Friday, November 23, 2018

ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা
লেখকঃ মাওলানা মোঃ শিহাব,এম এ, ইসলামিক স্টাডিজ ( বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)
প্রতিনিয়ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষের ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় কিছু না কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে। মানুষের বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি থাকা সত্বেও শয়তান যেহেতু সব সময় মানুষের পিছনে লেগে থাকে তাই অনেক সময় শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ অনেক অপরাধ করে থাকে। মানুষ যাতে সহজ সরল সঠিক পথে চলতে পারে সে জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবি রাসুল প্রেরণসহ আসমানি কিতাব নাযিল করে দিয়েছেন। নবি রাসুলগণ জীবিত থাকাবস্থায় তাঁরা জাতিকে হাতে কলমে অর্থাৎ বাস্তবে দেখিয়ে দিতেন কিভাবে অন্যায় থেকে বিরত থাকতে হয় আর কিভাবে সৎপথে চলতে হয়। তাঁরা আজ জীবিত নেই কিন্তু রেখে গেছেন আসমানী কিতাব। আমরা যেহেতু শেষ নবি হযরত মুহম্মদ সা: এর উম্মত তাই আমরা মুসলমান হিসেবে পবিত্র আল কোরআন ও হাদিসসমূহ অনুসরণ করব এবং মেনে চলব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল আইনের উৎস হচ্ছে আল কোরআন। নবি করিম সা: একদিকে যেমন ছিলেন ধর্ম প্রচারক আবার অন্য দিকে ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক। একটা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র কিভাবে গঠন করতে হয় তার নমূনা বা দৃষ্টান্ত নবি সা: এই পৃথিবীর মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আল কোরআনের চেয়ে উত্তম সংবিধান বা আইন শাস্ত্র পৃথিবীতে আর নেই।
রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনায় মুসলমানদের সংবিধান হবে আল কোরআনঃ
১। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি পূর্ণ কোরআন শরীফ পরম সত্যতার সাথে এ জন্যেই নাযিল করেছি যে, তুমি সে অনুযায়ী মানুষের উপর আল্লাহর প্রদর্শত পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং বিচার ফায়সালা করবে।(কোরআনকে যারা এ কাজে ব্যবহার করতে চায় নি তারা এ মহান আমানতের খিয়ানত করে) তুমি এ খিয়ানতকারীদের সাহায্য পক্ষ সমর্থনকারী হয়োনা। (নিসা:১০৫)
২| আল্লাহ বলেন, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের মধ্যে ফায়সালা করো, তাদের মনের খেয়াল খুশী ও ধারনা বাসনা অনুসরন করো না।( মায়েদা:৪৯)
৩। আল্লাহ বলেন, তুমি কি জান না যে, আকাশ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর। (বাকারাঃ১০৭)
এতদ বিষয়ে আরো অনেক কোরআনের আয়াত রয়েছে।
৪। নবি (সাঃ) বলেন, আল্লাহর কোরআন- আল্লাহর দেয়া বিধানই বাঁচবার একমাত্র উপায়। তাতে অতীতের জাতিগুলোর ইতিহাস আছে, ভবিষ্যতের  মানব বংশের অবস্থা ও ঘটনাবলী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এবং বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে তোমাদের পারস্পরিক বিষয় সম্পর্কীয় রাষ্ট্রীয় আইন কানুনও তাতে রয়েছে। বস্তুতঃ উহা এক চূড়ান্ত বিধান, উহা কোন বাজে জিনিস নহে।(তিরমিজি)
৫। রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই বিধান অনুসারে জীবন যাপন করবে, সে উহার প্রতিফল লাভ করবে।যে উহার অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তার শাসন সুবিচার পূর্ণ হবে এবং যে উহাকে দৃঢ় রুপে আকড়িয়ে ধরবে সে সঠিক এবং সত্যিকার কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারবে।
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আইনের উৎস হচ্ছে চারটি। যথা: কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস।
উল্লেখিত চারটি পন্থায় মুসলিম নেতৃবৃন্দকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র শাসন করতে হবে। কোনো মানবরচিত আইনে রাষ্ট্র শাসন করা যাবে না। যে সকল নামধারী মুসলমান নেতৃবৃন্দ কোরআনের আইন বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী আইন অনুসরণ করে ও বাস্তবায়ন করে এবং তাদেরকে যারা সমর্থন করে বা মানব রচিত আইন বা্স্তবায়নে ভোট দেয় তারা সকলেই জাহান্নামী, যদিও তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে।
আমরা এখন আলোচনা করব, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধের ইসলামি আইনে ও মানবরচিত আইনে শাস্তি সম্পর্কে। মানবরচিত আইনকে সমর্থন দিলে মুসলমান কিভাবে বেইমান, মোনাফেক, নাস্তিক ও মুরতাদ তথা আল্লাহদ্রোহী হয়ে যায় তা জানতে পারবেন।যদিও এইসব মুসলিম সমর্থক ও নেতাগণ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দান খয়রাত করে, মাথায় টুপি রাখে ও হজ্জ পালন করে।
কোরআন হাদিস বিশ্লেষণ করলে জানা যায়, প্রত্যেকটি অপরাধের তিনটি করে দিক আছে।
১। প্রথমত অপরাধ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এরপরও যদি কেহ অপরাধ করেই ফেলে তাহলে তার শাস্তি হচ্ছে ২টি। যথা:
২। ইহকালীন বা শরিয়াহ আইনে শাস্তি এবং
৩। পরকালীন শাস্তি।
পরকালীন শাস্তি থেকে নিস্তার পেতে ইসলামের বিধান হচ্ছে, সেই অপরাধ দ্বিতীয়বার আর কোনো দিন সে করবে না,  এ মর্মে খুবই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করা। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার মনের গতি বিধি লক্ষ্য করে ইচ্ছে করলে মাফ করেও দিতে পারেন।
এখন কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের অনৈসলামিক দলের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রকার মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দিস, মসজিদের ইমাম- খতিব, কথিত পির-আউলিয়া ও ইসলামিক বক্তা কিংবা বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদগণ তাদের বক্তব্যে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সংঘটিত হওয়া অপরাধগুলোর পরকালীন ও নিষেধমূলক কোরআন হাদিসগুলোই বলেন  কিন্তু   শরিয়াহ আইনে  ইহকালীন শাস্তির কথা কাউকে বলতে শোনা যায় না। অনৈসলামিক দলের সকল মুসলিম নেতা কর্মী ও মাওলানারা যদি
শরিয়াহ আইনমূলক কোরআন-হাদিসগুলো বাস্তবায়নের জন্যে কথা বলতেন বা দাবী করতেন তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে অপরাধ বলতে কিছু থাকতো না। আসলে  অনৈসলামিক দলের সকল মুসলিম নেতা কর্মী ও মাওলানারা কোরআনের কিছু আয়াত মানে আর কিছু আয়াত মানে না। এজন্য কিয়ামতে এদেরকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করা হবে।
আল্লাহ বলেন:
১) “ তোমরাকি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে বে-খবর নন “। (বাকারা-৮৫)
২) “হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোকনিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না।তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতিদানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।” (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
৩। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
৪। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীাতর দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনেসুনিদিষ্ট কতিপয় অপরাধের শাস্তির বিধানঃ
হদ্দ ইসলামি আইনের একটি পরিভাষা, যা সুনিদিষ্ট কতিপয় অপরাধ ও সেগুলোর জন্য নির্ধারিত শাস্তিকে বুঝায়।
আল্লাহর অধিকার লংঘনের দায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যে শাস্তি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, শরিয়তের পরিভাষায় তাকে হদ্দ বলে।
একটি রাষ্ট্র বা সমাজ কিভাবে চলবে এবং কেহ অপরাধ করলে তার ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি কী হবে তার সব নিয়ম কানুন বা আইন কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন। নবি করিম (সাঃ) একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে কোরআনের আইন সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন, যেনো আমরা মুসলমানরা সেই অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারি।

ইসলামি আইনে হদ্দের প্রকারভেদঃ
শাস্তির অর্থে হদ্দ কয়েক প্রকার। যেমন:
১। মৃত্যুদন্ড
২। বেত্রাঘাত করা
৩। শূলীবিদ্দ করা
৪। তরবারির দ্বারা শিরচ্ছেদ করা
৫। পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা
যেমনঃ যিনা বা ধর্ষণের অপরাধে প্রদত্ত মৃত্যুদন্ড পাথর নিক্ষেপে, ডাকাতির অপরাধে মৃত্যুদন্ড শূলীবিদ্দ করে বা তরবারির আঘাতে এবং ধর্মত্যাগ এর অপরাধে মৃত্যুদন্ড তরবারির আঘাতে শিরচ্ছেদ করে কার্যকর করা হয়। হাত কাটার শাস্তি কেবল চুরির অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যিনার মিথ্যা অপবাদ আরোপের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত , অবিবাহিত যিনাকারীর শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং মদ্যপের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত। ডাকাতির অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধের ধরণ ও তীব্রতার বিবেচনায়  মৃত্যুদন্ড ব্যতীত বিপরীত দিক থেকে হস্তপদ কর্তন ও নির্বাসন দন্ড অনুমোদন করা হয়েছে। ফকিহগণের মতে, কারাদন্ডের মাধ্যমেও নির্বাসন দন্ড কার্যকর করা যেতে পারে।
উল্লেখিত  আল্লাহর আইন বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হয়েও কার্যকর নেই। অথচ বাংলাদেশের শাসকগণ সকলেই মুসলমান। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আল্লাহর আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সংসদে মানব রচিত আইন পাশ করে নিয়েছে।
ইসলামি আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের প্রকারভেদঃ
(১) যিনা বা ব্যভিচার,
(২) যিনা এর উপর মিথ্যা অপবাদ,
(৩) চুরি,
(৪) ডাকাতি,
(৫) মাদক গ্রহণ,
(৬) ইসলাম ধর্ম ত্যাগ,
(৭) ইসলামি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
(বাদায়ে উস সানায়ে, ৭ম খন্ড)
(তথ্য সূত্রঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত- অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল)
উল্রেখিত শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছাড়াও সমাজ ও রাষ্ট্রে আরো অনেক অপরাধ আছে, যেগুলোর শাস্তি ইহকালীন ও পরকালীন কী হবে তা কোরআন ও হাদিসে তথা ইসলামি আইন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। যেমন, কাউকে ইচ্ছেকৃতভাবে খুন করা, মানব পাচার, লটারী ও জুয়া খেলা, বেপর্দায় চলাফেরা, সমাজ বা রাষ্ট্রে অশ্লীলতা বা বেহায়াপনার প্রচলন করা, বিপর্যয় সৃষ্টি করা, সুদ ঘুষের প্রচলন করা,  সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা, চাঁদাবাজি করা বা টেন্ডারবাজি করা, ওজনে কম দেয়া, ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমে বাঁধা প্রদান করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

