(বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম)
আওয়ামীলীগ
ইসলামের মহা শত্রু
জিহাদ
কি? জিহাদ প্রত্যেকটি মুসলমানের উপর ফরজ।
আমরা
কার বিরুদ্ধে জিহাদ করবো? বাংলাদেশে জিহাদ ফরজ কিনা
লেখক : মাওলানা মো: শিহাব. এম এ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)
আল্লাহর পথে আহবান বা দাওয়াতী কাজ, ইসলামি
সংগঠন, জিহাদ অতঃপর ইসলামি রাষ্ট্র গঠন বনাম ইসলামের রাজনীতি করা প্রত্যেকটি মুসলমান
জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।শুধু নামাজ ও রোজার মধ্যেই
ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়।এগুলো ইসলামের একটি অংশ মাত্র যা মুসলমান হিসেবে অবশ্যই মানতে হবে।কোরআন
ও হাদিসে উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় একজন মুসলমানকে স্বীকার করতে হবে ও সাধ্যানুযায়ী
মেনে চলতে হবে।এবং ইসলামের কোন কাজে বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না।কিন্তু দুঃখের বিষয় অনৈসলামিক
দলের কথিত মুসলমানরা যেমন বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী মুসলমানরা ইসলামকে তারা শুধু
নামাজ ও রোজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।কিন্তু তারা কোরআন ও হাদিসের অন্যান্য দিকের
কিছুই মেনে চলে না।বরঞ্চ তারা ইহুদি ও খৃস্টানদের দোসর হিসেবে ইসলামের বড় দুশমনে পরিনত
হয়েছে।আওয়ামীরা কোরআন ও হাদিসের যে বিষয়গুলো অস্বীকার করে,নিজেরা যেমন মানে না তেমনি
অন্যদেরকেও মানতে দেয় না, তার মধ্যে একটি হচ্ছে জিহাদ। আসুন আমরা জিহাদ সম্পর্কে জেনে
নেই।
জিহাদ শব্দটি আরবি জুহুদন শব্দ হতে উদ্ভুত্।
আভিধানিক অর্থ হলো কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা করা, বা চরম প্রচেষ্টা। ইংরেজিতে জিহাদকে
Holy War বলা হয়। পারিভাষিক অর্থ হলো , ইলা কালিমাতুল্লাহ- আল্লাহর বাণী বা আল্লাহ
প্রদত্ত ব্যবস্থাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করা, তার জন্য
মরনপণ সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া এবং যাবতীয় শক্তিকে এতদুদ্দেশ্যে নিয়োজিত করা।অর্থাৎ দ্বীনী
ব্যাপারে যে কোন প্রকার প্রচেষ্টাকেই জিহাদ বলা হয়। ফকিহগনের পরিভাষায়ঃ
১) জান,মাল, বক্তৃতা, লেখনী ইত্যাদির মাধ্যমে
আল্লাহর পথে লড়াই করার কাজে নিজের সর্ব শক্তি ব্যয় করাকে জিহাদ বলে।( বাদায়েউস সানায়ে
, ৭ম খন্ড)
২) হাতিয়ার, ধন-সম্পদ, আমল,ইলম, কলম,কথা
বা বক্তৃতা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কলেমা তথা দ্বীনকে সুউচ্চ খিরে প্রতিষ্ঠত করা
এবং কাফির ও কুফরের প্রভাব ও প্রতিপত্তিকে সমূলে উৎখাত করার নিমিত্তে নিজের সর্বশক্তি
ব্যয় করাকে জিহাদ বলে।(তাকমিলা-৩য় খন্ড)
জিহাদের প্রকারভেদঃ
জিহাদ তিন প্রকারঃ
১) নিজের নাফ্স বা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ
করা।
নবি সঃ বলেন, প্রকৃত মুজাহিদ সেই ব্যক্তি
যে আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে নিজের নাফসের সাথে জিহাদ করে।(মিশকাত, তাকমিলা-৩য় খন্ড)
হাদিসে এ জিহাদকে জিহাদে আকবর বলা হয়েছে।রাসূল
সঃ বলেন, আমরা জিহাদে আসগর (ছোট জিহাদ) থেকে জিহাদে আকবর (বড় জিহাদ) এর দিকে ফিরে এসেছি।(কানযুল
উম্মাল, কিতাবুল জিহাদ- ২য় খন্ড)
উল্লেখিত হাদিসে জিহাদে আকবর বলে নাফসের
সাথে জিহাদ করাকে বুঝানো হয়েছে।
২) জিহাদ বিল ইলম বা ইলমের সাহায্যে জিহাদ
করা।
এ জিহাদকে কুরআন মজিদে জিহাদে কবির বলে
আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “ সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি
কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে প্রবলভাবে জিহাদ চালিয়ে যাও।”(ফুরকান-৫২)
ইমাম আবু বকর জাসসাস(রঃ) “আহকামুল কুরআন”
গ্রন্থে জিহাদ বিল ইলমের ব্যাপারে এক সূক্ষ্ম আলোচনার অবতারনা করে বলেছেন,ইসলামের প্রকৃত
প্রাণ শক্তি এই জিহাদের মধ্যে নিহিত আছে। এই জিহাদের মাধ্যমেই ইসলাম গোটা পৃথিবীতে
বিস্তার লাভ করেছে এবং দুনিয়া ব্যাপী তা শ্রেষ্ঠতম মতাদর্শর মর্যাদা লাভ করেছে।
যদি ইসলামের শত্রুরা এর পথে বাঁধা ও অন্তরায়
না হতো তবে দুনিয়ার বুকে কোন সত্য সন্ধানী অন্তরাত্মাই ইসলাম কবুল করা ব্যতীরেকে থাকতে
পারতো না।
জিহাদ বিল ইলম প্রথমত দুই প্রকারঃ
১) প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে দ্বীনের সংরক্ষণ।
ইহা আবার চার প্রকারঃ
ক) ভাষা ও যুক্তির দ্বারা জিহাদ করা।
খ) শরীর ও মন দ্বারা জিহাদ করা।
গ) লেখনীর মাধ্যমে জিহাদ করা।
ঘ) সম্পদ ব্যয় করে জিহাদ করা।
২) বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ হতে যে সব অভিযোগ
উত্থাপিত করা হয় বা বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হয়, অকাট্য ও অখন্ডনীয় যুক্তি প্রমাণের
দ্বারা ঐ সবের মুকাবিলা করা।
ইহাও চার প্রকারঃ
ক) জিহাদ বিল লিসান।
খ) জিহাদ বিল নাফস্
গ) জিহাদ বিল কলম।
ঘ) জিহাদ বিল মাল।
এই হিসেবে জিহাদ বিল ইলম সর্বমোট আট প্রকার।
৩) জিহাদে কিতাল ।
ফকিহগণের পরিভাষায় একে দারুল হরফের অধিবাসীদের
সাথে লড়াই করা বলা হয়। কেউ কেউ একেই জিহাদ বলেছেন।মূলত এটি হচ্ছে জিহাদের এক বিশেষ
প্রকার।(ফাতহুল করিম, সিরাতুন্নবি সাঃ, ৫ম খন্ড)
উল্লেখ্য যে,জিহাদে কিতাল আবার চার প্রকারঃ
১) আক্রমণাত্মক জিহাদ।
২) আত্মরক্ষামূলক জিহাদ।
ইসলামে এই উভয় প্রকার জিহাদেরই নির্দশ রয়েছ্
।(তাকমিলা, ৩য় খন্ড)
জিহাদের মতান্তর ও যত শ্রেণি আছে এই সবগুলোর
মূর্তপ্রতীক ছিলেন রাসুল সঃ। তিনি সবকটি জিহাদই করে গিয়েছিলেন তাঁর তেইশ বছরের নবুয়তি
জিন্দেগীতে।
জিহাদ
প্রত্যেকটি মুসলমানের উপর ফরজ
ইসলামের দুশমনদের
বিরুদ্ধে জিহাদ করা মুসলমানদের উপর আল্লাহতায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন।এ জিহাদে শুধু দৈহিক
শক্তি ব্যবহার করলে চলবে না বরং জান মালসহ সর্বিধ উপায়-উপকরন এ পথে নিয়োজিত করে জিহাদ
করতে হবে।
এ দুনিয়ার মুসলমানরা
কাফির, মুশরিক, নাসারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি, খৃস্টান কিংবা মুরতাদদের অধীস্থ হয়ে
থাকুক ইসলাম তা আদৌ পছন্দ করে না। একজন মুসলমান কেবল একজন মুসলমানের বেলায়ই কোমল ও
বিনয়ী হতে পারে। ইসলামের শত্রুদের সাথে নম্রতা প্রদর্শন বৈধ নয়।
আল্লাহ বলেন.
“মুমিনদের বেলায়
তারা কোমল ও বিনয়ী, কাফিরদের বেলায় তারা অত্যন্ত কঠোর”। মায়িদা:৫৪
মুহাম্মদ সঃ হচ্ছেন
আল্লাহ রাসুল। তাঁর সাথে যারা থাকেন তারা কাফিরদের বেলায় অত্যন্ত কঠোর কিন্তু পরস্পরে
অতি দয়ালু। ফাতহঃ২৯
ইসলাম জালিম,
অত্যাচারী, দুষ্কৃতিকারী, অনৈসলামিক পথ-মত, বেহাপনা, সুদ-ঘুষ, যেনা-ব্যভিচার তথা অশ্লীল
পাপকার্য সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিতকারীর
সামনে নীরবতা ভূমিকা পালনের অনুমতি দেয় না।এদের সাথে সে আপোস করতে জানে না।অন্যায় অবিচার
জুলুম অত্যাচারের সম্মুখে আল্লাহর বান্দারা মাথা অবনত করে নতজানু হয়ে বসে থাকুক ইসলাম
এমন শিক্ষা দেয় না। বরং শত্রুর সকল অভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে না দেওয়া পর্যন্ত
শক্তির মুকাবেলায় শক্তি, অস্ত্রের মুকাবেলায়
অস্ত্র দ্বারা সংগ্রাম করে যেতে হবে।যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দেশে নিরংকুশ ও নির্ভজাল
ইসলামি শাসন ক্ষমতা আল্লাহর ইমানদার বান্দারদের হাতে ফিরে না আসা পর্যন্ত ,ততক্ষণ এ
সংগ্রাম আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।
জিহাদ
ফরজ হওয়ার দলিলঃ
কোরআন
হতে
১) জিহাদ তোমাদের
উপর ফরজ করা হয়েছে, আর তা তোমাদের অসহ্য মনে হচ্ছে, কোন জিনিস তোমাদের অসহ্য মনে হলো,
অথচ তাহাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর । পক্ষান্তরে ইহাও হতে পারে যে, কোন জিনিস তোমাদের
ভালো লাগল, অথচ তাহাই তোমাদের জন্য খারাপ। প্রকৃত ব্যাপারে তো আল্লাহ জানেন তোমরা জানো
না। (বাকারাঃ২১৬)
২) হে ইমানদারগণ!
