাঁর রচিত জীবনব্যবস্থায় ন্যায়ভিত্তিক সুযোগ সুবিধা অর্থাত মৌলিকঅধিকার সূমহ সংরক্ষিত রেখেছেন। যারা ভাবেন ইসলামী হুকমাতে অমুসলিমদের ধর্মীয় সামাজিক অর্থনৈতিক অধিকার সূমহ খর্বকরা হয়েছে তাদের ভাবা উচতি “মায়ের চেয়ে খালার দরদ বেশি হতে পারেনা।সর্বশেষ একটি হাদিস বর্ণনা করেই ইতিটানবো আশাকরি লেখাটি আমাদের অনেক ভূল চিন্তা দ্বারার অপনোদন করবে।রাসূলে স: বলেছেন”মনে রেখো কোন মুসলিম কোন অমূসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়,তার অধিকারখর্বকরে,তার কোন বস্তু জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয় তাহলে কয়িামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে সেই অমূসলিমের পক্ষ অবলম্বন করবো।(বুদাউদ)
তথ্যসূত্র

১.কুআন হাদীস সঞ্চায়ন -অধ্যাপক মাওলানা আতকিুর রহামান ভূঁইয়া
২. ইসলামের জীবন পদ্ধতি-সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী 
(৫) ইসলামে রাজনীতি ছিল, আছে এবং থাকবে
॥মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান ‍॥
আমাদের পবিত্র ইসলাম নতুন কোন ধর্ম নয়, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর আগমনের সাথে সাথে মহান আল্লাহ ইসলামকে পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন। যুগে যুগে মহান আল্লাহ নবী রাছুলদের মাধ্যমে ইসলাম কে বিশ্ব মানবতার কল্যানে সংস্কার করেছেন। সর্বশেষে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব- মানবতার একমাত্র ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা হিসাবে পুনাঙ্গরূপে দুনিয়াতে প্রেরন করেছেন, কিন্তু যুগে যুগে বিভিন্ন গোত্র ও মানব গোষ্ঠির মধ্যে থেকে কিছু বিপদগামী পাপাচারী মানুষ ইসলামের বিরোধীতা করে আসছিল। তারা নবী রাসুলদের বিরোধীতা করছে। বিরোধীতা যখন চরম আকারে পৌছে যায় তখন মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে আসমানী গজব জমিনি মুসিবত নাজিল হয়ে তারা ধংস হয়ে যায়।
ফেরাউন, নমরূদ, কারুন, সাদ্দাত, কত্তমে আদ- কত্তমে সামুদ, প্রভূতি বহু ইসলাম বিরুধী চক্রকে মহান রাব্বুল আলামিন সমূলে ধংস করেছেন। পক্ষান্তরে বিজয়ীকে করেছেন ইসলাম কে। সবশেষে আবু লাহাব, আবু জাহেল, তাদের দৌসরদের পতন হয়েছে। শয়তানের দোসর আবব্রাহকে সমূলে ধংস করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ।
যুগে যুগে ইসলামকে উৎখাত করার জন্য বহু ষড়যন্ত্র চলছিল এখন ও ছলছে। এরই ধারাবাহীকতায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ও ইসলাম নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র চলছে। কখনও ধর্ম নিরপেক্ষ কখনও মৌলবাদী কখনও তালেবান কখনও জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস বাদ প্রভূতি নাম দিয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কুলশিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে কিছু মুসলমান নামধারী ঈহুদী খৃষ্টান বা বিধমীদের এদেশীয় এজেণ্ট। তাদের কাছে ইসলামের নাম শুনলে গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। তারা ইসলাম কে সব সময় খাট করে দেখে, এবং নিদিষ্ট গ-িতে রাখতে চেষ্টা করে। তারা জেনে শুনে পবিত্র ইসলামের মহত্বকে লুকানোর চেষ্টাকরে অথচ মহান আল্লাহর কাছে একমাত্র ইসলামই মনোনিত ধর্ম। যাতে রয়েছে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক দিক থেকে সকল কর্ম কা-ে ইসলাম পরিপূর্ন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে (সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৯) নিঃসদেহে আল্লাহ তালার মনোনিত একমাত্র দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) হলো ইসলাম।
কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের দেশে কিছু বিধমীদের এজেন্ট মুসলমান নাম ধারী মানুষ, সাধারনত মুসলমানকে বিভ্রান্ত করতে সব সময় বলে ইসলাম একটি পবিত্র ধর্ম এই পবিত্র ধর্মকে নোংরা রাজনীতির মধ্যে টেনে আনতে দেওয়া যাবে না। এই ধোকা বাজ এজেন্টরা জানা দরকার অন্যান্য ধর্মে মানুষের পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ নেই। নেই রাজনীতির কথা নেই রাষ্ট নীতির কথা অর্থনীতিত্ত বিচার নীতির কথাও অন্যকোন ধর্মে নেই। অথচ ইসলামের নীতিমালায় সকল বিষয় সুবিন্যস্ত ভাবে নীতি মালা উল্লেখ আছে। দেশ ও জাতীর কল্যানে সু- সাশন বা সু-নীতি বলতে যদি কিছু থাকে তা একমাত্র ইসলামেই আছে। আর সু- সাশন প্রতিষ্ঠায় ইসলামী রাজনীতি অপরিহার্য।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১০৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষনা করেছেন, ওয়াতাছিম বে হাবলিল্লাহে জামিয়াও ওয়ালা তাফাররাকু- “তোমরা সংখবন্ধ ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে (দীনকে) আকড়ে ধর”। আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা।
এখানে আল্লাহ তাআলা মুসলমানকে দীনের রশিকে শক্ত ভাবে আকড়ে ধরার কথা বলেছেন। একজন মুসলমান দ্বীনের রশি ছাড়া অন্যকোন আদর্শকে আকড়ে ধরতে পারে না। মানুয়ের জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চলার একমাত্র বিধান হল ইসলাম।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষনা করেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল (জামায়াত) আন্দোলনে থাকা উচিৎ যারা মানুষকে কল্যানের পথে আহব্বান করবে। সৎ কাজের আদেশ দিবে, অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম্য”। সূরা ছফ এর ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে “ তারাই আমার প্রিয় পাত্র যারা সংঘতবদ্ধ ভাবে সীমা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় দৃঢ় ভাবে আমি আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে”।
ইসলামী আন্দোলন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ, ইসলামী সংগঠনের গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা পরিস্কার ভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে বহু বার সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।
সহিহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে হুজুর (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জান্নাতের আনন্দ ভোগ করতে চায় সে যেন সংগঠন কে আকড়ে ধরে একই হাদীসে আরও বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি আন্দোলন (সংগঠন) থেকে বিছিন্ন অবস্থায় মৃত্যবরন করবে তার মৃত্য হবে জাজেলিয়াতের যুগেÑ সূরা ফোরকান ৫২ নং আয়াতে আল্লাহ তালা বলেন, “হে নবী কাফিরদের কে কখনও মানবেন না- তাদের সাথে কোরআনী বিধান প্রতিষ্ঠার কঠোর আন্দোলন করুন”। অর্থাৎ জাহেলী আদর্শেও বিপরীতে ইসলামী আদর্শের বিজয় ঘটাতে হলে মুসলমানদেরকে করতে হবে আন্দোলন। দ্বীন ইসলামকে কায়েম করতে হলে প্রত্যেক মুসলমান কে হতে হবে ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয়।
আমাদের স্বাধীনতার পূর্বে যখন আমরা পাকিস্তানের অন্তভূক্ত ছিলাম তখন ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোর্জ গার্ডেনে যে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কর্মি সম্মেলনে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক জনাব সামছুল হক সে সম্মেলনে “মূলদাবী” শীর্ষক একটি বই পাঠ করে শুনান, সেই বইয়ের দ্বার্থহীন ভাষায় উল্লেখ করা হয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য বলে গৃহিত হয়। আওয়ামীলীগের বর্তমানকালে নেতানেত্রীরা অনেকেই ধর্ম নিরপেক্ষতার স্বপক্ষে এবং ইসলামী রাজনীতির বিপক্ষে জোরালো অবস্থান করলেও তারা অনেকেই জানেন না যে ১৯৪৯ সালে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালে আওয়ামীলীগ ঘোষিত লক্ষ ছিল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
