(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা
লেখকঃ মাওলানা
মোঃ শিহাব,এম এ, ইসলামিক স্টাডিজ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)
প্রতিনিয়ত
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষের ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় কিছু না কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে।
মানুষের বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি থাকা সত্বেও শয়তান যেহেতু সব সময় মানুষের পিছনে লেগে থাকে
তাই অনেক সময় শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ অনেক অপরাধ করে থাকে। মানুষ যাতে সহজ সরল
সঠিক পথে চলতে পারে সে জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবি রাসুল প্রেরণসহ আসমানি কিতাব
নাযিল করে দিয়েছেন। নবি রাসুলগণ জীবিত থাকাবস্থায় তাঁরা জাতিকে হাতে কলমে অর্থাৎ বাস্তবে
দেখিয়ে দিতেন কিভাবে অন্যায় থেকে বিরত থাকতে হয় আর কিভাবে সৎপথে চলতে হয়। তাঁরা আজ
জীবিত নেই কিন্তু রেখে গেছেন আসমানী কিতাব। আমরা যেহেতু শেষ নবি হযরত মুহম্মদ সা: এর
উম্মত তাই আমরা মুসলমান হিসেবে পবিত্র আল কোরআন ও হাদিসসমূহ অনুসরণ করব এবং মেনে চলব।
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল আইনের উৎস হচ্ছে আল কোরআন। নবি করিম সা: একদিকে
যেমন ছিলেন ধর্ম প্রচারক আবার অন্য দিকে ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক। একটা জনকল্যাণমুখী
রাষ্ট্র কিভাবে গঠন করতে হয় তার নমূনা বা দৃষ্টান্ত নবি সা: এই পৃথিবীর মানুষকে দেখিয়ে
দিয়েছেন। আল কোরআনের চেয়ে উত্তম সংবিধান বা আইন শাস্ত্র পৃথিবীতে আর নেই।
রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনায় মুসলমানদের সংবিধান হবে আল কোরআনঃ
১।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি পূর্ণ কোরআন শরীফ পরম সত্যতার সাথে এ জন্যেই
নাযিল করেছি যে, তুমি সে অনুযায়ী মানুষের উপর আল্লাহর প্রদর্শত পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা
করবে এবং বিচার ফায়সালা করবে।(কোরআনকে যারা এ কাজে ব্যবহার করতে চায় নি তারা এ মহান
আমানতের খিয়ানত করে) তুমি এ খিয়ানতকারীদের সাহায্য পক্ষ সমর্থনকারী হয়োনা। (নিসা:১০৫)
২|
আল্লাহ বলেন, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের মধ্যে ফায়সালা করো, তাদের মনের খেয়াল খুশী
ও ধারনা বাসনা অনুসরন করো না।( মায়েদা:৪৯)
৩।
আল্লাহ বলেন, তুমি কি জান না যে, আকাশ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর। (বাকারাঃ১০৭)
এতদ
বিষয়ে আরো অনেক কোরআনের আয়াত রয়েছে।
৪।
নবি (সাঃ) বলেন, আল্লাহর কোরআন- আল্লাহর দেয়া বিধানই বাঁচবার একমাত্র উপায়। তাতে অতীতের
জাতিগুলোর ইতিহাস আছে, ভবিষ্যতের মানব বংশের
অবস্থা ও ঘটনাবলী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এবং বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে তোমাদের
পারস্পরিক বিষয় সম্পর্কীয় রাষ্ট্রীয় আইন কানুনও তাতে রয়েছে। বস্তুতঃ উহা এক চূড়ান্ত
বিধান, উহা কোন বাজে জিনিস নহে।(তিরমিজি)
৫।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই বিধান অনুসারে জীবন যাপন করবে, সে উহার প্রতিফল লাভ
করবে।যে উহার অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তার শাসন সুবিচার পূর্ণ হবে এবং যে উহাকে
দৃঢ় রুপে আকড়িয়ে ধরবে সে সঠিক এবং সত্যিকার কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারবে।
পরিবার,
সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আইনের উৎস হচ্ছে চারটি। যথা: কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস।
উল্লেখিত
চারটি পন্থায় মুসলিম নেতৃবৃন্দকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র শাসন করতে হবে। কোনো মানবরচিত
আইনে রাষ্ট্র শাসন করা যাবে না। যে সকল নামধারী মুসলমান নেতৃবৃন্দ কোরআনের আইন বাদ
দিয়ে মানুষের তৈরী আইন অনুসরণ করে ও বাস্তবায়ন করে এবং তাদেরকে যারা সমর্থন করে বা
মানব রচিত আইন বা্স্তবায়নে ভোট দেয় তারা সকলেই জাহান্নামী, যদিও তারা নামাজ পড়ে, রোজা
রাখে।
আমরা
এখন আলোচনা করব, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধের ইসলামি আইনে ও মানবরচিত
আইনে শাস্তি সম্পর্কে। মানবরচিত আইনকে সমর্থন দিলে মুসলমান কিভাবে বেইমান, মোনাফেক,
নাস্তিক ও মুরতাদ তথা আল্লাহদ্রোহী হয়ে যায় তা জানতে পারবেন।যদিও এইসব মুসলিম সমর্থক
ও নেতাগণ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দান খয়রাত করে, মাথায় টুপি রাখে ও হজ্জ পালন করে।
কোরআন হাদিস
বিশ্লেষণ করলে জানা যায়, প্রত্যেকটি অপরাধের তিনটি করে দিক আছে।
১।
প্রথমত অপরাধ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এরপরও
যদি কেহ অপরাধ করেই ফেলে তাহলে তার শাস্তি হচ্ছে ২টি। যথা:
২।
ইহকালীন বা শরিয়াহ আইনে শাস্তি এবং
৩।
পরকালীন শাস্তি।
পরকালীন
শাস্তি থেকে নিস্তার পেতে ইসলামের বিধান হচ্ছে, সেই অপরাধ দ্বিতীয়বার আর কোনো দিন সে
করবে না, এ মর্মে খুবই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর
নিকট তওবা করা। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার মনের গতি বিধি লক্ষ্য করে ইচ্ছে করলে মাফ করেও
দিতে পারেন।
এখন
কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের অনৈসলামিক দলের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রকার মাওলানা, মুফতি,
মুহাদ্দিস, মসজিদের ইমাম- খতিব, কথিত পির-আউলিয়া ও ইসলামিক বক্তা কিংবা বিশিষ্ট ইসলামি
চিন্তাবিদগণ তাদের বক্তব্যে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সংঘটিত হওয়া অপরাধগুলোর পরকালীন
ও নিষেধমূলক কোরআন হাদিসগুলোই বলেন কিন্তু শরিয়াহ আইনে
ইহকালীন শাস্তির কথা কাউকে বলতে শোনা যায় না। অনৈসলামিক দলের সকল মুসলিম নেতা
কর্মী ও মাওলানারা যদি
শরিয়াহ
আইনমূলক কোরআন-হাদিসগুলো বাস্তবায়নের জন্যে কথা বলতেন বা দাবী করতেন তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে
অপরাধ বলতে কিছু থাকতো না। আসলে অনৈসলামিক
দলের সকল মুসলিম নেতা কর্মী ও মাওলানারা কোরআনের কিছু আয়াত মানে আর কিছু আয়াত মানে
না। এজন্য কিয়ামতে এদেরকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করা হবে।
আল্লাহ
বলেন:
১)
“ তোমরাকি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি
তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের
দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো
তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে বে-খবর নন “। (বাকারা-৮৫)
২)
“হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোকনিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ
ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে
তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে
অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের
সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না।তারা যে কুফরী
করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতিদানে তারা জাহান্নামের
শাস্তি ভোগ করবে।” (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
৩।
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল
করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান,
আয়াত : ৮৫)
৪।
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ
করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার
আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫)
আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল,
সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো
স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীাতর দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে
জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে
আহমদ, তিরমিজি)
ইসলামি
আইন বনাম মানব রচিত আইনেসুনিদিষ্ট কতিপয় অপরাধের শাস্তির বিধানঃ
হদ্দ
ইসলামি আইনের একটি পরিভাষা, যা সুনিদিষ্ট কতিপয় অপরাধ ও সেগুলোর জন্য নির্ধারিত শাস্তিকে
বুঝায়।
আল্লাহর
অধিকার লংঘনের দায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যে শাস্তি নির্দিষ্ট
করে দেওয়া হয়েছে, শরিয়তের পরিভাষায় তাকে হদ্দ বলে।
একটি
রাষ্ট্র বা সমাজ কিভাবে চলবে এবং কেহ অপরাধ করলে তার ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি কী হবে
তার সব নিয়ম কানুন বা আইন কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন। নবি করিম (সাঃ) একজন সফল
রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে কোরআনের আইন সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে
গেছেন, যেনো আমরা মুসলমানরা সেই অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারি।
ইসলামি আইনে হদ্দের
প্রকারভেদঃ
শাস্তির অর্থে
হদ্দ কয়েক প্রকার। যেমন:
১।
মৃত্যুদন্ড
২।
বেত্রাঘাত করা
৩।
শূলীবিদ্দ করা
৪।
তরবারির দ্বারা শিরচ্ছেদ করা
৫।
পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা
যেমনঃ
যিনা বা ধর্ষণের অপরাধে প্রদত্ত মৃত্যুদন্ড পাথর নিক্ষেপে, ডাকাতির অপরাধে মৃত্যুদন্ড
শূলীবিদ্দ করে বা তরবারির আঘাতে এবং ধর্মত্যাগ এর অপরাধে মৃত্যুদন্ড তরবারির আঘাতে
শিরচ্ছেদ করে কার্যকর করা হয়। হাত কাটার শাস্তি কেবল চুরির অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
যিনার মিথ্যা অপবাদ আরোপের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত , অবিবাহিত যিনাকারীর শাস্তি একশ বেত্রাঘাত
এবং মদ্যপের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত। ডাকাতির অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধের ধরণ ও তীব্রতার
বিবেচনায় মৃত্যুদন্ড ব্যতীত বিপরীত দিক থেকে
হস্তপদ কর্তন ও নির্বাসন দন্ড অনুমোদন করা হয়েছে। ফকিহগণের মতে, কারাদন্ডের মাধ্যমেও
নির্বাসন দন্ড কার্যকর করা যেতে পারে।
উল্লেখিত আল্লাহর আইন বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হয়েও কার্যকর
নেই। অথচ বাংলাদেশের শাসকগণ সকলেই মুসলমান। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আল্লাহর
আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সংসদে মানব রচিত আইন পাশ করে নিয়েছে।
ইসলামি আইনে
শাস্তিযোগ্য অপরাধের প্রকারভেদঃ
(১)
যিনা বা ব্যভিচার,
(২)
যিনা এর উপর মিথ্যা অপবাদ,
(৩)
চুরি,
(৪)
ডাকাতি,
(৫)
মাদক গ্রহণ,
(৬)
ইসলাম ধর্ম ত্যাগ,
(৭)
ইসলামি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
(বাদায়ে
উস সানায়ে, ৭ম খন্ড)
(তথ্য
সূত্রঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত- অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল)
উল্রেখিত
শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছাড়াও সমাজ ও রাষ্ট্রে আরো অনেক অপরাধ আছে, যেগুলোর শাস্তি ইহকালীন
ও পরকালীন কী হবে তা কোরআন ও হাদিসে তথা ইসলামি আইন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। যেমন, কাউকে
ইচ্ছেকৃতভাবে খুন করা, মানব পাচার, লটারী ও জুয়া খেলা, বেপর্দায় চলাফেরা, সমাজ বা রাষ্ট্রে
অশ্লীলতা বা বেহায়াপনার প্রচলন করা, বিপর্যয় সৃষ্টি করা, সুদ ঘুষের প্রচলন করা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা, চাঁদাবাজি করা বা টেন্ডারবাজি
করা, ওজনে কম দেয়া, ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমে বাঁধা প্রদান করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজ খুন বা
হত্যা সম্পর্কে ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধান নিয়ে আলোচনা করবো।প্রতিটি
অপরাধের শাস্তি ইসলাম ও মানব রচিত আইন অনুযায়ী জানতে পারলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে,
আপনি আসলে আল্লাহর পক্ষে না শয়তানদের পক্ষে।
মানব হত্যা সম্পর্কে ইসলাম তথা আল্লাহ তায়ালা
ও নবি করিম (সঃ) কী বলেছেন,তার শাস্তি কী হবে কিংবা বিচারিক কার্যক্রম কি হবে তার বিধান
বা আইন তৈরি করা আছে।নবি করিম (সাঃ) একদিকে যেমন ছিলেন ধর্ম প্রচারক অন্য দিকে তেমনি
ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক, একজন সফল রাজনীতিবীদ।তিনিই একমাত্র একজন সফল রাষ্ট্রপতি
যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সকল আইন কানুন তৈরি করে রেখে গেছেন। আমরা মুসলমান, আমরা নবি
করিম (সাঃ) এর অনুসারি। আমরা তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল। তাঁর তৈরিকৃত সকল আইন কানুন বা
নিয়ম নীতি বা আদর্শ আমরা মেনে চলব। অন্য কোনো ব্যক্তির আদর্শ আমরা মানবো না। এখন আসি
খুন বা হত্যা সম্পর্কে ইসলাম কি আইন তৈরী করেছে আর বাংলাদেশের মুসলিম রাজনীতিবীদরা
সংসদে বসে কি আইন তৈরী করেছে, যাদেরকে আমরা ভোট দিয়ে সংসদে প্রেরণ করেছি, সে সম্পর্কে
জেনে নেই।
মহান
আল্লাহ তাআলার নিকট শিরকের পরে সবচেয়ে গর্হিত ও মন্দকাজ হত্যা বা কতল। পৃথিবীর ইতিহাসে
হত্যাই প্রথম পাপ। হাবীল ও কাবীলের ঘটনা এক্ষেত্রে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। হত্যা বলতে কোন
কিছুর আঘাতে, অস্ত্রের সাহায্যে, পাথর নিক্ষেপে, বিষপ্রয়োগে বা অন্য কোন উপায়ে মানুষের
প্রাণনাশ করাকে বুঝায়। মানব হত্যা একটি মানবতা বিধ্বংসী জঘন্যতম অপরাধ। যখন কেউ তার
ভাইয়ের বিরুদ্ধে এ অপরাধ করল সে যেন গোটা মানবতার বিরুদ্ধে এ অপরাধ করল। আল্লাহ তাআলা
বলেন- ‘একজন মানুষের জীবন বাঁচানো যেমন গোটা মানব জাতির জীবন বাঁচানোর সমতুল্য, ঠিক
তেমনি কোন মানুষের জীবন সংহার করা গোটামানব জাতিকে ধ্বংস করার সমতুল্য।’ [আল-কুরআন-
৫:৩২]
উপরোক্ত
আয়াতে কারিমার তাৎপর্য পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, হত্যা কতটা মন্দ, গর্হিত, বিবেক
বর্জিত ও জঘন্য। যদিও প্রাণনাশের বিনিময়ে দিয়াত বা রক্তমূল্যের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের
জন্য ইসলাম সংশোধনের ব্যবস্থা রেখেছে, কিংবা কিসাসের মাধ্যমে প্রতিশোধের সুযোগ রয়েছে,
তা সত্ত্বেও জীবনের বা প্রাণের মূল্য কি আর দেওয়া হয়? রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন,
“কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চাইতে দুনিয়াটা ধ্বংস হয়ে যাওয়াই আল্লাহর
নিকট অধিকতর সহজ।” মুমিনের জীবনের মূল্য আল্লাহর নিকট অত্যাধিক। এ পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদের
চেয়ে আল্লাহর নিকট মুমিনের মূল্য বেশি। এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সা. এর উপরোক্ত বানীটিই
প্রণিধান যোগ্য। যে জিনিসের মূল্য বেশি তার হারানোর বেদনাও ততবেশি। আর অন্যায়ভাবে কেউ
যদি কারো প্রাণনাশ করে তবে তার জন্য রয়েছে কড়া শাস্তির হুশিয়ারি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
“যে
কোন লোক কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম। সে চিরকালই
সেখানে থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হন এবং তার প্রতি অভিশাপ করেন। উপরন্তু তিনি
তার জন্য কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [আল কুরআন- ৪:৯৩]
হত্যার
ধরণ ও প্রকৃতির আলোকে ইসলামী আইনে হত্যাকে পাঁচ প্রকারে বিভক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য
ও ধরণের আলোকে হত্যার প্রকারভেদ সমূহ নিম্নরূপ :
১.