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার কথা বলবো না , যা তোমাদেরকে ভয়াবহ শাস্তি থেকে রেহাই
দিতে পারে। তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের উপর ইমান আনবে এবং আল্লাহরাহে তোমাদের জানমাল কুরবান
করে জিহাদ করবে, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। (ছফঃ১০-১১)
৩) আল্লাহর পথে
জিহাদ করো, যেমন জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে নিজের কাজের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন,আর
দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেন নি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের
মিল্লাতের উপর প্রতিষ্ঠিত হও।(হজ্জ-৭৮)
৪) প্রকৃত কথা
এই যে, মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জানমাল জান্নাতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন, এখন
তাদের কাজ হবে , তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, সে সংগ্রামে তারা যেমন মারবে ,তেমন
মরবেও।(তওবা-১১১)
৫) হে ইমানদার
লোকেরা কাফেরদের সাথে লড়াই করো, যেন শেষ পর্যন্ত ফেতনা খতম হয়ে যায় এবং দ্বীন পুরোপুরিভাবে
আল্লাহরই জন্য হয়ে যায়।পরে তারা যদি ফেতনা হতে বিরত থাকে তবে তাদের আমল আল্লাহ দেখবেন।(আনফাল-৩৯)
৬) তোমরা বের
হয়ে পড় হালকা কিংবা ভারী সরঞ্জামের সাথে ,আর জিহাদ করো আল্লাহর পথে নিজেদের মাল-সামান
ও নিজেদের জান-প্রাণ দিয়ে। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝ।(তওবা-৪১)
৭) তোমাদের কি
হয়েছে? তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করছো না কেন? অথচ দুর্বল –অক্ষম ,নারী-পুরুষ,শিশুরা
চিৎকার করে বলছে, হে আমাদের রব, জালিম অধিবাসীদের এদেশ থেকে আমাদের বের করে নাও। আর
আমাদের জন্য তোমার নিকট হতে একজন পৃষ্ঠপোষক অধিপতি নিয়োগ করো, এবং আমাদের জন্য তোমার
নিকট হতে একজন সাহায্যকারী বানিয়ে দাও।(নিসা-৭৫)
৮) যারা ইমানের
পথ গ্রহণ করেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে । আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তারা
লড়াই করে তাগুতের পথে। অতএব তোমরা শয়তানের সঙ্গী সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, নিঃসন্দেহে
শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল। (নিসা-৭৬)
৯) তোমরা আল্লাহর
পথে তাদের সাথে লড়াই করো যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে। কিন্তু সেই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
ও সীমালংঘন করো না, কেননা আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।(বাকারা-১৯০)
১০) তাদের সাথে
লড়াই করো, যেখানেই তাদের সাথে তোমাদের মোকাবিলা হয় এবং তাদেরকে সে সব স্থান হতে বহিষ্কার
করো যেখান হতে তারা তোমাদেরকে বহিষ্কার করছে। এ জন্য যে নরহত্যা যদিও একাট অন্যায় কাজ
কিন্তু ফেতনা-ফাসাদ তা অপেক্ষাও অনেক বেশী অন্যায়।আর মসজিদের হারামের কাছাকাছি তারা
যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের সাথে লড়াই করবে না ,ততক্ষণ তোমরাও লড়াই করো না।কিন্তু তারা
যদি সেখানেও লড়াই করতে কুণ্ঠিত না হয়,তবে তোমরাও অসংকোচে তাদেরকে হত্যা করো। কেননা
এ ধরনের কাফিরদের উহাই যোগ্য শাস্তি। (বাকরা-১৯১)
১১) হে নবি-ইমানদার
লোকদেরকে লড়াইয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।(আনফাল-৬৫)
১২) সূরা
আনফাল পুরোটাই জিহাদের দাওয়াত ও যুদ্ধের
আহ্বানে ভরপুর। এর
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত
মুসলমানদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা
হয়েছে এবং জিহাদের বিস্তারিত
বিধি-বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা
করা হয়েছে। এজন্যে
রাসূলে কারীম (সা) এর
সংগী-সাথীরা এ সূরাকে
যুদ্ধ-সংগীত হিসেবে ব্যবহার
করেছেন। মরণপণ
জিহাদ যখন শুরু হয়ে
যেত, অস্ত্রের ঝনঝনায় যখন দশ
দিন মুখরিত হতো তখন ইসলামের
মুজাহিদরা এ সূরার মর্মস্পর্শী
ভাষায় তেলাওয়াত করতেন আর আল্লাহর
রাহে প্রাণ বিলিয়ে দোয়ার
জন্যে ব্যাকুল হয়ে যেতেন।
উদাহরণ স্বরূপ পড়ুন, “হে মুসলিমগণ, তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুকাবিলার
জন্য যথা সাধ্য শক্তি সঞ্চয় (প্রস্তুতি গ্রহণ) করো এবং যুদ্ধোপযোগী ঘোড়া প্রস্তুত রাখো
যাতে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুদের সংকিত ও সন্ত্রস্ত রাখতে পারো।(আনফাল-৬০)
১৩) হে নবি কাফির
ও মুনাফিক উভয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জিহাদ করো এবং তাদের সম্পর্ক কঠোরনীতি অবলম্বন
করো। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিনতি হচ্ছে জাহান্নাম আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।(তওবা-৭৩)
১৪) ঐ সব কাফিরদের
সাথে মোকাবিলার সময় তোমাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য হলো তাদের শিরোচ্ছেদ করা। এভাবে তাদেরকে
পর্যদুস্ত করার পর বন্দীদেরকে মজবুত করে বাঁধো। এরপর তোমার ইচ্ছে হলো করণা করো অথবা
বিনিময় নিয়ে তাদেরকে মুক্তি করে দাও। আর যতো দিন তাদের সমর শক্তি ধ্বংস না হয় ততো দিন
এ অবস্থা বলবৎ রাখো। (মুহাম্মদ-৪)
১৫) তোমরা যুদ্ধ করো তাদের বিরুদ্ধে যারা
সত্যিকার অর্থে আ্ল্লাহকে বিশ্বাস
করে না এবং পরকালেও বিশ্বাস করে না আর আল্লাহ এবং তার রাসুল যা হারাম করেছেন তারা তা
নিষেধ করে না এবং আল্লাহ দেয়া পূর্নাঙ্গ ও সঠিক জীবন ব্যবস্থাকে তারা নিজেদের জীবন
ব্যবস্থা হিসেবে মেনে চলে না আহলে কিতাবের লোক হয়েও যুদ্ধ করো তাদের বিরুদ্ধে যতক্ষণ
না তারা আনুগত্য স্বীকার করে এবং জিজিয়া কর দিতে রাজী হয়।(তওবা-২১)
১৬) তোমাদের সাথে সর্বশক্তি নিয়োগ করে যে
রুপ মুশরিকরা লড়াই করে তোমরাও সর্বশক্তি নিয়োগ
করে তদ্রুপ ওদের সাথে লড়াই করে যাও।(তওবা-৩৬)
১৭) যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান আনে
না এবং আল্লাহ তায়ালা ও তারঁ রসুল যা কিছু হারাম করেছেন,তা হারাম মনে করে না, তাদের
সাথে লড়াই করে যাও।(তওবা-২৯)
১৮) তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে;যতোক্ষণ
ফিতনা দূরীভুত না হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হয়।(বাকারা-১৯৩)
১৯)“হে ঈমানদারগণ, কাফেরদের
ন্যায় কথাবার্তা বলো না, যাদের
নিকটাত্মীয়রা যদি কখনও বিদেশে
যায় বা যুদ্ধে শরীক
হয় (এবং সেখানে কোনো
দুর্ঘটনার শিকার হয়) তখন
তারা বলে যে, তারা
আমাদের কাছে থাকলে মারা
যেত না বা নিহত
হতো না। আল্লাহ
এ ধরণের কথাবার্তা তাদের
মনে দু:খ ও
চিন্তার কারণ বানিয়ে দেন। প্রকৃতপক্ষে
আল্লাহর পথে মারা যাও
অথবা নিহত হও, তাহলে
আল্লাহর যে রহমত ও
মাগফেরাত তোমরা পাবে, তা
এ ধরনের লোকেরা যা
কিছুই সংগ্রহ-সঞ্চয় করেছ
তার চেয়ে অনেক উত্তম। আর
তোমরা মৃত্যুবরণ করো বা নিহত
হও, সকল অবস্থায়ই তোমাদের
সবাইকে আল্লাহর নিকট সমবেত হতে
হবে। (সূরা
আলে ইমরান : ১৫৬-১৫৮)
হাদিস
হতে দলিলঃ
১) হযরত আবু জার
গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবি! কোন আমলটি
(আল্লাহর নিকট) সবচেয়ে উত্তম? হুজুর (সঃ) বললেন, আল্লাহর উপর ইমান আনা এবং তার পথে
জিহাদ করা। (বুখারী,মুসলিম)
২) হযরত মায়াজ
ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা নবি করিম (সঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে একটি বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (দ্বীনের) মূল সূত্র, তার এবং সর্বোচ্চ চূড়ার সন্ধান দেব না? আমি বললা্ম হ্যাঁ অবশ্যই
আপনি কা বলে দিবেন। তখন হুজুর (সঃ) বললেন, দ্বীনের মূল হলো ইসলাম, খুঁটি হলো নামাজ
এবং তার সর্বাচ্চ চূড়া হলো জিহাদ।( আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ।)
৩) হারেস আল-আশআরী
(রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, আমি
তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি, আল্লাহ আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। ১। জামায়াত বা দলবদ্ধ হবে। ২। নেতার
আদেশ মন দিয়ে শুনবে। ৩। তার
আদেশ মেনে চলবে। ৪। হিজরত
করবে অথবা আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে এবং ৫। আল্লাহর পথে
জেহাদ করবে। যে ব্যক্তি জামায়াত বা সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত
পরিমাণ দূরে সরে গেলো, সে যেন
নিজের কাঁধ থেকে ইসলামের রশি বা বাঁধন
খুলে ফেলবো, যতক্ষণ না সে সংগঠনে ফিরে আসবে। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের নিয়ম-নীতির দিকে লোকদেরকে আহ্বান জানাবে সে জাহান্নামের জ্বালানী হবে,
যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে। (আহমাদ,
তিরমিযী)
৪) হযরত আবু হুরায়রা
(রা) হতে বর্নিত, তিনি
বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন,
যে বেক্তি মৃত্যুবরণ করল
অথচ না সে জিহাদ
করেছে, আর না তার
মনে জিহাদের জন্য কোন চিন্তা,
সংকল্প ও ইচ্ছার উদ্রেক
হয়েছে, তবে সে ব্যক্তি
মুনাফিকদের ন্যায় মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)
৫) হযরত আনাস
(রাঃ) হতে বর্নিত, নবি করিম
(সঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের জান,মাল ও মুখ দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো। (আবু
দাউদ)
৬) আবু সাইদ
(রাঃ) হতে বর্নিত, নবি করিম
(সঃ) বলেছেন, স্বৈরাচারী জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ। (তিরমিজি)