আমাদের অনেক বড় বড় নেতা-নেত্রীরা বলেন ইসলামকে নিয়ে রাজনীতে করতে দেওয়া হবে না। কিংবা ইসলামে কোন রাজনীতি নাই। তারা নিজেদের কে ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির অনুসারী বলে দাবী করেন। তাদের সম্প্রতিক কর্মকা-ে এ ধরনের চিন্তা ধারার প্রভাব দেখা যায়। এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলে নয়। শাহবাগের কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের নেতৃত্বে তথাকথিত গণজাগরন মঞ্চকে তারা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা, তিন মাস ধরে অবস্থান করে সেখানে নাচ- গান, ভাষন- বক্তৃতা সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান করতে দিলেও একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম নামে ধর্মীয় সংস্থাকে ৫ মে এক রাতের জন্যও শাপলা চত্ত্বরে অবস্থান করতে দেওয়া হয়নি। রাত তিনটার দিকে আলো নিভিয়ে আইন শৃংখলা বাহিনির সম্মিলিত অভিযানের মাধ্যমে অসংখ্য ইবাদতরত ধর্মপ্রান মানুষকে চত্র ভঙ্গ করে দেওয়া নতুন করে তাদের ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ই ফুটে উঠে। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ইসলাম নিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। তিনি এমন এক দেশের মাটিতে দাড়িয়ে এই হুশিয়ারী দিলেন যেখানে শতকরা (৯৫) পছানব্বই ভাগ মুসলমান। যে দেশের স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতী সত্ত্বার অভ্যূদয় ও হয়েছিল ইসলামের ভিত্তিত্বে।
এই উপমহাদেশের পূর্ব অঞ্চলে যদি ইসলামের প্রসার না ঘটতো, এবং যদি এই অঞ্চলে বিশাল মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ গড়ে না উঠত, তা না হলে সাজেদা চৌধুরীরা এই কথা বলার সুযোগ ও পেত না।
বাংলাদেশের জাতি সত্ত্বাতে, ভাষা, সাহিত্য সাংস্কিৃত অর্থনৈতিক সামাজিক প্রভূতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও প্রধান ভূমিকা পালন করেছে ইসলাম। অথচ রাজনীতিতে ইসলামের ভূমিকা এবং ইসলামী রাজনীতি নিয়ে এখন জোর বিতর্ক দেখা যায়।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহার ইসলাম পরিপন্থি কোন আইন না করার অঙ্গিকার আছে। যেভাবে বলা যাক না কেন, রাজনীতিতে ইসলামের একটা ভূমিকা আছেই। ভোটের সময় এইটা আরও ব্যপকভাবে লক্ষ করা যায়, মুসলমানের জীবনে প্রতিটি অঙ্গনের মতো রাজনীতিতে ও ইসলামের ভূমিকা ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ইসলামী রাজনীতি নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে নতুন করে বির্তকের সুচনা করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে ইদানিং। ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার প্রয়াস লক্ষনীয়।
তবে একথা স্বীকার করতেই হবে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ধর্মাদশ বিস্বাস ঈমান আকিদা সংস্কৃতি ঐতিহ্য ইতিহাসকে উপেক্ষা করে বা বাদদিয়ে শুধু রাজনীতি নয়, কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। এই দেশে ইসলাম আগমনের সময় কাল থেকে আজ পযন্ত মুসলিম জনম-লীর যে ইতিহাস ঐতিহ্য সংকতি ঈমান আকিদা বিশ্বাস সব কিছুরই একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। এই স্বাতন্ত্র ঐতিহ্য, অতিতে যেমন খব করা বা মূছে ফেলা সম্ভব হয় নি, ভবিষ্যতেও হবেনা।
