ইসলামের রাজনীতি করা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরজ (প্রথম অংশ)
(ইসলাম ব্যতীত
অন্য কোন আইন,দল, মত,পথ বা আদর্শ গ্রহণ করা কিংবা মেনে চলা মুসলমানদের জন্য হারাম)
সংকলনে: মাওলানা
মোঃ শিহাব এম এ-ইসলামিক স্টাডিজ (বিশিষ্ট ইসলামি
চিন্তাবিদ)
প্রথম অংশ
(১) ইসলাম ও রাজনীতি
আতিকুর
রহমান
পর্ব-১
স্বয়ং আল্লাহ সৃষ্টির, মহা বিশ্বের মহারাজা। তার একটি নাম মালিক (অধিপতি)
ও কাদীর অর্থ ক্ষমতাবান। আল্লাহই সকল রাজ ক্ষমতার মালিক তাই তার দেয়া নীতিই রাজনীতি
বা আল্লাহর নিয়ম। পথের রাজা রাজপথ, হাঁসের রাজা রাজ হাঁস, রাজার মুকুট রাজ মুকুট, নীতির
রাজা রাজনীতি। নীতির রাজা ইসলাম ছাড়া কি হতে পারে? তাই ইসলাম স্বয়ং ‘রাজনীতি’। একজন
মুসলিম হিসেবে আমি ইসলামকেই নীতির রাজা মনে করি। শুধু তা নয় অনেক অমুসলিম দার্শনিকও
সেটি স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রথমে আসুন ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা কিনা? ইসলাম সব
সমস্যার সমাধান কিনা? ইসলাম সকল প্রশ্নের উত্তর দেয় কিনা? কুরআনে সব মৌলিক বিষয়ে আলোচনা
আছে কিনা? এর উত্তর কি? অবশ্যই হ্যাঁ। তাই নয় কি? যদি তাই হয়, তাহলে ইসলামে রাজনীতি
নেই একথা বলার সুযোগ থাকল কোথায়? ‘‘ইসলামই আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধান’’। আল্লাহর নীতি
বা রাজনীতি তথা মহারাজা আল্লাহর নীতি। যা মহানবী (সঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ এ জমিনে অনেক
ত্যাগ, শাহাদাত, ঝড়ঝঞ্জার। ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করিয়েছেন এর মোকাবেলায় শয়তান ও শয়তানের
অনুচর রাজশক্তিগুলো পরাজিত হয়েছিল। রাসূল (সঃ) ও তার সাহাবীরাও ইসলাম প্রতিষ্ঠার
যুদ্ধে সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। প্রিয় পাঠক! আল্লাহ বলেন ‘‘তোমরা কি কোরানের
কিছু অংশ বিশ্বাস করবে আর কিছু অংশ অস্বীকার করবে’’? এ আয়াতে কোরানের সকল নীতিকে মেনে
নিতে বলা হয়েছে। আল্লাহ আরো বলেন ‘‘যে ব্যাক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য নিয়মকে জীবন ব্যবস্থা
রুপে মানবে আল্লাহ তা কখনো গ্রহন করবেন না’’। ‘‘হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে
ইসলামে প্রবেশ করো’’। সুরা আল-ইমরানের ১০২ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘তোমরা মুসলমান না হয়ে
মৃত্যু বরণ করো না’’। সুরা তওবার ১১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘হে ঈমানদারেরা ! আল্লাহকে
ভয় করো এবং সত্যাদর্শ লোকদের সঙ্গী হও’’। সুরা আনয়ামের ৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘আমি
কোরানে কোন কিছু উল্লেখ করতে বাদ দিইনি’’। সুরা নহলের ৮৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে-‘‘আমি
আপনার উপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা’’। সুরা আল ইমরানের
১৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘এটা মানুষের জন্য সুষ্পষ্ট বর্ণনা এবং আল্লাহ ভীরুদের জন্য
পথপ্রদর্শক ও উপদেশ’’। উপরের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে একথা স্পষ্ট যে সকল ক্ষেত্রে
ইসলামী নীতিকে মানতে হবে। ইসলামের কিছুনীতি বাদ দেয়া যাবে না, পুরো মুসলমান হতে
হলে ইসলামের কোন একটি পদ্ধতি ও বর্জন করার সুযোগ নেই। ইসলামে সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে,
যারা আল্লাহকে ভয় করে বলে দাবি করে তারা বিশ্বাস করে যে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলাম
পথ দেখায়। সুতরাং বোঝা গেল ইসলামী রাজনীতি বাদ দিলে, ইসলামী আর্দশের অনুসারী ও নির্দেশকদের
অবজ্ঞা করলে আল্লাহকেই অবজ্ঞা করা হবে এবং মুসলমান রুপে মৃত্যু ও হবেনা। ইসলাম
পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বলে কোরানের ঘোষণা। ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন ব্যবস্থা
ইসলামকে পরিপূর্ণ তবে দিলাম’’। ইসলামে রাজনীতি আদর্শের স্পষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে
এ আয়াতে, কারণ রাজনীতি ও জীবন ব্যবস্থার অঙ্গ। ইসলামী রাজনীতির উদ্দেশ্য হল রাজনীতি