৭) হযরত আবু সাইদ
খুদরী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবি করিম (সঃ)
এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর নবি!আমাকে উপদেশ দান করুন। তিনি বললেন, আল্লাহর ভয় (তাকওয়া)
অবলম্বন করো, কেননা এটা সমস্ত কল্যাণের উৎস। জিহাদকে বাধ্যতামূলকভাবে ধারণ করো , কেননা
মুসলমানদের জন্য এটা হচ্ছে রাহবানিয়াত। আর আল্লাহকে স্মরণ করো এবং তার কিতাবকে নিয়মিত
তেলোয়াত করো।কেননা এটা তোমাদের জন্য এ জমিনে আলোকবর্তিকা এবং আকাশ রাজ্যে স্মরণীয় হওয়ার কারণ। তোমরা
নিজেদের বাক শক্তিকে বিরত রাখো, কিন্তু নেক কথা হতে বিরত রেথো না।এভাবেই তোমরা শয়তানের
উপর জয়ী হতে পারবে।
৮) হযরত উবাদা ইরনুস সামেত (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুলে করিম (সঃ) বলেছেন, তোমরা সকলে মহান
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিকটবর্তী ও দূরের লোকদের সাথে চিহাদ করো এবং আলাহর ব্যাপারে
তোমরা কোন উৎপীড়নের বিন্দু মাত্র ভয় করো না। পরন্তু তোমরা দেশে বিদেশে যখন যেখানেই
থাকো, আল্লাহর আইন ও দন্ড বিধানকে কার্যকর করে তোলো। তোমরা অবশ্যই আল্লাহর পথে জিহাদ
করবে। কেননা জিহাদ হচ্ছে জন্নাতের অসংখ্যক দুয়ারের মধ্যে একটি অতি বড় দুয়ার। এই দ্বার
পথের সাহায্যেই আল্লাহ তায়ালা ( জিহাদকারী লোকদেরকে) সকল প্রকার চিন্তা ভাবনা ও ভয়ভীতি
হতে নাজাদ দান করবেন। (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী)
৯) জায়েদ
ইবনে আসলাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"যতক্ষণ পর্যন্ত আসমান থেকে বৃষ্টির
ফোঁটা পড়বে,ততক্ষন পর্যন্তই
সতেজ ও (চির) সবুজ
রুপে জিহাদ চলবে।
আর মানুষের উপর এমন এক
সময় আসবে, যখন তাদের
মধ্যকার কুরআন তিলাওয়াতকারীরা বলবেঃ
'এখন জিহাদের সময় নয় ' অতএব,
যে কেউ সেই সময়ে
থাকবে জিহাদের জন্য সেটাই সর্বোত্তম
সময়। তাঁরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বললঃ "ইয়া
রাসুলুল্লাহ ! সত্যই কি কেউ
এমন বলবে?" তিঁনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ "হ্যাঁ , তার উপর আল্লাহ্*র লানত এবং
ফেরেশতাকুল ও সমগ্র মানবজাতির
লানত।"
[উসুল
আস সুন্নাহ মুরসালানে ইবনে যামনীন থেকে
বর্ণিত এবং আনাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে ইবনে আসাকির
মারফু সুত্রে বর্ণনা করেছেন]
১০)হযরত
হারিসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্নিত, নবি করিম (সাঃ) বলেছেন, আমি
তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে,(২) নেতার আদেশ মন দিয়ে
শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলবে।(৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে(৫) আর আল্লাহর
পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেলো, সে নিজের
গর্দান থেকে খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে
ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদেরকে) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে
রোজা রাখে,নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে আহমদ,তিরমিজী)
১১) হযরত আবু
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি
নবি করিম (সঃ) যখন ইন্তেকাল করলেন তারপর হযরত আবু বকর (রাঃ)খলিফা নির্বাচিত হলেন, আর
আরব দেশের কিছু লোক কাফির হয়ে গেলো, তখন হযরত
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)হযরত আবু বকর (রাঃ)কে
বললেন, আপনি এ লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করতে পারেন, অথচ নবি করিম (সাঃ)
তো বলেছেন,লোকেরা যতক্ষণ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ
(এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই) মেনে না
নিবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। যদি কেহ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করে; তরে তার ধন সম্পদ ও জার
প্রাণ আমার নিকট পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করবে। অবশ্য উহার উপর ইসলামের হক কখনো ধার্য হলে অন্য কথা।আর উহার হিসাব গ্রহণের
দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যাস্ত। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন আল্লাহর শপথ যে লোকই নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি
করবে, তারই বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করবো কেননা যাকাত হচ্ছে মালের হক , আল্লাহর শপথ
যদি রাসুলের সময় যকাত বাবদ দিতো- এমন এক গাছি রশিও দেয়া বন্ধ করে , তবে অবশ্যই আমি
উহা দেয়া বন্ধ করার কারনে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, উহা আর কিছু
নয়,আমার মনে হলো, আল্লাহ যেনো, আবু বকরের অন্তর যুদ্ধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন
এবং বুঝতে পারলাম যে, উহাই ঠিক (তিনি নির্ভুল সিদ্ধান্তই নিয়েছেন)।(বুখারী, মুসলিম,তিরমিজী,
নাসায়ী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)।
১২)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)
বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
এরশাদ করেন- নিশ্চয় জান্নাতে
১০০ টি স্তর রয়েছে
যেগুলো আল্লাহ তায়ালার রাস্তায়
মুজাহিদদের জন্য তৈরী করেছেন। প্রতি
দুইটি স্তরের মাঝে ঐরুপ
ব্যবধান যেমন আসমান ও
যমিনের মাঝে বিদ্যমান।
।
(বুখারী-৩/১০২৮হাঃ
নং-২৬৩৭, মুসনাদে আহমদ-২/৩৩৯হাঃ নং-৪৮৫৫, ইবনে হিব্বান-১০/৪৭১হাঃ নং-৪৬১১)
১৩)রাসুল (সাঃ) বলেছেন: অচিরেই ফিতনা ফাসাদ ও দুর্ঘটনা ঘটবে।
যে এই উম্মাতের (মুসলমানদের) মাঝে ফাটল সৃষ্টি করতে চায় সে যেই হোক না কেন তাকে তরবারী দ্বারা শাস্তি দাও । (মুসলিম শরিফ, মুসনাদে আহমাদ)
উল্লেখিত আলোচনায়
এটাই প্রমাণিত যে, জিহাদ প্রত্যেকটি মুসলমানদের উপর ফরজ।নবি করিম (সা:) নবুয়ত প্রাপ্তির
পর প্রথমত: কাফির,মুশরিক,ইহুদি,খৃস্টান ও নাসারাদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।ইসলামের
দাওয়াত দিতে গিয়ে নবি করিম (সা:) প্রতি পদে পদে বাঁধার সম্মুখিন হয়েছেন।তিনি আল্লাহর
জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে মুসলমানদের সাথে নিয়ে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে
জিহাদ করেছেন।নবি (সা:) স্বয়ং ১৯টি জিহাদে অংশ নিয়েছেন।এভাবে জিহাদ করতে করতে শেষ পর্যন্ত
তিনি আল্লাহর জমিনে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে সক্ষম হয়েছেন।নবি করিম (সাঃ)এক দিকে
ছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচারক অপর দিকে ছিলেন সফল রাষ্ট্র নায়ক। অতএব নবি করিম (সাঃ) যে
পদ্ধতিতে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে গিয়ে যে ভাবে জিহাদ করেছেন
আমরা মুসলিম হিসেবে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করবো।পৃথিবীর সব মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাষ্ট্রে
ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম নেই।যে সব রাষ্ট্রে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম নেই, সেই সব রাষ্ট্রে
ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে গিয়ে যদি কোন বাঁধা আসে তাহলে সেখানে জিহাদ করা ফরজ।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি
রাষ্ট্রে মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন নামে রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক সংগঠন বা দল আছে।মুসলমানদের
ঐ সব সংগঠন বা দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন। যে সব সংগঠন বা দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আল্লাহর দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করা ঐ সব সংগঠন বা দলগুলোকে বলা হয় ইসলামি
সংগঠন বা দল। জিহাদের সাথে জড়িত মূলত এই সব ইসলামি সংগঠনগুলো।কথিত মুসলমানদের গঠিত
অনৈসলামিক দলগুলো জিহাদের পক্ষে তো নেই বরঞ্চ তারা জিহাদকে অপব্যাখ্যা করে সাধারন মুসলমানদেরকে
বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে তাদের ইমান আমল নষ্ট করছে। এদের সম্পর্কে নবি (সাঃ) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি নিজের
মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে
কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি
কোরআনের নির্দেশ অনুসারে
স্বীয় মতবাদ স্থির করে
না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে
ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত
তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
“ হোজায়ফা
(রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব
হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং
কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
অনৈসলামিক দলের সাখে জড়িত কথিত মুসলমানরা জিহাদ, সংবিধান, শাহাদাত,
যেনা/ব্যভিচার, সুদ-ঘুষ,জুয়া ,মদ , মূর্তী,লটারী ,পর্দা, ইসলামি বিচার সংক্রান্তসহ
শত শত কোরআনের আয়াত মানে না এবং এসব আয়াত নিয়ে কোথাও কথা পর্যন্ত বলে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ
বলেনঃ “ তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে
ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা
আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে!
আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে বে-খবর নন।(বাকারা-৮৫)
অনৈসলামিক
দলের সাথে জড়িত কথিত মুসলিম নেতারা ইসলামি সংগঠন বা দল এর সাথে জড়িত না হয়ে ভিন্ন সংগঠন
বা দল করায় এদের সম্পর্কে নবি (সাঃ)
বলেনঃ “ আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের
আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট
আসবে।এমন কি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে
চিনতে পারবো। এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবার পূর্বেই
তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত। আল্লাহ
তায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ ছেড়ে
অন্য) কতো রকম তরিকা ও অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো।(বুখারী)
অর্থাৎ মুসলমানদের একটা অংশ যারা পার্থিব সুখ শান্তির
আশায় ইহুদি ও খৃস্টানদের এজেন্ট হিসেবে ইসলামি দল ত্যাগ করে মানব রচিত আইন দ্বারা গঠিত
ভিন্ন দল গঠন করেছে।যেমন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মীরা যারা নিজেদেরকে মুসলিম
বলে দাবী করে।এরা ইসলামি দল গঠন না করে আল্লাহ ও রাসুল(সা:) এর আদর্শ বিরোধী একটা দল
গঠন করে বাংলাদেশ থেকে একের পর এক ইসলাম ধ্বংস করে যাচ্ছে।উল্লেখিত হাদিস দ্বারা নবি(সাঃ)
আদর্শ ছেড়ে যারা শেখ মুজিবের আদর্শ গ্রহণ করেছে, মুজিব কোট পড়ে বেড়ায় তাদের প্রতি ইঙ্গিত
করা হয়েছে। এটা একটা উদাহরণ।
অতএব পৃথিবীর সকল মুসলিম ভাই বোনদেরকে আহবান
করছি,অন্য কোন পথ, মত বা দল ত্যাগ করে ইসলামি সংগঠনের সাখে জড়িত থেকে ইসলামি রাষ্ট্র
কায়েম করতে যা যা করা দরকার তাই করবেন। মনে রাখবেন মানব রচিত আইন অদ্যবধি শান্তি দিতে
পারে নাই আর পারবেও না। ইসলামি তথা আল্লাহর আইন আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করতে জিহাদের
বিকল্প নেই।
‘আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর ফজিলত
যারা
‘আল্লাহর পথে জিহাদ’- এ
বিধানটি পালনে সর্বদা নিয়োজিত
তারা আল্লাহ তা’য়ালার
বন্ধুগণের শামীল। দুনিয়া
ও আখিরাতে তাদের জন্য সুবিশাল
মর্যাদা। তারা
আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ
থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত, জাহান্নাম থেকে মুক্ত এবং
জান্নাতের সুংবাদপ্রাপ্ত মহান জামাতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন-
আল্লাহ
মুজাহীদদেরকে ভালবাসেনঃ আল্লাহ তা'য়ালা
বলেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন,
যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে
সীসাঢালা প্রাচীরের মত সংঘবদ্ধ হয়ে।” -(সূরা
সফ : আয়াত-৪)
‘আল্লাহর
পথে জিহাদ’-এর বিনিময়
হল জান্নাতঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল
‘আলামীন বলেন : "অবশ্যই আল্লাহ মু'মিনদের কাছ থেকে
তাদের জান ও মাল
কিনে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তারা
জান্নাত লাভ করবে।
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে,
যাতে তাতে হত্যা করে
ও তাদেরকে হত্যা করা হয়। তার
উপর সাচ্চা ওয়াদা করা
হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জিলে ও কুরআনে আর
আল্লাহর চেয়ে বিশি কে
ওয়াদা পূরণ করে? কেজেই
যে কেনা-বেচার সাথে
তোমরা সংযুক্ত হয়েছ তার জন্য
তোমরা আনন্দ প্রকাশ কর। আর
এটিই হচ্ছে বিরাট সাফল্য।" -(সূরা তাওবাঃ
আয়াত-১১১)
মদীনাবাসী
এবং এর আশেপাশের বেদুঈনদের
জন্য আল্লাহর রাসূলের সহযাত্রী না হয়ে পেছনে
থেকে যাওয়া এবং রাসূলের
জীবনের চেয়ে তাদের নিজেদের
জীবনকে প্রিয় মনে করা
উচিত নয়। কেননা
আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা,
ক্লান্তি ও ক্ষুধায় কষ্ট
পাওয়া, কাফিরদের ক্রোধ তৈরি হয়
তাদের এমন কাজ করা
এবং শত্রুদের নিকট থেকে কিছু
(আঘাত বা অন্য কোন
ক্ষতি) লাভ করা (আল্লাহর
নিকট) তাদের সৎকর্ম হিসেবে
গণ্য হয়। নিশ্চয়
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের কাজের ফল নষ্ট
করেন না।(আল্লাহর
পথে) তারা কম বা
বেশি যে পরিমাণের অর্থই
ব্যয় করে এবং যত
মাঠ-ময়দানই তারা অতিক্রম
করে তা তাদের অনুকূলে
লেখা হয়, যাতে তারা
যা করে সেগুলোর বিনিময়ে
আল্লাহ তাদেরকে তারচেয়ে সুন্দরতম পুরস্কর প্রদান করতে পারেন।" -(সূরা তাওবাঃ
আয়াত ১২০-১২১)
মাগফিরাত,
জান্নাত, পবিত্র বাসস্থান, আল্লাহর
সাহায্য ও আশু বিজয়ঃ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : "হে
বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে
এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান
বলে দিব না, যা
তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা
করবে? (তা এই যে,)
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর
রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং
তোমাদের ধন-সম্পদ ও
জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে
জিহাদ করবে। এটাই
তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি
তোমরা জানতে। আল্লাহ
তোমাদের পাপরাশিকে ক্ষমা করে দিবেন
এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে;
যার নিম্নদিশে নদীমালা প্রবাহিত এবং (প্রবেশ করাবেন)
স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে।
এটাই মহা সাফল্য।
আর অপর আরেকটি বিষয়
যা তোমরা ভালোবাস আল্লাহর
পক্ষ থেকে সাহায্য এবং
দ্রুত বিজয়। কাজেই
বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও।” -(সূরা
সাফঃ আয়াত ১০-১৩)
আল্লাহর
পক্ষ থেকে সুমহান প্রতিদান,
মাগফিরাত ও রহমতঃ মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : "যে
সব মুসলমান বিনা ওযরে ঘরে
বসে থাকে এবং যারা
আল্লাহর পথে নিজেদের জান
ও মাল দিয়ে জিহাদ
করে তারা উভয়ে সমান
হতে পারে না।
যারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে
আল্লাহর পথে জিহাদ করে,
ঘরে বসে থাকা লোকদের
উপর আল্লাহ তাদেরকে শ্রেষ্ঠ
মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। আল্লাহ
সবাইকে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর
মুজাহিদেরকে আল্লাহ ঘরে বসে
থাকা লোকদের উপর বিরাট
প্রতিদান দিয়েছেন। অর্থাৎ
অনেক মর্যাদা যা আল্লাহর পক্ষ
থেকে পাওয়া যাবে এবং
মাগফিরাত ও রহমত।
আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও
কুরুণাময়।” -(সূরা
নিসাঃ আয়াত ৯৫-৯৬)
জিহাদে
অংশগ্রহণ হল ঈমানের সত্যায়নঃ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “তারাই
মুমিন, যারা আল্লাহ ও
তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান
আনার পর সন্দেহ পোষণ
করে না এবং আল্লাহর
পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ
করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ”।
-(সূরা হুজরাতঃ আয়াত-১৫)
আল্লাহর
কাছে সুবিশাল মর্যাদাঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল
‘আলামীন বলেন : "যারা ঈমান এনেছে,
হিজরত করেছে এবং আল্লাহর
পথে স্বীয় জান ও
মাল দিয়ে জিহাদ করেছে,
আল্লাহর কাছে তাদের জন্য
রয়েছে সুবিশাল মর্যাদা আর তারাই হবে
সফলকাম।” - (সূরা তওবাঃ
আয়াত-২০)
রসূল-এর সঙ্গ ও
প্রতিটি পদক্ষেপেই উত্তম বিনিয়ঃ মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “মদিনাবাসী
ও পার্শ্ববর্তী পল্লীবাসীদের উচিৎ নয় রসূল-এর সঙ্গ ত্যাগ
করে পিছনে থেকে যাওয়া
এবং রসূল-এর প্রাণের
থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে
করা । এটি
এজন্য যে ,আল্লাহর পথে
যে তৃষ্ণা , ক্লান্তি , ও ক্ষুধাতাদের স্পর্শ
করে এবং তাদের এমন
পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে
ক্রোধের কারণ হয় আর
শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা
যা কিছু প্রাপ্ত হয়
–তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত
হয় নেক আমল ।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের
হক্ব নষ্ট করেন নাআর
তারা অল্প বিস্তর যা
কিছু ব্যায় করে, যত
প্রান্তর তারা অতিক্রম করে
, তা সবই তাদের নামে
লিখা হয় যেন আল্লাহ
তাদের কৃতকর্ম সমূহের উত্তম বিনিময়
প্রদান করতে পারেন।”
-(সুরা তওবাঃ আয়াত ১২০-১২১)
জান্নাত
ওয়াজিব হবেঃ হযরত মুয়াজ
ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
: মুসলিম মিল্লাতের কোন ব্যক্তি ক্ষণকালের
জন্যও আল্লাহর পথে জিহাদ করলে
তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে যাবে। (আবুদাউদ.
তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদ)
জান্নাতে
প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্বঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে
প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন
যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা
এবং তাঁর কথাকে সত্য
বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর
থেকে বের হয়।
অথবা তাকে জিহাদের সাওয়াব
ও গণীমত লাভে ধন্য
করে গাজী হিসাবে ঘরে
ফিরিয়ে আনেন’’। -[বুখারী
ও মুসলিম]
অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহ তার দায়িত্ব স্বয়ং
গ্রহণ করেন, যে তার
রাস্তায় বের হয়, -যাকে
আমার প্রতি ঈমান ও
আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত
কোন জিনিস বের করেনি-,
আমি তাকে অতিসত্বর তার
পাওনা সওয়াব অথবা গনিমত
দেব অথবা তাকে জান্নাতে
প্রবেশ করাব। যদি
আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না
হত, তাহলে আমি কোন
যুদ্ধ থেকে পিছপা হতাম
না। আমি
চাই আমি আল্লাহর রাস্তায়
শহীদ হব, অতঃপর আমাকে
জীবিত করা হবে অতঃপর
আমি শহীদ হব, অতঃপর
আমাকে জীবিত করা হবে
অতঃপর আমি শহীদ হব”। -[বুখারি,
মুসলিম, নাসায়ি ও ইবনে
মাজাহ]
জাহান্নাম
থেকে মুক্তি পাবেঃ হযরত
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
: আল্লাহর পথে বান্দার দুটি
পা ধুলিধূসরিত হবে আবার তাকে
জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে-
এমনটি কখনও হতে পারে
না। (বুখারী)
বিরতিহীন
ইবাদাতের সওয়াব পাবেঃ হযরত
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদের
নিয়তে রওয়ানা হয় সে
বাড়ি থেকে বের হওয়ার
পর থেকেই ঐ ব্যক্তির
ন্যায়ই হয়ে যায় যে
বিরতিহীনভাবে রোযা রাখে এবং
নামাযে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত
করতে থাকে। যে
পর্যন্ত সে বাড়িতে ফিরে
না আসবে সে পর্যন্ত
তাঁর আমল- নামায় এ
ধরনের সওয়াব লিপিবদ্ধ হতে
থাকবে। -(মেশকাত
শরীফ)
জাহান্নাম
থেকে মুক্তিঃ হযরত আবু হুরাইরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
: যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে
সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা
সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত
দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব
হয়। আর
জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর
পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত
ধুলি কখনো একসাথে হতে
পারেনা। -{নাসায়ী
শরীফঃ হাদিস নং-৩১০৮,
সুনানে তিরমিযীঃ হাদিস নং-১৬৩৩,
২৩১১, সুনানে আবু দাউদঃ
হাদিস নং-৪২৭}
এক দিনের জিহাদ দুনিয়া
ও এর যাবতীয় সম্পদের
চেয়ে উত্তমঃ হযরত সাহাল
ইবনে সা’আদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : আল্লাহ্ রাস্তায় একদিন জিহাদের জন্য
ব্যয় করা দুনিয়া ও
এর যাবতীয় সম্পদের চেয়ে
উত্তম। -(বুখারী
ও মুসলিম)
সমুদ্রে
যুদ্ধের বিশেষ ফজিলতঃ হযরত
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান
রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন, আনাস
ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু
এর খালা। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
জান্নাতের সু-সংবাদ দেন। তিনি
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন,
তিনি বলেন, 'আমার উম্মতের
সর্ব প্রথম যে সৈন্য
দলটি সমুদ্রে যুদ্ধ পরিচালনা করবে,
তারা তাদের জন্য জান্নাতকে
অবধারিত করে নেবে।
এ কথা শোনে উম্মে
হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল আমি তাদের
মধ্যে থাকতে চাই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তুমি তাদের তাদের মধ্য
হতে। তারপর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আমার মধ্য যে সৈন্য
দলটি রোম সম্রাট সীজারের
শহরে যুদ্ধ করবে, তারা
সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। আমি
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!
আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে
চাই। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
না।' -[ বুখারীঃ হাদিস
নং ২৯২৪]
জিহাদের
ময়দানে পাহারাদারির ফজিলতঃ হযরত আনাস
বিন মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
জিহাদের ময়দানে একটিরাত পাহারাদারি
করা ঘরে বসে ১০০০
বছর নামাজ-রোজা করার
চেয়ে উত্তম। উল্লেখিত
বছর হবে ৩৬০ দিনে। তবে
একদিন হবে ১০০০ বছরের
ন্যায়। -[সুনানে ইবনে
মাজাহ]
দুনিয়া
ও দুনিয়ার ধন–সম্পদ অপেক্ষা
অধিক উত্তমঃ হযরত আনাস
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
দিনের প্রথমার্দ্ধের কোন অংশে বা
শেষার্দ্ধের কোন অংশে আল্লাহর
রাস্তায় বাহির হওয়া সমস্ত দুনিয়া ও দুনিয়ার
ধন –সম্পদ অপেক্ষা অধিক
উত্তম । জান্নাতের
এক ধনু বা এক
চাবুক পরিমাণ তথা সামান্যতম
অংশ সমগ্র দুনিয়ার ও
দুনিয়ার সমস্ত সামগ্রী অপেক্ষা
উত্তম । জান্নাতের
কোন হুর যদি দুনিয়ার
প্রতি শুধু উঁকি দেয়
তবে আসমান –জমীন সুবাসে
পরিপূর্ণ হয়ে যাবে ।
এবং তাদেরওড়না সমগ্র জগত ও
জগতের ধন –সম্পদ অপেক্ষা
অধিক উত্তম । (বুখারী
ও মুসলিম )
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের ১ ধনু পরিমাণ
(তথা সামান্য) অংশ সমগ্র বিশ্বের
ধন-সম্পদ অপেক্ষা উত্তম
। আল্লাহর রাসুল
(সাঃ) আরো বলেছেন , দিনের
প্রথমার্দ্ধের কোন সময় বা
শেষার্দ্ধের কোন সময়ে আল্লাহর
রাস্তায় বাহির হওয়া সমগ্র
বিশ্বের ধন –সম্পদ অপেক্ষা
উত্তম। -(বুখারী
ও মুসলিম )
আল্লাহ
তা’আলার যিম্মায় জান্নাতে
যাবেঃ হযরত আবু হুরাইরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন
: আল্লাহ তা’আলা সে
ব্যাক্তির দায়িত্ব স্বহস্তে তুলে নিয়েছেন , যে
ব্যাক্তি তারই রাস্তাই বের
হয় । আমারই
রাস্তায় জিহাদ , আমার প্রতি ঈমান
এবং আমার রাসুলের (সাঃ)
এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই
তাকে ঘর থেকে বের
করে । তখন
আমারই যিম্মাই সে আমি তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিব
নতুবা সে তার যে
বাসস্থান থেকে বেরিয়েছিল , তার
পাপ্য সওয়াব গণিমত সহ
তাকে সেখানে ফিরিয়ে আনব
। -(সহীহ মুসলিম)
সর্বাধিক
ভাল লোকঃ হযরত আবু
সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
আমি কি তোমাদেরকে ভাল
লোক আর কে মন্দ
লোক তা জানিয়ে দেব
না? সে ব্যক্তি ভাল
লোকদের মধ্যে অন্যতম, যে
ব্যক্তি ঘোড়া বা উটে
সওয়াব হয়ে বা পায়ে
হেটে সকল অবস্থাতেই মৃত্যু
পর্যন্ত আল্লাহর রাহে কর্মতৎপর থাকে। অপরদিকে
সে ব্যক্তি মন্দ লোকদের অন্যতম,
যে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে
অথচ তা থেকে কোনো
নসিহত কবুল করে না”। -(নাসায়ী)
‘আল্লাহর
পথে জিহাদ’-এর সহযোগীতার
ফজিলতঃ হযরত যায়িদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্র্ণিত।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
: আল্লাহর পথে জিহাদকারীকে যে
ব্যক্তি সরঞ্জাম দেয় সেও মুজাহীদ
দলের অন্তর্ভূক্ত আর মুজাহীদের অবর্তমানে
যে ব্যক্তি তার পরিবার পরিজনের
দেখাশুনা করে সেও মুজাহীদ
দলের অন্তর্ভূক্ত। -(বুখারী
ও মুসলিম)
‘আল্লাহর
পথে জিহাদ’-এর সংকল্পের
ফজিলতঃ হযরত আবু হুরাইরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
করেছেন : যে ব্যক্তি এমন
অবস্থায় মারা গেল যে,
সে জিহাদ করেনি বা
জিহাদের কোন চিন্তাও তার
মনে আসেনি, তার মৃত্যু
হল নিফাকের একটি স্বভাবের উপর। -(ইমাম
মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
জিহাদের
আকাংখী অপারগ ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণের
সওয়াব লাভ করবেঃ হযরত
যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা নবী করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর সাথে কোন এক
যুদ্ধে ছিলাম। তখন
তিনি বললেনঃ "মদীনাতে কিছু লোক রয়ে
গেছে, তোমরা যে পথ
অতিক্রম করছ বা যত
উপত্যকা পাড়ি দিয়েছ,সব
সময় তারা তোমাদের সাথেই
ছিল।অসুস্থতার
কারনে তারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।অন্য
বর্ননায় এসেছেঃ তারাও তোমাদের
মত প্রতিদান যোগ্য হবে।"
-(মুসলিম)
বুখারীর
বর্ননায় আছেঃ হযরত আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা নবী করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে
থেকে ফিরে আসছিলাম,তখন
তিনি বললেনঃ "আমাদের পিছনে মদীনার
কিছু লোক রয়েছে।
আমরা যত গিরিপথ কিংবা
উপত্যকা অতিক্রম করছি,তারাও সব
সময় আমাদের সাথে ছিল।ওযরের
কারনে তারা বাঁধা প্রাপ্ত
হয়েছে।" -(বুখারী ও
মুসলিম)
‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ পরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণতিঃ
‘আল্লাহর
পথে জিহাদ’- এই বিধানটি আল্লাহ
তা’য়ালার পক্ষ থেকে
ফরজ হওয়ার পরও যাদের
মধ্যে এ বিধান পালনের
ব্যাপারে সুদৃঢ় সংকল্প ও
যথেষ্ট তৎপরতার অভাব রয়েছে আল্লাহ
তা’য়ালা তাদেরকে ধমকের
সাথে সতর্ক করে দিয়েছেন
এবং পরিনতি হিসাবে দুনিয়ার
জীবনে চরম লাঞ্ছনা ও
পরকালে কঠিন শাস্তির কথা
ঘোষণা করেছেন। যেমন-
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “হে
ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন
আল্লাহর পথেবের হবার জন্যে
তোমাদের বলা হয়, তখন
মাটি জড়িয়ে ধর,তোমরা
কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে
গেলে? অথচআখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের
উপকরণ অতি অল্প।
যদি বের না হও,
তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ
আযাব দেবেন এবং অপর
জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা
তাঁর কোন ক্ষতিকরতে পারবে
না,আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে
শক্তিমান।” - (সূরা তওবাঃ
আয়াত ৩৮- ৩৯)
তিনি
আরও বলেন : “(হে নবী)! আপনি
বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের
পিতা-মাতা, তোমাদের সন্তান,
তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের
বংশ, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের
এমন ব্যবসা যা বন্ধ
হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং
তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ
কর; আল্লাহ তা’য়ালা
ও তার রাসুল এবং
তার রাস্তায় জিহাদ করা থেকে
অধিক প্রিয় না হয়,
তাহলে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান
আসা পর্যন্ত। আল্লাহ
ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।”
-(সুরা তওবাঃ আয়াত ২৪)
তিনি
আরও বলেন : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের
মধ্যে যে স্বীয় জীবনব্যবস্থা
ত্যাগ করে (তার জেনে
রাখা উচিত), অতি সত্তর
আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়
সৃষ্টি করবেন, যাদের তিনি
ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে
ভালবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি
থাকবে অত্যন্ত সদয় এবং কাফেরদের
প্রতি থাকবে অত্যন্ত কঠোর,
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে
আর কোন নিন্দুকের নিন্দার
পরোয়া করবে না, এটা
আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি যাকে
ইচ্ছা দান করেন, আল্লাহ
ব্যাপকতার অধিকারী ও মহাজ্ঞানী।”-
(সূরা মায়েদা : আয়াত-৫৪)
হযরত ইবন উমার (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
বলতে শুনেছিঃ “তোমরা যদি নিজেদের
মধ্যে ব্যবসা করতে থাক,আর ষাঁড়ের লেজের
পেছনে চলতে থাক, এবং
কৃষক হিসাবেই সন্তুষ্ট হয়ে যাও আর
জিহাদ ছেড়ে দাও, আল্লাহ
তখন তোমাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে
দেবেন যতক্ষন তোমরা তোমাদের
দীনে ফিরে না যাও”। -আবুদাউদ
: সহীহ)
শহীদ কাকে বলে?