অথচ ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার কোন সুযোগ নেই। কারন ইসলাম হচ্ছে একটি পুনাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। রাজনীতি অর্থনীতি শিক্ষা সংস্কৃতি জীবন মনন বিশ্বাস কাজ কর্ম আচার ব্যবহার শাসন পছতি ব্যবস্থায় বানিজ্য আইন আদালত সহ সব কিছুই জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ঐশি বিধান এবং মহানবী (সাঃ) এর সর্বোত্তম জীবন দর্শন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা কথাই ইসলামী রাজনীতিবীদরা বলে থাকেন। সুতরাং ইসলামও রাজনীতি এক ও অভিন্ন ইসলামী রাজনীতির লক্ষও উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান এশি বানী। পবিত্র কোরআন কে ভিক্তি করে যুগো পযোগী সমাজ ও রাষ্ট্রয় জীবন গড়ে তোলা। কেননা ইসলাম একটি জাতীয় চেতনা। ইসলাম চির সুন্দর, চির নতুন, ও চির আধুনিক।
সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে কমিউনিজম অকার্যকর বলে বিবেচিত হয়েছে। পুজিবাদ ও সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে অকার্যকর হওয়ার ছড়ান্ত পর্যায়ে উপনীতি হয়েছে। এমতাবস্তায় সমাজ রাষ্ট্র ও অর্থ ব্যবস্থা হিসাবে ইসলামের সম্ভাবনা সক্ষমতা উপযোগীতা ও কার্যকারীতা বিশ্বজুড়ে ব্যপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে। সব মতবাদ ও ব্যবস্থা যেখানে শেষ, সেখানেই ইসলামের শুরু ও প্রতিষ্ঠা। আজকে দিশহারা মানুষ সংঘাত ময়, বিশৃংখলা, অশান্ত অনিরাপদ ও অনিশ্চিত বিশ্বে কেবল ইসলামই শান্তি নিরাপদ, নিরাপত্তা কল্যান উন্নযন ও বিকাশের পথ দেখাতে নিশ্চিত করতে পারে। এদিক থেকে এদেশের রাজনীতি সহ সকল ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা ও প্রভাব পড়বেই এবং থাকবেই তাতে কোন সদ্ধেহের অবকাশ নেই।
শুধু এদেশেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম সমাদিত, আদিত অনুপ্রানিত ও গৃহিত হবে বলে আশা করা যায়। আর এই বাস্তবতাকে অবহেলা বা উপক্ষা করার কোন সুযোগ নাই।
বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে যখন ইসলামী রাজনীতিকে নিমূল করার চেষ্টা চলছিল ঠিক তখনই এদেশের মাটিতে ইসলামী জাগরন বাহু গুনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ইসলাম প্রশ্নে আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ধারক হয়ে উঠবে। রাজনীতি যে ভাবে গঠিত হবে তার মধ্যে ইসলাম প্রশ্নের মিমাংশা গুরুত্ব পূর্ন দায়িত্ব হয়ে নানা ভাবে হাজির হতে থাকবে। এদেশের রাজনীতি হয়ত ইসলামের উপর নির্ভর করে চলবে। ইসলাম প্রশ্নে সঠিক ফয়সালা না হলে রাজনীতিতে নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মহনবী (সাঃ) এর মার্যদা রক্ষায় এদেশের সংখ্যা গরিষ্ট জনগনের মনে শহীদী চেতনায় সঞ্চারিত হয়েছে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে হকের চিরন্তন সংগ্রামের এক নবতর সংযোজন হয়েছে।
যুগে যুগে যারা আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) কুরআন- হাদীস তথা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যথা সময়ে নবী প্রেমিক তৌহিদী জনতা তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছে। আমাদের দেশেও যারা ইসলাম বিদ্ধেশীদের আশ্রয়- প্রশ্রয় দিয়ে শাহ-বাগে মুসলিম সাংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ধংসের ষড়যন্ত্র করেছিল, ও ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতুলে হুংকার দিয়ে সিংহ হতে চেয়েছিল। তারা আজ ইদুরের মত গর্তে ঢুকে যেতে বাধ্য হচ্ছে, এবং তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ইসলাম পন্থিরা আল্লাহর রহমতে বীর দর্পে রাজনীতির মাঠে তাদের সমুচিত জবাব দিচ্ছে।