ইচ্ছাকৃত হত্যা
২.
প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা
৩.
ভুলবশত হত্যা
৪.
প্রায় ভুলবশত হত্যা
৫.
কারণবশত হত্যা
১.ইচ্ছাকৃত
হত্যা : কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায়
ও সজ্ঞানে যখন এমন কাজ করে যার দ্বারা অন্য ব্যক্তির পাণনাশ হয়, তখন তার সে কাজকে
‘ইচ্ছাকৃত হত্যা’ বলা হয় এবং এর জন্য কিসাসের বিধান প্রযোজ্য হবে। এখানে বলে রাখা দরকার
যে, কিসাস আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পদাংক অনুসরণ করা, সমান বদলা গ্রহণ করা, সাদৃশ্য
বজায় রাখা, অনুরূপ করা। ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় অপরাধীকে তার অপরাধ সদৃশ শাস্তি প্রদানকে
কিসাস বলা হয়। যেমন হত্যার বদলায় হত্যা করা, যখমের বদলায় যখম করা। কিসাস সম্পর্কে আল্লাহর
ঘোষণা, “হে মুমিগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে। স্বাধীন
ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের পরিবর্তে ক্রীতদাস, এবং নারীর পরিবর্তে
নারী। (নিহত ব্যাক্তির) তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে ন্যায়নীতির অনুসরণ
করা ও সততার সাথে তার দিয়ত আদায় করা বিধেয়। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও রহমত
বিশেষ।” [আল কুরআন- ২:১৭৮]
আরো বলা হচ্ছে, “তাদের জন্য আমরা তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখম সমূহের বদলে অনুরূপ যখন। আর যে ক্ষমা করে দেয়, তা তার পাপের জন্য কাফফারা হবে।” [আল কুরআন- ৫:৩৪]
আরো বলা হচ্ছে, “তাদের জন্য আমরা তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখম সমূহের বদলে অনুরূপ যখন। আর যে ক্ষমা করে দেয়, তা তার পাপের জন্য কাফফারা হবে।” [আল কুরআন- ৫:৩৪]
কুরআনের
অন্য জায়গায় রয়েছে, “কেউ অন্যায় ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি প্রতিকারের
অধিকার দিয়েছি। কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত
হয়েছে।” [আল কুরআন- ১৭:৩৩]
রাসুলুল্লাহ
সা.-ও অনুরূপ কথা বলেছেন, “যার কোন ব্যক্তি নিহত হবে, তার দু’টি ইখতিয়ার রয়েছে। সে
ইচ্ছা করলে রক্তমূল্যও নিতে পারবে, ইচ্ছা করলে কিসাসও গ্রহণ করতে পারবে।” [সহিহ বুখারি-কিতাবুত
দিয়াত : হা. ৬৪৮৬, আবু দাউদ-কিতাবুদ দিয়াত : হা. ৪৫০৫]
২. প্রায় ইচ্ছামূলক
হত্যা : যে ধরণের বস্তু
দ্বারা সাধারণত হত্যা সংঘটিত হয় না; সেই ধরণের কোন বস্তুর দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা
করা হলে সে হত্যাকে ‘প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা’ বলা হয় এবং এর জন্য দিয়াতের বিধান প্রযোজ্য
হবে।
ইমাম
আবু হানিফা রহ. এর মতে, দেহ কাটেনা বা দেহে বিদ্ধ হয় না- এধরণের কোন বস্তু দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে
হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা’ বলে। যেমন সাম্প্রতিককালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে
বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ড. তাহের হত্যা মামলা। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসুফ ও
মুহাম্মদ রহ. এর মতে যে সব বস্তু দ্বারা সাধারণত হত্যা করা যায় না- এধরণের বস্তু (যেমন-
ক্ষুদ্র পাথর, ক্ষুদ্র লাঠি, চাবুক, কলম ইত্যাদি) দ্বারা হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘প্রায়
ইচ্ছামূলক হত্যা’ বলে। এ প্রকারের হত্যার ক্ষেত্রে যেহেতু হত্যাকারীর হত্যা করার ইচ্ছা
ছিল কিনাÑ এব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, তাই এধরণের হত্যার বেলায় কিসাসের বিধান
প্রযোজ্য হবে না। তবে যদি হত্যাকারীর ইচ্ছা, (গধৎং জবধ) বা দুষ্ট মানসিকতা প্রমাণিত
হয় তবে কিসাসের বিধান প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে বা দিয়াতের কঠোর বিধান
প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে দিয়াত বাধ্যতামূলক হবার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে। কাফফারার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু অগ্রগণ্য মত হল কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৩. ভুলবশত
হত্যা : নিষিদ্ধ নয়, এমন
কোন কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণে ভুলবশত হত্যা সংঘটিত হলে
তাকে ‘ভুলবশত হত্যা’ বলা হয় এবং এর জন্য দিয়াত ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।
এ
ভুল কয়েকভাবে হতে পারে। ক. কর্তার ধারণার মধ্যে, খ. কাজের মধ্যে এবং গ. ধারণা ও কাজ
উভয়ের মধ্যে হতে পারে।
ক.কর্তার
ধারণায় ভুল । যেমন, শিকারী ব্যক্তি কোন মানুষকে শিকারের পশু মনে করে তার প্রতি তীর
বা গুলি নিক্ষেপ করল, পরে দেখা গেল যে, সে মানুষ, শিকারের প্রার্থী নয়। অনুরূপ ভাবে
কোন মানুষকে শত্র“ সৈন্য মনে করে তীর নিক্ষেপ করল, পরে দেখা গেল যে, সে শত্র“ সৈন্য
নয়। এক্ষেত্রে অপরাধীর কাজের মধ্যে ভুল হয়নি; কারণ সে যা মারতে চেয়েছে তাই মেরেছে;
বরং ভুল হয়েছে তার ধারণা বা অনুমানের মধ্যে।
খ.