উত্তরঃ শহীদ বলা
হয় ঐ ব্যক্তিকে, যাকে
কাফেররা হত্যা করে যেকোন
কারণেই হোক। অথবা
ইসলামী খিলাফতের বিরুদ্ধাচরণকারীর হাতে মৃত্যু অথবা
কাফেরদের সাথে অনুষ্ঠিত যুদ্ধে
মুসলিমদের পক্ষে অংশগ্রহণ করে
মৃত্যু বরণ করা কে
বলা হয় শহীদ।
তাকে শহীদ এজন্য
বলা হয় যে, সে
জান্নাতে সরাসরি রক্ত মাথা
অবস্থায় উপস্থিত হয়ে যায়।
{ফিক্বহুল ইবাদাত, কিতাবুস সালাত, ১০ম অধ্যায়,
জানাযা-১/১২৩}
কুরআনের ভাষায়-
আর যারা আল্লাহর
রাস্তায় নিহত হয়,তাদের
মৃত বলো না।
বরং তারা জীবিত,কিন্তু
তোমরা তা বুঝ না। {সূরা
বাকারা-১৫৩}
কাজেই আল্লাহর কাছে
যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে
বিক্রি করে দেয় তাদের
জেহাদ করাই কর্তব্য।
বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে
লড়াই করে এবং অতঃপর
মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয়
অর্জন করে, আমি তাদেরকে
মহাপুণ্য দান করব।
{সূরা নিসা-৭৪}
এ দুটি আয়াতে
লক্ষ্য করুন আল্লার রাস্তায়
জিহাদরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত বর্ণনা করা
হয়েছে। যাকে
শহীদ বলা হয়।
হাদীসের ভাষায় শহীদ-
হযরত আবু মুসা
রাঃ থেকে বর্ণিত।
এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর
কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল-এক ব্যক্তি গনীমতের
মাল অর্জনের জন্য জিহাদ করল,
একজন নিজের বীরত্বের সুনামের
জন্য জিহাদ করল, একজন
তার বীরত্ব দেখানোর জন্য
জিহাদ করল, এদের মাঝে
কে আল্লাহর পথে প্রকৃত জিহাদ
করল? রাসূল সাঃ ইরশাদ
করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর
কালিমা বুলন্দ করার জন্য
জিহাদ করল, সে প্রকৃত
মুজাহিদ। {সহীহ
বুখারী, হাদীস নং-২৬৫৫,
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫০২৯}
হযরত সাঈদ বিন
যায়েদ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-”যে ব্যক্তি নিজ
সম্পত্তি রক্ষায় নিহত হয় সে
শহীদ। যে
ব্যক্তি নিজ পরিবার রক্ষায়
নিহত হয় সেও শহীদ। অথবা
প্রাণ রক্ষায় কিংবা দ্বীন রক্ষায়
নিহত হয় সেও শহীদ। (সুনানে
আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৭৭৪, মুসনাদে আহমাদ,
হাদীস নং-১৬৫২)
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় যারা শহীদ হন
তাদের বলা হয় শহীদ। এটা
হল সত্যিকার শহীদ। রাসূল
সাঃ কতিপয় ব্যক্তিকে হুকুমের
দিক থেকে শহীদ বলেছেন। প্রকৃত
শহীদ নয় বরং শহীদের
কাছাকাছি মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। যেমন
হাদীসে রয়েছে-
হযরত জাবের বিন
আতীক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল
সা. ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর
পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত
প্রকার শহীদ রয়েছে।
১-মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ২-পানিতে নিমজ্জিত শহীদ। ৩-শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ।
৪-পেটের রোগ মৃত্যুবরণকারী
শহীদ। ৫-আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ। ৬-যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের
নিচে পড়ে মারা যায়
সেও শহীদ। ৭-সন্তান প্রসব করতে
মারা যাওয়া নারীও শহীদ। {মুয়াত্তা
মালিক, হাদিস নং-৫৫৪,
৮০২, আল মু’জামুল
কাবীর, হাদিস নং-১৭৮০,
সহীহ কুনুজু সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ,
হাদিস নং-২৩}
ইসলামে শহীদ দুই প্রকার :
১। হাকিকী
(প্রকৃত)
২। হুকমী
১। হাকিকী
শহীদ হচ্ছে তারা, যারা
দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্য কাফের-মুশরিক বা
মুনাফিকদের হাতে নিহত হন
বা আহত হয়ে পরে
নিহত হন।
২। হুকমী
শহীদ হচ্ছে তারা, যারা
আল্লাহর উপর ঈমান রেখে
অন্য কোন কারণে নিহত
হওয়াকে বুঝায়। (যা
কুরআন-হাদীছ সম্মত)।
যেমন-সন্তান প্রসব করতে
মারা যাওয়া মা।
১৯৭৫
সালের ১৫ আগস্ট এ বঙ্গ বন্ধু ও তার পরিবারের লোকজন যে কারনে ও যে ভাবে খুন হয়েছেন শহীদ
এর সজ্ঞা অনুসারে তারা কেহই শহীদ নয়। কারন তাদের মৃত্যু ছিল তাদের পাপের ফল। বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামালীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, মোনাফেক মাওঃ নুর মুহম্মদ আহাদ আলী. সরকার একবার দাবী করেছিল শেখ মুজিব এর নামের আগে
শহীদ নাম বসাতে। কিন্তু আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধী বলে তাদের নেতারা এটা গ্রহণ করে
নি। তবে মোনাফেক কিছু মুসলমান শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেসা নাম দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান
খুলেছে। আসলে এরা কেহই শহীদ নহে।
অমুসলিমরা শহীদ নয় কেন?
উত্তরঃ শহীদ ইসলামীক
দৃষ্টিতে খুবই মর্যাদাবান ও
তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ।
এটি ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা।
শহীদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই
জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকে।
শহীদ কোন সামাজিক
বা রাজনৈতিক পরিভাষা নয়। তাই
এটার যত্রতত্র ব্যবহার কিছুতেই কাম্য নয়।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, নাস্তিক-মুরতাদ সকলের জন্যই
এ শব্দ ব্যবহার করা
একটি ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।
শহীদ ছাড়া আর
কোন শব্দ নেই? ইসলাম
নির্ধারিত একটি ইবাদত সম্পর্কিত
শব্দকে যাচ্ছে তাই ভাবে
ব্যবহারতো ইসলাম অবমাননার শামিল।
বিশেষ করে যারা
নাস্তিক, ধর্মদ্রোহী কিংবা রাজনৈতিক হীন
লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে মারা
গেছে তাদের শহীদ বলাটা
ইসলামের এ মর্যাদাপূর্ণ শব্দকে
নিয়ে তামাশা করা ছাড়া
আর কিছু নয়।
শহীদ হতে হলে সর্বপ্রথম
আল্লাহ ও তার রসূল
(স) এর প্রতি ঈমান
আনার পর শহীদ হতে
হবে।
শহীদ হয় আল্লাহ
তায়ালার জন্য। যারা
আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তারা
কিভাবে শহীদ হয়?
অনৈসলামিক দলের কথিত মুসলিমরা প্রকৃত ইমানদার
বা প্রকৃত মুসলিম নয়। তারা আল্লাহ ও রাসুল(সঃ) এর হুকুম পুরোপুরি মানে না। কোরআনের
কিছু আয়াত মানে শুধু লোক দেখানোর জন্য।এ জন্য অনৈসলামিক দলের লোক যে কারনেই হোক মারা
গেলে তারা কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী শহীদ নয়।তাদের মৃত্যু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
নয়।
‘আল্লাহর পথে শাহাদাত’-এর ফজিলত
জিহাদের
ময়দানে বা অন্যত্র আল্লাহর
হুকুম ছাড়া কেউ মরতে
পারে নাঃ মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “আল্লাহর
হুকুম ছাড়া কেউ মরতে
পারে না-সেজন্য একটা
সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ
যে লোক দুনিয়ায় বিনিময়
কামনা করবে, আমি তাকে
তা দুনিয়াতেই দান করব।
পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে
বিনিময় কামনা করবে, তা
থেকে আমি তাকে তাই
দেবো। আর
যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি
প্রতিদান দেবো।” - [সূরা
আল-ইমরানঃ আয়াত-১৪৫]
শহীদগণ
আল্লাহর কাছে জীবিতঃ মহান
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন
: “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়
তাদেরকে কখনই তোমরা মৃত
মনে করোনা, বরং তারা
তাদের আল্লাহর দৃষ্টিতে জীবিত ও তারা
(আমি আল্লাহর) কাছ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত
হয়ে থাকে। আল্লাহ
নিজ দয়ায় তাদের যা
দিয়েছেন তাতে তারা মহা
আনন্দিত। এবং
তাদের পিছনে যারা এখনো
তাদের সাথে মিলিত হয়নি
তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ
করে এ জন্য যে,
তাদের কোনো ভয় নেই
এবং তারা দু:খিতও
হবেনা। তারা
আল্লাহর আনন্দ প্রকাশ করে
তাঁর উপকার ও অনুগ্রহের
জন্য, এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ
বিশ্বাসীদের কর্মফল বিনষ্ট করেন
না।” -(সূরা-আল্ ইমরানঃ ১৬৯-১৭১)
তিনি আরও বলেন : “হে
মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও
নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই
আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
আর যারা আল্লাহর রাস্তায়
নিহত হয়, তাদের মৃত
বলো না। বরং
তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা
তা বুঝ না।
এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে
পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়,
ক্ষুধা, মাল ও জানের
ক্ষতি ও ফল-ফসল
বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে
সুসংবাদ দাও সবরকারীদের জন্য।” -[আল
কুরআনঃ সূরা আল বাক্বারাহঃ
আয়াত ১৫৩-১৫৫]
শহীদদের
মৃত্যু কষ্ট হবে নাঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মওতের ছোঁয়া একজন শহীদের