তবে একথা স্বীকার করতেই হবে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ধর্মাদর্শ বিশ্বাস ঈমান আকিদা সংস্কৃতি ঐতিহ্য ইতিহাসকে উপেক্ষা করে বা বাদদিয়ে শুধু রাজনীতি নয় কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। এই দেশে ইসলাম আগমনের সময় কাল থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম জন ম-লীর যে ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কাতি ইমান, আকিদা বিশ্বাস সব কিছুরই একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। এই স্বাতন্ত্র ঐতিহ্য অতিতে যেমন খর্ব করা বা মূছে ফেলা সম্ভব হয় নি। ভবিষ্যতে ও হবেনা। যদি কোন দল, বা গোষ্টি এইটা নিয়ে বাড়া বাড়ী বা ধংস করার চেষ্টা চালায়, তবে তা বহু গুনে বৃদ্ধি হয়ে তাদেও জন্য ভূমেরাং হয়ে যাবে। যা বর্তমানে দেশে ঘটছে। মনে হচ্ছে হযরত শাহ জালাল (রাঃ), শাহ পরান (রাঃ), বার আউলিয়ার দেশের এবং শহিদ তিতুমীর ও হাজী শরিয়ত উল্লাহর বাংলায় ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক মোরতাদদের ঠাই নাই। সম্প্রতি নির্বাচনগুলোতে দেশ প্রেমিক ঈমানদার জনগন তার প্রমান দেখিয়েছেন।
লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক

আদর্শ রাষ্ট্রের কার্যাবলী : 

সূরা হজ্বের ৪১ নং আয়াতের আলোকে, ইসলামী রাষ্ট্রের কার্যাবলী হলো:
১. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা
২. যাকাত আদায় করা
৩. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ প্রদান।
সূরা বনী ইসরাইলের ২৭-৩৭নং এর আলোকে :  
১. শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা।
২. পিতা মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করা।
৩. নিকটাত্মীয়, মিসকিন ও সহায়- সম্বলহীন পথিকের অধিকার প্রদান।
৪. অপচয় -অপব্যয় না করা।
৫. নিকটাত্মীয়,মিসকিন ও সম্বলহীন পথিকের বিনয় সুচক জবাব দেয়া।
৬. খরচের বেলায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।
৭. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা না করা।
৮. যেনার নিকটবর্তী না হওয়া।
৯. ইয়াতিমের সম্পত্তি আত্মসাৎ না করা।
১০. ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।
১১. সঠিক পন্থায় ওজন করা।
১২. যে বিষয়ে মানুষের জ্ঞান নেই তার পেছনে না ছোটা।
১৩. জমিনে অহংকারী ভাবে না চলা। 



আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মুহম্মদ (সা):
হযরত মুহম্মদ (সা:) আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে যেভাবে ভুমিকা পালন করেন-
(১) শিক্ষা ব্যবস্থায় আদর্শ : 
পবিত্র কুরআনের প্রথম বাণী “ইকরা” অর্থাৎ “পড়ো”। তাই রাসূল (সা:) তাঁর জনগণকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে সর্বদা তৎপর ছিলেন। 
তিনি সার্বক্ষণিক শিক্ষক ছিলেন। এমনকি মসজিদে নববীকে তিনি একটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেছিলেন। বদরের যুদ্ধে শিক্ষিত মুশরিকদের অশিক্ষিত মুসলিমকে শিক্ষা দিয়ে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।         
(২) জনতার স্বতঃস্ফুর্ত অগ্রযাত্রা :
মুহাম্মদ (সা:) তাঁর বিপ্লবী আদর্শবাদী আন্দোলনকে দুটি পর্বে ভাগ করেছিলেন। প্রথম পর্বে তিনি নিজে জনগণের দ্বারে দ্বারে ইসলামী আদর্শের প্রতি আহবান করেছিলেন। 
আর দ্বিতীয় পর্বে জনতা স্ব-উদ্যোগে ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে সামনে এগিয়ে এসেছিল এবং ইসলামের দরজায় করাঘাত করে বলেছিল, আমরা ভেতরে আসতে চাই। কিন্ত এই পর্বে আসার পূর্বে রাসূল (সা:) ও
সাহাবীগণ অনেক কষ্ট ভোগ ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন।             
(৩) নৈতিকতা সম্পন্ন লোক তৈরি বা মুসলমানদের নৈতিক শক্তি বলে বলীয়ান :  
নৈতিক শক্তিই কোন আন্দোলনকে প্রভাবশালী ও কার্যকরী করতে এবং বিজয়ী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই রাসূল (সা:) নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরীর আসল কাজ থেকে কখনো উদাসীন হননি। 
সেজন্য সে সমাজের মানুষ মদ্যপান, জুয়ার আড্ডা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ফেতনা-ফাসাদ, হত্যা-লুটতরাজ ও প্রতিশোধ গ্রহণের কাজে ব্যবহৃত হতো। সে সমাজে রাসূল (সা:) এমন একদল সৎ, শুদ্ধ ও সুসভ্য মানুষের আবির্ভাব ঘটালেন, যারা সকলের দৃষ্টিতে ভিন্নতর ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিল। 
