Wednesday, May 3, 2017

ইসলামে যা হারাম- বাংলাদেশে তা বৈধ

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম)
ইসলামে যা হারাম- বাংলাদেশে তা বৈধ
এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
মাওলানা মোঃ শিহাব এমএ (বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। শেষ ফলাফল মুত্তাকীদের জন্য নির্ধারিত এবং একমাত্র যালিমদের ক্ষেত্রেই শত্রুতা। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক নবি ও রাসুলদের সর্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব তথা আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর।
আল্রাহ তায়ালা ও নবি করিম (সঃ) মানব জাতির জন্য কিছু জিনিস হারাম ও কিছু জিনিস হালাল করেছেন।কোন্ কো্‌ন্ জিনিস হারাম এবং হারাম জিনিস ভক্ষণ করলে কি ক্ষতি হবে, ইহকালে ও পরকালে তার শাস্তি কি হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ আছে।আমরা মুসলমান হিসেবে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হালাল-হারাম এর পথ বেছে চলবো, এটাই নিয়ম।কিন্তু আমাদের দেশে হালালকে হারাম আর হারামকে হালালের বৈধতা আইন করে পাস করে দেয়া হয়েছে।
মদ,জুয়া,লটারী,ভাগ্য গণনা, সুদ, ঘুষ, যিনা/ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি, অপহরন, খুন, গুম, চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সবই বাংলাদেশে জায়েজ।বাংলাদেশ সরকার এই সব অবৈধ কাজ করার আইনগত বৈধতা দিয়েছে।যার ফলে প্রকৃত মুসলমানদের ইমান আমল নিয়ে বেঁচে থাকা বাংলাদেশ নরকে পরিনত হয়েছে।হারামের বৈধতার মধ্যে মদ একটি।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মদ বা মাদকের বৈধতা বা লাইসেন্স প্রদান সম্পের্কে ইন্টারনেটে প্রকাশিত কিছু তথ্য আমরা জেনে নেই।
১ নং-দেশে মদপানের পারমিট আছে ১৪২২৩ জনের, নারী ৭২৩
বাংলাদেশে মদ পানের পারমিট। কিছুটা অবাক হওয়ার মতো। তবে ঘটনা সত্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভিন্ন ব্যক্তির আবেদন বিবেচনায় নিয়ে মদ পানের পারমিট দিয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি এ ধরনের পারমিট চেয়ে আবেদন করলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজস্ব লোকবল দিয়ে ওই ব্যক্তির আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।
তথ্য সন্তোষজনক মনে হলে পারমিট দেয়া হয়। তবে পারমিট দেয়ার পরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। যদি কারও বিরুদ্ধে অবৈধ মাদকসহ মদের ব্যবসা বা আমদানির অভিযোগ আসে তাহলে তার পারমিট বাতিল করা হয়। দেশে বর্তমানে মদের পারমিট রয়েছে ১৪২২৩ জনের। তারমধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে ৮১০০ জনের। পারমিট পাওয়া নারীর সংখ্যা ৭২৩ জন।
জেলা শহরের চাইতে বিভাগীয় শহরগুলোতে কোমল পানীয় মদ পানকারী বেশি। কোনো কোনো জেলায় দেখা গেছে, ৫০ জনেরও নিচে মদ পানকারীর পারমিট রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সারা দেশের প্রায় ২০০০ হাজারের মতো ব্যক্তি মদ পান করার জন্য পারমিট চেয়েছেন। তাদের ওই আবেদন খতিয়ে দেখছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
এ বিষয়টি জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মেহেদী হাসান জানান, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত ছাড়া মদের পারমিট দেয় হয় না। তবে বর্তমানে মধ্যবিত্ত লোকদের পারমিট দেয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মদের পারমিট নিয়ে কেউ কেউ অবৈধভাবে ব্যবসা গড়ে তোলে। কেউ কেউ পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়। এজন্য আবেদনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গভীর তদন্ত করে পারমিট দেয়া হয়। দেশে মদের পারমিট রয়েছে প্রায় ১৪২২৩ জনের। আবেদন পড়ে রয়েছে প্রায় ২০০০ হাজার জনের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে লাইসেন্স রয়েছে ১৩৯টি মদের বারের। তার মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৫২টি। মদপানকারীরা সেখানে গিয়ে নির্বিঘ্নে মদ পান করে থাকে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয় না। তবে যাদের মদ পানের পারমিট রয়েছে তারা শুধু বার নয়, দেশের যে কোনো স্থান থেকে মদ ক্রয় করে পান করতে পারেন। তিন বছর পর ওই পারমিট নবায়ন করতে হয়।
সূত্র জানায়, মদের পারমিটের আবেদনকারীর আয়ের উৎস, আয়কর সংক্রান্ত কাগজ, পুলিশের ক্লিয়ারেন্স ও জন্ম নিবন্ধন কপি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে জমা দিতে হয়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই ব্যক্তি মদের পারমিট পাওয়ার যোগ্য কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করে।
মদের পারমিট নেয়ার আবেদন উচ্চবিত্ত লোকজনই বেশি করে থাকে। ৩০ বছরের উপরে যাদের বয়স সাধারণত তাদেরই পারমিট দেয়া হয়। তবে ৩০ এর নিচে কোনো তরুণ মদের পারমিটের আবেদন করলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তার বাবা ও মায়ের ক্লিয়ারেন্স চান। বাবা ও মা যদি ওই ক্লিয়ারেন্স দেন তবে ওই আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
৩০ এর নিচে যারা আবেদন করে থাকে তারা সকলেই উচ্চবিত্তের সন্তান। ঢাকায় এর সংখ্যা বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে, অনেকেই মদের পারমিট আর নতুনভাবে নবায়ন করে না। একবার পারমিট নিয়েই তারা বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়।

২ নং-ক্রাউন বেভারেজকে মদ তৈরির লাইসেন্স দিয়েছে সরকার
প্রকাশিত: সোমবার ০১ মার্চ ২০১০ |