কাছে তেমন, যেমনটি তোমাদেরকে
কেউ চিমটি কাটলে অনুভব
করে”। -(তিরমিযী,
নাসায়ী ও দারেমী)
কবরের
প্রশ্ন করা হবে নাঃ
হযরত রাশেদ বিন সা’দ জনৈক সাহাবী
থেকে বর্ণনা করেছেন- কোনো
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর
রাসূল! কবরে সকল মুমিনের
পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের
হবে না, এর কারণ
কি? হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) জবাবে বলেন: তার
মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই
তার পরীক্ষার জন্যে যথেষ্ট”।
-(নাসায়ী)
দুনিয়ায়
ফিরে এসে বার বার
শহীদ হতে চাইবেঃ হযরত
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর
সে দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে
না, যদিও দুনিয়ার সবকিছু
তার হয়ে যায়।
কিনতু শহীদ ব্যতীত, শহীদ
চাইবে দুনিয়াতে আবার ফিরে আসতে,
অতঃপর সে দশবার শাহদাত
বরণ করতে (একাধিকবার)।
যেহেতু সে উহার ফজিলত
ও মর্যাদা দেখতে পেয়েছে।
-(বুখারি ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আবু হুরায়রা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, জিহাদ সম্পর্কিত একটি
দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে প্রিয় নবী করীম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“সেই আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে
আমার জীবন, আমর মন
তো চায় আল্লাহর পথে
আমি শহীদ হই, আবর
জীবিত হই, আবার শহীদ
হই, আবার জীবিত হই
এবং আবার শহীদ হই”। -(বুখারী
ও মুসলিম)
হত্যাকারী
ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই
যখন জান্নাতীঃ হযরত আবু হুরাইরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা
ঐ দু'টি লোককে
দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে
একজন অপর জনকে হত্যা
করে এবং দুজনই জান্নাতে
প্রবেশ করবে। নিহত
ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা
অবস্থায় ( কোন কাফের কর্তৃক
) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে
আল্লাহ্ তা'আলা হত্যাকারী
কাফেরকে তাওবাহ করার তৌফিক
প্রদান করেন। ফলে
সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন
করে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়। - [ সহীহ বুখারীঃ
২৮২৬ ; মুসলিমঃ ১৮৯০ ; নাসাঈঃ ৩১৬৫,
৩১৬৬৬ ; ইবনে মাজাহঃ ১৯১
; মুসনাদে আহমদঃ ৭২৮২,২৭৪৪৬
, ৯৬৫৭, ১০২৫৮ ; মুয়াত্তা মালিকঃ ১০০০]
আল্লাহর
পক্ষ হতে শহীদদের জন্য
সাতটি পুরষ্কারঃ হযরত উবাদ ইবনে
সামেত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন শহীদ আল্লাহর
পক্ষ হতে সাতটি পুরষ্কার
লাভ করেন-
১) তার রক্তের প্রথম
ফোঁটা পতনের সাথে সাথে
তাকে ক্ষমা করে দেওয়া
হবে।
২) তিনি জান্নাতে তাঁর
মর্যাদা দেখতে পারেন
৩) ঈমানের পোশাকে তাকে
আচ্ছাদিত করা হয়ে থাকে।
৪) তাকে কবরের আযাব
থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
৫) হাশরের ময়দানের ভয়াবহ
চিন্তা-উতকন্ঠা থেকে নিরাপদে থাকবেন।
৬) তার মাথায় একটি
সম্মানের মুকুট স্থাপন করা
হবে।
৭) তিনি তাঁর পরিবারের
সত্তর জন সদস্যের জন্য
শাফায়াত করা সুযোগ পাবেন।
-{মুসনাদ
আহমাদ, তাবারানী, আত তারগীব ওয়া
তারহীব-২/৪৪৩}
শ্রেষ্ঠতম
শহীদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ "সমুদ্রের শহীদান, আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান ও
দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান
হল মহান আল্লাহর নিকট
শ্রেষ্ঠতম শহীদ |" -(আল ফিতান,খণ্ড
২,পৃষ্ঠা ৪৯৩)
শাহাদাতের
আকাংখীগণও শহীদদের মর্যাদা পাবেঃ হযরত সাহল
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
: যদি কোন ব্যক্তি খাঁটি
দিলে শাহাদাতের জন্য দোয়া করে
স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও আল্লাহ
তাকে শহীদদের স্তরে পৌঁছিয়ে দেন। -(সহীহ
মুসলিম)
অন্যান্য
ধরণের শহীদদের বিবরণঃ হযরত আবুল
আ’ওআর সাঈদ ইবনে
জায়েদ হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কে বলতে শুনেছি : “যে
ব্যক্তি তার মাল-ধন
রক্ষা করতে গিয়ে খুন
হয়, সে শহীদ ।
যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রান)
রক্ষা করতে গিয়ে খুন
হয়, সে শহীদ ।
যে তার দ্বীন রক্ষা
করতে গিয়ে খুন হয়,
সে শহীদ এবং যে
তার পরিবার রক্ষা করতে
গিয়ে খুন হয়, সেও
শহীদ ।” -[আবু
দাউদঃ ৪৭৭২, তিরমিযীঃ ১৪১৮]
“আল্লাহর পথে জিহাদ”-কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে
জিহাদ
সমাপ্তি ঘটেনিঃ হযরত সালমা
ইবনে নাফীল রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা আমি রাসূলূল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর
খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে
এক ব্যাক্তি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খিদমতে এসে আরজ করলেন,
হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঘোড়াসমুহ ছেড়ে দিয়েছি, আস্ত্রসমুহ
স্বযত্নে রেখে দিয়েছি এবং
কিছু সংখ্যক লোক ধারণা
করছে যে যুদ্ধ-জিহাদ
সমাপ্তি ঘটেছে। একথা
শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন যারা
ধারণা করছে জিহাদ সমাপ্ত
হয়েছে তারা মিথ্যার উপর
রয়েছে। কেননা
জিহাদ তো কেবল মাত্র
শুরু হয়েছে। আমার
উম্মতের একটি জামা'আত
সর্বদা আল্লাহ তা'আলার
রাহে জিহাদ করতে থাকবে। আর
তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের তাদের কোনই
ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ
তা'আলা তাদের জন্য
সর্বদা কিছু লোকের অন্তর্কে
বক্র করে রাখবেন যাতে
তাদের মাধ্যমে মুজাহিদগণের রিযিকের ব্যবস্থা হয় অর্থাৎ উম্মতের
একদল মুজাহিদ সর্বদা কাফেরদের সাথে
লড়াই করবে এবং তাতে
কাফেরদের মাল গণিমত হিসাবে
মুজাহিদীনে কেরামের হাতে আসবে, এর
দ্বারা তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত
জিহাদ চালিয়ে যাবে এবং ঘোড়ার
কপালে কিয়ামত পর্যন্ত সর্বদার জন্য মঙ্গল রেখে
দেয়া হয়েছে, আর ইয়াজুজ-মাজুজ
এর আবির্ভাব পর্যন্ত চলতে থাকবে।
-(নাসায়ী শরীফ-কিতাবুল জিহাদ)
হিন্দুস্তানে
ও দজ্জালের বাহিনীর সাথে যুদ্ধঃ হযরত
নাহীক ইবনে সারীম রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ নি:সন্দেহে তোমরা
(হিন্দুস্তানে) মুশরিকদের সংগে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের
বেচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন
(জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের
সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই
যুদ্ধে তোমরা পূর্বদিকে অবস্থান
গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের
অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।" -(আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা
৪৭৬)
শেষ মহাযুদ্ধ হবে দাজ্জালের সাথেঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : "সমুদ্রের শহীদান, আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান ও
দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান
হল মহান আল্লাহর নিকট
শ্রেষ্ঠতম শহীদ |" -(আল ফিতান,খণ্ড
২,পৃষ্ঠা ৪৯৩)
ইয়াহুদীদের
বিরুদ্ধে চুড়ান্ত যুদ্ধঃ হযরত আবূ
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা ঈয়াহুদীদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া
পর্যন্ত এবং পাথরের আড়ালে
লুকানো ইয়াহুদি সম্পর্কে উক্ত পাথর এ
কথা না বলা পর্যন্ত
কিয়ামত হবে না ।
হে মুসলিম! এই (দেখ) আমার
আড়ালে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে, একে
হত্যা কর । -(বুখারীঃ
হাদীস নং – ২৯২৬)
কিয়ামত
পর্যন্ত হকপন্থীগণ বিজয়ী হবেঃ হযরত
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
: আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই
হক্বের পক্ষে লড়াই করবে
এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবে। - (সহীহ
মুসলিমঃ হাদীস নং-৫০৬৩)
অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
: আমার উম্মাতের একদল লোক সর্বদা
দ্বীনে হকের ওপর বিজয়ী
হয়ে থাকবে। যারা
তাদের সহায়তা করা ছেড়ে দেবে
তারা তাদের কোন ক্ষতিই
করতে পারবে না।
আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত তারা
এভাবেই হকের ওপর অবিচল
থাকবে। - (সহীহ মুসলিমঃ
হাদীস নং-৪৭৯৮)
আল্লাহ
তা’য়ালা আমাদের সবাইকে
বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য তাঁর এ
কল্যাণময় বিধান ‘আল্লাহর পথে
জিহাদ’ সঠিকভাবে অনুধাবন করার এবং শাহাদাতের
তামান্নায় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সুন্নাহ মোতাবেক জীবনের পথে পথে
মেনে চলার তৌফিক দিন!