ফলে যে ব্যক্তি কিছুদিন আগে রাসূল (সা:) এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করেছে, সে সহসাই ইসলামের কাছে মাথানত করে দিয়েছিল।   
(৪) সাংবিধানিক চুক্তি : 
রাসূল (সা:) নিজের ইস্পাতে আদর্শিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধগুলোর পক্ষে সব শ্রেণীর ও সম্প্রদায়ের লোকদের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করে  “সাংবিধানিক চুক্তি ” লিপিবদ্ধ করেন। সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো-   
শুরু হয়েছিল- “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” দিয়ে। শিরোনাম ছিলো-
“এ দলীল রাসূল (সা:) কর্তৃক জারীকৃত”। 
সূচনাতেই এভাবে ইসলামের মৌলিক মতাদর্শের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সংবিধানে। এটা ছিলো ৫৩ টি ধারা সম্বলিত। 
(৫) বিপ্লবী শিক্ষা প্রদান :
 হযরত মুহাম্মদ (সা:) চরম নাজুক ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ইসলামী আদর্শের দাওয়াত প্রচারের কাজ স্বচালিত রাখার জন্য কিছু সাহাবীকে বিপ্লবী শিক্ষা প্রদান করতেন। যারা শিক্ষা গ্রহণ করত তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর বাণী ও বিধানকে সমুন্নত করা এবং মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করা।                                                
(৬) জনগনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি :     
কোন মতাদর্শ যদি অস্ত্রের বলে ক্ষমতাও দখল করে, কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান দিতে না পারে, তাহলে নিছক নৈতিক সংশোধন ও পুনর্গঠনের উপদেশ গ্রহণে মানুষ তৈরি হতে পারে না, বরং তারা সে কাজকে আপদ মনে করে অব্যাহতি লাভ করতে চায়। এ জন্য রাসূল (সা:) যে আন্দোলন করেছিলেন তা একদিকে মানুষের হৃদয়কে ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত ও আত্মাকে নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ  করত এবং অপর দিকে পেটের খাদ্য সরবরাহের সর্বোত্তম ব্যবস্থাও ছিলো।        
(৭) বিভিন্ন গোত্রের সাথে চুক্তি :  
 রাসূল (সা:) ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্হাপনের চেষ্টার পাশাপাশি আশপাশের গোত্রগুলোকেও সংঘবদ্ধ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। দু'তিনবার তিনি এসব গোত্রের কাছে সাহাবীদের সমন্বয়ে প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছিলেন। এমনকি হিজরতের দ্বাদশ মাসে রাসূল (সা:) নিজেই ওয়াদ্দান গমন করেছিলেন।
(৮) অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল : 
একবার এক ইহুদি মসজিদে নববীতে পেশাব করা শুরু করলে সাহাবীরা তাকে মারতে উদ্যত হলে রাসূল (সা:) বাধা দিলেন। লোকটি কাজ সেরে ফেলার পর রাসূল (সা:) তাকে বললেন- “তোমার দ্বীনের পবিত্র স্থানে কেউ এমন করলে কি করবে??” তখন লোকটি এতে লজ্জিত হলো। রাসূল (সা:) তাকে ক্ষমা করলেন।  
 (৯) বেকারকে বা ভিক্ষুককে কর্মী হতে উদ্বুদ্ধকরণ:  
রাসূল (সা:) হীন ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করেছেন। একদা এক ব্যক্তিকে তার শেষ সম্বল দিয়ে কুঠার কিনে দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করান এবং কর্মসংস্থানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে অনুসরণীয় আদর্শ সৃষ্টি করেন।।      
দার্শনিক মাইকেল হার্ট যথার্থই বলেছেন—
“আমি বিশ্বাস করি অশান্তির বিশ্বে শান্তি আনতে হলে সমগ্র বিশ্বের একক ক্ষমতা আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক রাসূল
(সা:) এর হাতে অর্পণ করলেই তা শুধু সম্ভব”।
সত্যিই তাই-ই!!