স্টাফ রিপোর্টার : ক্রাউন বেভারেজ ‘হান্টার' নামে সারাদেশে ব্যাপকহারে মদ বাজারজাত করতে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর লাইসেন্স নিয়ে ইতোমধ্যে তারা উৎপাদন শুরু করেছে। দিন দিন হান্টারের চাহিদা বাড়ায় অনেক নতুন কোম্পানি মদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছে বলে জানা গেছে। এতে বাজারে মদে সয়লাব হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের মত একটি রক্ষণশীল মুসলিম দেশে যদি এভাবে অবাধে মদের লাইসেন্স দেয়া হতে থাকে তাহলে বাংলাদেশে যত্রতত্র মদের সরবরাহ বেড়ে যাবে। অপরদিকে দেশে উঠতি যুবসমাজের নৈতিক মান ধরে রাখা যাবে না। ২০০২ সালে বিনিয়োগ বোর্ডের লাইসেন্স নিয়ে গাজিপুরের কালিয়াকৈরে ক্রাউন ও হান্টার নামে পানীয় তৈরির প্লান্ট স্থাপন করে ক্রাউন বেভারেজ। পানীয় তৈরির জন্য বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেয়া হয়নি। অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে মদ উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করে যুমনা গ্রুপ। সে সময় হান্টার নামে যে পানীয় বাজারজাত করা হচ্ছিল তাতে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এলকোহল ছিল। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কারখানা সিলগালা করে ২০০৪ সালের ৩ মার্চ কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ক্রাউন বেভারেজ। কিন্তু দেশের আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় সে সময় ক্রাউন বেভারেজকে মদ উৎপাদনের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ক্রাউন বেভারেজ কোম্পানি। ২০০৫ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলায় রায় দিয়ে যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সে সময় জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের সরকার থাকায় হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন হাইকোর্ট এ বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হাইকোর্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দায়ের করা সে আপিল খারিজ করে দেয় ২০০৮ সালের ২ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ৩ তারিখ এ রায়ের উপর রিভিউ পিটিশন করা হয়। এ রিভিউ পিটিশনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ জুন কিছু সংশোধনী এনে যমুনা গ্রুপ মদ উৎপাদনের লাইসেন্স পায়। আর আদালতের দোহাই দিয়ে বর্তমান সরকার ২৯ জুন যমুনা গ্রুপকে মদ উৎপাদনের লাইসেন্স প্রদান করে। সরকার বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম রাষ্ট্রে মদের লাইসেন্স না দেয়ার ব্যাপারে তেমন কোন ভূমিকা নেয়নি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড কোম্পানিকে মদের লাইসেন্স দেয়ায় এখন অনেক কোম্পানি আরও মদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। নতুন কোম্পানিগুলোর যুক্তি হলো ক্রাউন বেভারেজকে মদ তৈরির লাইসেন্স দিলে অন্য কোম্পানীকে কেন দেয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, এ যুক্তির কারণে নতুন কোম্পানিগুলোকে অধিদফতর নয়া লাইসেন্স দিতে বাধ্য হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে আরও কয়েকটি কোম্পানি মদের লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে।
৩ নং-
·         আইন ভেঙে বিদেশী নাগরিককে বারের লাইসেন্স
তোহুর আহমদ | প্রকাশ : ১৮ মে ২০১৫
সব আইন-কানুন ভেঙে বাংলাদেশে অবস্থানকারী দুই বিদেশী নাগরিককে মদের বার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীতে এমন মদের বার লাইসেন্স পেয়েছেন দুই কোরীয় নাগরিক। উপরন্তু বার লাইসেন্স নিয়েই শুধু তারা ক্ষান্ত থাকেননি, বারের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে পতিতাবৃত্তিসহ নানা ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বিদেশীকে মদের বারের মতো স্পর্শকাতর লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা মোটা অংকের ঘুষ নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেআইনিভাবে লাইসেন্স পাওয়া এ দুটি বারের নানা অপকর্ম সম্পর্কে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠালেও রহস্যজনক কারণে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। সূত্র জানায়, কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব নামের একটি নামসর্বস্ব ক্লাবকে বার লাইসেন্স দেয়া হয়। কিম নামের কোরীয় নাগরিকের মালিকানাধীন এই বারটি এখন গুলশানের ১১৩ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাড়িতে চলছে। অপরদিকে সিউল কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট নামের রেস্টুরেন্টকে যথাযথ তদন্ত ও কাগপজত্র ছাড়াই বার লাইসেন্স দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বনানী ১১ নম্বর রোডের ই-ব্লকের ১৫৩ নম্বর বাড়িতে এখন এই বারটির কার্যক্রম চলছে। এর মালিক দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ইয়ুন জং সিয়ুন। জানা গেছে, বিদেশী কোনো নাগরিকের বার লাইসেন্স পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এমন শর্ত লংঘন করে তাদেরকে লাইসেন্স দেয়া ছাড়াও ওই প্রক্রিয়ার আরও কিছু জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। যেমন- নিয়মানুয়ায়ী কোনো ক্লাবকে বার লাইসেন্স পেতে হলে সেখানে অবশ্যই মদ পানের পারমিটধারী অন্তত ২০০ সদস্য থাকতে হয়। কিন্তু কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবকে বার লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। এ সংক্রান্ত ফাইলপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের পক্ষে বার লাইসেন্সের আবেদনের সঙ্গে ক্লাবের সদস্য হিসেবে যে ২০০ কোরিয়ান নাগরিকের নাম জমা দেয়া হয়েছিল তা তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হয়। এমনকি লাইসেন্স দেয়ার কিছুদিন আগেই সেখানে র‌্যাবের অভিযান ও মামলা হয়েছিল। তারপরও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই ক্লাবের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। অজ্ঞাত কারণে যাচাই-বাছাই ছাড়াই দ্রুততম সময়ে সেখানে বার লাইসেন্সও ইস্যু করে দেয়া হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আমীর হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ বিদেশী নাগরিককে বার লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই আইনে কাভার করে না। তবে এদেশে বৃহৎ বিনিয়োগ করেছেন এমন কোনো বিদেশী ব্যক্তি বার লাইসেন্সের আবেদন করলে সেখানে বিশেষ বিবেচনার কথা বলা আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচ্য বার দুটি তার যোগদানের আগেই দেয়া হয়েছে। তবে এখানে দুজন বিদেশী নাগরিকের যে প্রোফাইল দেখছি তাতে তারা বিশেষ ক্যাটাগরির বিদেশী নাগরিক নন।
সূত্র জানায়, কোরীয় নাগরিক কিম প্রায় ১৫ বছর আগে বাংলাদেশে আসেন। ঢাকার ব্ল্যাক মার্কেটে বিদেশী মদ-বিয়ারের প্রচুর চাহিদা দেখে তিনি বিদেশী মদ-বিয়ার চোরচালানের অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি গুলশানে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব নামের একটি ভুয়া ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সেখানে তিনি ডিস্কোর আদলে মদ বিক্রির পাশাপাশি অশ্লীল নাচ-গানের আসর বসাতেন। সেই সূত্রে তার সঙ্গে তথাকথিত কিছু রাজনীতিক নেতা ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিদেশী মদ-বিয়ারের অবৈধ ব্যবসা আরও জাঁকিয়ে বসেন। কিন্তু একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকলে একপর্যায়ে ২০১১ সালে কিমের মালিকানাধীন এই ক্লাবে সাঁড়াশি অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে প্রায় ৩ ট্রাক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশী মদ, বিয়ার ও যৌন উত্তেজক পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় কিমসহ মদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করে র‌্যাব। কিন্তু মামলা চলমান অবস্থাতেই রহস্যজনকভাবে কিমের মালিকানাধীন এ কুখ্যাত ক্লাবের নামে বার লাইসেন্স ইস্যু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল ও তার সহযোগী তৎকালীন পরিচালক প্রশাসন আক্তারুজ্জামান মো. মোস্তফা কামাল মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এ ক্লাবকে বার লাইসেন্স পেতে সহায়তা করেন। লাইসেন্স পাওয়ার পর কুখ্যাত এ ক্লাবে রাতভর ডিসকো, অশ্লীল নাচের সঙ্গে মদ পান আরও বেপরোয়াভাবে চলতে শুরু করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, কোনো ক্লাবকে মদের বার লাইসেন্স দেয়ার আগে কয়েকটি স্তরে তদন্ত করা হয়। তদন্তে সব বিষয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেই সেখানে বার লাইসেন্স ইস্যুর প্রশ্ন আসে।
গত সপ্তাহে কেরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামার আগেই তরুণ, যুবক, কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী ক্রেতা বারের বিভিন্ন কক্ষে বসে মদ পান করছেন। যাদের মাঝে পরিবশেন করা হচ্ছে বিভিন্ন বিদেশী ব্র্যান্ডের অবৈধ মদ-বিয়ার। ক্লাবের কোথাও একজন বিদেশী নাগরিককেও দেখা যায়নি। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের দোতলার কয়েকটি বিশেষ কক্ষে পুরুষ সঙ্গী নিয়ে চড়া মেকআপের পাশ্চাত্য পোশাকের যুবতীতের আনাগোনাও দেখা যায়।
সূত্র জানায়, ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা মদ কম দামে সংগ্রহ করে এ বারে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের ম্যানেজার মিজানুর রহমান সাজু শনিবার যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, চোরাই মদ বিক্রিসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ সত্য নয়।
এদিকে বনানী এলাকায় অবস্থিত সিউল কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট ও বারের বিরুদ্ধেও গুরুতর সব অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছর ২৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা এ সংক্রান্ত এক লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সিউল কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট ও বারের মালিক ইয়ুন জং সিউন একজন বড় মাপের প্রতারক। তিনি ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিল করে মদের বার লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, কয়েকজন বাংলাদেশীর সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রতারক ইয়ুন এ লাইসেন্স পেতে সক্ষম হন। লাইসেন্স পাওয়ার পর এ বারে ডিজে পার্টিসহ অশ্লীল কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, এ বারে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদেরও অবাধ যাতায়াত থাকার কারণে যুবসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। বারের মালিক ইয়ুনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ করা হয়।
এ সংক্রান্ত অভিযোগটি এখন তদন্ত করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (উত্তর) মানজুরুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, মানজুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবে অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারীসংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পর সেখানে একাধিকবার ঝটিকা অভিযান চালানো হয়।