জীবনে মানুষকে সঠিক দিশা দান করা। মানুষের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্যই কুরআন ও ইসলাম।
তাই ইসলাম রাজনৈতির সাফল্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করে সকল মানুষের জন্য। আমাদের লক্ষ্য
রাখতে হবে ইসলাম প্রচলিত অর্থে কোন ধর্মের মত নয় বরং একটি জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের নামে
কোন রাজনীতি নেই এ ব্যবস্থায়। আছে ইসলাম নিয়ে, মেনে ও ধারণ করে রাজনীতি। সাময়িক টুপি
পাঞ্জাবী পরে, ঘোমটা মাথায় দিয়ে, মাজার জেয়ারত করে, বিছমিল্লাহ, ইন্শাল্লাহ বলে দু’একটি
আল্লাহ নবীর উদ্ধৃতিসহ বক্তৃতা দিয়ে, বিশেষ ধর্মীয় দিনে বিবৃতি দিয়ে, বছর বছর ওমরা
পালন করে, রাজনৈতিক নেতা হয়ে গেলে তা কখনো ইসলামী রাজনীতি হয়ে যায় না। বরং এসবের ছদ্মাবরণে
সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে রাজনীতি করলে এরুপ উদ্দেশ্যমূলক রাজনীতির নাম ধর্মের নামে রাজনীতি।
ধর্মের বিপরীত রাষ্ট্র পরিচালনা করে ইসলামী রাজনীতি অস্বীকার করে, ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা
ঘোষণা করে ধার্মিক সেজে ধর্ম ব্যবহার করে রাজনীতি অবশ্যই ধর্মের নামে শঠতা বৈ কিছুই
নয়। ‘জর্জ বার্নার্ডশ’-ইসলামকে বিশ্বব্যবস্থা বলে ঘোষণা করে গেছেন এবং বিশ্ব শান্তির
একমাত্র সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন বলে স্বীকার করেছেন। যারা ধর্মকে আদিম বলে তারা কখনো
মুসলিম নয়। ধর্মকে শোষনের হাতিয়ার ও আদিম বললেও ইসলাম কিন্তু তা নয়। শোষনের হাতিয়ার
ইসলাম বিমুখ রাজনৈতিক দর্শনগুলোই। যা আমরা সোভিয়েতে রাশিয়া, রুমানিয়াসহ দেশে দেশে দেখেছি।
একজন ব্যক্তি প্রচলিত ব্যাখ্যায় ধর্ম নিরপেক্ষ হলেও ইসলাম নিরপেক্ষ হওয়ার কোনই অবকাশ
নেই। ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থ যদি ধর্মহীনতা হয় তা কোন মুসলমান মানতে পারে না। মুসলমান
রাজনীতিতে স্বার্থের জন্য ধর্ম ব্যবহার করতে পারেনা তবে মানতে হয়। ইসলামকে যদি আপনি
একটি গাড়ি মনে করেন যে গাড়িটি জান্নাতের দিকে মুসলিম যাত্রী নিয়ে এগুচ্ছে। যে গাড়ির
চাকা ও কলকজ্জ্বাগুলোও ইসলামের নিজস্ব ভূবন হতে, ইসলামের মালিক আল্লাহ হতে এর নির্দেশক
নবী মুহাম্মদ (সঃ) হতে নিতে হবে, তা নয় কি? নয়তোবা এটি ইসলামের পূর্ণাঙ্গ গাড়ি হবে?
হবে না। আপনি মুসলিম দাবী করবেন অথচ ধর্মে নেবেন কুরান হতে, অর্থনীতি নেবেন কাল মার্কস
হতে, রাজনীতি নেবেন লেনিন হতে, আন্তর্জাতিক নীতি নেবেন হিটলার হতে এভাবে বিভিন্ন দর্শন
একত্রিত করে জীবন চালাবেন তা কি করে হয়? অনেক রকমের গাড়ির পার্টস একত্রিত করে কি গাড়ি
হয়? গরুগাড়ির চাকা দিয়ে যেমন প্লেন হয় না, রেল লাইনে যেমন বাস চলে না, আকাশ পথে যেমন
নৌকো চলে না তেমনি ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে গ্রহণ না করে, না মেনে এবং রাজনীতি অস্বীকার
করে কেউ মুসলমান হয় না। হতে পারে না, জান্নাতে যেতে সক্ষম হয় না। সফল হয় না। ইসলামী
রাজনীতিকে আরবীতে বলে ‘‘আছছিয়াছাতুল ইসলামীয়্যাহ’’ ইসলাম যেহেতু জীবন ব্যবস্থা আর সে
জীবন ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকার যেহেতু ইসলাম যে সম্পর্কে চুপ
থাকেনি। ইসলাম কতিপয় আধ্যাতিœক ও নৈতিক শিক্ষার ধর্ম শুধু নয় এটি সমাজবদ্ধ জীবনের জন্য
প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও বটে যা দেশ কাল নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর ও গতিশীল
রাষ্ট্র ও সরকারের এক অনবদ্য চিত্র। সকল নবী রাসূল (আঃ) সাহাবীগণ, তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীগণ,
৪ মাজ্হাবের ও হাদীসের ঈমামগণ, হক্কানী আলেম ও পীরগণ সকলেই রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা
করতে চেষ্টা করেছেন। সেই চেষ্টার নামই ‘জিহাদ’ বা লড়াই সংগ্রাম। তারা কেউই ইসলামী রাজনীতি
প্রতিষ্ঠায় অমানবিক পন্থা বা সন্ত্রাসের আশ্রয় নেননি। বরং জিহাদ করেছেন। সেই জিহাদকে
বর্তমানে বিশ্বমিডিয়া সন্ত্রাস বলে অভিহিত করছে। অবশ্য অনেক উগ্রপন্থী মুসলিম জিহাদের
নামে সন্ত্রাস ও করছেন। এ সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের মনে রাখতে
হবে সন্ত্রাস জিহাদ নয় আর জিহাদ সন্ত্রাস নয়। সন্ত্রাস উৎখাত করতেই তো জিহাদের প্রয়োজন।