আজ খুন বা হত্যা সম্পর্কে ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধান নিয়ে আলোচনা করবো।প্রতিটি অপরাধের শাস্তি ইসলাম ও মানব রচিত আইন অনুযায়ী জানতে পারলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনি আসলে আল্লাহর পক্ষে না শয়তানদের পক্ষে।
মানব হত্যা সম্পর্কে ইসলাম তথা আল্লাহ তায়ালা ও নবি করিম (সঃ) কী বলেছেন,তার শাস্তি কী হবে কিংবা বিচারিক কার্যক্রম কি হবে তার বিধান বা আইন তৈরি করা আছে।নবি করিম (সাঃ) একদিকে যেমন ছিলেন ধর্ম প্রচারক অন্য দিকে তেমনি ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক, একজন সফল রাজনীতিবীদ।তিনিই একমাত্র একজন সফল রাষ্ট্রপতি যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সকল আইন কানুন তৈরি করে রেখে গেছেন। আমরা মুসলমান, আমরা নবি করিম (সাঃ) এর অনুসারি। আমরা তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল। তাঁর তৈরিকৃত সকল আইন কানুন বা নিয়ম নীতি বা আদর্শ আমরা মেনে চলব। অন্য কোনো ব্যক্তির আদর্শ আমরা মানবো না। এখন আসি খুন বা হত্যা সম্পর্কে ইসলাম কি আইন তৈরী করেছে আর বাংলাদেশের মুসলিম রাজনীতিবীদরা সংসদে বসে কি আইন তৈরী করেছে, যাদেরকে আমরা ভোট দিয়ে সংসদে প্রেরণ করেছি, সে সম্পর্কে জেনে নেই।
মহান আল্লাহ তাআলার নিকট শিরকের পরে সবচেয়ে গর্হিত ও মন্দকাজ হত্যা বা কতল। পৃথিবীর ইতিহাসে হত্যাই প্রথম পাপ। হাবীল ও কাবীলের ঘটনা এক্ষেত্রে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। হত্যা বলতে কোন কিছুর আঘাতে, অস্ত্রের সাহায্যে, পাথর নিক্ষেপে, বিষপ্রয়োগে বা অন্য কোন উপায়ে মানুষের প্রাণনাশ করাকে বুঝায়। মানব হত্যা একটি মানবতা বিধ্বংসী জঘন্যতম অপরাধ। যখন কেউ তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এ অপরাধ করল সে যেন গোটা মানবতার বিরুদ্ধে এ অপরাধ করল। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘একজন মানুষের জীবন বাঁচানো যেমন গোটা মানব জাতির জীবন বাঁচানোর সমতুল্য, ঠিক তেমনি কোন মানুষের জীবন সংহার করা গোটামানব জাতিকে ধ্বংস করার সমতুল্য।’ [আল-কুরআন- ৫:৩২]
উপরোক্ত আয়াতে কারিমার তাৎপর্য পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, হত্যা কতটা মন্দ, গর্হিত, বিবেক বর্জিত ও জঘন্য। যদিও প্রাণনাশের বিনিময়ে দিয়াত বা রক্তমূল্যের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের জন্য ইসলাম সংশোধনের ব্যবস্থা রেখেছে, কিংবা কিসাসের মাধ্যমে প্রতিশোধের সুযোগ রয়েছে, তা সত্ত্বেও জীবনের বা প্রাণের মূল্য কি আর দেওয়া হয়? রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, “কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চাইতে  দুনিয়াটা ধ্বংস হয়ে যাওয়াই আল্লাহর নিকট অধিকতর সহজ।” মুমিনের জীবনের মূল্য আল্লাহর নিকট অত্যাধিক। এ পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদের চেয়ে আল্লাহর নিকট মুমিনের মূল্য বেশি। এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সা. এর উপরোক্ত বানীটিই প্রণিধান যোগ্য। যে জিনিসের মূল্য বেশি তার হারানোর বেদনাও ততবেশি। আর অন্যায়ভাবে কেউ যদি কারো প্রাণনাশ করে তবে তার জন্য রয়েছে কড়া শাস্তির হুশিয়ারি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
“যে কোন লোক কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম। সে চিরকালই সেখানে থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হন এবং তার প্রতি অভিশাপ করেন। উপরন্তু তিনি তার জন্য কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [আল কুরআন- ৪:৯৩]
হত্যার ধরণ ও প্রকৃতির আলোকে ইসলামী আইনে হত্যাকে পাঁচ প্রকারে বিভক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ও ধরণের আলোকে হত্যার প্রকারভেদ সমূহ নিম্নরূপ :
১. ইচ্ছাকৃত হত্যা
২. প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা
৩. ভুলবশত হত্যা
৪. প্রায় ভুলবশত হত্যা
৫. কারণবশত হত্যা
১.ইচ্ছাকৃত হত্যা : কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে যখন এমন কাজ করে যার দ্বারা অন্য ব্যক্তির পাণনাশ হয়, তখন তার সে কাজকে ‘ইচ্ছাকৃত হত্যা’ বলা হয় এবং এর জন্য কিসাসের বিধান প্রযোজ্য হবে। এখানে বলে রাখা দরকার যে, কিসাস আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পদাংক অনুসরণ করা, সমান বদলা গ্রহণ করা, সাদৃশ্য বজায় রাখা, অনুরূপ করা। ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় অপরাধীকে তার অপরাধ সদৃশ শাস্তি প্রদানকে কিসাস বলা হয়। যেমন হত্যার বদলায় হত্যা করা, যখমের বদলায় যখম করা। কিসাস সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা, “হে মুমিগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের পরিবর্তে ক্রীতদাস, এবং নারীর পরিবর্তে নারী। (নিহত ব্যাক্তির) তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দিয়ত আদায় করা বিধেয়। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও রহমত বিশেষ।” [আল কুরআন- ২:১৭৮]
আরো বলা হচ্ছে, “তাদের জন্য আমরা তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখম সমূহের বদলে অনুরূপ যখন। আর যে ক্ষমা করে দেয়, তা তার পাপের জন্য কাফফারা হবে।” [আল কুরআন- ৫:৩৪]
কুরআনের অন্য জায়গায় রয়েছে, “কেউ অন্যায় ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি। কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে।” [আল কুরআন- ১৭:৩৩]
রাসুলুল্লাহ সা.-ও অনুরূপ কথা বলেছেন, “যার কোন ব্যক্তি নিহত হবে, তার দু’টি ইখতিয়ার রয়েছে। সে ইচ্ছা করলে রক্তমূল্যও নিতে পারবে, ইচ্ছা করলে কিসাসও গ্রহণ করতে পারবে।” [সহিহ বুখারি-কিতাবুত দিয়াত : হা. ৬৪৮৬, আবু দাউদ-কিতাবুদ দিয়াত : হা. ৪৫০৫]
২. প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা : যে ধরণের বস্তু দ্বারা সাধারণত হত্যা সংঘটিত হয় না; সেই ধরণের কোন বস্তুর দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হলে সে হত্যাকে ‘প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা’ বলা হয় এবং এর জন্য দিয়াতের বিধান প্রযোজ্য হবে।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে, দেহ কাটেনা বা দেহে বিদ্ধ হয় না- এধরণের কোন বস্তু দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা’ বলে। যেমন সাম্প্রতিককালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ড. তাহের হত্যা মামলা। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ রহ. এর মতে যে সব বস্তু দ্বারা সাধারণত হত্যা করা যায় না- এধরণের বস্তু (যেমন- ক্ষুদ্র পাথর, ক্ষুদ্র লাঠি, চাবুক, কলম ইত্যাদি) দ্বারা হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘প্রায় ইচ্ছামূলক হত্যা’ বলে। এ প্রকারের হত্যার ক্ষেত্রে যেহেতু হত্যাকারীর হত্যা করার ইচ্ছা ছিল কিনাÑ এব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, তাই এধরণের হত্যার বেলায় কিসাসের বিধান প্রযোজ্য হবে না। তবে যদি হত্যাকারীর ইচ্ছা, (গধৎং জবধ) বা দুষ্ট মানসিকতা প্রমাণিত হয় তবে কিসাসের বিধান প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে বা দিয়াতের কঠোর বিধান প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে দিয়াত বাধ্যতামূলক হবার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাফফারার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু অগ্রগণ্য মত হল কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৩. ভুলবশত হত্যা : নিষিদ্ধ নয়, এমন কোন কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণে ভুলবশত হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘ভুলবশত হত্যা’ বলা হয় এবং এর জন্য দিয়াত ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।
এ ভুল কয়েকভাবে হতে পারে। ক. কর্তার ধারণার মধ্যে, খ. কাজের মধ্যে এবং গ. ধারণা ও কাজ উভয়ের মধ্যে হতে পারে।
ক.কর্তার ধারণায় ভুল । যেমন, শিকারী ব্যক্তি কোন মানুষকে শিকারের পশু মনে করে তার প্রতি তীর বা গুলি নিক্ষেপ করল, পরে দেখা গেল যে, সে মানুষ, শিকারের প্রার্থী নয়। অনুরূপ ভাবে কোন মানুষকে শত্র“ সৈন্য মনে করে তীর নিক্ষেপ করল, পরে দেখা গেল যে, সে শত্র“ সৈন্য নয়। এক্ষেত্রে অপরাধীর কাজের মধ্যে ভুল হয়নি; কারণ সে যা মারতে চেয়েছে তাই মেরেছে; বরং ভুল হয়েছে তার ধারণা বা অনুমানের মধ্যে।
খ. কর্তার কাজের ভুল। যেমন, এক শিকারী একটি হরিণের প্রতি গুলি ছুড়ল; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তা ঝোপের মধ্যে অন্য কোন কাজে রত মানুষের দেহে বিদ্ধ হল এবং এর ফলে সে মারা গেল। অনুরূপভাবে শত্র“ সৈন্যকে টার্গেট করে তীর মারল বা গুলি ছুঁড়ল, কিন্তু তীর বা গুলিটি লক্ষচ্যুত হয়ে অপর কোন ব্যক্তির উপর আঘাত করল এবং এর ফলে সে মারা গেল।
গ. ধারণা ও কাজ। উভয়ে ভুল : যেমন- শিকারী ব্যক্তি কোন মানুষকে শিকারের পশু মনে করে তার প্রতি তীর বা গুলি নিক্ষেপ করল; কিন্তু তা লক্ষভ্রষ্ট হয়ে অপর ব্যক্তির দেহে বিদ্ধ হল এবং এর ফলে সে মারা গেল। এ ক্ষেত্রে সে মানুষকে শিকারের পশু মনে করে নিজের অনুমানে ভুল করেছে এবং যার প্রতি তীর বা গুলি নিক্ষেপ করেছে তা তার পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির শরীরে গিয়ে লাগায় সে কাজেও ভুল করেছে।
৪. প্রায় ভুলবশত হত্যা : কোন ব্যক্তির কোন কাজের দ্বারা হত্যা সংঘটিত হলে তাকে ‘প্রায় ভুলবশত হত্যা’ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে অপরাধীর কোন ধরনের সংকল্প ছাড়াই হত্যা সংঘটিত হয় বলে একে ‘প্রায় ভুলবশত হত্যা’ নামে অভিহিত করা হয়। যেমন, কোন ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করার সময় অপর ব্যক্তির ওপর ঘটনাক্রমে উল্টে পড়ল এবং এর ফলে ব্যক্তিটি মারা গেল। এ প্রকারের হত্যা যেহেতু একদিকে অপরাধীর অসতর্কতার কারণেই সংঘটিত হয়েছে, তাই এটা ভুলবশত হত্যার মধ্যে গণ্য হবে এবং এজন্য দিয়ত ওয়াজিব হবে। অপরদিকে যেহেতু অপরাধীর কর্ম ও হত্যার মধ্যে সরাসরি কারণ এর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে তাই এজন্য কাফফারা ও ওয়াজিব হবে।
[আসসাপখসী, আল মাবসুত : খ. ২৬, পৃ. ৬৬, ১০৪]
৫. কারণবশত হত্যা : কোন ব্যক্তির প্রয়োজনীয় সতর্কতার অভাব জনিত কাজের ফলে অন্য ব্যক্তির প্রাণনাশ হলে তাকে ‘কারণজনিত হত্যা’ বলা হয়। যেমন, কোন ব্যক্তি যাতায়াতের রাস্তার পার্শ্বে গর্ত খনন করল এবং তাতে কোন পথচারী পড়ে গিয়ে মারা গেল অথবা কেউ পথের পার্শ্বে একটি প্রকাণ্ড পাথর রাখল এবং তার সাথে পথচারী ধাক্কা খেয়ে মারা গেল। এ প্রকারের হত্যায় অপরাধী সরাসারি হত্যাকান্ড সংঘটিত করেনা; বরং তার দ্বারা সংঘটিত কোন কাজই হত্যাকান্ডের কারণ হয়। এখানে অপরাধী যে কাজটি করে তা তার জন্য বৈধ; তবে তিনি তার কর্ম সম্পাদনে সীমা লংঘন করেছেন এবং অসতর্কতার পরিচয় দিয়েছে; যার ফলে তার কর্মটি হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রকারের হত্যার মৃত্যুদণ্ড হবে না এবং কাফফারাও ওয়াজিব হবে না। তবে দিয়াত ওয়াজিব হবে।
ইসলামী আইনে হত্যার বদলা মৃত্যুদণ্ড ওয়াজিব ইওয়ার শর্তাবলী : হত্যার বদলা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বা ওয়াজিব হওয়ার কতিপয় শর্ত রয়েছে। এগুলো পাওয়া গেলে হত্যার কিসাস স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক হবে। এগুলোর কয়েকটি হত্যাকারীর সাথে, আর কয়েকটি নিহত ব্যক্তির সাথে, আর কয়েকটি মৃত্যুদণ্ড দাবীকারীদের সাথে, আর কতিপয় হত্যাকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট।
হত্যাকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১. হত্যাকারী মুকাল্লাফ (বালিগ ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন) হওয়া।
২. হত্যাকারী মুসলিম বা ইসলামী রাষ্ট্রের স্থায়ী অমুসলিম নাগরিক হওয়া।
৩. হত্যাকারী সন্দেহমুক্ত হত্যার অভিপ্রায় থাকা।
নিহত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর সন্তান বা অধঃস্তন ব্যক্তি না হওয়া।