সংখ্যা: ২০৭তম সংখ্যা |


সচিবদের অনেকেরই মদ পানের লাইসেন্স রয়েছে! তারপরেও নতুন করে ১৬ সচিব মদ পানের আবেদন করেছে! আবেদনের তালিকায় রয়েছে বর্তমান এবং সাবেক অনেক মন্ত্রীর নামও!
দেশ কী এখন মদ্যপ-দের হাতে চলে গেছে? নাকি মদ্যপরাই দেশ চালাচ্ছে? 
গত ২৩ ও ২৪ জুলাই হোটেল রূপসীবাংলা এবং প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বার বন্ধ রাখা হয়। ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধিসহ অন্যান্য ভিআইপিদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত ২০ জুলাই মহাপুলিশ পরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় গোয়েন্দারা ওই দুই হোটেলের বার বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি বার খোলা থাকলে মদ পান করতে বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বাড়বে। এ বিষয়টি ভিআইপিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতিভাত হচ্ছে, ভারতের একটি রাজনৈতিক দল কংগ্রেস সভানেত্রীর প্রতি সম্মান দিতে গিয়ে দেশের যে দুটি আন্তর্জাতিক মানের কথিত হোটেল মদ ছাড়া চলতে পারে না সেখানেও মদ বন্ধ রাখা হয়েছে!
প্রশ্ন হচ্ছে- এদেশে ভারতের সোনিয়ার এত কদর হতে পারলো কিন্তু এদেশে এদেশবাসীর কদর কোথায়? এবং কবে হবে?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। তাদের দ্বীন ইসলাম। আর ইসলামে এক কাতরা পরিমাণ মদও সম্পূর্ণ হারাম।
ইসলামে হারাম খাদ্য বা পানীয় ঔষধ হিসেবে তখনই মোবাহ হতে পারে যখন নিম্নলিখিত ৪টি শর্ত পাওয়া যাবে।
১. কোনো অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কোনো দ্বীনদার পরহেযগার মুসলমান ডাক্তার সুপারিশ করলে।
২. উক্ত হারাম খাদ্য বা পানীয় না খেলে সে মারা যাবে।
৩. উক্ত হারাম খাদ্য বা পানীয় খেলেই সে বাঁচবে অন্যথায় মারা যাবে।
৪. উক্ত হারাম খাদ্য বা পানীয় ব্যতীত অন্য কোনো ঔষধ নেই।
এই ৪টি শর্ত পাওয়া গেলে কেবলমাত্র তখনই অসুস্থ ব্যক্তির জন্য উক্ত হারাম খাদ্য বা পানীয় ব্যবহার করা মুবাহ হতে পারে।
কিন্তু বর্তমানে শুধু এতটুকু লিখলেই হচ্ছে যে-
“আমি অসুস্থ। দিনে দু’বেলা মদ খেতে হবে। এ জন্য চাই অনুমতি।” আর এভাবেই মদ খাওয়ার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রকাশ্যে ছবিসহ আবেদন করেছেন দেশের ২ মন্ত্রী, ৫ এমপি, ১৬ সচিব-যুগ্ম সচিব, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ, ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তা!
এ তালিকায় আরও আছেন সাবেক জোট সরকারের সময়ের ৪ মন্ত্রীও! আবেদনের সঙ্গে তারা জমা দিয়েছেন ডাক্তারের সার্টিফিকেট। কারণ বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিকের মদ খাওয়ার লাইসেন্স পাওয়ার একমাত্র শর্ত উপরোক্ত কথিত ডাক্তারি সার্টিফিকেট!
উল্লেখ্য, গত ৩০শে জুন ছিল মদ খাওয়ার লাইসেন্সের জন্য আবেদন নেয়ার শেষ দিন। ১লা জুলাই থেকে শুরু হয়েছে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া। সরেজমিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে গিয়ে জানা যায় নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন জমা পড়েছে ৭ সহস্রাধিক। এর মধ্যে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে। রয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ীও। সবচেয়ে আলোচিত হলো ১৬ সচিবের আবেদন। এর মধ্যে রয়েছেন ৮ জন পূর্ণ সচিব, বাকিরা যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এছাড়া, শতাধিক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন আবেদনকারীদের তালিকায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে দু’ধরনের লাইসেন্স দেয়া হয়। একটি হচ্ছে বিদেশী মদ পানের জন্য। এ জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি ২ হাজার টাকা। অন্যটি দেশীয় মদ পানের। এর সরকারি ফি ৮০ টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঢাকায় মদ পানের লাইসেন্সধারী ছিলেন ১৩ হাজার ৩শ’ ২২ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ২০ জন ছিলেন বিদেশী মদ পানের লাইসেন্সধারী। আর ৬ হাজার ৩শ’ ২ জন ছিলেন দেশীয় মদ পানের লাইসেন্সধারী। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে বিদেশী মদ পানের লাইসেন্সের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার আবেদন পড়েছে। এছাড়া, দেশীয় মদ পানের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর আবেদনের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ- এবারই প্রথম ছবিসহ আবেদন করতে হচ্ছে। লাইসেন্সেও এবার ছবি সংযুক্ত করে দেয়া হবে। তাই পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে অনেকেই এবার আবেদন করেনি। এছাড়া, এবার যারা আবেদন করেছে তাদের অনেকেই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছে। আবেদনপত্রের পেশার ঘরে অনেকেই প্রকৃত পেশা না লিখে লিখেছে চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি। তবে যারা সমাজে পরিচিত মুখ তারা নিজেদের আড়াল করতে পারেনি। আবার অনেক উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা সরকারি ফি জমা না দিয়েই লাইসেন্স করে দেয়ার জন্য প্রভাব খাটিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের।
জানা গেছে, প্রতি রাতে ঢাকার বারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। তাদের ৯০ শতাংশ লাইসেন্সধারী নয়। কিন্তু বারগুলোতে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষ মদ খেতে আসে। অভিযান চালানোর সময় এমন সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেখা গেছে যাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসতে হয়েছে অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাই বারগুলোতে অবৈধভাবে মদ পান চলে এটি জেনেও সেখানে অভিযান চালাতে সাহস পান না মাদকের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে মদ ও জুয়াকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হবে।
যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে সংবিধান রক্ষার আসল কর্ণধার সে মন্ত্রী-সচিবরাই যদি সংবিধান-এর কার্যত খেলাফ করে তাহলে সংবিধান প্রতিফলন কী করে হবে!
অপরদিকে সংবিধান লঙ্ঘনে এর কর্ণধাররাই কোনো রাখ-ঢাক না রেখে বেসামাল হলেও সরকার বিব্রত হচ্ছে না!
পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ভূমিকা রাখতে পারছে না!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সংবিধান থেকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ তুলে নেয়ার তোড়জোড় ঠিকই পালিত হলেও এবং ইসলাম সম্পৃক্ত সব শব্দ তুলে দেয়া হলেও ইসলামবিরোধী অনুষঙ্গগুলো নিষিদ্ধকরণে সরকারের কোনো উদ্যোগ ও উদ্যম নেই।
যাতে আবারো খোলাখুলিভাবে প্রমাণিত হয়, আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে অন্য ধর্মহীনতা না হলেও ইসলাম-এর ক্ষেত্রে পুরোটাই ইসলামদ্রোহিতা। (নাঊযুবিল্লাহ)
যেমন অন্য সব ধর্মে মদ পান জায়িয হলেও ইসলামে জায়িয নয়।
প্রসঙ্গত, বাস্তবতার আলোকে উল্লেখ্য, সংবিধানে নিষিদ্ধ মদ যদি এদেশে বন্ধ না হয়;
তাহলে সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতাও বাস্তবায়ন হবার নয়।
সংবিধানে নিষিদ্ধ থাকলেও যেমন কিছু লোক মদপানে আগ্রহী
তেমনি সংবিধানে বর্ণিত থাকলেও দেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানও ধর্মনিরপেক্ষতা অস্বীকারে আগ্রহী।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ।
৫ নং- যমুনা গ্রুপকে মদ তৈরির ৩টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে
সুত্র:গতকাল সংসদ অধিবেশনে মদের লাইসেন্স সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর প্রত্যাহার করে নিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে প্রত্যাহারকৃত প্রশ্নোত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বর্তমান সরকারের সময় দুটি বার এবং মদ জাতীয় পানীয় উত্পাদন ও বিপণনের জন্য তিনটি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। উত্পাদন, মজুত ও বিপণনের জন্য তিনটি লাইসেন্সই পেয়েছে যমুনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ক্রাউন বেভারেজ লিঃ। গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এ তিনটি লাইসেন্স ইস্যু করা হয়।
গতকাল বিকালে স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে প্রশ্নোত্তর ও জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জমা দেয়া নোটিশ টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় স্পিকার সংসদকে জানান, তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন ১৮৮৫ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধে কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়া হলো। প্রশ্নটি করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি জানতে চান, ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে মদের ব্যবসার জন্য কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে কিনা। লিখিত উত্তরে মোট ২০টি লাইসেন্সের কথা জানানো হয়। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৭টি বারের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ঢাকার কয়েকটি ক্লাব ও হোটেলকে।এর মধ্যে ঢাকার রেডিসন, সারিনা ও কক্সবাজারের সিগাল হোটেল রয়েছে।
প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ৮টি হোটেল ও ক্লাবকে বার পরিচালনার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে মদ জাতীয় পানীয় উত্পাদন, মজুত ও বিপণনের লাইসেন্স দিয়েছে বর্তমান সরকার। ক্রাউন ও হান্টার উত্পাদন, পাইকারি বিক্রয় ও ক্যানিং-বোটলিংয়ের জন্য যমুনা গ্রুপের ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেডকে লাইসেন্স দেয়া হয় গত বছর ২৯ জুলাই। আবার মজুত ও পাইকারি বিক্রির জন্য আরেকটি লাইসেন্স দেয়া হয় গত বছর ৫ অক্টোবর। একই কোম্পানির নামে পৃথক ঠিকানায় তৃতীয় লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয় গত বছর ১৫ ডিসেম্বর।
মাদক দ্রব্য নিযন্ত্রন আইন , পত্রিকা ও ইন্টারনেটে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দ্বারা এটাই প্রমানিত যে, বাংলাদেশে মদ খাওয়া,বিক্রি করা ও উৎপাদন করা বৈধ। শুধু মদেই না , মদের সাথে দেহ ব্যবসা, অশ্লীল নাচ,গান-বাজনা,জুয়া,লটারীসহ সকল প্রকার অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বৈধতা দেয়া হয়েছে।কারন মদ যেখানে খাওয়া হয় সেখানে উল্লেখিত অসামাজিক কাজগুলো সংঘটিত হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় এখন হাত মেললে সকল প্রকার মাদক পাওয়া যায। এ সময়ের সর্ব পরিচিত ফেন্সিডিল ও ইয়াবা এখন যত্রতত্র পাওয়া যাচ্ছে। সকল প্রকার মাদক ভারত ও মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসে। শুধুমাত্র চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে ২৯ টি ফেন্সিডিলের কারখানা আছে। আর এগুলো বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১ থেকে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।
বাংলাদেশে যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এরা প্রত্যেকে কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে এরা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাংলা মদ বিক্রি হয়। এই স্থানকে বলে ভাটি। দর্শনা সুগার মিল থেকে স্প্রিট এনে এসব জায়গায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া তাড়ি ও চোলাই মদ তো আছেই। প্রত্যেকটির পিছনে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা আছে।