তাই জিহাদের অপব্যাখ্যাকারী তথ্য সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়ানো মুসলমানদের একান্ত কর্তব্য।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-‘‘তিনি সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে
সত্য সঠিক দিক নির্দেশনা সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে করে সকল মতবাদের উপর ইসলামকে বিজয়ী
করতে পারেন’’(পারা-২৬)। আল্লাহর এ বাণীই বলে দেয় ইসলামের রাজনীতি কতটুকু বাস্তব সম্মত।
ইসলামী রাজনীতিতে সংবিধান হল কুরআন। এ প্রসঙ্গে সুরা নিসার ১০৫ নং আয়াতে বলা হচ্ছে-‘‘নিশ্চয়
আমি আপনার প্রতি পূর্ণ কুরআন পরম সততার সাথে এজন্যই নাযিল করেছি যে, আপনি সে অনুযায়ী
মানুষের উপর আল্লাহর দেখানো পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন এবং বিচার ইন্সাফ কায়েম
করবেন। (কোরানকে যারা রাজনীতিতে মানেনি, মানতে চায়নি) আপনি এসব খিয়ানতকারীদের সাহায্যকারী
এবং পক্ষাবলম্বনকারী হয়ে যাবেন না’’। কুরআনে সুরা আরাফের ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘সাবধান
! সৃষ্টি যার এর উপর প্রভূত্বচালাবার, এক শাসন করার অধিকার ও একমাত্র তাঁরই। আল্লাহ
বরকতময় যিনি বিশ্ব জগতের অধিপতি’’। সুরা বাকারার ১০৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-‘‘তুমি
কি জাননা যে আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর? আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী
নেই’’। উপরের আয়াতগুলোতে রাজক্ষমতা, রাজনীতি ও ইসলাম মতে রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে
তার পাপ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে ইসলাম বিমুখী রাজনীতির পক্ষে সহযোগীতা করা আল্লাহ
হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ হলেন রাজার ও রাজা। মুসলিম শরীফের ৭ম খন্ড ২৯৩ পৃষ্টায় উল্লেখিত
হাদিসে রাসূল (সঃ) বলেন ‘‘আল্লাহ মুষ্টিবদ্ধ করবেন আর আকাশকে তার ডানহাতে ভাঁজ করে
রাখবেন অতঃপর বলবেন-আমি রাজাধিরাজ এখন কোথায় পৃথিবীর রাজারা’’? এ হাদিসের মর্মে বোঝা
যায় রাজার রাজা আল্লাহ্। তাই
তার প্রদত্ত কোরআনের রাজনৈতিক বিধান না মানলে দুনিয়ার রাজা বাদশাহগণ
ও কিয়ামতে কঠিন শাস্তি ভোগ করবেন। ইসলামী রাজনীতিতে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ নয় আল্লাহ।
সুরা মুলকের ১ নং আয়াতে এসেছে-‘‘সকল বরকতময় মহিমা সেই সত্তার। রাজত্ব যার হাতের মুঠোয়,
তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান’’। সুরা হাদীদের ৫নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘আসমান ও জমিনের
রাজত্ব তাঁরই। সব কিছু তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে’’। আসমান ও জমিনের ব্যবস্থাপনা
আল্লাই তো করেন তা হলে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন যুক্তিতে বা কোন সাহসে আল্লাহর
বিধান উপেক্ষা করব? সুরা সিজদার ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘‘আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত সকল
কিছুর ব্যবস্থাপনা একমাত্র তিনিই করেন’’। সুরা বাকারায় ২৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন
‘‘তাঁর রাজ সিংহাসন সমস্ত আসমান জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে আর সে গুলোকে ধারণ করা তার
পক্ষে কঠিন নয়, তিনি সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান’’। রাজত্ব দেয়া এবং কেড়ে
নেয়া আল্লাহরই হাতে-এ প্রসঙ্গে কুরআনের তৃতীয় পারায় বলা হয়েছে-‘‘শাহানশাহ হে রাজাধিরাজ
নিখিল জগতপিতঃ রাজারে করো ভিখারী তুমি ভিখারিরে রাজে ধৃত। যারে চাও তারে তুমি দাও সম্মান
আর যারে চাও তুমি কর অপমান’’। কুরআনের সুরা আররাহ্মানে বলা হয়েছে‘‘ অতএব হে জ্বিন ও
মানব নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়। কিন্তু ছাড়পত্র
ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না’’।উপরের দু আয়াতে আল্লাহর ক্ষমতা, রাজত্ব দেয়া
ও কেড়ে নেয়া, এবং আসমান ও জমিনের বিশালতা ও তাতে আল্লাহর নিরংকুশ ক্ষমতার মালিকানা,