২. নিহত ব্যক্তি মাসূমুদ্দাম হওয়া। সে যদি অন্য কোন অপরাধে (যেমন হত্যা, ধর্মত্যাগ ও ব্যভিচার প্রভৃতি) হত্যা দন্ডে দন্ডিত হয় কিংবা রাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী অমুসলিম (হারাবি) হয় তাহলে হত্যাকারীর মৃত্যুদন্ড হবে না।
৩. নিহত  ব্যক্তি ও হত্যাকারীর মধ্যে শ্রেণী ও অবস্থাগত পার্থক্য না থাকা।
কিসাসের দাবীদারদের সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.কিসাসের দাবীদার বিদ্যমান থাকা,
২. রক্তের দাবীদারদের শারীরিক ও মানসিক পূর্ণ উপযুক্ততা থাকা।
৩. নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছদের পক্ষ থেকে কিসাসের দাবী থাকা । রাসুল সা.
বলেছেন, “ইচ্ছাকৃত হত্যা অবশ্যই সদৃশ বদলা গ্রহণযোগ্য। তবে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছরা ক্ষমা করে দিলে ভিন্ন কথা।” [দারুকুতনী, আস সুনান : হা. ৪৫]
৪. নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছদের সকলেই উপস্থিত থাকা ।
৫. কিসাসের দাবীদার হত্যা কারীর সন্তান কিংবা তার অধঃস্তন ব্যক্তি না হওয়া।
হত্যাকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী :
১.হত্যাকান্ড সরাসরি হওয়া।
২. হত্যা সীমা লঙ্ঘনমূলক হওয়া।
৩. হত্যা ইসলামী রাষ্ট্রে সংঘটিত হওয়া।
মানব রচিত আইনে হত্যার শাস্তি :
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৯৯ থেকে ৩১১ পর্যন্ত মানব দেহ সংক্রান্ত অপরাধ সমূহ ও এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষেপে তা আলোকপাত করা হল।
ধারা- ২৯৯ : দন্ডনীয় নরহত্যা: যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে অথবা এমন শারীরিক ক্ষতি করে,যার ফলে সে মারা যায় অথবা তার জানা থাকে যে, উক্ত আঘাতের ফলে মৃত্যু অবধারিত সে ব্যক্তি নরহত্যার দন্ডনীয় অপরাধ করল। যেমন-
(ক). ক নামক ব্যক্তি ঙ নামক ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি গর্ত খুড়ল এবং এর উপরিভাগে কিছু ঘাসের চাবড়া ফেলে রাখল যাতে সে উক্ত গর্ত লক্ষ্য না করে এবং ঐ গর্তে পতিত হয়। ঙ নামক ব্যক্তি উক্ত গর্তে পতিত হল এবং নিহত হল। অতএব, ক নামক ব্যক্তি নরহত্যার শাস্তিযোগ্য অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হল।
(খ). ক জানে যে, ঙ ঝোপের আড়ালে আছে যা খ জানে না। তা সত্ত্বেও সে খ কে প্ররোচিত করল যেন ঝোপের মধ্যে গুলি করে যাতে করে ঙ-র মৃত্যু ঘটে। খ গুলি ছুড়ল এবং ঙ মারা গেল। এক্ষেত্রে খ কোন অপরাধের দায়ে দোষী হবে না। কিন্তু ক নর হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে।
(গ). ক একটি মুরগিকে গুলি করল হত্যা করে চুরি করার উদ্দেশ্যে কিন্তু মুরগির পরিবর্তে খ নিহত হল। কেননা খ ঝোপের আড়ালে ছিল যা ক জানত না। যদি এখানে ক আইনবিরোধী কাজ করেছে তবুও সে নরহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে না। কেননা খ কে হত্যা তার কোন উদ্দেশ্য ছিল না বা তার মৃত্যু ঘটতে পারে এমন কোন কাজ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না।
ধারা- ৩০০ : খুন :
নরহত্যা খুন হিসেবে বিবেচিত হবে যদি মৃত্যু সংঘটন করা হয় মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যেই অথবা
দ্বিতীয়ত : শারীরিকভাবে এমন যখম করা হয় অপরাধী জানে যে, ঐ যখমে তার মৃত্যু ঘটবে। অথবা
তৃতীয়ত : শারীরিকভাবে এমন যখম করা হয় যে যখমের ফলে স্বাভাবিক কারণ হয় মৃত্যু বা মৃত্যুর জন্য ঐ যখমই যথেষ্টে, অথবা
চতুর্থত : যদি যখমকারী ব্যক্তি জানে যে, এটা এমনটাই আসন্ন হুমকি স্বরূপ যে, এর ফলে অতি অবশ্যই সকল উপায়ে মৃত্যু ঘটবে অথবা ঐ শারীরিক ক্ষতি মৃত্যু সংঘটনের জন্য এতটাই অনুকুল যে, কোন রকম ঝুঁকি ছাড়াই মৃত্যু অবধারিত। যেমন, ক নামক ব্যক্তি ঙ- কে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করল। এর ফলে ঙ মারা গেল। ক খুন করল। অথবা ক কোনরকম কারণ ছাড়াই  গোলাভর্তি কামান ছুড়ল জনতার উদ্দেশ্যে এবং তাদের হত্যা করল। ক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত যদিও তার ইচ্ছা ছিলনা ঙ- কে হত্যা করা।
ধারা- ৩০২ :
খুনের শাস্তি : যে ব্যক্তি খুন করবে তার শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড, অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং সাথে জরিমানা ও হতে পারে।
ধারা- ৩০৩ :
যে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হওয়ার পরে খুন করে সে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারা- ৩০৪ :
খুন হয়নি বা খুনের পর্যায়ে পড়েনা এমন নরহত্যার শাস্তি : যে ব্যক্তি এমন নরহত্যা করল যা খুনের পর্যায়ে পড়ে না, সে যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডিত হবে অথবা দশ বছর পর্যন্ত সাজা ভোগ করবে এবং সাথে জরিমানা হবে। যে ব্যক্তি দ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে সে কাজের উদ্দেশ্য যদি মৃত্যু হয় অথবা এমন শারীরিক আঘাত যার ফলে মৃত্যু হয়, তাহলে উপরোক্ত শাস্তি। আর যদি জেনে শুনে এমন কাজ করে যদ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয় কিন্তু এরূপ ইচ্ছা ছিল না অথবা এমন শারীরিক ক্ষতি যার ফলে মৃত্যু সংঘটিত হয় তাহলে তিনি দশ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই প্রযোজ্য হবে।
ধারা-৩০৪ ক :
জনপথে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বা কোন যানে আরোহণ করে মৃত্যু সংঘটন : যে ব্যক্তি বেপরোয়া অথবা অবহেলা করে কারো মৃত্যু ঘটায় যা দন্ডনীয় নরহত্যার পর্যায়ে পড়ে, সে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত হবে অথবা জরিমানাসহ উভয়ই হবে তার শাস্তি। আর যা দন্ডনীয় নর হত্যার পর্যায়ে পড়ে না তার জন্য সে তিন বছর পর্যন্ত যেকোন প্রকারের (সশ্রম বা বিনাশ্রম) কারাদন্ডে দন্ডিত হবে অথবা জরিমানা অথবা জেল-জরিমানা উভয়ই হবে। [ধারা-৩০৪ খ]

ইসলামি আইন ও মানব রচিত আইনের পার্থক্য

১. ইসলামী আইনে হত্যার বদলা হিসাবে হত্যার বিধান নিহত ব্যক্তির ওয়ারিছদের ওপর ন্যাস্ত।
২. ইসলামী আইনে কেবল কেসাস বা অনুরূপ শাস্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে।
৩. ইসলামী আইনে ক্ষমা করার অধিকার নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে দেয়া হয়েছে।
৪. ইসলামী আইনে স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কেও কেসাস বা দিয়ত মাফ করে দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। এটা বান্দার হক।
৫. স্বয়ং আল্লাহও তা ক্ষমা করেন না, একমাত্র খালেছ দিলে তওবা ব্যতীত।
১. মানব রচিত আইনে রাষ্ট্রে মানোনীত ব্যক্তির নিকট সমর্পিত।
২. প্রচলিত আইনে খুনের বদলা খুনের বিধানের সাথে বিকল্প বিধান হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
৩. প্রচলিত আইনে বিচারকের হাতে ন্যাস্ত।
৪. আমাদের সংবিদানের ৪৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোন দন্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোন দন্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’
তবে লক্ষণীয় যে, প্রতিটি সরকারের আমলে আমরা দেখি রাজনৈতিক ভাবে নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উক্ত অনুচ্ছেদের অপব্যবহার। ফলে হত্যার অনেক দাগী আসামীও দাপটের কারণে পার পেয়ে যায়। যে জন্য অন্যায়ভাবে হত্যার মত ঘটনা কমছে না। কারণ হিসেবে বলা যায় যে, মানব রচিত আইনে বিকল্প ব্যবস্থায় বহু ফাঁক ফোঁকর রয়েছে এবং বহুলাংশেই তা প্রত্যক্ষ না হওয়ায় আইনের সীমাহীন অপব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়াও দুর্বল ও চৌকুস আইনজীবীর কথার মারপ্যাচে প্রকৃত বিষয় ঢাকা পড়ে যায়। অর্থাৎ যে পক্ষের আইনজীবী যত চতুর সেপক্ষ তত লাভবান। আর অপরাধ বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, বড় বড় রাঘব বোয়াল বিত্তশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলার রায় সুকৌশলে নিজের পক্ষে নিয়ে নেয়। দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তি অর্থাভাবে ভাল আইনজীবী নিয়োগ করতে না পেরে ধুঁকে ধুঁকে মরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ক্ষতি গুণতে হয়। তারা স্বজন হারায়, সাথে সাথে ভিটে বাড়িও হারায়।
বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। আমরা মুসলমান অথচ আমরা কোরআন ও হাদিস পুরোপুরি মানি না। আমরা ইসলামকে শুধুই নামাজ, রোজা ও কিছু দেোয়া বা আমলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। কিন্তু ইসলামের অন্যান্য দিকগুলো মানি না। যেগুলো মানা ফরজ। বাংলাদেশের আইন বা সংবিধান প্রণেতাগণ মুসলমান। তারা কোরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে না নিয়ে মানব রচিত তথা ইহুদি, খৃস্টান ও হিন্দুত্ববাদী সংবিধান প্রনয়ন করেছে। এখন মানব রচিত সংধিান বা আইন বাতিল করতে হলে সেই রকম একটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে হবে যারা সংসদে গিয়ে কোরআন বিরোধী আইনগুলো বাতিল করবে।কিন্তু এই কাজটি বর্তমানে এতো সহজ নয়। যারাই বাতিলের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছে তারাই খুন হচ্ছে, জেলখানায় মিথ্যে মামলায় সাজা ভুগছে, অনেককে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। তবু মুসলমান হিসেবে একাজটি আমাদেরকে করতে হবে।মূলত আল্লাহ তায়ালা নবি (সা:)কে মানব রচিত বিধান বাতিল করে কোরআনের বিধান প্রতিষ্ঠিত করতেই তাঁকে প্রেরণ করেছেন। আর এটাই হচ্ছে ইসলামের রাজনীতি। আমাদের দেশের অনেক মুসলমান বলে বেড়ায় যে, ইসলামে নাকি রাজনীতি নেই। আসলে এরা হচ্ছে ফাসেক, জালেম ও মোনাফেক।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারকারী অনেক দল আছে। যেমন, তাবলীগ জামায়াত, কথিত পির বা অলিসহ নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত ইসলামি দল, যারা নিজেদেরকে বলে যে, তারা নাকি ইসলামের খেদমত করছে। ইসলাম প্রচার করছে। এই সব দলে অনেক কোরআনের হাফেজ, মুফতি, মুহাদ্দিস বা বড় বড় আলেম আছে যারা এমন একটি দলকে ভোট দেয় যারা সংসদে গিয়ে কোরআন বিরোধী আইন পাশ করে। এরা নামাজ পড়ে, রোজাও রাখে আবার সব সময় তসবিহ জপে। কিন্তু এদের কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না। আসুন এই সব মুসলমানদের পরিনতি কোরআন হাদিস ভিত্তিক জেনে নেই।
পরিনতি
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে  এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।  (নূর-৬৩)
৩। আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন করবে, যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান করতে হবে।( বুখারী ও মুসলিম)
৪। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)
৫।“ হোজায়ফা  (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
৬। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
৮।“ আনাস (রাঃ) হতেবর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট আসবে। এমনকি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে চিনতে পারবো। এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবার পূর্বেই তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত। আল্লাহতায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ ছেড়ে অন্য) কতো রকম তরিকা ও অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো।(বুখারী)
৯। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
কোরআন ও হাদিস ভিত্তিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে লড়াই, এটাই হচ্ছে আল্লাহর রাস্তা। তাবলীগ জামায়াত আল্লাহর রাস্তার কথা বলে যে ব্যয় করে, এটা হচ্ছে একটা নব্য সৃষ্ট ভ্রান্ত পথ। আপনি যদি নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করেন, তাহলে আপনাকে কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ও বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি ইসলামি রাজনীতির সাথে সংযক্ত হতেই হবে।ইসলামি দল বা ইসলামের রাজনীতি করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। আসুন মানব রচিত সকল ভ্রান্ত পথ, মত বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস ভিত্তিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য ইসলামের রাজনীতির সাথে জড়িত হই। একটা কথা মনে রাখবেন ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম ব্যতীত ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা লাভ কোনো দিনই সম্ভব নয়। আল্রাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমিন।