মদ বা মাদক যে হারাম কোরআন ও হাদিস দ্বারা নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
কোরআনের আয়াত: `
  লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে মদ ও জুয়া সম্পর্কে। তুমি বল: উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং উপকারও আছে মানুষের জন্যতবে এদের পাপ উপকারের চেয়ে অধিক। [সূরা বাকারা-২১৯]
  ওহে যারা ঈমান এনেছ! মদজুয়ামুর্তিপূজার বেদী এবং ভাগ্য নির্ণায়ক তীর তো ঘৃন্য বস্তু,শাইতানের কাজ। অতএব তোমরা সব বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়িদা-৯০]
  শাইতান তো তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে এবং তোমাদের বাধা দিতে চায় আল্লাহর স্মরণ থেকে ও সালাত থেকে। তবুও কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা? [সূরা মায়িদা-৯১]
 এ বিষয়ে অন্যান্য সূরা দেখুন : সূরা নিসা-৪৩। 
হাদীস:
  নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি দুনিয়ার মদ পান করেছে এরপর সে তা থেকে তওবা করেনি সেই ব্যক্তি আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। [বুখারী ৫১৬২-আ,উমর (রাঃ) , [তিরমিযী ১৮৬৭]
 আয়িশা (রাঃ)  বলেননবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: সব নেশা যাতীয় পানীয়ই হারাম। [বুখারী ৫১৭২তিরমিযী ১৮৬৯মুসলিম ৫০৪১]
 নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে যারা ব্যাভিচাররেশমী কাপড়মদ ও বাদ্য যন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। [বুখারী ৫১৭৬-আ,গানাম আশারী (রাঃ )]
  কোন শরাব পানকারী শরাব পান করার সময় ঈমানদার থাকেনা। [বুখারী ৬৩০২-আবূ হুরাইরা (রাঃ)]
মদ পানের ভয়াবহতা সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ)  এর সতর্কবানী:
মদ পান করা অবস্হায় মদ পানকারী কোন মুসলিমের ঈমান থাকেনা। অতএব যদি এ অবস্হায় মৃত্যু এসে যায় তাহলে তাকে বে-ঈমান হয়ে মরতে হবে। কেননা হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরা (রাঃবলেন: নবী করীম (সাঃবলেছেন: ব্যভিচারী ব্যাভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্হায় ঈমানদার থাকেনামদ পানকারী মদ পান করার সময় ঈমানদার থাকেনা এবং চোর চুরি করার সময় ঈমানদার থাকেনা। [হাদীসটি বুখারী (২৪৭৫,৫৫৭৮,৬৭৭২),মুসলিম (৫৭), তিরমিযী (২৬২৫), নাসাঈ (৪৮৭০,৪৮৭১), আবূ দাঊদ (৪৬৮৯), ইবনে মাযাহ (৩৯৩৬),আহমদ (৭২৭৬ও দারেমী (২১০৬বর্ণনা করেছেন]। 
  নবী করীম (সাঃশরাব পানকারীকে বেত্রাঘাত এবং জুতা মেরেছেন। [বুখারী ৬৩০৩-আ,মালিক (রাঃ), ইবনে মাযাহ ২৫৭০]
১০ যা নেশা সৃষ্টি করে তাই মদআর যা নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম। [মুসলিম ৫০৪৯-ইবন উমর (রাঃ) , তিরমিযী ১৮৬৭]
১১ নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: কেহ মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত কর। সে পুনরায় মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত কর। সে পুনরায় মাতাল হলে আবারো বেত্রাঘাত কর। এরপর চতুর্থবার বলেছেন: সে যদি পুনরায় মাতাল হয় তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও। [ইবনে মাযাহ ২৫৭২-আবূ হুরাইরা (রাঃ)]
১২ মদ পান করবেনা। কেননা তা সমস্ত পাপ কাজের উৎস। [ইবনে মাযাহ ৪০৩৪]
১৩ হালাল ও পবিত্র শরবতের পরে অন্যান্য শরবত ঘৃন্য হারাম। [বুখারী ৫১৮৪]
১৪ প্রত্যেক নেশার বস্তুই হারাম। [বুখারী ৫৬৮২-আবূ মুসা (রাঃআবূ দাঊদ ৩৬৪৩)
১৫ যা অধিক পরিমাণে পানকরলে নেশার সৃষ্টি হয় তা অল্প পরিমানে পান করাও হারাম। [আবূ দাঊদ ৩৬৪০] 
আল্লাহ এবং আখেরাতে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি মদ পান করতে পারে না এবং মদের টেবিলে বসতেও পারে না।
আবূ হূরাইরা (রাঃ)  হতে বর্নিত হয়েছেকারন রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে মদ পান করতে পারে না এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখেসে ব্যক্তি সেই দস্তরখানা (টেবিল বা স্হানে)  বসতে পারে না যেখানে মদ পান করা হয় [হাদীসটি ইমাম ত্ববরনী আল-মুজামুল কাবীর গ্রন্হে (১১৩০০)  বর্ননা করেছেন। হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেনদেখুন সহীহ তারগীব অত-তারহীব (১৭২)
আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)  হতে বর্নিত হয়েছেতিনি রাসূল (সাঃ)  হতে বর্ননা করেনতিনি বলেন: তিন শ্রেনীর লোক কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেন না: দায়ূসপুরুষের বেশধারী এবং অব্যাহতভাবে মদ পানকারী। সাহাবীগন বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! মদ পানকারীকে আমরা চিনি তবে দায়ূস কেতিনি বললেন: সেই ব্যক্তি যে তার পরিবারের (স্ত্রীর) নিকট কে প্রবেশ করছে সে ব্যাপারে তার কোন রোয়াই নাই (কিছুই মনে করে না) । আমর বললাম: পুরুষের বেশ ধারনকারী নারী দ্বারা কি বুঝালো হয়েছেতিনি বললেন: পুরুষের সাথে সাদৃশ ধারনকারী নারী। [হাদীসটি ইমাম ত্ববরনী বর্ননা করেছেন। হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেনদেখুন সহীহ তারগীব অত-তারহীব (২০৭১২৩৬৭) ] 
আখেরাতে মদ পানকারীর শাস্তি: জাবের (রাঃ) হতে বর্নিত হয়েছে যেএক ব্যাক্তি ইয়ামানের জীশানা অ জায়শানু হতে আগমন করে রাসূল (সাঃ) –কে তাদের ভূমিতে উৎপন্ন যুরাহ (ভুট্টা) থেকে প্রস্তুতকৃত শরাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল যাকে মিযরু বলা হয়ে থাকে। রাসূল (সাঃ)  বলেছেন: তা কি মাতাল করে (নেশা সৃষ্টিকারীসে ব্যক্তি বলল: জি হ্যা। তখন রাসূল (সাঃ)  বললেন: সকল প্রকার মাতালকারী বস্তু হারাম। আর আল্লাহ এ অঙ্গীকার করেছেন যেযে ব্যক্তি মাতালকারী বস্তু পান করবে তিনি তাকে তীনাতুল খাবাল ভক্ষন করাবেন। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! ত্বীনাতুল খাবাল কিতিনি বললেন: জাহান্নামীদের ঘাম অথবা জাহান্নামীদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট  রস। [হাদীসটি ইমাম মুসলিম (২০০২)  ও নাসাঈ (৫৭০৯) বর্ননা করেছেন।] 
মদ পানকারীর ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবে না: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)  হতে বর্নিত হয়েছে,তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি মদ পান করে মাতাল হয়ে যাবে তার ৪০ দিনের সালাত কবূল করা হবেনা। সে যদি এ অবস্হায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (পান করার পর যদি সে তাওবাহ করে তাহলে আল্লাহ তার রাওবাহ কবুল করবেন। অত:পর সে যদি পুনরায় মদ পান করে মাতাল হয়ে যায় তাহলে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবেনা। অত:পর সে যদি এ অবস্হায় মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অত:পর সে যদি ৪র্থ বার মদ পান করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপরে তাকে রাদাগাতুল খাবালত্বীনাতুল খাবাল পান করানো অপরিহার্য হয়ে যায়। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! রাদাগাতুল খাবালত্বীনাতুল খাবাল কি?তিনি বললেন: জাহান্নামীদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট রস।[হাদীসটি ইবনু মাযাহ (৩৩৭৭) এবং ইমাম আহমদ ও তিরমিযীও বর্ননা করেছেন।