আ-মী-ন।
জিহাদ ও হত্যা নিয়ে অনৈসলামিক দল তথা আওয়ামী আলেম-
ওলামাদের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যঃ-
পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত জিহাদের মাধ্যমেই।সত্য
প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নবি (সাঃ) কে জিহাদ করতে হয়েছে।হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও খৃষ্টানরা
খুব ভালো করেই জানে যে, মুসলমানরা একত্রিত হলে বা একতা বদ্ধ হলে তারা অসম্ভবকে সম্ভব
করে ফেলে।তাই আমেরিকাসহ পশ্চিমা গোষ্ঠীরা উঠে পড়ে লেগেছে কিভাবে পৃথিবীর সব ইসলামি
সংগঠনগুলো ধ্বংস করা যায়।ইসলামের শত্রুরা এ কাজে অনৈসলামিক দলের মুসলমানদেরকে ব্যবহার
করছে। মোনাফেক এই মুসলমানরা নিজেদের ইমান আমল বিসর্জন দিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও
খৃস্টানদের সহযোগীতায় ইসলাম ধবংস করে যাচ্ছে।হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও খৃস্টানরা এ কাজে
অনেকটা সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ইরাকসহ পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের অনুসরনীয় ও
অনুকরনীয় সরকার ক্ষমতায় বসাতে সক্ষম হয়েছে।বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এক শেখ
হাসিনাই বাংলাদেশে ইসলাম ধ্বংসের জন্য যথেষ্ঠ।এ কারনেই পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানরা আজ
দুটি ভাগে বিভক্ত।এক ভাগ ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে আর এক ভাগ ইসলাম প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার বিপক্ষে। বিপক্ষ মোনাফেক মুসলমানদের মধ্যে ইহুদি ও খৃষ্টানদের মতোই জিহাদ নিয়ে
আতংকে দিন কাটে।তাই কোরআন ও হাদিসকে অপব্যাখ্যা করে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির
মধ্যে ফেলতে শেখ মুজিব ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছে।বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
ইফা ডিজি মোনাফেক/মুরতাদ শামিম আফজাল সরকারীভাবে ইসলাম বিরোধী বই পুস্তক ছাপানো, শামিম
আফজাল এর তত্বাবধানে অনুষ্ঠানে মসজিদের ইমামদের ডেকে এনে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে মহিলা
নাচানো ও গান গা্ওয়া,খুতবা পাল্টানো ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী অপকর্ম ও অশ্লীলতা সমাজ ও
রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করে যাচ্ছে। শোলাকিয়া ইদগাহের ইমাম কথিত মাওলানা ফরিদ উদি্দন মাসুদ
শেখ হাসিনার
নির্দেশে শত শত আওয়ামী আলেমদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন
মসজিদে, টিভি টক শোতে. বিভিন্ন আওয়ামী জন সভায় জিহাদ ও হত্যা সংক্রান্ত কোরআন-হাদিসকে
অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারন মুসলিমদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে তাদেরকে শয়তানের পথে ডাকছে।আওয়ামী
আলেমদের অপব্যাখ্যা ও তার যুক্তিখন্ডন নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
আল্লাহ তাআলা
বলেন-
(১) “যে কোন লোক কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম। সে চিরকালই সেখানে থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হন এবং তার প্রতি অভিশাপ করেন। উপরন্তু তিনি তার জন্য কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [আল কুরআন- ৪:৯৩]
(১) “যে কোন লোক কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম। সে চিরকালই সেখানে থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হন এবং তার প্রতি অভিশাপ করেন। উপরন্তু তিনি তার জন্য কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [আল কুরআন- ৪:৯৩]
(২) “আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না”(সুরা বনী ইস্রইল-৩৩)।
(৩) মহানবী স. বিনা অপরাধে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। বিদায় হজ্জের ভাষনে এটি সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি আরো বলেছেন-“যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ স. আল্লাহর রাসূল, তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা সম্পূর্ণ হারাম ১. হত্যার বদলে হত্যা বা কেসাস ২. বিবাহিত অবস্থায় যেনা করার জন্য হত্যা ৩. ধর্ম ত্যাগ করার জন্য হত্যা” (মিশকাত)।
(৪) মানুষ হত্যা, গুম ও অপহরণকে ইবাদত কবুল না হওয়ার কারণ হিসেবে বর্ণনা করে মহানবী স. বলেন-“হত্যাকারীর ফরয-নফল কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না”(তিরমিযি)।
শুধু তাই নয় একজন মানুষকে বিনা কারণে হত্যাকে গোটা মানব জাতিকে হত্যার অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।
(৫) পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-“নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করল আর যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে” (সুরা মায়িদা-৩২)।
(৬) পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-“কেউ স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম”(সুরা আন্-নিসা-৯৩)। আল্লাহ তায়ালা নরহত্যাকে ঘৃনিত কাজ উল্লেখ করেছেন।
(৭) হাদিসেএসেছে-“একজন মুসলমান হত্যা করা অপেক্ষা আল্লাহর দরবারে সমগ্র দুনিয়া ধ্বংস করা সমধিক সহজ কাজ”(তিরমিযি)।
(৮) কিয়ামেতের দিন সকল বিচারের আগে যে বিচার কাজ সমাধা হবে তা হলো মানুষ হত্যা। মহানবি স. বলেন-“কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত”(বুখারি ও মুসলিম)।
(৯)‘হত্যা’ সমাজে ধ্বংস ডেকে আনে। মাহনবি স. বলেন-“যে সাতটি জিনিস মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে, তার মধ্যে দু’টি হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা ও মানুষ হত্যা করা” (সহীহ মুসলিম)।
এ রকম আরো অনেক কোরআন ও হাদিস দ্বারা আওয়ামী হুজুরগণ ইসলামি
আন্দোলনের কর্মীদেরকে হত্যাকারী আখ্যায়িত করার চেষ্টা করে আসছে।কোরআন ও হাদিসে অপহরণ,খুন,গুম,ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও সমাজে ত্রাস সৃষ্টি সংক্রান্ত যে সব আয়াত নাজিল হয়েছে তা মূলত বাংলাদেশের
প্রেক্ষিতে আওয়ামী সমস্ত নেতা কর্মী,আওয়ামী আলেম,মাওলানা,পীর-আউলিয়া, আওয়ামী
জঙ্গি,আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী প্রশাসনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ২০০৯ সাল থেকে এ
পর্যন্ত যতো অপহরণ, খুন, গুম,ফেতনা-ফ্যাসাদ, রাতের অন্ধকারে বাসে আগুন দেয়া,শাপলা চত্ত্বরে বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে
হেফাজতের হাফেজ-মাওলানাদের নির্বিচারে
গুলি করে হত্যা করা, মানবিক বিপর্যয় ও সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করে প্রহসনের
নির্বাচন করা, বিনা বিচারে ক্রস ফায়ারের নামে মানুস হত্যা করা হচ্ছে তার সবগুলোর সাথে
আওয়ামী সব নেতা কর্মী,আওয়ামী আলেম-মাওলানা,আওয়ামী জঙ্গি,আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী
প্রশাসনের লোক জড়িত। কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত অপকর্মের কারনে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা আওয়ামীলীগ এর উপরই
বর্তাবে।
আওয়ামীরা বলে থাকে যে জিহাদ সেকেলে। এখন জিহাদের
প্রয়োজন নেই। আসলে জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে যতো দিন না সমাজ ও রাষ্ট্রে কোরআনের
আইন প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) বলেন,জায়েদ ইবনে
আসলাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পিতা
থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ "যতক্ষণ পর্যন্ত আসমান
থেকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়বে,ততক্ষন
পর্যন্তই সতেজ ও (চির)
সবুজ রুপে জিহাদ চলবে। আর
মানুষের উপর এমন এক
সময় আসবে, যখন তাদের
মধ্যকার কুরআন তিলাওয়াতকারীরা বলবেঃ
'এখন জিহাদের সময় নয় ' অতএব,
যে কেউ সেই সময়ে
থাকবে জিহাদের জন্য সেটাই সর্বোত্তম
সময়। তাঁরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বললঃ "ইয়া
রাসুলুল্লাহ ! সত্যই কি কেউ
এমন বলবে?" তিঁনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ "হ্যাঁ , তার উপর আল্লাহ্*র লানত এবং
ফেরেশতাকুল ও সমগ্র মানবজাতির
লানত।"
[উসুল
আস সুন্নাহ মুরসালানে ইবনে যামনীন থেকে
বর্ণিত এবং আনাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে ইবনে আসাকির
মারফু সুত্রে বর্ণনা করেছেন]
“মুশরিকদের
যেখানে পাবে হত্যা করবে,
তাদের বন্দী করবে, অবরোধ
করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে
তাদের জন্য ওঁৎ পেতে
থাকবে। কিন্তু
তারা যদি তওবা করে,
সালাত কায়েম করে এবং
যাকাত দেয় তবে তাদের
পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয়ই
আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম
দয়ালু।”[সূরা
আত তাওবাহ,০৯#০৫]
“এবং তোমরা তাদের
বিরুদ্ধে ক্বিতাল করতে থাকবে যতক্ষন
না ফিৎনা দূরীভূত হয়
এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত
হয়..।”[সূরা
আনফাল, ০৮#৩৯]
“তাদের
সাথে যুদ্ধ করবে, যে
পর্যন্ত না তারা নত
হয়ে স্বহস্তে জিজিয়া দেয়।”[সূরা আত তাওবাহ,০৯#২৯]
অতএব ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা সারা জীবন,সারা বছর ধরেই জিহাদের
কাজ চালিয়ে যাবে, যতোক্ষণ না ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয। এটা আল্লাহ ও রাসুল (স:) এর হুকুম।
জিহাদের ময়দানে বাঁধাদানকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা আল্লাহ
ও রাসুল (সাঃ) এর হকুম।এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাঁধাদানকারী কারা? ইসলামের শুরু থেকেই ইহুদী,
খৃস্টান, নাসারা ও মুশরেকরা ইসলামের মূল বাঁধাদানকারী হিসেবে দেখে আসছি।বর্তমান যুগে
ইহুদী ও খৃস্টানরা কথিত জঙ্গি দমনের নামে সারা বিশ্বে মূলত মুসলমানদেরকেই নির্বিচারে
হত্যা করছে।ইহুদী ও খৃস্টানরা ইসলাম ধ্বংস করার জন্যে পৃথিবীর সব অনৈসলামিক দলের কথিত
মুসলিম নেতাদেরকে আর্থিক ও অস্ত্র সহযোগিতা দিয়ে ক্ষমতায় বসাচ্ছে।এখন এই সব অনৈসলামিক
দলের কথিত মুসলিম নেতাদেরকে দিয়েই ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।তাই
ইসলামের দুশমন হচ্ছে ইহুদী,খৃস্টান ও অনৈসলামিক দলের কথিত মুসলিম নেতাগণ।
কোরআনে মুমিন ব্যক্তিকে হত্যার কথা বলা হয়েছে। ইসলামি আন্দোলনের
কর্মীরা যাদেরকে হত্যা করে তারা মুমিন ব্যক্তি নয়।এরা ঐ বাঁধাদানকারী।আর ইচ্ছেকৃতভাবে
ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা কাউকে হত্যা করে না।এই সব নিয়ম নীতি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই
ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা জিহাদী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামীরা কোরআন ও হাদিসকে
বিকৃত করে যে সব বই লেখেছে কিংবা কোন জনসভা বা আওয়ামী মসজিদে যখন কোরআন ও হাদিসকে অপব্যাখ্যা
করার চেষ্টা করে তখন তারা সঠিকভাবে অপব্যাখ্যামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারে না।কারন
কোরআন ও হাদিসগুলো অন্যায়ের বিপক্ষে অর্থাৎ আওয়ামীলীগের বিপক্ষেই।তাই পক্ষে নেয়ার চেষ্টা
করেও তারা পারে না।তাদের অপব্যাখ্যার বিষয়ে নবি (স:) বলেনঃ-
“যে
ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র
করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের
ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি
কোরআনের নির্দেশ অনুসারে
স্বীয় মতবাদ স্থির করে
না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে
ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত
তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
বাংলাদেশে ইসলামি আন্দোলনের
কর্মীদেরকে শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী প্রশাসন যে ভাবে নাটক সাজিয়ে অপহরন, খুন ও গুম
করে যাচ্ছে তার সব হিসেব আমাদের নিকট আছে। তবুও এদের সবাইকে তওবা করে ইসলামের ছায়াতলে
আসার আহবান করছি, নইলে ইসলামের শত্রুদের কতল করা হবে।