Wednesday, November 14, 2018

আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী কর্মমকান্ড: (দ্বিতীয় অংশ)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী কর্মমকান্ড:

মুসলমান হিসেবে আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়া বা সমর্থন করা সম্পূর্ণ হারাম।

সংকলনে: মাওলানা মো: শিহাব এম এ- ইসলামিক স্টাডিজ (বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)

(দ্বিতীয় অংশ)

১১। তাজউদ্দিন হতে হাসিনা, যারা করে দূর্গা দেবীর বন্দনা!

আমরা জানি ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তাতে সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। এ সমন্ধে The Bengal borderland: beyond state and nation in South Asia By Willem van Schendelএর বইয়ের ৩৬১ পাতার ৭২নং এ প্রমাণ পাওয়া যায়;
এটা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মকে সম্মান করেই করা হয়েছিল। ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধে ৯৯% মুক্তিযোদ্ধাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য সব সময় আল্লাহর নাম নিত। অনেকেই নফল নামাজ-রোজা সহ ছদাকাও মানত করেছিল।
কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কি দেখা গেল! যে রেডিও ও বিটিভিতে আস-সালামু-আলাইকুমের পরিবর্তে শুভ সকাল, শুভ অপরাহ্ন, শুভ সন্ধ্যা ও শুভ রাত্রি এবং আপনার কল্যাণ হৌক চালু হল। তবে শেখ মুজিব ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ সালে দেশে ফিরলে যথারীতি পাকিস্তান আমলের মত আবার সালাম ও খোদা হাফেজ কথা চালু হয়। মুজিব আসার আগ পর্যন্ত তাজউদ্দিনের নির্দেশেই এভাবেই বাংলাদেশ চলছিল। তারপর মুজিব মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং ১৯৭৪ সালে লাহোর ও.আই.সি সম্মেলনে যেতে চাইলে এই তাজউদ্দিনই বাধা দেন(সুত্রঃ আগাচৌ, দৈনিক সমকাল ৩রা নভেম্বর ২০০৭ইং)।
এই তাজউদ্দিনই ১৯৭২-৭৫ মেয়াদে বলেন যে দূর্গা পুজা হল বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও মুজিব তাও ইসলাম ধর্মের কিছু মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতেন। আর তাজউদ্দিন এসব উপেক্ষা করে খাটি ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। এই ধরণের মোনাফেকী আচরণের জন্য তাজউদ্দিন ভারতের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। আমরা যদি ১৯৭২ হতে আজ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের সাংবাদিকদের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে মূল্যায়ন দেখি তাতে মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দিনই ভারতের কাছে অনেক বেশী প্রশংসনীয়। ঐ ১৯৭২-৭৫ মেয়াদে রক্ষী, লাল ও পঞ্চম বাহিনীর ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল সরাসরি ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা। তারা এতই মুসলিম বিদ্বেষী ছিল যে রক্ষীবাহিনীর কোন সদস্য ট্রেনিং চলাকালীন সাধারণ নামাজ পড়ার সুযোগতো বটেই জুম্মার নামাজের জন্য অনুমতি চাইলে তাদের চেহারা এত রাগের ভাব দেখাত যে নামাজ পড়ার অনুমতি চেয়ে মহা অন্যায় করে ফেলেছে।
আর বর্তমান আওয়ামী-বাকশালী আমলের শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১এ শুরুতে হিজাব পড়ে ও সমানে তজবি যপে ক্ষমতায় এলেও ২০০০ সালে কোলকাতায় যেয়ে সিদুর পড়েন এবং মূখ্যমন্ত্রীর ডাক শুনেন। সেখানে বলা হয় হাসিনা তুমি আমাদেরই লোক। আর এবার দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও দেশীয় ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় এসে দূর্গা দেবীর মহা প্রসংসা যে “দেবী দূর্গামাতার কল্যাণে নাকি ফসল ভাল হয়েছে;
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/10/06/110096#.TozaW5DDW2w.facebook
আর মুসলমানরাও নাকি হিন্দুদের পূজায় একসাথে উৎসব পালন করেছে।” এটাই হল হাসিনার মোনাফেকী দর্শন। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে মুশরিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন “তুমরা যাদের পুজা কর আল্লাহ তার চেয়ে অনেক পবিত্র” এবং “শিরক হল জঘণ্য অপরাধ, কেউ শিরক করে মৃত্যু হলে কবরের আযাব সহ কেয়ামতের পর জাহান্নাম চিরস্থায়ী। মোনাফেকদের অবস্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” তথা সবচেয়ে কঠিন আযাব ও শাস্তি। হাসিনা নিজে পূজা দিক অথবা দূর্গার বন্দনা করুক কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহু মুসলমানকে সে বিভ্রান্ত করে শিরকী করতে প্ররোচিত করবে। তাই যারা দেশে আছেন এবং পবিত্র কোরআন ও হাদিস সমন্ধে ভাল ধারণা রাখেন তারা যেন অন্য মুসলিম ভাই-বোনদের সচেতন করেন। হাসিনা চায় জাহান্নামে যাক তার সাথে যেন অন্য কোন মুসলমান সহযাত্রী না হয় তার চেষ্টা আমাদের করতে হবে।


মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ মানুষের দ্বীন হচ্ছে ইসলাম, তাই সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর স্বীকারের প্রেক্ষিতে বিজাতীয় সংস্কৃতি থার্টিফার্স্ট নাইটসহ কোন ইসলাম বিরোধী কাজ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- সরকারিভাবে থার্টিফার্স্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ বন্ধ করে দেয়া এবং সরকারিভাবে থার্টিফার্স্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা।

ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) পালনঃ

ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ, অপরিবর্তনীয় ও মনোনীত দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক “সূরা আলে ইমরানের” ১৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন,“নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ পাক-এর কাছে একমাত্র দ্বীন।”
আল্লাহ পাক “সূরা মায়িদার” ৩ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে) কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তামাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।”
আল্লাহ পাক তিনি দ্বীন ইসলামকে শুধুমাত্র পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ও নিয়ামতপূর্ণ করেই নাযিল করেননি সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে মনোনীতও করেছেন। তাই দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সমস্ত ধর্ম যা ওহী দ্বারা নাযিল করা হয়েছিল যেমন, তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও ১০০ খানা ছহীফা এবং মানব রচিত মতবাদ যা পূর্বে ছিল এবং বর্তমানে যা রয়েছে ও ভবিষ্যতে যা হবে সেগুলোকে তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, এর কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছ? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্‌ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহ্‌মদ, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্‌ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্‌ ইত্যাদি)

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারী পালনের ইতিহাস:

ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। ১লা জানুয়ারি পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার [খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক, দুশ্চরিত্র (যার বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তান ছিল] পোপ গ্রেগরীর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। ইরানে নববর্ষ বা নওরোজ শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং উৎসব চলতে থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত।
সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১ জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন। মোটামুটিভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
বাদশাহ আকবরের ফরমান অনুযায়ী আমীর ফতেহ উল্লাহ্‌ শিরাজী উদ্ভাবিত বাংলা ফসলি সাল চালু হয় ১০ মার্চ ১৫৬৩ সালে। ইংরেজ আমলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হলেও রাজস্ব আদায়ে ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা সাল তথা ফসলী সন বেশি ব্যবহার করা হতো।
বর্ষবরণের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুভূতি যোগটা সে শুরু থেকেই ছিলো বা বর্ষবরণকারীরা ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকেই তা করতো। অথবা বর্ষবরণকে তাদের বিশেষ ধর্মীয় আচার বলে বিশ্বাস করতো। মজুসী বা অগ্নি উপাসকরা এখনো বর্ষবরণকে সরকারিভাবেও ব্যাপক জাঁকজমকভাবে পালন করে থাকে। একে তারা তাদের ধর্মীয় অনুষঙ্গ মনে করে এবং একে নওরোজ বা নতুন দিন বলে অভিহিত করে।
ফসলী সনের নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।
ইতিহাস পর্যালোচনায় শরিয়তের ফায়সালাঃ
হযরত ইমাম আবু হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগির সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
আজকে অনেক মুসলমান থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করছে। ইংরেজি নববর্ষ, ফসলী সনের নববর্ষসহ বিভিন্ন নববর্ষ পালন করছে। আর এতে করে তারা বিজাতি ও বিধর্মীদের সাথেই মিল মিশ রাখছে। তাদেরই অনুসরণ অনুকরণ করছে।
কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ ৫৫আর নববর্ষ পালনের দ্বারা সে কাফিরদেরই অনুসরণ-অনুকরণ করা হয়।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে যে, সব নববর্ষের প্রবর্তকই বিধর্মীরা। তাই ইসলাম নববর্ষ পালনকে কখনোই স্বীকৃতি দেয় না।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) পালনের বৈধতাঃ
সংবিধানের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সে প্রেক্ষিতে দেশে ইংরেজি ভাষাসহ বিভিন্ন উপজাতীয় ভাষার ঊর্ধ্বে যেমন রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা ও প্রাধান্য তেমনি সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা স্বীকারের প্রেক্ষিতে অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর উপরে ইসলাম ও মুসলমানের মর্যাদা ও প্রাধান্য স্বীকৃত হওয়া আবশ্যক এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও অনেক বেশি হওয়া কর্তব্য। যা মূলত প্রচলিত সংবিধানেরই ব্যাখ্যা।
মূলকথা হলো- সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর স্বীকারের প্রেক্ষিতে বিজাতীয় সংস্কৃতী থার্টি ফাস্ট নাইটসহ কোন ইসলাম বিরোধী কাজ গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- সরকারীভাবে থার্টি ফাস্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ বন্ধ করে দেয়া এবং সরকারীভাবে থার্টি ফাস্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা অর্থাৎ মুসলমানদেরকে ইসলাম পালনে বা ইসলামের উপর ইস্তিক্বামত থাকার ব্যাপারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করা।
১৩। বোরখা ও হাইকোর্টের রায়:
০৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:২৮