এক্ষেত্রে মানব দানব কত অসহায় সে বিষয়গুলো আর মৃত্যুও কেয়ামতের ধরা হতে কারো
রক্ষা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরানে আরো বলা হয়েছে ‘‘হুকুম কেবল আল্লাহরই
বলবে’’। আল্লাহর সেই হুকুম পরিচালনায় সোলাইমান (আঃ), দাউদ (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ), মুসা
(আঃ) সহ অসংখ্য নবী রাসূল (আঃ) এবং সর্বশেষ বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সঃ) দায়িত্ব পালন
করেছেন। এতে প্রমানিত হল রাজনীতি নবী (আঃ) দেরই সুন্নত বা আদর্শ। ইসলামী রাজনীতি ও
বিপরীত তাগুতী রাজনীতির দ্বন্ধ চিরন্তন। তাইতো মুসা (আঃ) এর সাথে আবু জেহেলের,
ঈমাম হোসাইনের সাথে স্বৈরাচারী এজিদের সংঘাত ও দ্বন্ধ হয়েছিল। সে দ্বন্ধের ধারাবাহিকতা
এখনও চলছে বিশ্বময়, ভবিষ্যতে ও চলবে। রাসূল (সঃ) বলেন, ‘‘ইসলামের জিহাদ চলবে কিয়ামত
পর্যন্ত’’। রাজনীতি ও ইসলাম পৃথক করার কোন সুযোগ নেই। কারণ ইসলামে ‘‘রাজনীতি ও ইসলাম
জময ভাই তুল্য’’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামের কোথাও ইসলামে রাজনীতি নেই একথা বলা হয়নি।
বলেছে জ্ঞান পাপী পন্ডিত ও মুর্খ লোকেরা যাদের এ সম্পর্কে কোন পড়ালেখা নেই। কুরআনের
সুরা কাফিরুনে অন্য ধর্মের লোকদের তাদের ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দিয়ে মুসলমানের জন্য
ইসলামকেই বাধ্যতামূলক মানার কথা বলা হয়েছে। অথচ আজকাল এখানেই বলা হচ্ছে মুসলমানেরা
যে দল ইচ্ছে হয় সে দল করবে? নাউযুবিল্লাহ। যে দলে ইসলামী রাজনীতির স্বীকৃতি নেই সে
দলভুক্ত হওয়া মুসলমানের জন্য কি বৈধ হতে পারে? পাঠক আপনিই বলুন। রাজনীতি নেতৃত্ব ও
দায়িত্ব সম্পর্কে তোমরা সকলে জিজ্ঞাসিত হবে’’। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতাকারী
সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন, ‘‘যারা বিশ্বাঘাতক নেতা তারা আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়’’। নবী
(সঃ) আরো বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তি দোযখে যাবে-মিথ্যাবাদী আলেম, বৃদ্ধব্যভিচারী ও জুলুমবাজ
রাষ্ট্র শাসক’’ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আমাদের দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন‘‘ হে প্রভু তোমার
পক্ষ হতে আমাদের জন্য সাহায্যকারী রাষ্ট্র শাসক দাও’’। আসলে নবী (সঃ) সাহাবীদের স্বীয়
জীবন, কর্ম ও শিক্ষা দিয়ে সব কিছু দেখিয়ে গিয়েছেন। তিনি হাতে কলমে ধর্মীয় অর্থনৈতিক,
রাজনৈতিক, সমাজিক সব শিক্ষাই দিয়েছেন। তিনি সব বিষয়ে যা শিক্ষা দিয়েছেন, দৃষ্টান্ত
রেখেছেনও নসিহত করেছেন সবই ইসলামের অংশ যদিও তা রাজনীতি হয়।
পর্ব-২
ইসলাম পূর্ণাঙ্গঁ জীবন পদ্ধতি। এটি কোন গৃহধর্ম নয়। যদিও কেউ কেউ ইসলামকে
মসজিদের ভেতরে আবদ্ধ করে, ঘরের কোনে বন্দি রেখে, তসবিহ দানার জপমালায় আটকিয়ে
পীরের খান্কা ও পীর বাবাদের দরবার শরীফে সীমাদ্ধ রেখে অযিফা ও সকাল সাঁঝের যিকিরে খুঁজে
বেড়ান। ইসলাম কিন্তু ঠিক তা নয়। এর রয়েছে আরো বিশাল অঙ্গঁন ও বিশাল অবদান। ইসলাম কুরআনকে
অন্যান্য ক্ষেত্রের মত রাজনীতিতেও গাইড বুক রুপে নিধারিত করেছে। রাজনীতির নামে ইসলামে
স্বেচ্ছাচারিতা, রাজতন্ত্র, বংশতান্ত্র, একদলীয় চাপিয়ে দেয়া শাসন, পাশ্চত্য অবাধ গণতন্ত্র,
জোর করে ক্ষমতাহরণ, বাকশক্তি হরণ, শিষ্ঠের দমন, দুষ্টচক্রকে লালন এসবের অস্তিত্ব নেই।
এতে আছে উদারতা, সহনশীলতা, বাকস্বাধীনতা, পরামর্শমূলক সৎ লোকের ইনসাফ পূর্ণ শাসন। ইসলামে
রাষ্ট্রনায়কেরা শাসক বা শোষক নয়, বরং তারা সেবক রুপেই থাকতে হয়। ইসলাম ও রাজনীতি বুঝতে
হলে নবীগণ (আঃ) ও তাদের শক্র পক্ষ যেমন ফেরাউন, নমরুদ, আবুজেহেলদের সাথে দ্বন্দের ইতিহাস
জানতে হবে। জানতে হবে খোলাফায়ে রাশেদা, সাহাবাদের কেরাম, ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও
এযিদের দ্বন্দ এসব প্রাসঙ্গিঁক ইতিহাস। যুগে যুগে অলি আল্লাহ, আলেম ও আইম্মায়ে কেরামের
সাথে শক্র পক্ষের দ্বন্দের কারণগুলোও ভালোকরে জানতে হবে। এসব বিষয় গুলো না পড়েই অথবা
জেনে শুনে অনেক মূর্খ ও জ্ঞানপাপী ইসলামী রাজনীতিকে অস্বীকার করে। আমার প্রশ্ন ইসামের
রাজনীতিক দর্শনকে অস্বীকার করে কি কেউ নিজকে মোমিন বা মুসলিম দাবী করার অধিকার রাখেন?