১৪শ বছর পূর্বে আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা:) বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য যে আদর্শ স্হাপন করে গিয়েছেন আজকের বিশ্ব তীব্রভাবে তাঁর অভাব অনুভব করছে। আজ পৃথিবীর দেশে দেশে রাষ্ট্র প্রধানদের শাসন-শোষণে মজলুম মানুষ একজন আদর্শ রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য আর্তনাদ করছে।  
তাই পৃথিবীর এই মজলুম মানুষদের জুলুম নির্যাতন থেকে উদ্ধার করতে আমরা এই কামনা করতে পারি যে, নির্যাতিত মানুষকে উদ্ধার করতে এমন কোন মহান ব্যক্তিত্ব কেউ এগিয়ে আসুক যিনি আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক মুহাম্মদ (সা:) কে অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করবেন। (সমাপ্ত)


উল্লেখিত আলোচনায় কোরআন ও হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, ইসলামি সংগঠন করা, ইসলামের রাজনীতি করা, ইসলামের পথে আহবান করা, ইসলামের পথে জিহাদ করা কিংবা ইসলামি আন্দোলন করা তথা ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করা প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য ফরজ। অনৈসলামিক রাজনীতি যেমন আওয়ামীলীগ করা মুসলমানদের জন্য হারাম। কারন এরা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী আইন তথা মানব রচিত আইন দিয়ে দেশ শাসন করে থাকে। আর এরা ইসলামি আদর্শে বিশ্বাসী নয়। আওয়ামীলীগসহ অনুরুপ রাজনৈতিক দলের সকল মুসলিম নেতা-কর্মীগণ কিয়ামতে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।  যদি না তারা তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে। কিয়ামতে তাদের কোনো দোয়া বা আমল আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না। তাদের শাস্তি ভোগ করার দলীল সমূহ নিম্নরূপঃ
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে  এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।  (নূর-৬৩)
৩। আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন করবে, যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান করতে হবে।( বুখারী ও মুসলিম)
৪। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)
৫।“ হোজায়ফা  (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
৬। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
৮।“ আনাস (রাঃ) হতেবর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট আসবে। এমনকি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে চিনতে পারবো। এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবার পূর্বেই তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত। আল্লাহতায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ ছেড়ে অন্য) কতো রকম তরিকা ও অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো।(বুখারী)
৯। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীাতর দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
অতএব আপনি যদি নিজেকে বলেন যে, আমি মুসলমান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইসলামের রাজনীতির সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। অন্য কোনো দল মত বা রাজনীতি করা যাবে না। নবি করিম (সাঃ) ছিলেন একদিকে যেমন ধর্ম প্রচারক তেমনি অন্য দিকে ছিলেন এক সফল রাষ্ট্র নায়ক। তাঁর সামগ্রিক জীবনটাই ছিল ইসলামি রাজনীতি। ইহকাল ও পরকালে শান্তি ও মুক্তি পেতে চাইলে আমাদেরকে সকল মত পথ বা দল পরিহার করে ইসলামের ছায়াতলে আসতেই হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার তৌফিক দান করুন-আমিন।




No comments:

Post a Comment

ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা লেখকঃ মাওলানা মোঃ শিহাব,এম এ, ইসলামিক ...