বাংলাদেশে অবশেষে বোরখার প্রাতিষ্ঠানিকীকরন নিষিদ্ধ হল। আদালত কর্তৃক যা ফয়সালাকৃত। যার ফলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোরখা বা ধর্মীয় পোশাক ইউনিফর্ম হিসেবে বেছে নিতে পারবে না।
ডেইলী স্টার থেকে তুলে দিচ্ছি: 
"The court also directed the authorities to immediately issue a circular asking all educational institutions not to compel students to wear religious clothes" 
হাইকোর্ট তার এই রায়ে "ধর্ম নিরপেক্ষতা"কে মূলনীতি হিসেবে দেখিয়েছে। হাইকোর্টের এই অবস্থান সঠিক। ধর্ম নিরপেক্ষতা হচ্ছে ধর্মকে প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক করে ব্যক্তির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
হাইকোর্টের এই রায় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রথম ধাপ। এর চূড়ান্ত রূপ হল পাবলিক প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় চিহ্ন যুক্ত যে কোন পোশাক বা আইকন নিষিদ্ধ করা। যা তুরষ্ক ও ফ্রান্সে হয়েছে। যদিও তুরষ্কের জনগন ইতিমধ্যেই ধর্ম নিরপেক্ষতা থেকে পিছিয়ে আসছে। ফলে তুরষ্কে ধর্ম নিরপেক্ষতার মৃত্যু সাময়িক বিষয় মাত্র। অন্যদিকে সমাজবাদী রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ম একেবারেই নিরুৎসাহিত যার প্রকাশ দেখা যায় পল পটের কম্বোডিয়ায় যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের রোব নাকি অনেক সময়েই খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। 
বোরখার বা ধর্মীয় পোশাকের প্রাতিষ্ঠানিকীকরন সেসব দেশে সম্ভব যেসব দেশে পুরো মাত্রায় ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। যেমন, আমেরিকা বা বৃটেন। আমেরিকার ইসলামিক স্কুলে ইউনিফর্ম হিসেবে জিলবাব দেখা যায়। বৃটেনের তিনটি স্কুল নাকি অনেক এগিয়ে গিয়ে বোরখাসহ মুখ ঢাকা নিকাবকে পর্যন্ত ইউনিফর্ম করেছে যদিও এ নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। টেলিগ্রাফ এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে দাবী করেছে এটা মগজ ধোলাই করে দিতে পারে। ছোট মেয়েদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা থাকার মানসিকতা তৈরী করে দিতে পারে।  স্কুল তিনটি হল পূর্ব লন্ডন, ল্যান্কাস্টার এবং লেইসেস্টারে। মজার বিষয় হল যারা সমালোচনা করছেন তারা কেউ এটা দাবী করছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষের হাত থেকে এসব অধিকার কেড়ে নেয়া হোক। তারা দাবী করছেন পুরোদস্তুর বোরখা নেকাব সহ থাকলে এসব স্কুল থেকে সরকারী ফান্ড প্রত্যাহার করা হোক। বলা বাহুল্য এসব স্কুল সরকারী ফান্ড পেয়ে থাকে। প্রশ্নটা শুধু সরকারী ফান্ডিং নিয়ে, তাও আবার নিকাব ইস্যুতে। সাধারন হেডস্কার্ফ ইস্যুতে নয়। সাধারন হেডস্কার্ফ সব মহলই গ্রহন করেছে।
নেট একটু গন্ডগোল করছে বলে ছবি দিতে পারছি না। থাকলে পশ্চিমের বহু ইসলামিক স্কুল যে ধর্মীয় পোশাক ইউনিফর্ম হিসেবে নিয়েছে তার কয়েকটি ছবি দিতে পারতাম। এখন যে কয়েকটি পারলাম সেগুলো দিচ্ছি। পরে নেট ঠিক হলে আরো বহু ছবি দেব আশা করি। 

১৪। মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিষোদ্গার:
সুন্নি মুসলিম, ছালেহ্‌ মুহাম্মদ আমিনুল হক গত ৮ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইমাম সম্মেলন উদ্বোধন করতে এসে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা-চেতনার মানুষ পৃথিবীতে দেখা যায় না। কেননা, তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে নিজ হাতে রাসুল শব্দটি কেটে দিয়েছিলেন’ (আমার দেশ, ০৯-১২-২০১১)। ওদিকে গত ১০ ডিসেম্বর ইফা আয়োজিত এক সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া দাবি করেন, রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারও সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইফা ডিজি বলেন, রাসুল (সা.) ইহুদিদের জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন’। (নয়া দিগন্ত, ১১-১২-২০১১) আলোচনার গভীরে যাওয়ার আগে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ সম্পর্কে কিছু আলোচনা না করলেই নয়। আমাদের দেশে Secularism শব্দের ভুল অনুবাদ করে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ। এর আসল অর্থ হচ্ছে— ইহজাগতিকতাবাদ। Secularism ল্যাটিন শব্দ Seculum শব্দ থেকে উদ্ভব হয়েছে। Seculum শব্দের অর্থ—ইহজগত। এ মতবাদের সব চিন্তাভাবনা ও কার্যকলাপ ইহজগতকেন্দ্রিক, তাই একে ইহজাগতিকতাবাদ বলাই উচিত। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে আমরা এখন Secularism-কেই বুঝি। Encyclopedia বা বিশ্বকোষে Secularism-এর নিম্নরূপ দুটি সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে— ১. ‘সেক্যুলারিজম হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন যা সব ধর্ম বিশ্বাসকেই প্রত্যাখ্যান করে।’ ২. ‘সেক্যুলারিজম এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সাধারণ শিক্ষা ও সামাজিক সংস্থা পরিচালনায় কোনো ধরনের ধর্মীয় উপাদান অন্তর্ভুক্ত হবে না।’ এবার দৃষ্টি দেয়া যাক সব নবী-রাসুলদের মৌলিক চেতনা ও কর্মের ওপর। প্রত্যেক নবী ও রাসুলের দাওয়াতি কার্যক্রম ও তাদের কর্মগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, প্রত্যেক নবী ও রাসুলের শরীয়ত ভিন্ন ভিন্ন থাকলেও তাদের সবার ধর্ম ছিল এক ও অভিন্ন। প্রত্যেক নবী-রাসুলই স্ব-স্ব জাতিকে নিম্নোক্ত দাওয়াতগুলো পৌঁছে দিয়েছেন : এক. প্রত্যেক নবী-রাসুল তাঁর জাতিকে আল্লাহর একাত্মবাদের দিকে আহ্বান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক’ (সূরা নাহল : ৩৬)। দুই. প্রত্যেক নবী-রাসুল তাদের কওমকে ইবাদতের মৌলিক ভিত্তির দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। তারা সবাই একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদত-বন্দেগির জন্য মানুষদের বলেছেন। তিন. তারা সবাই খারাপ ও অন্যায় কাজ যেমন—শিরক করা, হারাম খাওয়া, মূর্তি পূজা করা ইত্যাদি সম্পর্কে উম্মতদের সতর্ক করেছেন। উপরোল্লিখিত আলোচনা থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, পৃথিবীতে কোনো নবী-রাসুলই ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না। কেননা, সব নবী-রাসুলের চেতনা আর ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। একমাত্র জ্ঞানপাপীরাই পারে নবী-রাসুলকে ধর্ম নিরপেক্ষ বলতে। এটি একটি চরম মিথ্যাচার। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবী-রাসুলই ছিলেন একই ধর্মের অনুসারী। তাদের সবার ধর্মই ছিল ইসলাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্য। সুতরাং তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী’ (সূরা আল হজ : ৭৮)। যে নবী (সা.) প্রেরিত হলেন ইসলাম ধর্ম নিয়ে; আজীবন মানুষকে ডাকলেন সেই পথে, তিনি কি করে ধর্ম নিরপেক্ষ হন? কোনো মুসলিম এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। আইন প্রতিমন্ত্রী কাফেরদের সঙ্গে হুদাইবিয়ার সন্ধিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার সপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। আসলে অমুসলিমদের সঙ্গে ওঠাবসা, লেনদেন এবং চুক্তি-বাণিজ্য করা আর ধর্মনিরপেক্ষতা এক জিনিস নয়। নবী (সা.) নিজ ধর্মবিশ্বাসকে ত্যাগ করে কারও সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি। তবে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা আল্লাহর রাসুলের ওই চুক্তি থেকে যে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন না সেটি হচ্ছে—ইসলামের অধীনেই সব ধর্মের নিরাপত্তা রয়েছে। একজন অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করেও তার ধর্ম-কর্ম নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারেন। এটিই আল্লাহর রাসুল প্রমাণ করেছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও ইফা ডিজির দাবি তো আরও অসার। এরকম ডাহা মিথ্যা কথা ও অপবাদ আমরা এর আগে কখনও শুনিনি। ‘নবী (সা.) কবে কোথায় কোন মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দু ও ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন? মূর্তি পূজা করা আর আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা সমান। ইসলাম ধর্মে শিরক করা কবিরাহ গুনাহ। আল্লাহতায়ালা সবকিছু মাফ করলেও শিরকের অপরাধকে ক্ষমা করবেন না। তিনি শিরককে ‘জুলমুন আজীম’ তথা মহা অন্যায়-অবিচার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সব নবী-রাসুল শিরক ও মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। নবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ভাস্কর্য ও মূর্তি নির্মাণকারীকে সবচেয়ে বেশি আজাব দেয়া হবে, তাদের বলা হবে, তোমরা যার মূর্তি তৈরি করেছ তার মধ্যে এখন প্রাণ দাও’ (সহিহ বুখারি)। এ হাদীস থেকেই অনুমান করা যায়, আল্লাহর রাসুল কত কঠোর ছিলেন এ ব্যাপারে। সেই রাসুল কি না মূর্তি পূজার জন্য মসজিদের পুরো অর্ধেকটাই দিয়ে দিলেন হিন্দুদের! এর চেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার আর কী হতে পারে? তাছাড়া ওই সময়ে আরবে হিন্দু ছিল কি? ইহুদিরা কি মূর্তিপূজক ছিলেন? আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে এসব বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যগুলোর নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই। ইসলামের শত্রুরাই কেবল এ ধরনের শঠতাপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ডিজি ও আইনপ্রতিমন্ত্রী যেভাবে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
১৫।ধর্ম নিরপেক্ষতা ও শেখ হাসিনা:

১৯৯৬ সালে ৭ম সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা মাথায় পুরো দস্তুর স্কার্ফ বেঁধে, নিজের মুনাজাতরত ছবি দিয়ে পোস্টার বানিয়ে ক্ষমতায় আসেন।তবুও তিনি ধর্মনিরপেক্ষই থেকে যান, আর তাঁর প্রতিপক্ষ হয় ধর্ম ব্যবসায়ী!