এ বিষয়ে মুফতি মহোদয়গণ ফতোয়া দেবেন কি? কোরানের বর্ণনায়- ‘তোমরা কি কুরআনের কিছু অংশ
বিশ্বাস করবে আর কিছুকে করবে অস্বিকার’’? আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) আল্লাহর বিধান কুরআনের
আলোকে মানবজাতির প্রয়োজনে সকল ক্ষেত্রের জন্য নীতিমালা দিয়ে গেছেন আর রাজনীতিক নীতিমালা
দেননি, এটি কি করে হয়? মুহাম্মদ (সঃ) অরাজনৈতিক ছিলেন এমন কথা কি ইসলামের ইতিহাসের
কোথাও লেখা আছে? নিশ্চয় নেই। সুরা আহযাবের ২১ নং আয়াতে আছে ‘‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর
রাসূলের মধ্যে রয়েছে উৎকৃষ্ট অনুপম আদর্শ’’। এ আদর্শ কি মুসলিম জীবনের সকল ক্ষেত্রের
জন্য নয়? রাসূলের প্রদর্শিত রাজনীতিও কিন্তু ইসলামের ইবাদত রুপে গণ্য হয়। অন্যান্য
ধর্মে বৈরাগ্যতা থাকলেও ইসলামে তা নেই। ইসলাম ধর্ম মাত্র নয়। মুহাম্মদ (সঃ) শুধু ধর্ম
নেতা নন। তিনি দুনিয়াকে আখেরাতের শস্যক্ষেত্র বলেছেন। দুনিয়ার প্রয়োজনে রাজনীতি করেছেন।
তার রাজনীতি আল্লাহ নির্দেশিত পথেই চালিত। ইসলামী রাজনীতি শুধু মুসলমানের সেবা করেনা
মানুষের সেবা ও শান্তির জন্য কাজ করে। এখানে আছে সকলের অধিকার ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি।
এ রাজনীতিতে কেউ নেতা হতে তদবীর করে না। বরং সততাই ও যোগ্যতা দিয়ে তা অর্জিত হয়। ইসলামে
ব্যাক্তি ও নেতার পূজা বলতে কিছু নেই। নেতাগীরিও নেই। ইসলাম কল্যাণকর সব বিষয়ে
নির্দেশ করে। এমনকি রান্না ঘর হতে রাষ্ট্র পরিচালনা কথাও ইসলামে উল্লেখ আছে। কি নেই
ইসলামে? হাতের নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা, ঢিলা কুলুখ ও রান্না বান্নার মত খুঁটি নাটি
বিষয়ও বাদ দেয়নি ইসলাম। কুরআনের মধ্যে মশা মাছি ও পিপিলিকার মত ক্ষুদ্র প্রাণী হতে
বৃহৎপ্রানী হাতির কথাও আছে? আছে মানব জাতির সব কিছুর বর্ণনা। আরবী ‘বা’ হরফে কুরআন
শুরু হয়ে ‘‘ ছীন’’ হরফে শেষ হয়েছে। দু’টি হরফ যুক্ত করলে হয় ‘বছ্’ বা ‘যথেষ্ট’।
অর্থাৎ কুরআন সব সমস্যার সমাধানে, সব প্রশ্নের উত্তর রুপে যথেষ্ট। এর পর কি বলা যায়
ইসলামে রাজনীতি নেই। পবিত্র কুরআনের ‘সুরা হজ্বে’ মুসলিম রাষ্ট্র শাসকের রাষ্ট্রিয়
সাফল্যের জন্য জনগনের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য, নৈতিক উন্নয়নের
জন্য, পরকালীন মুক্তির জন্য স্বয়ং আল্লাহ পাক ৪ দফা বাধ্যতামূলক কর্মসূচী দিয়েছেন।
তাহলে নামাজকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করা, যাকাতকে রাষ্ট্রীয় ভাবে আদায়ের ব্যবস্থা
করা, সৎ পথে চলতে আদেশ করা, অসৎপথে না চলার জন্য ব্যবস্থা করা। ইসলামী রাজনীতিকে অসৎ
নেতাগণ, ধর্মীয় ভন্ডগণ, কায়েমি স্বার্থবাদীগণ ও সাম্রাজ্যবাদী দানবগণ কোন দিন সহ্য
করেনি, করবেও না। রাজনৈতিক অসৎ নেতার আর্বিভাব সরকারী সম্পত্তি নিজের মনে করবে এমন
শাসকদের বিষয়ে মহানবী (সঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী রয়েছে-তিরমিযি শরীফে। রাষ্ট্র নায়ক সহ সকল
ব্যাক্তিই দায়িত্বের বিষয়ে হিসেব দিতে হবে। নবী (সঃ) বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই
দায়িত্বশীল আর তোমাদের সকলেই নিজ দায়িত্বের বিষয় জওয়াব দিতে হবে’’ (বখারী ও মুসলীম)
সুতরাং রাষ্ট্রীয় বিষয়টি ও কিয়ামতে হিসেবের উর্দ্ধে নয়। ওমর (রাঃ) কে তার এক
ভক্ত ওমরের মৃত্যুর ১২ বছর পর স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন- ‘‘কেমন আছেন? ওমর বলেন রাষ্ট্রীয়
হিসেব দিতেই দিতেই গত ১২ টি বছর শেষ হয়েছে’’। আল্লাহর বিধান সব কিছু পরিচালিত না হলে
তার ফলে অশান্তি, গৃহ যুদ্ধ, ভূমিধস, সুনামী, জমিনী গজব ও আযমানী আযাব নেমে আসে। আসলে
একজন মুসলিম ইসলাম ছাড়া জীবনে অন্য কোন দর্শন মত, পথ, ইজম মানতেই পারে না। অনেক মুসলিম
ও বোকার মত ধর্ম রুপে ইসলাম, রাজনীতিতে অন্যান্য মতবাদ নিয়ে আন্দোলন করে থাকেন। যার
মানে ইসলামের সব বিধান তিনি মানলেন না। নাউযুবিল্লাহ। কুরআনে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও
৪৭ নং আয়াতে যারা আল্লাহর বিধান মত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিচার ব্যবস্থা
সব পরিচালনা করে না তাদেরকে কাফির, জালিম ও ফাসিক বলা হয়েছে। মুসলিমের প্রতি ইসলামের
তীব্র আদেশ জীবনের সকল ক্ষেত্রে কেবল ইসলামকেই মানতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। আসলে
ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে আর একটি ধর্ম বা মত নেই যা পূর্নাঙ্গ জীবন পদ্ধতি হতে পারে।
ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মই পূর্ণাঙ্গঁ জীবনের বিধান বলেনি। তাই ওসব ধর্ম শুধুই ধর্ম । ইসলাম
তা নয়। এটি একমাত্র ধর্ম ও জীবন বিধানও বটে। ইসলামকে ধর্ম ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান রুপে
প্রতিষ্ঠা করতে স্বয়ং মুহাম্মদ (সঃ) এর সময় লেগেছিল ২৩ বছর। বোঝা গেল এ কাজটি
সহজ নয়। এ জন্য জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত হানির আশংকা থাকবেই যা মুহাম্মদ (সঃ) ও তার সাহাবীদের
জীবনে দেখেছি। দেখেছি তাবেয়ী, ঈমামগণ ও হক্কানী অলিদের জীবনের একটি জীবন
ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ। আল্লাহর একমাত্র গ্রহনযোগ্য জীবন বিধান ইসলাম। তাই
কোন মুসলিম ইসলাম ছাড়া অন্য মতবাদের জন্য আত্মত্যাগ করে, তাহলে কোন ভাবেই সওয়াব পাবেন
না শহীদ ও হবেন না। মহানবী (সঃ) মদীনায় যে রাষ্ট্র গঠন করেন সেখানে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রই
গড়ে ছিলেন। তিনি ভিন্নধর্মীদেরও এ রাষ্ট্রের সুফল পেতে সুযোগ দান করেন। একটি সৎ ও সুসংগঠিত
জাতি গঠন করেন। তিনি ছিলেন সফল রাষ্ট্রনায়কও বটে। পৃথিবীতে প্রচলিত কল্যাণকর রাষ্ট্র
ব্যবস্থা ও নিয়ম গুলোকে ইসলাম অস্বিকার করে না। শুধু ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক যা কিছুই
তা পরিহার করতে বলে ইসলাম। দুনিয়াতে প্রচলিত অনেক কল্যাণকর বিধান মূলত: ইসলামেরই অবদান।
আবার কিছু কিছু বিধান কল্যাণকর মনে হলেও তা আসলেই ক্ষতিকর ও ধ্বংশকারী। মানব কল্যানে
জাতিসংঘ সনদ তো মাত্র যেদিন ঘোষিত হল। আমেরিকান সনদ ১৮৭৯ সালে তৈরি হয়। কিন্তু মানব
কল্যাণে পৃথিবীর ১ম লিখিত সনদ প্রণিত হয় মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক দেড় হাজার বছর
পূর্বে যা মদীনা সনদ নামে পরিচিত। এখানে ছিল ৫৩ টি অনুচ্ছেদ। সভ্যতার ইতিহাসে এটি অতুলনীয়।
জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানব সমাজের প্রতি অঙ্গঁনে মানবচিন্তার প্রতি শাখা প্রশাখায় মুহাম্মদ
(সঃ) এর বিচরণ। মহানবী পূর্বে মানুষ ছিল এমন একটি জাতিকে মহানবী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ
জাতি রুপে গড়ে তোলেন। আজও তাঁর সে দর্শনেই দুনিয়া সুখি হতে পারে। কারো মতে মরমীবাদ
দিয়ে ইসলাম শুরু হয়ে রাষ্ট্র মধ্যে তা পূর্ণাঙ্গঁতা পেয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই
ইসলামী রাজনীতি বড় কথা। শোষন জুলুমের রাজত্বের অবমান করাই ইসলামী রাজনীতি। ‘‘মহানবী
ঘোষণা দেন আরবের উপর অনারবের মর্যদা নেই। অনারবের উপর আববের ও নেই। সাদার উপর
কালোর, কালোর উপর সাদার মর্যাদা নেই। আল্লাহর কাছে সৎ লোকই সম্মানের হকদার। সুদ
হারাম করেন তিনি যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি চালু করেন। সামাজিক ক্ষেত্রে নারীকে মর্যাদা
দেন। ধর্মী ক্ষেত্রে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেন। কুসংস্কার উৎখাত করেন’’। (মাইকেল এইচ হার্ট)
ইসলামে রাজনীতিতে আছে-স্বাধীনতা, সাম্য, মৈত্রী মৌভ্রাতৃত্ব, মহ প্রকাশের অধিকার ও
সমালোচনা। ১৯৪০ সালে মহাতœা গান্ধি লিখেন-‘‘আমি পবিত্র কুরআনকে মনে করি মহান সব বিধিবিধানের
ভান্ডার রুপে’’। মাইকেল এইচ হার্ট‘‘বলেন-‘‘মক্কায় ধর্মীয় মদীনায় রাজনৈতিক ভাবে নবী
(সঃ) আতœ প্রকাশ করেন’’। বাম পন্থী গুরু এম এন রায় বলেন-‘‘ইসলাম ভূমিকা সর্ম্পকে আমাদের
সময়ের অল্প সংখ্যাক মুসলিমই জানে’’। প্রিয় পাঠক মদীনার সনদ, বিদায় হজ্বের ভার্ষন সরাসরি
নবী (সঃ) কর্তৃক ২৭টি যুদ্ধ, মেরাজ শরীফ এ সবই তো রাজনীতির প্রমান ও ইঙ্গিত বহন করে।
তা নয় কি? পবিত্র কুরআনের ৫০০টি আয়াত ধর্ম নিয়ে অবশিষ্ঠ আয়াত গুলো সবই মানুষের
জীবন সমস্যার সমাধান সর্ম্পকিত নয় কি? প্রচলিত রাষ্ট্র বিজ্ঞান কি ইসলামী রাজনীতি অস্বীকার
করেছে? না করেনি। তাহলে কেন বলা হয় ইসলাম ও রাজনীতি আলাদা। ইসলামী রাজনীতি অস্বীকার
করা নিশ্চিত ভাবে কুফরী। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য মতবাদ গুলো অস্বীকার করা মুসলমানদের জন্য
বাধ্যতামূলক। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করেনা এমন নেতা ও তাদের রাজনীতি মানা হারাম.