মদ ও মাদক দ্রব্য প্রভৃতি সম্পর্কে ফতোওয়া
Top of Form
Bottom of Form
                                      
(ক) মদপান কারীর ইবাদত:
প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি সদা সর্বদা মদ্যপান করে, যেনা করে এবং নামায এবং ইসলামের অন্যান্য রুকন সমূহও আদায় করে। কিন্ত সে তার উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত হয় না। এর ইবাদত কি ছহীহ হবে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি হালাল মনে করে মদ্যপান করে বা যেনা ব্যভিচার কিংবা যে কোন পাপ সম্পাদন করে তবে সে কাফির বলে গণ্য। আর কুফরীর সাথে কোন আমলই বিশুদ্ধ হবেনা। তবে যদি কেউ পাপের কাজ সম্পাদন করে ওটাকে হারাম জ্ঞান করার পরেও প্রবৃত্তির তাড়নায় এবং এ আশা করে যে আল্লাহ তাকে তা থেকে রক্ষা করবেন। তবে এই ব্যক্তিটি তার ঈমানের কারণে মুমিন এবং পাপের কারণে ফাসেক।
প্রত্যেক পাপী বান্দার উপর ওয়াজিব হল আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা, তার কাছে প্রত্যাবর্তন করা। গুনাহের স্বীকারোক্তি দেয়া, উক্ত পাপ পূণরায় না করার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং কৃতপাপের উপর লজ্জিত হওয়া। আল্লাহর দ্বীন নিয়ে সে খেলা করবেনা, এবং আল্লাহ তার পাপ গোপন করে রেখেছেন এবং ঢিল দিয়ে রেখেছেন একারণ সে ধোকাগ্রস্থ হবেনা। কারণ মহান আল্লাহ শুধুমাত্র একটি পাপের কারণে ইবলীসকে তার রহমত থেকে বের করেছেন এবং চিরতরের জন্য বিতাড়িত করেছেন। আল্লাহ তাকে আদমকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্ত সে তা থেকে বিরত থেকে ছিল। আদম (আঃ)কে আল্লাহ জান্নাত থেকে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছিলেন মাত্র একটি অপরাধের কারণে (তাহলঃ নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া)। কিন্ত আদম (আঃ) তাওবাহ করেছিলেন এবং আল্লাহও তার তাওবাহ গ্রহণ করেছিলেন ও তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করেছেন। অতএব, কোন বান্দাহর জন্য তার প্রতিপালকের সাথে প্রতারনার পন্থাবলম্বন করা উচিত নয়; বরং তার উপর ওয়াজিব হলঃ আল্লাহকে ভয় করা তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করা এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকা।- ফাৎওয়া দানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭৮)
(খ) মদ্যপান কারীকে ধরিয়ে দেয়ার বিধানঃ
প্রশ্নঃ মদ্যপান প্রভৃতি হারাম কাজে লিপ্ত এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কি প্রশাসন বিভাগকে খবর করা যায়? অথচ তাকে আমি কয়েকবার সতর্কও করেছি। নাকি ইহা করা তাকে বেইয্যত করার নামান্তর? অথচ হক বলা থেকে নিরবতা অবলম্বনকারী বোবা শয়তানের ন্যায়।
উত্তরঃ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল- যদি সে তার ভাইকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত দেখে তাহলে তাকে উপদেশ দিবে এবং তাকে পাপ থেকে নিষেধ করবে। তাকে সে পাপের শাস্তির কথা বর্ণনা করে শুনাবে। অন্তর- আত্মায়, অঙ্গ-প্রতঙ্গে, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে, এর কুপ্রভাবের কথা ব্যাখ্যা করবে। হয়তোবা সে বেশী বেশী উপদেশ দেয়ার ফলে পাপ থেকে বিরত হতে পারে এবং সঠিক পথ অবলম্বন করতে পারে। যদি তার সাথে এ পদক্ষেপ ফলপ্রসু না হয়। তবে তাকে পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য সব থেকে নিকটতম পথ অবলম্বন করতে হবে। চাই তা দায়িত্বশীল বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হোক বা এমন ব্যক্তিকে জানিয়ে হোক যার মর্যাদা তার নিকট উক্ত উপদেশ দাতার চেয়েও তার নিকট বেশী। মোটকথাঃ সব চেয়ে নিকটবর্তী পন্থা অবলম্বন করবে যা দ্বারা উদ্দেশ্য সফল হয়। যদিও সে কারণ প্রশাসন বিভাগ পযর্ন্ত তার বিরুদ্ধে নালিশ করতে হয়- যাতে করে তারা তাকে উক্ত পাপ থেকে বিরত রাখতে পারে।- ফাৎওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭৭)
(গ) বিয়ার পান করার বিধানঃ
প্রশ্নঃ বিয়ার পানের বিধান কি? তার অনুরুপ পানীয় পান করার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি বিয়ার নেশা মুক্ত হয় তবে তা পানে কোন অসুবিধা নেই। কিন্ত যদি তা কোন প্রকার নেশা যুক্ত হয় বা তার সাথে এমন বিষয় যুক্ত হয় যার অধিক সেবন মাদকতা নিয়ে আসে তবে তা পান করা জায়েয নয়। অনুরূপ হল বাকী নেশাকারী বস্তুর বিধান। চাই তা খাদ্য দ্রব্য হোক বা পানীয় হোক তা থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব। উহার কোন কিছু পান করা বা খাওয়া যাবেনা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
ياأيهاالذينآمنواإنماالخمروالميسروالأنصابوالأزلامرجسمنعملالشيطانفاجتنبوهلعلكمتفلحون،إنمايريدالشيطانأنيوقعبينكمالعداوةوالبغضاءفيالخمروالميسرويصدكمعنذكراللهوعنالصلاةفهلأنتممنتهون .
হে ঈমান্দারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তী এবং লটারীর তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরুপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। শয়তান তো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্র“তা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামায হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে, সুতরাং এখনও কি তোমরা ফিরে আসবে?” (সূরাঃ মায়িদাহ/ ৯০-৯১)
নবী (ছাঃ) বলেনঃ كلمسكرخمروكلمسكرحرام অর্থঃ “সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম।” (মুসলিম হা/৩৭৩৩)
নবী (ছাঃ) থেকে আরো সুপ্রমাণিত যে, তিনিঃ মদ, মদ্যপানকারী, মদ প্রস্তুতকারী, সে ব্যাপারে নির্দেশ প্রদানকারী, বহণকারী, যার নিকট তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, উহার বিক্রেতা, ক্রেতা এবং তার মূল্য ভক্ষণ কারী সবাইকে অভিশম্পাত করেছেন।
তিনি (ছাঃ) আরো ফরমিয়েছেনঃ كلشرابأسكرفهوحرام “যে সমস্ত পানীয় নেশাকারী তা হারাম।” (বুখারী হা/২৩৫, মুসলিম হা/৩৭২৭) তিনি (ছাঃ)
আরো বলেনঃ ماأسكركثيرهفقليلهحرام “যার অধিক সেবন নেশা নিয়ে আসে তার অল্পও হারাম।” (আবু দাউদ হা/৩১৯৬ তিরমিযী হা/ ১৭৮৮ ইবনু মাজাহ্ হা/ ৩৩৮৪)
নবী (ছাঃ) থেকে আরো প্রমাণিত, তিনি সমস্ত নেশাকারী ও মাতলামী সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন।
অতএব, সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হলঃ যাবতীয় নেশা জাতীয় বস্তু থেকে নিজে সতর্ক থাকা ও অপরকে তা থেকে সতর্ক করা। এবং যে তাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তার কর্তব্য হল উহা পরিত্যাগ করতঃ অতি শীঘ্র আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ وتوبواإلىاللهجميعاأيهاالمؤمنونلعلكمتفلحون অর্থঃ “হে মুমিনগণ আল্লাহর নিকট তোমরা তাওবাহ কর তবেই তোমরা সফলকাম হবে।” (সূরা নূরঃ ৩১) তিনি আরো বলেনঃ ياأيهاالذينآمنواتوبواإلىاللهتوبةنصوحا “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধভাবে তাওবা কর।” (সূরা তাহরীমঃ ৮) – মান্যবর মুফতী ইবনু বায-(আলফাতাওয়া ২/ ২৫৭)
(ঘ) মদের ফ্যাক্টরীতে কাজ করার বিধান
প্রশ্নঃ যে ফ্যক্টরীতে শুধু মাত্র মদ ও নেশা জাতীয় বস্তু তৈরী করা হয় সেখানে মুসলিম ব্যক্তির কাজ করার বিধান কি?
উত্তরঃ মদ এবং যাবতীয় নেশাকারী দ্রব্য হারাম। এগুলোর জন্য ফক্টরী নির্মাণ করা এবং এগুলো ব্যবহার করা সবই হারাম।
-ফাৎওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭২)
(ঙ) প্রশ্নঃ ধুমপানের বিধান কি? উহার বেচা-কেনা হারাম না মাকরুহ?
উত্তরঃ ধুমপান হারাম। কারণ তা খবীস (খারাপ) দ্রব্য এবং অনেক ক্ষয়- ক্ষতির সূত্রস্থল। অথচ আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য শুধু মাত্র পবিত্র পানাহার হালাল করেছেন। এবং তাদের উপর খবীস দ্রব্যাদী হারাম করেছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
ويسألونكماذاأحللهم؟قلاحللكمالطيبات
(হে রাসূল!) তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? আপনি বলে দিন তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে। (আল মায়েদাহঃ ৪)
মহান আল্লাহ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
يأمرهمبالمعروفوينهاهمعنالمنكرويحللهمالطيباتويحرمعليهمالخبائث
তিনি (মুহাম্মাদ) তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ করেন এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করেন। এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং তাদের উপর খারাপ বস্তু হারাম করেন।” (আল্ আরাফঃ ১৫৭)
ধুমপানের যাবতীয় প্রকার পবিত্র বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তা খবীস বা অপবিত্র বা খারাপ দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ ভাবে সমস্তু নেশাকারী বস্তু সবই খবীস খারাপ দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। ধুমপান করা, তা ক্রয়-বিক্রয় করা মদের মতই অবৈধ। যে ব্যক্তি তা পান করে বা তার ব্যবসা করে, তার উপর ওয়াজিব হলঃ অতি শীঘ্র তাওবাহ করা এবং মহান আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসা। অতীতের কৃত কর্মের উপর লজ্জিত হওয়া, তা পুনরায় না করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ গ্রহণ করেন। এরশাদ হচ্ছেঃ
وتوبواإلىاللهجميعاأيهاالمؤمنونلعلكمتفلحون
“আর তোমরা আল্লহর নিকট তাওবাহ কর হে মুমিনগণ! যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা আন্ নূরঃ ৩১)
তিনি আরো বলেনঃ
وإنيلغفارلمنتابوآمنوعملصالحاثماهتدى
“নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাওবাহ করে ,ঈমান আনে অতঃপর সঠিক পথে চলে।” (ত্বাহাঃ ৮২)
==================
অনুবাদক: শাইখ আখতারুল আমান।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদী আরব। 


*তামাক,বিড়ি,জর্দা,সিগারেট গুল,মদ খাওয়া কি?*

*হারাম*
ব্যাখ্যাঃ
()
তামাক, জর্দা, বিড়ি খাওয়া হারাম
তামাক, জর্দা শরীরের জন্য কত টুকু উপকারী?
নিশ্চয়ই বলবেন যে, ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নেই!
তাহলে দেখুন আল্লাহ পাক কী বলছেন!
(
يَاأَيُّهَاالَّذِينَآمَنُواكُلُوامِنْطَيِّبَاتِمَارَزَقْنَاكُمْوَاشْكُرُوالِلَّهِإِنْكُنْتُمْإِيَّاهُتَعْبُدُونَ)
[Surat Al-Baqara : 172]
অর্থঃ [হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র (স্বাস্থ্য সম্মত) বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর]
(كُلُوامِنْطَيِّبَاتِمَارَزَقْنَاكُمْوَلَاتَطْغَوْافِيهِفَيَحِلَّعَلَيْكُمْغَضَبِيۖوَمَنْيَحْلِلْعَلَيْهِغَضَبِيفَقَدْهَوَىٰ)
[Surat Ta-Ha : 81]
অর্থঃ [বলেছিঃ আমার দেয়া পবিত্র (স্বাস্থ্য সম্মত) বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে ধবংস হয়ে যায়]
এখন আল্লাহ তায়ালার ফতোয়া অনুযায়ী তামাক, জর্দা, বিড়ি,মদ ইত্যাদি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় তা হালালের বিপরীতে হারাম বস্তু বলে গণ্য হবে
()
*
মদিনার ফতোয়া বোর্ড অনুযায়ীও জর্দাকে হারাম বলা হয়েছে
*1963
সালে Al Azhar.Ummul Kura.Madina Etc সহ 30 টি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেম বোর্ড জর্দাকে হারাম ঘোষনা করে আল- কোরআনের দুটি আয়াতের ভিত্তিতে {Sura Baqarah:195} {Sura Araf:31}
.Chairman Of The Board Yusuf Al Qaradawi.
()
"
তোমরা তোমাদের নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না....."[সুরা বাকারাহ-১৯৫]
সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম”(মুসলিম হা/৩৭৩৩)
যার অধিক সেবন নেশা নিয়ে আসে তার অল্পও হারাম”(আবু দাউদ হা/৩১৯৬ তিরমিযী হা/ ১৭৮৮ ইবনু মাজাহ্ হা/ ৩৩৮৪)
আধুনিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে ধূমপান তামাক ক্যান্সারের অন্যতম কারন ধূমপান ফুসফুসকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়তামাক অধিক পরিমাণে খেলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা পাগল হয়ে যায়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এবং তামাক একটি নেশা জাতীয় দ্রব্যযখন আধুনিক গবেষণায় তামাক সিগারেটের এরূপ ক্ষতিকর দিক পাওয়া গেল তখন ফতোয়াও পরিবর্তন হয়ে গেলএসকল ক্ষতিকর বিষয়ের কারনে ধূমপান, তামাক, জর্দা হারাম সাব্যস্ত হয়ে গেছে
যে হুজুর এগুলোকে মাকরুহ বলছেন তিনি কি কম বুঝেন..?-----------------------------------------------------------এটা একটা গুরুত্তপুর্ন প্রশ্ন
উপরের আলোচনা যাচাই করে আপনিই স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে এখনও ধূমপানকে মাকরুহ বল আহুজুর কি আসলেই কম বুঝেন না ভাল বুঝেনবিভ্রান্তিকারী হুজুররাই ইসলামের জন্য অন্যতম ক্ষতির কারন এবং অজ্ঞরা নিজের অজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও যখন ফতোয়া দিয়ে বেড়ায় এবং আসল সঠিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখন অজ্ঞ মানুষরাই বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হয়সচেতন আলেম সচেতন মুসলিম কখনও বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হয় না'তোমরা যদি না জান, তাহ'লে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর' -সুরা নাহল ৪৩ওইসকল ভ্রান্ত হুজুর অজ্ঞের মতই পুর্বের বিধানে স্থির রয়ে বিভ্রান্ত রয়েছে পুর্বে মাকরুহ ফতোয়াদেয়া হয়েছিল ''দুর্গন্ধের'' কারনে তখন ক্ষতিকর বিষয়গুলো আবিষ্কৃত হয় নি সে জন্যকিন্তু বিজ্ঞ জ্ঞানী আলেমরা সচেতন তারা এটা জেনেছেন যে ধূমপান তামাক জর্দা শুধু দুর্গন্ধেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এগুলো ভয়ংকর ক্ষতিকর প্রাণ নাশীযার কারনে তাঁরা ফতোয়াকে মাকরুহ থেকে উন্নীত করে ''হারাম'' পর্যায়ে নিয়ে এসেছেনঅতএব আমাদের সচেতন হতে হবে এবং নিজেদেরও কিছু জানতে হবে কোন হুজুরেরই অন্ধ অনুসরণ করা যাবে নাএকাধিক হুজুরের কাছে প্রশ্ন করে তা যাচাই করে নিতে হবে এবং প্রত্যেক ফতোয়ার পিছনে মূল দলিল কি তা যাচাই করতে হবে প্রত্যেক ফতোয়ার পিছনেই কুরআন হাদিসের দলিল ইসলামে বাধ্যতামূলকআশা করি ধূমপান, তামাক জর্দা বিষয়ে বিভ্রান্তি কাটতে এই লেখাটি অনেকের সহায় হবেআর এটা বাস্তবতা কিছু মানুষ বিভ্রান্তিতেই নিমজ্জিত থাকবেই
()
***
কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত জায়শান থেকে এক ব্যক্তি আসলো জায়শান ইয়েমেনের একটি এলাকা এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের এলাকায় তারা শস্য দ্বারা তৈরি মিযর নামক যে শরাব পান করে, সে সমন্ধে জিজ্ঞাসা করল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা কি নেশা সৃষ্টি করে? সে বললো, হ্যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই হারাম নিশ্চয়ই, আল্লাহ তা-আলার ওয়াদা, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় বস্তু পান করবে, তাকে তিনিতীনাতূল খাবালপান করিয়ে ছাড়বেন লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! “তীনাতুল খাবালকি? তিনি বললেন, দোযখবাসীদের ঘাম বা দোযখবাসীদের প্রস্রাব-পায়খানা
(
সহীহ্ মুসলিমঃ-৫০৪৭)
**ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম মুহাম্মদ ইবনুূু আহমাদ ইবনুূু আবূ খালাফ (রহঃ) আবূ বুরদা তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মুআয (রাঃ)-কে ইয়েমেনে পাঠালেন এবং বললেনঃ তোমরা মানুষকে (দ্বীনের) দাওয়াত দেবে, সুসংবাদ দেবে, কাউকে তাড়িয়ে দেবে না সহজ করবে, কঠিন করবে না তিনি বলেনঃ অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইয়েমেনে আমরা দুধরনের শরাব প্রস্তুত করি, আপনি সে সমন্ধে আমাদেরকে অবহিত করুন এক, “আলবিতযা মধু পাকিয়ে গাঢ় করে তৈরি করা হয়; দুই, “আন-মিরযযা যব পাকিয়ে গাঢ় করে প্রস্তুত করা হয় বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অল্প শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা পবিত্রতার সাথে প্রকাশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তিনি বলেনঃ তিনি প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু যা সালাত থেকে বিমুখ করে, তাই হারাম করেছেন
(
সহীহ্ মুসলিমঃ- ৫০৪৬)
*
*“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম [বুখারী, হাদিস: ৫৫৮৫] তিনি আরও বলেন,
«
كُلُّمُسْكِرٍخَمْرٌ،وَكُلُّمُسْكِرٍحَرَامٌ،وَمَنْشَرِبَالْخَمْرَفِيالدُّنْيَافَمَاتَوَهُوَيُدْمِنُهَالَمْيَتُبْ،لَمْيَشْرَبْهَافِيالْآخِرَةِ» رواهمسلم.
নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, অতপর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় এবং সে তাওবা না করে, আখিরাতে সে মদ পান করা হতে বঞ্চিত হবে [মুসলিম, হাদিস: ২০০৩]
*
* মাদক নেশাজাত দ্রব্যের বিস্তার কিয়ামতের আলামত আনাস রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল () বলেন,
إنمنأشراطالساعة: أنيرفعالعلمويثبتالجهل،ويُشربالخمر،ويظهرالزنارواهالبخاريومسلم،
কিয়ামতের আলামতসমূহের কতক আলামত হল, দুনিয়া থেকে ইলম তুলে নেয়া হবে, অজ্ঞতা-নিরক্ষরতা-প্রতিস্থাপিত হবে, মদ্য পান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে [বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৮০, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১] অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে মানুষের মধ্যে মদ্যপান নেশা গ্রহণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে যেমনটি অপর একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল () বলেন, ويكثرشربالخمرএবং মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে [বুখারি, হাদিস: ৫২৩১]
** রাসূল () বলেন,
«
كلمسكرخمر،وكلمسكرحرام»
নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম” [মুসলিম, হাদিস: ৫০০৫]
[জাযাকাল্লাহ খায়েরান ]
Bottom of Form

মদ বা মাদক প্রসঙ্গে আরো কিছু তথ্য
১।হযরত ইবন উমর (রা) হতে বর্ণত। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা লানত করেন (১)মদের উপর,(২) মদ্যপায়ীর উপর,(৩) মদ পরিবেশনকারীর উপর,(৪) ক্রয়কারীর উপর,(৫) বিক্রয়কারীর উপর(৬) প্রস্তুতকারীর উপর,(৭) যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তার উপর,(৮)বহনকারীর উপর এবং(৯)যার জন্য বহন করে আনা হয় তার উপর ।(আবু দাউদ)
২। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন: নিশ্চয়ই নেশা জাতীয় পানীয় বস্তু মুমিনদের সকলের জন্যই হারাম।(কানযুল উম্মাল, ৫ম খন্ড)
৩।রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন: এ উম্মত যখন মদপান করবে,গায়িকাদের দ্বারা গান করাবে এবং বাদ্য যন্ত্র বাজাবে তখন তাদের মধ্যে ভূমিকম্প, প্রস্তুর বৃষ্টি এবং আকৃতি বিকৃত হওয়া সংঘটিত হবে।(কানযুল উম্মাল, ৫ম খন্ড)
৪।রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন:  তোমরা সর্বপ্রকার মাদক পরিহার করবে। কেননা, তা হচ্ছে সমস্ত পাপের উৎস।(কানযুল উম্মাল, ৫ম খন্ড)
৫।রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন: তিন ব্যক্তির উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।(১) মাদকাসক্ত ব্যক্তি(২) মাতা পিতার অবাধ্য সন্তান (৩) দাইউস-যে তার পরিবারে যিনা/ব্যভিচার জাতীয় পাপকর্ম জারী রাখে।(মিশকাত)
৬।রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন: তোমরা মদখোর ব্যক্তিকে সালাম করবে না।
ফ্রাঞ্চের জনৈক বিশিষ্ট পন্ডিত হেনরী তাঁ গ্রন্থ “ খাওয়াতির মাওয়ানিহ ফিল ইসলাম” এ লিখেছেন,“ প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য এই মদই ছিল অব্যর্থ তলোয়ার। আমরা আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্ত আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় নি।ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলছে।এরা যদি আমাদের এ উপঢৌকন গ্রহণ করে নিতো; যে ভাবেই তাদের একটি বিশ্বাস বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠী গ্রহণ করে নিয়েছে তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে যেত।আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত মদের প্রবাহ বইছে,তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গেছে যে, তারা তাদের মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।
(সূত্র: অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল। প্রকাশক-ইসলামিক  ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল-মে ২০০৬।২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠিত হওয়ার পর উক্ত ‘অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল’ ও ‘ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইন’ নামক বইসহ অনুরুপ  ইসলামি বইগুলো শেখ হাসিনা সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে ।ইসলামিক  ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ এই বইগুলো আর পাওয়া যায় না। ফলে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে মুসলমানরা আজ বঞ্চিত।মহাপরিচালক মুরতাদ শামীম আফজালের নির্দেশনায় মসজিদের ইমামসহ মুসল্লিরা আজ ইসলাম শিক্ষার পরিবর্তে শিখছে নাচ,গান ও অশ্লীলতা।)