গত ২৯ আগস্ট ২০১৩, বৃহস্পতিবার ফটিক ছড়িতে শেখহাসিনা বলেন, "সেই নূহ নবীর আমল থেকে নৌকায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে মানুষদের।দুর্যোগ দুর্বিপাকে নৌকাই মানুষকে রক্ষা করেছে।নৌকায় ভোট দিয়ে আর্থিকভাবে মানুষ সচ্ছল হয়েছে।" 
হযরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের নৌকার সাথে নিজের নৌকা প্রতীকের তুলনার পরও তিনি ধর্মনিরপেক্ষ! সেই তিনিই আবার বলেন,"ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। আগামীতে দেশের ক্ষমতায় কে যাবে- না যাবে, তা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। ...ইসলাম প্রচারে আওয়ামীলীগই কাজ করেছে, অতীতেও করেছে এবং এখনো করছে।"

এরপর তিনি আবার কুরআন-হাদিস থেকেও ধর্মনিরপেক্ষতার সবক দেন: "পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, লাকুম দিনুকুম অলিইয়া দিন।যার ধর্ম সে পালন করবে। বিদায় হজের ভাষণ ও মদিনার সনদেও মহানবী (স.) তা উল্লেখ করেছেন।"

ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলাম:

প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদেরকে কুরআন-হাদিস থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা শেখান, তাহলে আমরাও একটু দেখি কুরআন-হাদিস কি আসলেই নাস্তিক George Jacob Holyoake-কের ধর্মনিরপেক্ষতা শেখায় কিনা!

আগেই বলা হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিচ্ছিন্নতার কোনো বিধান কুরআন-হাদিসে নেই। বরং আল্লাহ বলছেন,

يٰأَيُّهَاٱلَّذِينَآمَنُواْٱدْخُلُواْفِىٱلسِّلْمِكَآفَّةً

"হে ঈমানদার গণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।" [সূরাবাকারা: ২০৮]
ইবনে কাসীর (রহ.) এ-আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস (রা.) এ-আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, এ-আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন,
ادخلوا في شرائع دين محمد صلى الله عليه وسلم ولا تَدَعوا منها شيئًا
"তোমরা পরিপূর্ণভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বীনের সমস্ত আইনের আনুগত্য কর এবং সেখান থেকে কোনো কিছুই পরিত্যাগ করো না।"
এই আয়াতের তাফসীরে মুফতি শাফী (রহ.) বলেন, কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধানের নামই হচ্ছে ইসলাম।কাজেই এর সম্পর্ক বিশ্বাস ও এবাদতের সঙ্গেই হোক কিংবা আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিকতা অথবা রাষ্ট্রের সঙ্গেই হোক অথবা রাজনীতির সঙ্গেই হোক, এর সম্পর্ক বাণিজ্যের সঙ্গেই হোক কিংবা শিল্পের সঙ্গে – ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা দিয়েছে তোমরা সবাই তারই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। [মা’আরেফুল কুরআন]
ফটিকছড়িতে ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থনে শেখ হাসিনা কুরআনের আয়াতকে ভুলভাবে প্রয়োগ করেছেন। তিনি বলেছেন, পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, লাকুম দিনুকুম অলিইয়া দিন।যার ধর্ম সে পালন করবে।
আসলে সূরা কাফিরূনের শেষ আয়াত "লাকুম দিনুকুম অলিইয়া দিন"-এর অর্থ হলো, "তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার।" অর্থটি শেখ হাসিনারই উদ্বোধনকৃত কুরআনের একেবারে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ওয়েব সাইট থেকে নেয়া! 
সব তাফসীর গ্রন্থে আছে, মক্কার মূর্তি পূজারীরা মহানবী (সা.)-কে এই শর্তে সমঝোতার প্রস্তাব দেন যে, মহানবী (সা.) এক বছর কাফেরদের ধর্ম পালন করবেন, কাফেররাও এক বছর ইসলাম পালন করবে। এ-ধরনের আরো কিছু শর্তের মাধ্যমে তারাম হানবী (সা.)-র সাথে সমঝোতা করতে চায়। ওই সময় অবতীর্ণ সূরা  কাফিরূনের মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কার জানিয়ে দেন, মহানবী (সা.) কোনো ভাবেই তাদের ধর্মের কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারেন না:
"বলুন, হে কাফেররা, আমি ইবাদত করিনা তার তোমরা যারই বাদত কর। এবং তোমরাও ইবাদতকারী তার নও, যার ইবাদত আমি করি এবং আমি তার ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরাও তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার।"

সীরাতে ইবনে হিশাম গ্রন্থে [ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনূদিত] আছে, মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তাদের সাথে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর চাচা আবু তালিবকে বলেন:
يَا عَمّ، وَاَللّهِ لَوْ وَضَعُوا الشّمْسَ فِي يَمِينِي ، وَالْقَمَرَ فِي يَسَارِي عَلَى أَنْ أَتْرُكَ هَذَا الْأَمْرَ حَتّى يُظْهِرَهُ اللّهُ أَوْ أَهْلِكَ فِيهِ مَا تَرَكْتُهُ
"হে চাচা, আল্লাহর শপথ, তারা যদি আমার ডান হাতে সূর্য ও বাম হাতে চাঁদও এনে দেয় এই শর্তে যে আমি আমার কাজ পরিত্যাগ করবো, তাহলেও আমি কখনো আমার কাজ বন্ধ করবোনা, যতক্ষণ না আল্লাহ এটিকে বিজয়ী করেন অথবা আমি ধ্বংস হয়ে যাই।"
তাই কুরআন-হাদিসে শেখ হাসিনার আবদারকৃত "যার ধর্ম সে পালন করবে" এ-রকম কোনো অর্থ "লাকুম দিনুকুম অলিইয়া দিন"-এর পাওয়া যায় না - বরংপাওয়াযায়, কাফেরদের ধর্মকে মেনে না নেয়ার কঠোরতম দৃঢ় সিদ্ধান্ত।
......   .......   .......   .......    ........
ধর্ম নিরপেক্ষতার মুখোশে যারা নিজের খেয়াল খুশি মতো ইসলামের বিধি-বিধান সমূহকে আংশিকভাবে পালন করতে চায়, যারা নিজের খেয়াল খুশিমতো কুরআনের কিছু বিধান মানবে আর কিছু বিধান মানার দাবি তুললে হত্যা-নির্যাতন করবে, তাদেরকে আল্লাহ কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এই বলে যে, 

أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ ٱلْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفْعَلُ ذٰلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِى ٱلْحَيَاةِ ٱلدُّنْيَا وَيَوْمَ ٱلْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ ٱلّعَذَابِ

"তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা আর কিয়ামতের দিন এরা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।" [সূরা বাকারা : ৮৫]
মুখে যতই ইসলামের সেবক দাবি করুক, এসব আংশিক ইসলাম বিশ্বাসকারী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি পৃথিবীতে লাঞ্ছিত হবেই, আর কিয়ামতে পাবে কঠোর শাস্তি।এটাই মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা।

১৬।প্রথম সারীর ১৮ জন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক এর লিস্ট।

আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বাংলার বিখ্যাত প্রথম সারীর ১৮ জন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক এর লিস্ট যারা এই বাংলাদেশে নাস্তিকতার জন্ম দিয়ে পবিত্র দিন ইসলামের বিরোধিতা করে গেছে আজিবন
। আহমেদ শরীফ: নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই নাস্তিকের নাম জানে না। তার একটা বিখ্যাত উক্তি-“পুরুষদের যদি সততা দরকার না হয় তবে নারীদের সতীত্বের কেন দরকার? নারীরাও যেভাবে খুশি যৌনাঙ্গ বিলাতে পারবে” স্বঘোষিত নাস্তিক তার ইচ্ছা মেনে মৃত্যূর পর তার জানাজা এবং কবর কোনটাই হয়নি
। হুমায়ুন আজাদ: বাংলা সাহিত্যের অশ্লীল ও কুরুচিপুর্ণ লেখার জনক। সারাজীবন ধর্মের প্রতি বিষোদগার করে গেলেও মৃত্যূর পর ধর্ম মেনে ঠিকই তার জানাজা ও কবর দেয়া হয়েছে, সে এটাই চেয়েছিল কারন মুখে নাস্তিকতার বড় বড় বুলি আওড়ালেও মৃত্যূ পরবর্তী জীবন নিয়ে সম্ভবত সে ভীত ছিল। মেয়ে মৌলি আজাদের ভাষায়-মাত্রাতিরিক্ত সেক্সের প্রাধান্য থাকতো বাবার উপন্যাসে। তাই মাঝে মধ্যে বিরক্তই হতাম হুমায়ুন আজাদের কুখ্যাত কিছু উক্তি-এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি। মাঝারী স্তন আমার পছন্দ, সরু মাংসল উরু আমার পছন্দ চোখের সামনে আমার মেয়ে বড় হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আমারহাত-পা বাঁধা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চুইংগামের মতো চাবাতে ইচ্ছে করে
। আরজ আলী মাতব্বর: অতি সাধারন অশিক্ষিত এক কৃষক হয়েও সে বাংলার নাস্তিক সমাজের মধ্যমনিইসলামী জ্ঞানের স্বল্পতা থাকার দরুন না বুঝেই ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক অভিযোগ উত্থাপন করেছিলকুরআন-হাদীসের ভূল ধরতে গিয়ে সে কেবল তার নের সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরতে পেরেছে। তবুও শুধুমাত্র ইসলাম বিরোধীতা করার কারনে নাস্তিকরা তাকে নিজেদের ধর্মগুরু বানিয়ে নিয়েছে
। কবি শামসুর রহমান: শামসুর রহমানের একটি কুখ্যাত উক্তি- আযানের ধ্বনি বেশ্যার খদ্দের ডাকার ধ্বনির মত মনে হয় নাউজুবিল্লাহ। এই একটা উক্তিই প্রমান করে শামসুর রহমান কি পরিমাণ ইসলাম বিদ্বেষী ছিল। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল- আপনি কি চান আপনার কবর হোক আপনার খালার কবরের পাশে? নাস্তিকটা জবাব দিয়েছিল-আমি তো আমার কবর হোক এটাই চাই না
। তসলিমা নাসরিন: তাকে চেনে না এমন লোক খুব কমই আছে। তার একটি বিখ্যাত উক্তি-পুরুষরা যেমন গরম লাগলে খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় নারীরাও তেমনি খালিগায়ে ঘুরে বেড়াবে, তাদের স্তন সবাই দেখবে লেখক ইমদালুল হক মিলন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রুদ্র মুহম্মদ, সৈয়দ শামসুল হক, মিনার মাহমুদ সহ আরো অসংখ্য পুরুষ বৈধ/অবৈধভাবে তাকে ভোগ করেছে বলে তসলিমা তার আত্মজীবনিতে অভিযোগ করেছে!! সে কি মাপের
ইসলামবিদ্বেষী সেটা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। সে নিজেকে নাস্তিক দাবী করলেও খেয়াল করলে দেখবেন তার যত ক্ষোভ, যত ঘৃণা সব কিছুই ঝাড়ে কেবল ইসলাম ধর্মের উপর। সনাতন ধর্ম কিংবা খ্রিস্ট ধর্ম অথবা ইহুদীদের নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা তেমন চোখে পড়ে না
। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীঃ তাকে তো সবাই চেনেন। বেশি কিছু বলার নাই। আলোচিত কিছু উক্তি-ধর্ম তামাক ও মদের মত একটি নেশা। মোল্লাদের কোন কাজ নেই তাই তারা ঘন ঘন মসজিদ তৈরি করেছেটাকা ইনকামের জন্য আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ হজ্জের প্রবর্তন করেছিল। সভা-সমাবেশের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করা দরকার
। বাউল লালন শাহঃ সুবিধাবাদী সেক্যুলার। কোন ধর্ম পালন করতো না। জীবনে যতবার
গাজা টেনেছে ততবার ভাত খেয়েছে কিনা সন্দেহ। দেশের সকল নাস্তিক লালন বলতে অজ্ঞান। লালনের অনুসারিরা লালনের জন্মদিনে গাজা খাওয়ার উৎসব করে থাকে। লালন এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতো যেখানে ধর্ম বলে কিছু থাকবে না, হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান এরকম কোন ধর্মীয় পরিচয় মানুষের থাকবে না
। জাফর ইকবাল: বাংলাদেশের নাস্তিকতা প্রচারের মিশন দিয়ে আমেরিকার একটি বিশেষ সংস্থা তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বলে ধারনা করা হয়। তরুন সমাজকে নাস্তিক
হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নিজে মুক্তিযুদ্ধ না করলেও জাফর এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে পেট চালায়। জাফরের দাবী সে পাকিস্তানের দোষর রাজাকারদের ঘৃণা করে, কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য ৭১ সালে পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সমর্থন ও সামরিক সাহায্য দেয়া রাষ্ট্র আমেরিকার ব্যাপারে তার কোন চুলকানিই নেই। জাফর নিজে আমেরিকায় চাকরী করতো, এখন সে তার ছেলে-মেয়েদেরকেও আমেরিকা পাঠিয়েছে পড়াশোনা করার জন্য
। লেখক আনিসুল হকঃ সেক্যূলারপন্থী লেখক আনিসুল হক নাস্তিকপন্থী পত্রিকা প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক। ১৯৯১ সালে সে কুরআনের একটি সূরাকে ব্যঙ্গ করে প্যারোডি সূরা রচনা করে, বছরখানেক আগে তার ঐ লেখা পুনঃপ্রকাশিত হলে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। সেক্যুলারপন্থী আনিসুল হক ভয় পেয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চায়। এরপর সে আরো কৌশলী হয়ে যায়, সরাসরি ইসলাম অবমাননা না করে এখন সে তার নাটক-সিনেমা ও পত্রিকা দ্বারা ইসলাম বিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে
১০। সুলতানা কামাল: জন্মসূত্রে মুসলমান হলেও বিয়ে করেছে শ্রী সুপ্রিয় চক্রবর্তী নামে এক হিন্দুকে। কপালে সবসময় একটা ট্রেডমার্ক টিপ থাকে। সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ ও
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেয়ার জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে এই কুখ্যাত সেক্যুলার। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের প্রতি সে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে থাকে। আসিফ মহিউদ্দিন নামক উগ্র নাস্তিককে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে যখন ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তখন সে আসিফকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। সারারাত থানায় অবস্থান করে নাস্তিক আসিফকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল
১১। প্রবীর ঘোষ: বর্তমান সময়ের একজন খাটি নাস্তিক। কলকাতার নাস্তিকদের মধ্যে সে সবচেয়ে জনপ্রিয়সকল ধর্মের বিরোধী প্রবীর ঘোষ ধর্মমুক্ত একটি বিশ্ব চায়। তার অসংখ্য,ভক্ত-সমর্থক রয়েছে
১২। কবির চৌধুরী: চরমপন্থী এই নাস্তিক একবার বলেছিল- তোমরা আমার মরণের সময় মোহাম্মদের জ্বালাও-পুড়াও ঐ কালেমা শুনাবে না, বরং রবীন্দ্রনাথের একটি সংগীত আমাকে শুনাবে এই উগ্র নাস্তিক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল এবং ৭১ সালে পাক সরকারের বিশ্বস্ত অনুচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু নাস্তিক হওয়ার কারনে আজ তার সাত খুন মাফ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা আজ তাকে মাথায় তুলে নাচেসংবিধানে ’বিসমিল্লাহ’ রাখার ব্যাপারেও কবির চৌধুরী আপত্তি তুলেছিলো
১৩। সৈয়দ শামসুল হক: এটা আরেক উগ্র সেক্যুলার। অন্যান্য নাস্তিকের মত এটাও ছিল নোংরামিতে সিদ্ধহস্ত। তার একটা কবিতা হল এরকম-যখন দু’স্তন মেলে ডেকে নিলে বুকের ওপরে স্বর্গের জঘন খুলে দেখালে যে দীপ্তির প্রকাশ মুহুর্তেই ঘুচে গেল তৃষিতের অপেক্ষার ত্রাশ আরেকটা কবিতা এরকম- শত বাধা সত্ত্বেও থামতে পারে না কামুক পুরুষ
দুজনের দেহ ছিড়ে বের হয় দুধ-পূর্ণিমাআর তা নেমে আসে স্তনের চুড়ায় যাদের সাহিত্যের ভাষা এমন নোংরা তারা সেক্যুলার/নাস্তিক হবে এটাই স্বাভাবিক। এরা যদি নিজেকে মুসলমান দাবী করতো তাহলে সেটাই বরং আশ্চর্য্যের ব্যাপার হত
১৪। মুনতাসির মামুন: এই স্বঘোষিত নাস্তিক একবার বলেছিল-সভা-সমাবেশে বিসমিল্লাহ বলা বা কুরআন পড়ার দরকার নেই। সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকা আমাদের জন্য অপমান সরূপ। আমরা তো সংবিধানে আল্লাহর নাম অথবা বিছমিল্লাহ থাকবে সেজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। ধর্ম যেমন ভন্ডামী তেমনি মৌলবাদিদের সব ভন্ডামী । বঙ্গ ভবনের দেয়ালে কুরান
শরীফের আয়াত লেখা এটা একটা চরম ভন্ডামী মুনতাসির মামুনের দূঃসাহসী আরেকটা মন্তব্য-এদেশে এক জন মুসলমানও যত দিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে
১৫। ব্লগার রাজীব (থাবা বাবা): এই নাস্তিক নবীজী উনাকে হযরত মহাউন্মাদ কিংবা মোহাম্মক (মহা+আহাম্মক) নামে ডাকতো (নাউজুবিল্লাহ)। হাদীসকে চটি গ্রন্থ এবং কুরআনকে সে কৌতুকের বই বলে আখ্যায়িত করতো। বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাহাবীদেরকে নিয়ে চটি গল্প লিখে “ধর্মকারী” নামক ব্লগে প্রকাশ করতো। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উদ্বৃতি দিয়ে সেগুলোর নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে ঠাট্টা ও হাসি-তামাশা করতো। তার এসব কার্যকলাপ তাকে এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকের মর্যাদা দিয়েছে। তার বেশিরভাগ লেখাই প্রকাশযোগ্য নয়। তার কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে ৫ জন ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই মুরতাদকে হত্যা করে জাহান্নামের টিকিট ধরিয়ে দেয়। তার মৃত্যুর পর সরকার এবং শাহবাগের অন্যান্য নাস্তিকরা তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে!!
১৬। আসিফ মহিউদ্দিন: বর্তমান সময়ের আরেক কুখ্যাত নাস্তিক। অন্যান্য নাস্তিকের মত এটাও চরিত্রহীন ও লম্পট। ওর নাম লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই মদের বোতল হাতে মাতলামি করা অবস্থায় একটা ছবি খুজে পাবেন। ইসলাম অবমাননার দিক দিয়ে থাবা বাবার পরেই তার অবস্থান। তার ইসলামবিদ্বেষী কার্যকলাপে খুশী হয়ে জার্মান সরকার তাকে ঐদেশের ভিসা উপহার দিয়েছে। বর্তমানে সে জার্মানী থেকে ফেসবুক ও ব্লগে ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি করে থাকে। আসিফের দাবি আল্লাহ নিজেই নাস্তিক, অতএব নাস্তিক হওয়াটা দোষের কিছু না। আসিফ মহিউদ্দিন পবিত্র
কুরআনকে “আহাম্মোকোপিডিয়া” বলে থাকে। সে কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করে “আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির নাস্তিকানির নাজিম” বলে এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কল্পিত ছবি তার ব্লগে প্রকাশ করে
১৭। ফরহাদ মজহার: এই লিস্টে উনার নাম দেখে অনেকেই চমকে গেছেন!! তাইনা?? আওয়ামীলীগ-বিরোধী অবস্থান নেয়ার কারনে অনেকে তার আসল পরিচয় জানে না। এক সময় সে ছিল একজন কুখ্যাত ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক, বর্তমানে তার ভূমিকা বেশ রহস্যজনক। সে এখন আর আগের মত নাস্তিকতা প্রচার করে বেড়ায় না, বরং ইসলামপন্থীদের পক্ষাবলম্বন করে কলাম লেখে-বিবৃতি দেয়। কিন্তু সেটা যতটা না আদর্শগত কারনে তারচেয়ে বেশি রাজনৈতিক কারনে। সে এখনো নাস্তিক আছে নাকি তওবা করে মুসলমান হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। নব্বইয়ের দশকে “এবাদত নামা”
নামে একটি ইসলাম বিদ্বেষী কাব্যগ্রন্থ লিখে সে বেশ বিতর্কিত হয়েছিল। কয়েকটা লাইন উল্লেখ করছি: বিবি খাদিজার নামে আমি এই পদ্যটি লিখি, বিসমিল্লাহ কহিব না, শুধু খাদিজার নাম নেবো। নবীজীর নাম? উহু,তার নামও নেবোনা মালিক শুধু খাদিজার নাম- দুনিয়ায় আমি সব নাম ভুলে যাব তোমাকেও ভুলে যাবো, ভুলে যাবে নবীকে আমার। তার আরেকটা কবিতা আরো মারাত্মক-দুনিয়া রেজিস্ট্রি কর, তিলেক হিম্মত নাই আধা ছটাকের নাই তেজ সাত আসমানে প্রভু খোদাতা’লা হয়ে বসে আছ মুখে খালি কহ শুনি দুনিয়ার তুমিই মালিক অথচ মালিক অন্যে, অন্যে কহিতেছে তারা খোদা মালিক এ জমিনের -প্রত্যেকেই তোমার শরিক তোমার শরিক নাই এই কথা তবে কি বোগাস? এদের দলিল যদি মিথ্যা হয় যাও আদালতে উকিল ধরিয়া করো দুনিয়া রেজিস্ট্রি নিজ নামে
১৮। শফিক রেহমান: বাংলাদেশে “ভ্যালেন্টাইন ডে” নামক বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রবর্তক। ১৯৯৩ সালে এই নাস্তিক সর্বপ্রথম তার পত্রিকা যায়যায়দিন এর মাধ্যমে এদেশে ভালবাসা দিবস এর প্রচলন ঘটায়। শফিক রেহমানকে বাংলাদেশের চটি সাহিত্যের জনক বলা হয়। অশ্লীলতার দিক দিয়ে হুমায়ুন আজাদও উনার কাছে নস্যি। শফিক “মৌচাকে ঢিল” নামক একটি সেমি-চটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক। এছাড়া বাংলাদেশে লিভ টুগেদার ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান শফিক রেহমানের। তার বিরুদ্ধে সমকামীতার অভিযোগও রয়েছে
তাই ব্লগ ও ফেসবুকে অপপ্রচারের খপ্পরে পড়ে অথবা কৌতূহলবশত আরজ আলী মাতুববর কিংবা হাল আমলের নাস্তিককুল শিরোমণি ক্রিস্টোফার হিচেন্স, রিচার্ড ডকিন্সদের বইপত্র নাড়া-চাড়া করতে গিয়ে শিক্ষার্থী তরুণরা যেন বিভ্রান্তির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সাথে নাস্তিক্যবাদী ও মুখোশধারী কবি-সাহিত্যিকদের নষ্ট সাহিত্য অধ্যয়ন থেকে বিরত থাকতে হবে। আর অভিভাবকদেরও দায়িত্ব হবে কোনোরূপ শিথিলতা না দেখিয়ে তাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই ইসলামী চেতনায় সমুন্নত করা। যেন জীবনের উষালগ্নে তারা কোনরূপ বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত না হয়। আল্লাহ আমাদেরকে এই নাস্তিকদের ষড়যন্ত্রকে রুখে দেয়ার তাওফিক দান করুন এবং এদের কূটচাল থেকে এ দেশের মুসলিম সমাজকে হেফাজত করুন। আমিন!