‘‘তোমরা আল্লাহর অণুগত্য করো। রাসূলের আণুগত্য করো ও তাদের দ্বীনি নেতাদের
আণুগত্য করো’’(নেছা-৫৯) । সুরা আরাফের ৫৮ নং আয়াতে বলা আছে ‘‘সাবধান সৃষ্টি যার আইন
চলবে তার’’। সকল সৃষ্টির রাজত্ব তো আল্লাহরই’’ (মূলক-১) কুরআনের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি
তওবা-৪ মদিনীতি-আনফাল-৬১, বিচারনীতি নিছা-৫৮, মায়েদা-৮, নিসা-১৩৫, সাদ-২২ তীন ৮, অর্থনীতি-নিসা
২৯-৩০, ব্যবসায়নীতি-ফাতির, শিক্ষানীতি-আলাক-১, রাজনীতি ও সরকার নীতি-হজ্ব-৪১, নেতার
নীতি-আম্বি^য়া-৭৩ উল্লেখ আছে। ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি অবিচ্ছেদ্দ। ইসলামে কল্যানকর,
গতিশীল সকল সরকারের অনবদ্য চিত্র ফুটে উঠে। সকল নবীগণ রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা
করেছেন, চেষ্ঠা করেছেন। আমাদেরও তাই করতে হবে। আমাদের প্রয়োজনে আল্লাহর নির্দেশে। এপ্রসঙ্গে
তওবা ৩৩, সুরা নিসা-১০৫ নং আয়াত দেখা যেতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিটি
কেমন হবে তা দেখতে পাই, আবু বকর (রাঃ) এর জীবনেও তিনি বলেন- ‘‘ হে জনগণ! ততক্ষণ
আমাকে মানবে যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও রাসূলকে মানি’’। ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে ও আল্লাহর
বিধান সম্পর্কে আরো জানতে পড়ে দেখুন-নূর-৫৫, বাকারা-৩০, আনয়াম-১৬৫ নং আয়াত। ইসলামে
পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এছাড়া যে গ্রহন যোগ্য বিধান নেই, একে পূর্ণাঙ্গই মানতে হবে।
এ প্রসঙ্গেঁ মায়েদা-৫১, আল ইমরান-৮৫, নিসা-১৪৪, নহল-৮৯ ও আনয়াম-৩৮ নং আয়াত দেখে নিন।
প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ ইসলামকে ধর্মীয় ও রাজনীতিক ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্যই তো ইসলাম জিহাদের
নিয়ম করেছে। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গঁ প্রতিষ্ঠার সর্বাত্বক প্রচেষ্ঠাই তো ‘‘জিহাদ’’। এটি
ফরজ কাজ। এ ফরজ আদায় করলে অন্যান্য ফরজ ও আদায় সহজ হয়ে যায়। প্রচলিত ভাষায় একেই বলে
ইসলামী আন্দোলন। শান্তিপূর্ণ কল্যানকর আন্দোলনকে সন্ত্রাস বলে গালি দেয়া মোটেই ন্যায়
সংগত নয়। জিহাদ বা ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে-মায়িদা ৩৫, তাওবা-৭৩, তাওবা-১১, সফ-১০-১১,
বাকারা-১৯৩, আনকাবুত-৬৯ নং আয়াত পড়–ন। একটি বিষয় লক্ষ্য করুন ইসলামী রাজনীতিতে আল্লাই
রাজাও রাজাধিরাজ। তার নীতিই মূলত ইসলামী রাজনীতি। কেয়ামতে আল্লাহ বলবেন-‘‘আমিই রাজাধিরাজ
এখন কোথায় পৃথিবীর রাজারা?’’(মুসলিম)। মুসলিম বন্ধুগণ! কোন চরমপন্থা বা রাসূলের
আদর্শের বিপরীত কৌশলে ইসলাম রাষ্ট্রিয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না হবেও না। তাই রাজনীতিক
ভাবে প্রতিষ্ঠিায় সততা, যোগ্যতা, ধৈয্য, আতœত্যাগ। সর্বাত্বক কৌশল ও চেষ্ঠা চালিয়ে
যেতে হবে। তা হলে অমানিশার আঁধার কেটে দ্বীনের সূর্য উঠবেই। রাজনীতিতে ইসলামী
পরিভাষা : নির্বাচনকে ইসলামে বলে ‘‘রায়”। জনপ্রতিনিধিত্ব কারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে
বলেছে ‘‘মজলিশ’’। জনপ্রতিনিধি পরিষদকে বলে ‘‘শুরা’’। সুবিচারককে ‘‘আদল ও ইনসাফ’’ মানবাধিকারকে
‘‘ইক্কুল ইবাদ’’ ঐক্যমতকে ‘‘ইজমা’’ বিশ্লেষন ও তর্কায়নকে ‘‘কিয়াস ও ইজ তিহাদ’’। সংলাপ
ও বিতর্ককে ‘‘ইয়তিলাফ’’। পাশ্চাত্য গনতন্ত্র ও ইসলাম কিছু ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক নয়। তবে
ইসলাম এর ব্যাতিক্রম। বিশ্বাস ও প্রয়োগ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম হুবহু পাশ্চাত্য
গনতন্ত্রের মত নয়। ইসলাম একেবারেই সুফ বাস্তব ও সম্পূর্ন নিভুল। পাশ্চাত্য ও
গণতন্ত্র তা নয়। পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের ভালো দিকগুলো ইসলাম হতেই ধার করা হয়েছে। পরিশেষে
বলব ইসলামে কি আছে তা নয় বরং প্রশ্ন করুন কি নেই? উত্তর হলো ইসলামে সবই
আছে, নেই শুধু মিথ্য, সংশয় এবং ভুল বক্তব্য। মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ প্রদত্ত বিধানকেই
পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তিনি যেমন নবী, তেমনি তিনি ছিলেন যোদ্ধা,
সেনাপতি, সমাজ সংস্কারক, মহান নেতা, বিজ্ঞানী, বিশ্বস্ত, সত্যবাদী, সফল রাষ্ট্র নায়ক
এককথায় পরিপূর্ণ মানুষ তিনি সকল মহৎ গুনের যোগ ফল।
Md Atiqur Rahman
(২) ইসলামি রাজনীতি কি?
কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে যে রাজনীতি পরিচালিত তাই ইসলামি রাজনীতি।
জনগনের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের সবধরনের চাহিদা পূরণ ও তাদের যাবতীয় অধিকার
নিশ্চিত করা। আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায় ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা নিসা: ৫৮-৫৯]
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায় ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা নিসা: ৫৮-৫৯]
তাহলে যারা বলেন, ইসলামে কোন রাজনীতি নেই, দীনের সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই তাদের কথার কি কোন ভিত্তি আছে? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তাদের এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। ইসলামি শরি‘য়াহ মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ ও যুদ্ধাবস্থায় সর্বাবস্থায়ই সঠিক ও সফল রাজনীতি নিয়ে এসেছে। সব মুসলিম ও ইসলামি রাষ্ট্রের শাসকদেরকে এসব রাজনীতি চর্চা করা ফরয। মুসলমানদের দুনিয়া ও আখেরাতের সব কার্যাবলী এসব নীতিতে পরিচালনা করা ফরয।
অন্যদিকে মিথ্যাচার ধোকাবাজি, অঙ্গিকারভঙ্গ, গাদ্দারী, জনগণের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ না করার ধোকার রাজনীতি ইসলাম সমর্থন করেনা এবং এধরনের নোংরা রাজনীতিও ইসলাম নিয়ে আসেনি। যে কেউ কুরআন, হাদীস, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের জীবনী অনুসন্ধান করে দেখতে পাবে যে, ইসলাম সঠিক মাপকাঠীতে রাজনীতি নিয়ে এসেছে এবং এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, যারা ধর্মহীন, ধর্মনিরপেক্ষ বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনীতি করেন তাদেরকে কি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা যাবে? এধরনের লোকদেরকে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করার হুকুম কি? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দেশের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে এ ধরনের লোকদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করা জায়েয হবেনা। যেসব লোক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বা ইসলামকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস করে, বা সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, বা তারা ইসলামকে শুধু দীন হিসেবে মনে করেন তাদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা। কেননা এদেরকে নির্বাচিত করার অর্থই হলো আপনিও তার এসব কাজে সন্তুষ্ট ও তাদের এসব অন্যায় কাজে সহযোগী। এমন করাটা তাদের এসব ভ্রান্ত আক্বিদা-বিশ্বাসে সহযোগিতা করার নামান্তর। এর ফলে তারা তাদের বিরোধী ইসলামপন্থী বা ডানপন্থীদের উপর নানারকম উপহাস, নির্যাতন, নিপীড়ন ও অধিকারহরণ করে। তাছাড়া এটা একটা ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা। তাই এ ধরনের লোকদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা।সমাজতন্ত্রীর মত কোন ইহুদী, খৃস্টান, কাদিয়ানি ইত্যাদি ভ্রান্ত আক্বিদার লোকদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা। এতে তাদের বাতিল আক্বিদা ও বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে বা তারা তাদের বিরোধীদের সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে বা খারাপ কিছু করার আশঙ্কা থেকে এরা মুক্ত নয়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ، وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ، كَحَامِلِ الْمِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ: إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً “
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সৎ সাথী ও মন্দ সাথীর উপমা মিশকধারী ও অগ্নিকুণ্ডে ফুৎকার দানকারীর (কামারের) মত। মিশকধারী (বিক্রেতা) হয়ত তোমাকে কিছু দিবে (সুগন্ধি নেওয়ার জন্য হাতে কিছুটা লাগিয়ে দেবে) অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছুটা খরিদ করবে, কিংবা তুমি তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর অগ্নিকুণ্ডে ফুকদানকারী হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে”।
( বুখারী, হাদীস নং ৫৫৩৪, মুসলিম,
হাদীস নং ২৬২৮ ) এ ছাড়া বাতিল কাজে সহযোগিতা
করা জায়েয নেই। এটা অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ বলেছেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর”। [আল-মায়েদা : ২]
যারা তাদের এসব ভ্রান্ত মতবাদের সাথে একত্বতা পোষণ করবে বা সহযোগিতা
করবে তারা অন্যায় ও যুল্ম করল। তাদের উচিত ঐ সব লোকদেরকে উপদেশ দেয়া, তাদেরকে সৎ পথের
সন্ধান দেয়া। যদি তারা উপদেশ গ্রহণ করে ও ভ্রান্ত মতবাদ থেকে ফিরে আসে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ
ভালো, নতুবা তাদেরকে ত্যাগ করতে হবে।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, যেসব দেশে ইসলামি শাসন নেই, আল্লাহর কুরআন ও
রাসূলের সুন্নাহ্ মোতাবেক দেশ পরিচালিত হয় না, সেখানে মুসলমানগণ কি নিজেরা নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বা কাউকে ভোট দিবে? এ প্রশ্নের উত্তরে সৌদি আরবের একাডেমিক গবেষণা
ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেছেন, এধরনের দেশে বাতিল ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার
জন্য কোন মুসলমানের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জায়েয হবেনা এবং অন্যকেও ভোট দিয়ে
নির্বাচিত করা যাবেনা। তবে কোন মুসলমান যদি কুফুরী সংবিধানকে পরিবর্তন করে ইসলামি শরি‘য়াহ
বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করে তবে সে নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং অন্যরাও
তাকে ভোট দিবে। এটা সে অনৈসলামিক আইনকে ইসলামি আইনে পরিবর্তনের চেষ্টার উসিলা হিসেবে
গণ্য হবে, তবে সে নির্বাচিত হলে ইসলামি শরি‘আতের বিরোধী কোন পদ গ্রহণ করবে না বা সে
সংক্রান্ত কোন আইন সমর্থন করবে না।
ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মহীন দেশে প্রচলিত আইনের অধীনে ইসলামি সংগঠন তৈরী
করা কি জায়েয? উল্লেখ্য, ইসলামি সংগঠনের উদ্দেশ্য ভিন্ন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো দাওয়াতী
কাজ পরিচালনা করা।
এ প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের একাডেমিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষায় নিপতিত অসহায় মুসলামনের জন্য অমুসলিম বা কাফির দেশে সংঘবদ্ধভাবে থাকা, পরস্পর সাহায্য সহযোগিতা ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে এ ধরনের ইসলামি দল বা সংগঠন করা জায়েজ। এটা সৎ ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতার নামান্তর।
লেখার সূত্র: ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া
বিষয়ক স্থায়ী কমিটি। ফতওয়া নং ১৫৬৩১, ৯৮৮০, ৩১০৫, ৪০২৯, ৫৬৫১ ও লেখক কর্তৃক সংকলিত।
ফতোয়ার সদস্য: সালিহ ইবন ফাওযান, আবু যায়েদ বকর ইবন আব্দুল্লাহ, আব্দুল আজিজ ইবন আব্দুল্লাহ
ইবন মুহাম্মদ আলে আশ-শাইখ। প্রধান, আব্দুল আজিজ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বাজ।
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
No comments:
Post a Comment