কোরআন ও হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, মদ বা মাদক এমনকি তামাক, জর্দা, বিড়ি খাওয়াও হারাম।
বাংলাদেশ শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমান বিশিষ্ট রাষ্ট্র।যাঁরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন তাঁরা বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক গর্ব করেন। আমরা তাঁদের সন্তান হয়ে আমরাও গর্বিত।কিন্তু মুসলমান হয়ে কোরআনের আইন মানব না এটা হতে দেয়া যাবে না।
উল্লেখিত হারাম ও অনৈসলামিক অশ্লীল কর্মকান্ডগুলোর জনক এদেশেরই নামধারী রাজনৈতিক মুসলিম নেতৃত্ববৃন্দ।যারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসে একের পর এক কোরআন বিরোধী আইন পাশ করে যাচ্ছে।এই সব নেতারা যেমন আল্লাহদ্রোহী তেমনি যারা তাদেরকে ভোট দেয় তারাও আল্লাহদ্রোহী।
অনৈসলামিক দলের নেতা কর্মী ও সমর্থকরানিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করলেও মূলত এরা মদ,জুয়া,লটারী,ভাগ্য গণনা, সুদ, ঘুষ, যিনা/ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি, অপহরন, খুন, গুম, চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী সংক্রান্ত কোরআন ও হাদিস মানে না। আপনি প্রকৃত ইমানদার মুসলমান ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যখন এই সব দলের কোন প্রতীকে সিল মারেন,তখনই প্রমাণিত হয় যে, আপনি কোরআন ও হাদিসের বিপক্ষে চলে গেলেন। অর্থাৎ আপনি আ্ল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর বিরুদ্ধাচারনকারী এক জন লোক।কারন আপনার ভোটে নির্বাচিত হয়ে ঐসব নেতারা সংসদে বসে উল্লেখিত হারাম জিনিসের হালাল করার আইন পাশ করবে। যার দায়ী আপনি। এ কারনে আপনি মুসলমান হয়েও আপনার কোন আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
বাংলাদেশে আনেক পীর/আউলিয়া আছে।অনেকে সারা জীবন তাবলিগ জামায়াত করে সময় কাটায়। এই সব লোকেরা অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ করে না।ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করার কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এদের নেই। এরা আবার অনৈসলামিক দলকে ভোটও দেয়।কিন্তু এদের আমল কি আল্লাহর নিকট কবুল হবে?
চরমোনাইয়ের পীর বাস্তব জিনিসটা উপলব্ধি করতে পেরে পীরত্বের পাশাপাশি ইসলামি দল গঠন করেছেন। কারন ইসলামি রাষ্ট্র ব্যতীত ইসলাম পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়। আওয়ামী সরকারের আমলে তা হাড়ে হাড়ে সবাই দেখছে ও বুঝতে পারছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাস্যকর প্রচারনা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর একদিকে মাদক উৎপাদন,বিক্রি ও খাওয়ার লাইসেন্স দিচ্ছে অন্য দিকে প্রতিবছর এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে দিন ব্যাপী সভা সেমিনার মানববন্ধন করে সময় কাটিয়ে দেয়। বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি টক শোতে মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। ইসলামি জলসাতেও ওয়াজকারীরা কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে আলোচনা করে থাকে। কিন্তু এর কোন প্রতিকার বা প্রতিরোধ হয়েছে কি?
আসলে কুয়ার মধ্যে মৃত বিড়াল রেখে বালতি বালতি পানি তুললে যেমন কুয়ার পানি পরিস্কার হবে না, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে আইন করে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ না করলে সমাজ ও রাষ্ট্রও শুদ্ধ হবে না। এ জন্য চাই ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা।
আমাদের করণীয়ঃ
বর্তমান বিশ্বের  প্রতিটি রাষ্ট্রে ভোট ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এজিদি মুসলমানদের রাজত্ব রেখে শুধু সভা-সমাবেশ,সেমিনার টক-শো করে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড দূর করা কখনই সম্ভব নয়। এ জন্য সাধারন মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে ইসলামি দলকে সমর্থন করা এবং ভোট দিযে নির্বাচিত করা।
অনৈসলামিক দলের নেতা কর্মী ও সমর্থকদের সাথে সঙ্গ দেয়া নিষেধঃ
কিতাবে তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যান হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসবে না। অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হবে।(সুরা নিসাঃ১৪০)

ইসলামের রাজনীতি করা বা ইসলামি দলকে সমর্থন বা ভোট না দেয়ার পরিনতিঃ
অনৈসলামিক দলের নেতা,কর্মী ও সমর্থকরা যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে তারা সাধারনত ইসলামের নামাজ,রোজা ও কিছু দোয়া দরুদ পড়তে দেখা যায়।এরা মদ,জুয়া,লটারী,ভাগ্য গণনা, সুদ, ঘুষ, যিনা/ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি, অপহরন, খুন, গুম, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী,সংবিধান, বিচার ও আইন সংক্রান্ত এরা মানে না। এমনকি বিশ্বাসও করে না।এজিদও মুসলমান ছিল।তারাও রাজ্য শাসন করতো। এরাও নামাজ রোজা পালন করতো।কিন্তু এরা কোরআনের শাসন পদ্ধতি মানতো না।বর্তমান সরকারের শাসন পদ্ধতি আর এজিদের শাসন পদ্ধতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।যেহেতু এই সব নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা কোরআন ও হাদিস পুরোপুরি মানে না ও ‍বিশ্বাসও করে না, তাই এদের ঐসব আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।যেমন শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে প্রায়ই বলে থাকেন যে, তিনি নাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, নির্বাচনের আগে মাথায় পট্টি দেন, হোতে তসবিহ নিয়ে ঘোরেন অথচ কোরআন ও হাদিসের কোন আইন মানেন না।মানব রচিত আইনে দেশ শাসন করেন।
আসুন এদের পরিনতি কোরআন ও হাদিস হতে জেনে নেইঃ
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন্ কোন্ লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক  যারা ইহ কালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না।তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতিদানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।(কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
২। যারা তাঁর (রাসুল সঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহা বিপদগ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (নূর-৬৩)
৩। আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন করবে,যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান করতে হবে।(বুখারী ও মুসলিম)
৪। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন।(কোরআন-৪:১১৫)
৫।“ হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
৬। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি কোরআনের  নির্দেশ  অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ  অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
৭।“ তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে বে-খবর নন।(বাকারা-৮৫)
৮।“ আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট
আসবে।এমন কি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে চিনতে পারবো। এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবারপূর্বেই তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ ছেড়ে অন্য) কতো রকম  তরিকা ও অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো।(বুখারী)
৯। যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন ( বা আইন বা মত) অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
অতএব সমাজ ও রাষ্ট্র হতে সকল প্রকার পাপাকার্য, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা দূর করতে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের বিকল্প কিছু নেই।নিজেদের ইমান আমল ঠিক রাখতে, ইহকাল ও পরকালে নাজাত পেতে মানুষের তৈরী আইনী পথ ছেড়ে কোরআনের পথে চলি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে চলার হেদায়েত দান করুন। আমিন।










No comments:

Post a Comment

ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা লেখকঃ মাওলানা মোঃ শিহাব,এম এ, ইসলামিক ...