১৭। ঢাবিতে হিজাব পরা ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দিলো শিক্ষক:

বিডি নীয়ালা নিউজ (২৮ই এপ্রিল১৬)-ঢাকা প্রতিবেদনঃ  হিজাব পরে ক্লাসে আসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ক্লাস থেকে আবারো বের করে দিয়েছেন কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান।
গত মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বিভাগের শ্রেণিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের প্রভাবশালী সদস্য। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যও তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অনেক দিন থেকেই বোরকা পরে নিয়মিত ক্লাসে আসছিলেন। কিন্তু ওই শিক্ষক তাকে বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন। একইসঙ্গে যতদিন হিজাব পরে আসবে ততদিন ক্লাসের উপস্থিতিও দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়। এ হুমকির পর বেশ কয়েক দিন ক্লাসে ছাত্রীটির উপস্থিতি দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে ক্লাস উপস্থিতি ৬০ শতাংশের নিচে হলে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না।
তার সহপাঠীরা জানায়, ছাত্রীটি প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান তার নাম ডাকেন না এবং উপস্থিতিও দেন না। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ক্লাসেও একই ঘটনা ঘটায় ছাত্রীটি দাঁড়িয়ে তার হাজিরা দিতে বলেন। কিন্তু শিক্ষক আজিজুর রহমান তাকে হিজাব খুলে ক্লাসে এলেই হাজিরা দেয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
আজিজুর রহমান বলেন, ‘তুমি ছাত্র না ছাত্রী সেটা কীভাবে বুঝবো? বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার আইডেনটিটি কী?’ এর পরপরই তাকে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ ঘটনায় কয়েকজন ছাত্রী প্রতিবাদ করলে তাদেরও ক্লাস থেকে বের করে দেন এ শিক্ষক।
তবে ঘটনাটি অস্বীকার করে অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘হিজাব পরার কারণে তাকে বের করে দেয়া হয়নি। ওই ছাত্রীটি শিক্ষক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করতে রাজি নয়। ওই দিনের ক্লাসেও সে আমার সঙ্গে অশ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করেছে। যার কারণে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদের বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো পোশাক নির্দিষ্ট করে দেয়া নেই। যে যেকোনো পোশাক পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে পারবে।’
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান গত বছরও নাবিলা ইকবাল নামে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে বোরকা পরে আসার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন।


প্রশ্নঃ নারীদেরকে ‘শাসক’ অথবা ‘বিচারক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে?
 রাসুল (সাঃ) বলেন, যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে সে জাতির কখনো কল্যাণ হতে পারে না।(তিরমিজি-২২৬২)

উত্তরঃ ইসলামি শরিয়াহ নারীদেরকে ‘রাষ্ট্রপতি’, ‘প্রধানমন্ত্রী’ ‘বিচারক’/ কাজী/ মুফতি/ judge/ ruler হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সম্পূর্ণ ‘হারাম’ বা অবৈধ করেছে। যে ব্যক্তি কোন নারীকে ‘শাসক’ অথবা ‘বিচারক’ হিসেবে নিয়োগ দেবে সে গুনাহগার, সে একজন পাপী।
প্রশ্ন আসতে পারে, নারীরা কেনো ‘শাসক’ অথবা ‘বিচারক’ হতে পারবেনা?
এ ব্যপারে শরিয়াহর দিক থেকে দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষেপে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি।
১. মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল। এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করে।” [সুরা আন-নিসাঃ ৩৪]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে জাতি নিজেদের শাসকক্ষমতা কোন মহিলার উপর অর্পণ করে, সে জাতি কখনোই কল্যান লাভ করতে পারেনা।”
[সহীহ আল-বুখারীঃ ৬৬১৮ কিতাবুল ফিতান, আত-তিরমিযীঃ ২২৬২]
২. আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা নারীদেরকে পুরুষদের মাঝে দেশ চালানো কিংবা বিচার-ফয়সালা করার জন্য সৃষ্টি করেন নি, তাদেরকে এর চাইতে বড় দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য নারীদেরকে গৃহে অবস্থানের আদেশ দেওয়া হয়েছে, এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“আর তোমরা গৃহে অবস্থান করবে, জাহেলিয়াতের (মূর্খতা যুগের) মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। তোমরা নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে।”
[সুরা আল-আহজাবঃ ৩৩]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“নারীদের পুরোটাই হচ্ছে আওরাহ বা সতর (শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক), যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে চোখ তুলে দেখে। নারী ঘরের মধ্যে অবস্থানকালেই আল্লাহর বেশি নৈকট্য প্রাপ্ত থাকে।” [তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান, হাদীসটি সহীহ]
কোন ব্যক্তিকে যে কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে যদি সেই কাজ না করে, অথবা সেটাতে অবহেলা করে অন্য কাজে লেগে পড়ে, সেটা সে যতই ভালোভাবেই পরিচালনা করুক না কেনো, কোনমতেই সেটা গ্রহণ্যোগ্যতা পাবেনা। এছাড়া আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যা নারীদের ‘শাসক’ এবং ‘বিচারক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাঁধা।
৩. নারীদের ঋতুর কারণে প্রতি মাসে ৫-৬ দিন তাদের মন-মেজাজ রুক্ষ থাকে । এসময় শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক অস্থিরতার কারণে তাদের চিন্তাশক্তি ব্যহত হয়। নারীদের ঋতুর কারণে তাদের নামায, রোযার মতো ফরয কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে, স্বামীর প্রতি বড় দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সেটাকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ‘দেশ ও জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া’ অথবা ‘বিচার করার’ মতো কঠিন কাজ, যেই আল্লাহওয়ালা ওলামারা পর্যন্ত ভয় করে চলেন, সেখানে তাদেরকে কি করে সেই গুরুদায়িত্ব কাজ করতে বাধ্য করা বা সুযোগ দেওয়া যেতে পারে? অবশ্য বর্তমানে যারা ‘ক্ষমতাকে’ টাকা বানানোর উপায় হিসেবে নিয়েছে, তাদের কথা ভিন্ন। তবে একজন মুসলিম সবসময় ক্বুরান ও সুন্নাহর আলোকেই চিন্তা করে এবং এর মাঝেই সে নিজের সফলতা নিহিত বলে বিশ্বাস করে।
৪. আল্লাহর ইবাদতের পরে একজন নারীর জীবনে সবচাইতে বড় দায়িত্ব হচ্ছে তার পরিবারের দেখাশোনা করা, সন্তান জন্ম দেওয়া, তাদের লালন-পালন করা ইত্যাদি। কেউ যদি জীবনে অন্তত ৪-৬টা সন্তানের জন্ম দেয়, তাদের লালন-পালন করে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ দিলে সেই দায়িত্ব সে কখন পালন করবে? তাকে সন্তান জন্ম দেওয়া বন্ধ করতে হবে, আর বুয়া রেখে বাচ্চা পালতে হবে। এ হচ্ছে আধুনিক জীবনে মুসলমান সমাজের উপর চেপে বসা বিজাতীয় অভিশাপ।
৫. নারীদের রয়েছে বুদ্ধির দিক থেকে ত্রুটি (যেকারণে একজন পুরুষ স্বাক্ষীর জায়গায় নারী থাকলে দুইজন স্বাক্ষীর প্রয়োজন হয়)।
আবূ সাঈ’দ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার ঈদুল আযাহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর রসূল (সাঃ) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা (উপস্থিত মহিলারা) জিজ্ঞেসা করলেন, এমন কি কারণে, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্বেও একজন সদা-সতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁরা বললেন, আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, একজন মহিলার স্বাক্ষ্য কি একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, হ্যা। তখন তিনি বললেন, এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়য় (ঋতু) অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হতে বিরত থাকে না? তাঁর বললেন, হ্যা। তিনি বললেনঃ ,এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি। [সহিহ বুখারীঃ ২৯৮]
৬. নারীদের অন্তরে মায়া-মমতা ও ভালোবাসা বেশি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে করে পুরুষেরা তাদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। যাদের মাঝে ভালোবাসা বেশি এর বিপরীত জেলাসির প্রবণতাটাও তাদের মাঝে বেশি থাকবে। যারা সহজে আবেগতাড়িত হয়, মানবিক দুর্বলতা তাদের মাঝে বেশি প্রকাশ পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
৭. আলেমদের ফতোয়াঃ
ইমাম ইবনে হাজম রহঃ নারীদের শাসক হওয়া হারাম, এই ব্যপারে ‘ইজমা’ রয়েছে অর্থাৎ, সমস্ত ওলামারা একমত বলে উল্লেখ করেছেন, “তারা (আলেমরা) এই কথায় একমত হয়েছেন যে, নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
[মাআ’রাফিতুল ইজমা, পৃঃ ১২৬] ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” [নাকালু মারাফিয়া ইজমা]
ইমাম কুরতুবী রহঃ এই ব্যপারে ইজমা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন যে,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” [আহকামুল কুরআনে]
আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) তার হুজ্জাতুল বালিগাহ তে বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।
নেতৃত্ব হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।”
ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ বলেন,
“নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া ফরয।”
হানাফী আলেম, মোল্লা আলী কারী (রহঃ) ফায়যুল বারীতে লিখেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।”
 আওয়ামী মুসলিমলীগ থেকে আওয়ামীলীগ গঠন:১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের।
প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও  ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম নেয় দলটি।
আওয়ামীলীগের ইতিহাসই প্রমাণ করে যে, তারা নিজেরাই মুসলমান থেকে খারিজ। মূলত এই দলটির উৎপত্তির হয়েছে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড সমাজ ও রাষ্টে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই। এই দলের কর্মী, সমর্থক ও নেতারা ইহুদি,খৃস্টান তথা নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদি আদর্শে বিশ্বাসী। আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রায় ৯০% নেতা-কর্মী মুসলমান। এরা শুধুই নামে মুসলমান যা আওয়ামীলীগের অতীত ও বর্তমান ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডই তা প্রমাণ করে। প্রকৃত ইমানদার মুসলমানগণ ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড কখনো মানে নাই আর মানবেও না। আর এ কারনেই নবি ( সা:)এর সময়ে ২৭টি যুদ্ধের মধ্যে তিনি নিজে ১৯টি যুদ্ধে সশরীরে অংশ নিয়েছিলেন। অতএব বাংলাদেশের একটি মাত্র দল, যারা ক্ষমতার জোড়ে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে দেশকে জিম্মি করে রেখেছে। এই দলটিকে ক্ষমতায় আনার জন্য মূলত আমরা মুসলমানরাই দায়ী। এ জন্যে আমাদের ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য হযে, ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে পরাজিত করা। এটা স্পষ্ট যে, অনৈসলামিক দলকে ভোট দেয়া মুসলমানদের জন্যে হারাম। আপনি মুসলমান ভোট দেয়ার অর্থই হচ্ছে, ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডগুলোকে সমর্থন করা। এরপরও যদি কোনো মুসলমান ভোট দেয় তাহলে এরা হবে ফাসেক ,এরা হবে মোনাফেক। এদের কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না।
  


আওয়ামী মুসলিম ভোটারদের শেষ পরিনতি:
হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে নাতারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত   রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে(কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে   বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে  (নূর-৬৩)
আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন করবে, যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান করতে হবে।( বুখারী মুসলিম)
সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য   বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন(কোরআন-:১১৫)
হোজায়ফা  (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে”(বুখারী)
যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত”(মেশকাত)

তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ  করবেপার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন(বাকারা-৮৫)
আনাস (রাঃ) হতেবর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এক দল লোক-যারা আমারই উম্মতের আকৃতি হবে, হাউজ কাউসারের কিনারায় আমার নিকট আসবেএমনকি আমি তাদেরকে আমার উম্মত রুপে চিনতে পারবো এমতাবস্থায় আমার সন্নিকটে পৌঁছবার পূর্বেই তাদের গতি জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে তখন আমি বলবো , এরা তো আমার উম্মত আল্লাহতায়ালা বলবেন আপনি জানেন না, আপনার দুনিয়া ত্যাগের পরে এরা (আপনার তরিকা বা আদর্শ ছেড়ে অন্য) কতো রকম তরিকা অনুকরনীয় পন্থা গড়েছিলো(বুখারী)
যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
১০ নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে।(মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

 সংকলনে: মাওলানা মো: শিহাব এম এ- ইসলামিক স্টাডিজ (বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ)





ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা

(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইনে শাস্তির বিধানঃ প্রসঙ্গ খুন বা হত্যা লেখকঃ মাওলানা মোঃ শিহাব,এম এ, ইসলামিক ...