কর্তার কাজের ভুল। যেমন, এক শিকারী একটি হরিণের প্রতি গুলি ছুড়ল; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট
হয়ে তা ঝোপের মধ্যে অন্য কোন কাজে রত মানুষের দেহে বিদ্ধ হল এবং এর ফলে সে মারা গেল।
অনুরূপভাবে শত্র“ সৈন্যকে টার্গেট করে তীর মারল বা গুলি ছুঁড়ল, কিন্তু তীর বা গুলিটি
লক্ষচ্যুত হয়ে অপর কোন ব্যক্তির উপর আঘাত করল এবং এর ফলে সে মারা গেল।
গ.
ধারণা ও কাজ। উভয়ে ভুল : যেমন- শিকারী ব্যক্তি কোন মানুষকে শিকারের পশু মনে করে তার
প্রতি তীর বা গুলি নিক্ষেপ করল; কিন্তু তা লক্ষভ্রষ্ট হয়ে অপর ব্যক্তির দেহে বিদ্ধ
হল এবং এর ফলে সে মারা গেল। এ ক্ষেত্রে সে মানুষকে শিকারের পশু মনে করে নিজের অনুমানে
ভুল করেছে এবং যার প্রতি তীর বা গুলি নিক্ষেপ করেছে তা তার পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির
শরীরে গিয়ে লাগায় সে কাজেও ভুল করেছে।
৪. প্রায় ভুলবশত
হত্যা : কোন ব্যক্তির
কোন কাজের দ্বারা হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘প্রায় ভুলবশত হত্যা’ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে অপরাধীর
কোন ধরনের সংকল্প ছাড়াই হত্যা সংঘটিত হয় বলে একে ‘প্রায় ভুলবশত হত্যা’ নামে অভিহিত
করা হয়। যেমন, কোন ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করার সময় অপর ব্যক্তির
ওপর ঘটনাক্রমে উল্টে পড়ল এবং এর ফলে ব্যক্তিটি মারা গেল। এ প্রকারের হত্যা যেহেতু একদিকে
অপরাধীর অসতর্কতার কারণেই সংঘটিত হয়েছে, তাই এটা ভুলবশত হত্যার মধ্যে গণ্য হবে এবং
এজন্য দিয়ত ওয়াজিব হবে। অপরদিকে যেহেতু অপরাধীর কর্ম ও হত্যার মধ্যে সরাসরি কারণ এর
সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে তাই এজন্য কাফফারা ও ওয়াজিব হবে।
[আসসাপখসী,
আল মাবসুত : খ. ২৬, পৃ. ৬৬, ১০৪]
৫. কারণবশত
হত্যা : কোন ব্যক্তির
প্রয়োজনীয় সতর্কতার অভাব জনিত কাজের ফলে অন্য ব্যক্তির প্রাণনাশ হলে তাকে ‘কারণজনিত
হত্যা’ বলা হয়। যেমন, কোন ব্যক্তি যাতায়াতের রাস্তার পার্শ্বে গর্ত খনন করল এবং তাতে
কোন পথচারী পড়ে গিয়ে মারা গেল অথবা কেউ পথের পার্শ্বে একটি প্রকাণ্ড পাথর রাখল এবং
তার সাথে পথচারী ধাক্কা খেয়ে মারা গেল। এ প্রকারের হত্যায় অপরাধী সরাসারি হত্যাকান্ড
সংঘটিত করেনা; বরং তার দ্বারা সংঘটিত কোন কাজই হত্যাকান্ডের কারণ হয়। এখানে অপরাধী
যে কাজটি করে তা তার জন্য বৈধ; তবে তিনি তার কর্ম সম্পাদনে সীমা লংঘন করেছেন এবং অসতর্কতার
পরিচয় দিয়েছে; যার ফলে তার কর্মটি হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রকারের হত্যার মৃত্যুদণ্ড
হবে না এবং কাফফারাও ওয়াজিব হবে না। তবে দিয়াত ওয়াজিব হবে।
ইসলামী
আইনে হত্যার বদলা মৃত্যুদণ্ড ওয়াজিব ইওয়ার শর্তাবলী : হত্যার বদলা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর বা ওয়াজিব হওয়ার কতিপয় শর্ত রয়েছে। এগুলো পাওয়া গেলে হত্যার কিসাস স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড
বাধ্যতামূলক হবে। এগুলোর কয়েকটি হত্যাকারীর সাথে, আর কয়েকটি নিহত ব্যক্তির সাথে, আর
কয়েকটি মৃত্যুদণ্ড দাবীকারীদের সাথে, আর কতিপয় হত্যাকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট।
হত্যাকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.
হত্যাকারী মুকাল্লাফ (বালিগ ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন) হওয়া।
২.
হত্যাকারী মুসলিম বা ইসলামী রাষ্ট্রের স্থায়ী অমুসলিম নাগরিক হওয়া।
৩.
হত্যাকারী সন্দেহমুক্ত হত্যার অভিপ্রায় থাকা।
নিহত ব্যক্তির
সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.নিহত
ব্যক্তি হত্যাকারীর সন্তান বা অধঃস্তন ব্যক্তি না হওয়া।
২. নিহত ব্যক্তি মাসূমুদ্দাম হওয়া। সে যদি অন্য কোন অপরাধে (যেমন হত্যা, ধর্মত্যাগ ও ব্যভিচার প্রভৃতি) হত্যা দন্ডে দন্ডিত হয় কিংবা রাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী অমুসলিম (হারাবি) হয় তাহলে হত্যাকারীর মৃত্যুদন্ড হবে না।
৩.
নিহত ব্যক্তি ও হত্যাকারীর মধ্যে শ্রেণী ও অবস্থাগত পার্থক্য না থাকা।
কিসাসের দাবীদারদের
সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.কিসাসের
দাবীদার বিদ্যমান থাকা,
২.
রক্তের দাবীদারদের শারীরিক ও মানসিক পূর্ণ উপযুক্ততা থাকা।
৩.
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছদের পক্ষ থেকে কিসাসের দাবী থাকা । রাসুল সা.
বলেছেন,
“ইচ্ছাকৃত হত্যা অবশ্যই সদৃশ বদলা গ্রহণযোগ্য। তবে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছরা ক্ষমা করে
দিলে ভিন্ন কথা।” [দারুকুতনী, আস সুনান : হা. ৪৫]
৪.
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছদের সকলেই উপস্থিত থাকা ।
৫.
কিসাসের দাবীদার হত্যা কারীর সন্তান কিংবা তার অধঃস্তন ব্যক্তি না হওয়া।
হত্যাকর্মের
সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.হত্যাকান্ড
সরাসরি হওয়া।
২.
হত্যা সীমা লঙ্ঘনমূলক হওয়া।
৩.
হত্যা ইসলামী রাষ্ট্রে সংঘটিত হওয়া।
মানব রচিত আইনে হত্যার শাস্তি :
দন্ডবিধি,
১৮৬০ এর ধারা ২৯৯ থেকে ৩১১ পর্যন্ত মানব দেহ সংক্রান্ত অপরাধ সমূহ ও এর শাস্তি বর্ণিত
হয়েছে। সংক্ষেপে তা আলোকপাত করা হল।
ধারা- ২৯৯ : দন্ডনীয় নরহত্যা: যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্য
নিয়ে অথবা এমন শারীরিক ক্ষতি করে,যার ফলে সে মারা যায় অথবা তার জানা থাকে যে, উক্ত
আঘাতের ফলে মৃত্যু অবধারিত সে ব্যক্তি নরহত্যার দন্ডনীয় অপরাধ করল। যেমন-
(ক).
ক নামক ব্যক্তি ঙ নামক ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি গর্ত খুড়ল এবং এর উপরিভাগে
কিছু ঘাসের চাবড়া ফেলে রাখল যাতে সে উক্ত গর্ত লক্ষ্য না করে এবং ঐ গর্তে পতিত হয়।
ঙ নামক ব্যক্তি উক্ত গর্তে পতিত হল এবং নিহত হল। অতএব, ক নামক ব্যক্তি নরহত্যার শাস্তিযোগ্য
অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হল।
(খ). ক জানে যে, ঙ ঝোপের আড়ালে আছে যা খ জানে না। তা সত্ত্বেও সে খ কে প্ররোচিত করল যেন ঝোপের মধ্যে গুলি করে যাতে করে ঙ-র মৃত্যু ঘটে। খ গুলি ছুড়ল এবং ঙ মারা গেল। এক্ষেত্রে খ কোন অপরাধের দায়ে দোষী হবে না। কিন্তু ক নর হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে।
(খ). ক জানে যে, ঙ ঝোপের আড়ালে আছে যা খ জানে না। তা সত্ত্বেও সে খ কে প্ররোচিত করল যেন ঝোপের মধ্যে গুলি করে যাতে করে ঙ-র মৃত্যু ঘটে। খ গুলি ছুড়ল এবং ঙ মারা গেল। এক্ষেত্রে খ কোন অপরাধের দায়ে দোষী হবে না। কিন্তু ক নর হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে।
(গ).
ক একটি মুরগিকে গুলি করল হত্যা করে চুরি করার উদ্দেশ্যে কিন্তু মুরগির পরিবর্তে খ নিহত
হল। কেননা খ ঝোপের আড়ালে ছিল যা ক জানত না। যদি এখানে ক আইনবিরোধী কাজ করেছে তবুও সে
নরহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে না। কেননা খ কে হত্যা তার কোন উদ্দেশ্য ছিল না বা
তার মৃত্যু ঘটতে পারে এমন কোন কাজ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না।
ধারা- ৩০০ : খুন :
নরহত্যা
খুন হিসেবে বিবেচিত হবে যদি মৃত্যু সংঘটন করা হয় মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যেই অথবা
দ্বিতীয়ত
: শারীরিকভাবে এমন যখম করা হয় অপরাধী জানে যে, ঐ যখমে তার মৃত্যু ঘটবে। অথবা
তৃতীয়ত
: শারীরিকভাবে এমন যখম করা হয় যে যখমের ফলে স্বাভাবিক কারণ হয় মৃত্যু বা মৃত্যুর জন্য
ঐ যখমই যথেষ্টে, অথবা
চতুর্থত
: যদি যখমকারী ব্যক্তি জানে যে, এটা এমনটাই আসন্ন হুমকি স্বরূপ যে, এর ফলে অতি অবশ্যই
সকল উপায়ে মৃত্যু ঘটবে অথবা ঐ শারীরিক ক্ষতি মৃত্যু সংঘটনের জন্য এতটাই অনুকুল যে,
কোন রকম ঝুঁকি ছাড়াই মৃত্যু অবধারিত। যেমন, ক নামক ব্যক্তি ঙ- কে হত্যার উদ্দেশ্যে
গুলি করল। এর ফলে ঙ মারা গেল। ক খুন করল। অথবা ক কোনরকম কারণ ছাড়াই গোলাভর্তি কামান ছুড়ল জনতার উদ্দেশ্যে এবং তাদের
হত্যা করল। ক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত যদিও তার ইচ্ছা ছিলনা ঙ- কে হত্যা করা।
ধারা- ৩০২ :
খুনের
শাস্তি : যে ব্যক্তি খুন করবে তার শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড, অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং
সাথে জরিমানা ও হতে পারে।
ধারা- ৩০৩ :
যে
ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হওয়ার পরে খুন করে সে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারা- ৩০৪ :
ধারা- ৩০৪ :
খুন
হয়নি বা খুনের পর্যায়ে পড়েনা এমন নরহত্যার শাস্তি : যে ব্যক্তি এমন নরহত্যা করল যা
খুনের পর্যায়ে পড়ে না, সে যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডিত হবে অথবা দশ বছর পর্যন্ত সাজা
ভোগ করবে এবং সাথে জরিমানা হবে। যে ব্যক্তি দ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে সে কাজের উদ্দেশ্য
যদি মৃত্যু হয় অথবা এমন শারীরিক আঘাত যার ফলে মৃত্যু হয়, তাহলে উপরোক্ত শাস্তি। আর
যদি জেনে শুনে এমন কাজ করে যদ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয় কিন্তু এরূপ ইচ্ছা ছিল না অথবা
এমন শারীরিক ক্ষতি যার ফলে মৃত্যু সংঘটিত হয় তাহলে তিনি দশ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন
অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই প্রযোজ্য হবে।
ধারা-৩০৪ ক :
জনপথে
বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বা কোন যানে আরোহণ করে মৃত্যু সংঘটন : যে ব্যক্তি বেপরোয়া অথবা
অবহেলা করে কারো মৃত্যু ঘটায় যা দন্ডনীয় নরহত্যার পর্যায়ে পড়ে, সে পাঁচ বছর পর্যন্ত
কারাদন্ডে দন্ডিত হবে অথবা জরিমানাসহ উভয়ই হবে তার শাস্তি। আর যা দন্ডনীয় নর হত্যার
পর্যায়ে পড়ে না তার জন্য সে তিন বছর পর্যন্ত যেকোন প্রকারের (সশ্রম বা বিনাশ্রম) কারাদন্ডে
দন্ডিত হবে অথবা জরিমানা অথবা জেল-জরিমানা উভয়ই হবে। [ধারা-৩০৪ খ]
ইসলামি আইন ও মানব রচিত আইনের পার্থক্য
১.
ইসলামী আইনে হত্যার বদলা হিসাবে হত্যার বিধান নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছদের ওপর ন্যাস্ত।
২.
ইসলামী আইনে কেবল কেসাস বা অনুরূপ শাস্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে।
৩.
ইসলামী আইনে ক্ষমা করার অধিকার নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে দেয়া হয়েছে।
৪. ইসলামী আইনে স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কেও কেসাস বা দিয়ত মাফ করে দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। এটা বান্দার হক।
৪. ইসলামী আইনে স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কেও কেসাস বা দিয়ত মাফ করে দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। এটা বান্দার হক।
৫.
স্বয়ং আল্লাহও তা ক্ষমা করেন না, একমাত্র খালেছ দিলে তওবা ব্যতীত।
১.
মানব রচিত আইনে রাষ্ট্রে মানোনীত ব্যক্তির নিকট সমর্পিত।
২.
প্রচলিত আইনে খুনের বদলা খুনের বিধানের সাথে বিকল্প বিধান হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের
ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
৩.
প্রচলিত আইনে বিচারকের হাতে ন্যাস্ত।
৪. আমাদের সংবিদানের ৪৯ নং
অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত
যেকোন দন্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোন দন্ড মওকুফ, স্থগিত
বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’
তবে
লক্ষণীয় যে, প্রতিটি সরকারের আমলে আমরা দেখি রাজনৈতিক ভাবে নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক
উক্ত অনুচ্ছেদের অপব্যবহার। ফলে হত্যার অনেক দাগী আসামীও দাপটের কারণে পার পেয়ে যায়।
যে জন্য অন্যায়ভাবে হত্যার মত ঘটনা কমছে না। কারণ হিসেবে বলা যায় যে, মানব রচিত আইনে
বিকল্প ব্যবস্থায় বহু ফাঁক ফোঁকর রয়েছে এবং বহুলাংশেই তা প্রত্যক্ষ না হওয়ায় আইনের
সীমাহীন অপব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়াও দুর্বল ও চৌকুস আইনজীবীর কথার মারপ্যাচে
প্রকৃত বিষয় ঢাকা পড়ে যায়। অর্থাৎ যে পক্ষের আইনজীবী যত চতুর সেপক্ষ তত লাভবান। আর
অপরাধ বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, বড় বড় রাঘব বোয়াল বিত্তশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তাদের
ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলার রায় সুকৌশলে নিজের পক্ষে নিয়ে নেয়। দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তি
অর্থাভাবে ভাল আইনজীবী নিয়োগ করতে না পেরে ধুঁকে ধুঁকে মরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিগুণ
ক্ষতি গুণতে হয়। তারা স্বজন হারায়, সাথে সাথে ভিটে বাড়িও হারায়।
বাংলাদেশ
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। আমরা মুসলমান অথচ আমরা কোরআন ও হাদিস পুরোপুরি
মানি না। আমরা ইসলামকে শুধুই নামাজ, রোজা ও কিছু দেোয়া বা আমলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি।
কিন্তু ইসলামের অন্যান্য দিকগুলো মানি না। যেগুলো মানা ফরজ। বাংলাদেশের আইন বা সংবিধান
প্রণেতাগণ মুসলমান। তারা কোরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে না নিয়ে মানব রচিত তথা ইহুদি,
খৃস্টান ও হিন্দুত্ববাদী সংবিধান প্রনয়ন করেছে। এখন মানব রচিত সংধিান বা আইন বাতিল
করতে হলে সেই রকম একটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে হবে যারা সংসদে গিয়ে কোরআন বিরোধী আইনগুলো
বাতিল করবে।কিন্তু এই কাজটি বর্তমানে এতো সহজ নয়। যারাই বাতিলের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছে
তারাই খুন হচ্ছে, জেলখানায় মিথ্যে মামলায় সাজা ভুগছে, অনেককে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো
হয়েছে। তবু মুসলমান হিসেবে একাজটি আমাদেরকে করতে হবে।মূলত আল্লাহ তায়ালা নবি (সা:)কে
মানব রচিত বিধান বাতিল করে কোরআনের বিধান প্রতিষ্ঠিত করতেই তাঁকে প্রেরণ করেছেন। আর
এটাই হচ্ছে ইসলামের রাজনীতি। আমাদের দেশের অনেক মুসলমান বলে বেড়ায় যে, ইসলামে নাকি
রাজনীতি নেই। আসলে এরা হচ্ছে ফাসেক, জালেম ও মোনাফেক।
বাংলাদেশে
ইসলাম প্রচারকারী অনেক দল আছে। যেমন, তাবলীগ জামায়াত, কথিত পির বা অলিসহ নিবন্ধিত বা
অনিবন্ধিত ইসলামি দল, যারা নিজেদেরকে বলে যে, তারা নাকি ইসলামের খেদমত করছে। ইসলাম
প্রচার করছে। এই সব দলে অনেক কোরআনের হাফেজ, মুফতি, মুহাদ্দিস বা বড় বড় আলেম আছে যারা
এমন একটি দলকে ভোট দেয় যারা সংসদে গিয়ে কোরআন বিরোধী আইন পাশ করে। এরা নামাজ পড়ে, রোজাও
রাখে আবার সব সময় তসবিহ জপে। কিন্তু এদের কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না। আসুন
এই সব মুসলমানদের পরিনতি কোরআন হাদিস ভিত্তিক জেনে নেই।
পরিনতি
১।
হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক
পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার
করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল
নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো
আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ
করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
২।
যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন
করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য
যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (নূর-৬৩)
৩।
আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন
করবে, যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান
করতে হবে।( বুখারী ও মুসলিম)
৪।
সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য
ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে
দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)
৫।“ হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্নিত,
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া
অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
৬।
“যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি
কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে
কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
৮।“ আনাস (রাঃ) হতেবর্নিত, রাসুল (সাঃ)
বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট
আসবে। এমনকি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে চিনতে পারবো। এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবার
পূর্বেই তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত।
আল্লাহতায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ
ছেড়ে অন্য) কতো রকম তরিকা ও অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো।(বুখারী)
৯।
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল
করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান,
আয়াত : ৮৫)
১০।
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ
করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার
আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫)
আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল,
সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো
স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে
জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে
আহমদ, তিরমিজি)
কোরআন
ও হাদিস ভিত্তিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে লড়াই, এটাই হচ্ছে আল্লাহর রাস্তা।
তাবলীগ জামায়াত আল্লাহর রাস্তার কথা বলে যে ব্যয় করে, এটা হচ্ছে একটা নব্য সৃষ্ট ভ্রান্ত
পথ। আপনি যদি নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করেন, তাহলে আপনাকে কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ,
যাকাত ও বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি ইসলামি রাজনীতির সাথে সংযক্ত হতেই হবে।ইসলামি দল বা
ইসলামের রাজনীতি করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। আসুন মানব রচিত সকল ভ্রান্ত পথ,
মত বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস ভিত্তিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য ইসলামের রাজনীতির
সাথে জড়িত হই। একটা কথা মনে রাখবেন ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম ব্যতীত ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা
লাভ কোনো দিনই সম্ভব নয়। আল্রাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমিন।